সারাক্ষণ রিপোর্ট
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) সন্ত্রাসবাদে অর্থায়নের বিরুদ্ধে সক্রিয়ভাবে লড়াই করে। এর প্রধান লক্ষ্য হলো বৈশ্বিক আর্থিক স্থিতিশীলতা ও স্বচ্ছতা বজায় রাখা। আইএমএফ বিশ্বাস করে যে, সন্ত্রাসবাদে অর্থায়নসহ বিভিন্ন অবৈধ আর্থিক লেনদেন অর্থনৈতিক ভারসাম্য বিনষ্ট করে এবং আন্তর্জাতিক নিরাপত্তাকে হুমকিতে ফেলে।
আর্থিক ব্যবস্থার সুরক্ষা
সন্ত্রাসী সংগঠনগুলো নিজেদের কর্মকাণ্ডের অর্থ জোগাড়ে ব্যাংকিং ও আর্থিক ব্যবস্থা ব্যবহার করে। তারা মানি লন্ডারিং, দাতব্য প্রতিষ্ঠানের অপব্যবহার এবং হুন্ডির মতো অনানুষ্ঠানিক আর্থিক ব্যবস্থা ব্যবহার করে থাকে। বৈধ আর্থিক লেনদেনে মিশে গিয়ে তারা অর্থের উৎস ও গন্তব্য গোপন করে, ফলে সনাক্তকরণ কঠিন হয়ে পড়ে। আইএমএফ আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর সক্ষমতা বাড়ানোর মাধ্যমে এই অপব্যবহার রোধ করতে কাজ করে।
বৈশ্বিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার উন্নয়ন
সন্ত্রাসবাদসহ অবৈধ আর্থিক কার্যক্রম বিনিয়োগকারীদের আস্থাকে ক্ষুণ্ণ করে, বাজার বিকৃত করে এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে বাধা সৃষ্টি করে। আইএমএফ সদস্য দেশগুলোকে মানি লন্ডারিং (AML) এবং সন্ত্রাসবাদে অর্থায়ন প্রতিরোধ (CFT) ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করতে সহযোগিতা করে, যার মাধ্যমে বৈশ্বিক আর্থিক ব্যবস্থার স্বচ্ছতা ও স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করা সম্ভব।
আন্তর্জাতিক সহযোগিতা বৃদ্ধি
সন্ত্রাসবাদে অর্থায়ন একটি আন্তর্জাতিক সমস্যা, যা সমাধানে বৈশ্বিক সমন্বয় প্রয়োজন। আইএমএফ ফিন্যান্সিয়াল অ্যাকশন টাস্কফোর্স (FATF)-এর মতো সংস্থার সঙ্গে যৌথভাবে AML/CFT এর আন্তর্জাতিক মানদণ্ড নির্ধারণ ও বাস্তবায়নে কাজ করে। আইএমএফ দেশগুলোকে এসব মানদণ্ড অনুসরণের মাধ্যমে একত্রে সন্ত্রাসবাদে অর্থায়নের বিরুদ্ধে লড়তে সাহায্য করে।
সন্ত্রাসবাদে অর্থায়ন প্রতিরোধে আইএমএফের ভূমিকা
• নীতিমালা ও দিকনির্দেশনা: আইএমএফ সদস্য দেশগুলোর আইনগত ও প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো শক্তিশালী করতে নীতি-সহায়তা প্রদান করে।
• সক্ষমতা বৃদ্ধি: প্রশিক্ষণ ও কারিগরি সহায়তার মাধ্যমে দেশগুলোর অবৈধ আর্থিক লেনদেন সনাক্ত ও প্রতিরোধের সক্ষমতা উন্নয়নে সহযোগিতা করে।
• মূল্যায়ন ও পর্যবেক্ষণ: সদস্য দেশগুলোর AML/CFT মানদণ্ড বাস্তবায়ন কতটুকু হয়েছে তা মূল্যায়ন করে উন্নয়নের ক্ষেত্র চিহ্নিত করে ও সেরা অনুশীলনসমূহ প্রচার করে।
আইএমএফের অর্থ সহায়তা কর্মসূচিতে AML/CFT
আইএমএফ তার আর্থিক সহায়তা কর্মসূচিতে AML/CFT ব্যবস্থাকে সংযুক্ত করেছে, যার লক্ষ্য হলো আইএমএফের অর্থ সন্ত্রাসবাদে ব্যবহৃত হওয়া ঠেকানো। সদস্য দেশগুলোর জন্য কার্যকর AML/CFT কাঠামো বাস্তবায়ন বাধ্যতামূলক করে, আইএমএফ অর্থের অপব্যবহার রোধ করে।
সন্ত্রাসবাদে অর্থায়ন প্রতিরোধে আইএমএফের শর্তারোপের উল্লেখযোগ্য উদাহরণ
পাকিস্তান (২০২৫): অর্থ ব্যবহারে নজরদারি
২০২৫ সালের মে মাসে আইএমএফ পাকিস্তানের জন্য এক বিলিয়ন ডলারের বর্ধিত তহবিল সুবিধা (EFF)-এর অনুমোদন দেয়। ভারত এ নিয়ে উদ্বেগ জানায়, কারণ তাদের দাবি ছিল, পাকিস্তান রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় আন্তঃসীমান্ত সন্ত্রাসবাদে অর্থায়নে তহবিল ব্যবহার করতে পারে। এ ধরনের উদ্বেগ থাকা সত্ত্বেও আইএমএফ অর্থ বরাদ্দ দেয় এবং শর্ত হিসেবে জোর দেয় সংস্কার বাস্তবায়ন ও সুশৃঙ্খল আর্থিক ব্যবস্থাপনার ওপর।
লেবানন (২০২৫): ব্যাংকিং গোপনীয়তা আইন সংস্কার
২০২৫ সালের ২৪ এপ্রিল লেবাননের পার্লামেন্ট ব্যাংকিং গোপনীয়তা আইন সংশোধন করে গত ১০ বছরের ব্যাংকিং তথ্য কর্তৃপক্ষের কাছে প্রকাশের সুযোগ দেয়। এই সংস্কার আইএমএফের আর্থিক সহায়তা পাওয়ার জন্য জরুরি ছিল। আইএমএফ বলেছিল, ব্যাংকিং গোপনীয়তা প্রত্যাহার লেবাননের আর্থিক খাত পুনর্গঠনের জন্য আবশ্যক এবং AML/CFT প্রয়োজনীয়তা পূরণে গুরুত্বপূর্ণ।
তুরস্ক (২০২৪): FATF ধূসর তালিকা থেকে মুক্তি
২০২৪ সালের জুন মাসে তুরস্ক FATF-এর ধূসর তালিকা থেকে বেরিয়ে আসে। মানি লন্ডারিং ও সন্ত্রাসবাদে অর্থায়ন প্রতিরোধে বড় ধরনের সংস্কার গ্রহণের ফলে এটা সম্ভব হয়। এই সংস্কারগুলো তুরস্কের আন্তর্জাতিক আর্থিক সুনাম বৃদ্ধি করে এবং আইএমএফ-এর সহায়তা ও আন্তর্জাতিক AML/CFT মানদণ্ড পূরণের পথ প্রশস্ত করে।
AML/CFT সম্পর্কে আইএমএফের কৌশল
• নীতিমালা ও দিকনির্দেশনা প্রদান
• সক্ষমতা বৃদ্ধি: প্রশিক্ষণ ও কারিগরি সহায়তা প্রদান
• মূল্যায়ন ও পর্যবেক্ষণ পরিচালনা
এই পদক্ষেপগুলো আইএমএফের অর্থ ব্যবস্থার স্বচ্ছতা ও নির্ধারিত উদ্দেশ্যে ব্যবহারের নিশ্চয়তা দেয়। আইএমএফের আর্থিক সহায়তা কর্মসূচিতে AML/CFT সংযুক্ত করার মাধ্যমে সন্ত্রাসবাদে অর্থায়ন ঠেকাতে আন্তর্জাতিক আর্থিক স্থিতিশীলতা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দৃঢ় অঙ্গীকার প্রকাশ পায়।