সারাক্ষণ রিপোর্ট
বিশ্বব্যাপী বাণিজ্য যুদ্ধের ফলে এশিয়ার আইপিও বাজারে সৃষ্টি হয়েছে ব্যাপক অনিশ্চয়তা। বিশেষ করে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সম্প্রতি আরোপিত শুল্কনীতি ও আন্তর্জাতিক বাণিজ্য নিয়ে উত্তেজনার কারণে বিনিয়োগকারীরা শঙ্কিত হয়ে পড়েছেন। এর প্রভাবে এশিয়ার বহু কোম্পানি শেয়ারবাজারে প্রাথমিক গণপ্রস্তাব (আইপিও) ছাড়ার পরিকল্পনা স্থগিত করেছে বা ধীরগতিতে এগোচ্ছে।
বাজারের অনিশ্চয়তায় বিনিয়োগকারীদের আগ্রহে ভাটা
এ বছরের প্রথম তিন মাসে এশিয়ার আইপিও বাজার মোটামুটি স্থিতিশীল থাকলেও এপ্রিল থেকে পরিস্থিতি দ্রুত পাল্টে যায়। ট্রাম্প প্রশাসন ‘পারস্পরিক‘ শুল্কনীতি ঘোষণা করলে বাজারে ভয় ছড়িয়ে পড়ে। হংকংয়ের এমার ক্যাপিটাল পার্টনার্সের প্রধান নির্বাহী মনীষী রায়চৌধুরী বলেন, “বছরের প্রথম প্রান্তিকে আইপিও নিয়ে উৎসাহ ছিল, কিন্তু বাজার ট্রাম্প প্রশাসনের পরিকল্পনার গভীরতা বুঝতে পারেনি। এখন বিনিয়োগকারীরা ঝুঁকি নিতে চাইছেন না, ফলে কোম্পানিগুলোও আইপিও ছাড়তে আগ্রহী হচ্ছে না।”
আঞ্চলিক তারতম্য ও বিভিন্ন দেশের পরিস্থিতি
এশিয়া-প্যাসিফিকে প্রথম প্রান্তিকে সবচেয়ে বেশি আইপিও হয়েছিল হংকং ও দক্ষিণ কোরিয়ায়। কিন্তু জাপান, ভারত এবং আসিয়ান অঞ্চলে আইপিও কমেছিল। বর্তমানে মালয়েশিয়া, ভিয়েতনাম ও থাইল্যান্ডে উচ্চ শুল্কের (২৪%) আশঙ্কায় কোম্পানিগুলো বেশি চাপের মুখে রয়েছে। সিঙ্গাপুর তুলনামূলক ভালো অবস্থানে রয়েছে, কারণ দেশটিতে মাত্র ১০% শুল্ক আরোপের কথা রয়েছে।
ডেলয়েট মালয়েশিয়ার পার্টনার ওং কার চুন বলেন, “মালয়েশিয়ায় বিনিয়োগকারীরা উচ্চ ঝুঁকির পরিবর্তে নিরাপদ বিনিয়োগে ঝুঁকছেন। বিশেষত রপ্তানি নির্ভর কোম্পানিগুলো সরবরাহ শৃঙ্খল ভেঙে যাওয়ার আশঙ্কায় আইপিও পরিকল্পনা পিছিয়ে দিচ্ছে।”
হংকংয়ের সম্ভাবনা: প্রযুক্তি খাতের সম্ভাব্য পুনরুদ্ধার
এশিয়ার অন্যান্য দেশের তুলনায় হংকংয়ে আইপিও বাজার কিছুটা আশাব্যঞ্জক। কেপিএমজির লুইস লাউ জানান, বর্তমানে হংকংয়ে আইপিওর জন্য আবেদনকারী কোম্পানির সংখ্যা আগের বছরের তুলনায় ৩৮ শতাংশ বেড়েছে। চীনের সরকারি ফান্ডের সমর্থনে প্রযুক্তি খাতের কোম্পানিগুলো হংকংয়ের বাজারকে চাঙ্গা রাখতে পারে বলে ধারণা করছেন তিনি।
সম্প্রতি বেইজিংও বেসরকারি ও প্রযুক্তি খাতের কোম্পানিগুলোকে সহায়তার জন্য নীতিমালা ঘোষণা করেছে। হংকং স্টক এক্সচেঞ্জ আইপিওর নিয়মাবলি কিছুটা শিথিল করেছে এবং প্রযুক্তিভিত্তিক কোম্পানিগুলোকে আলাদা সুবিধা দিচ্ছে। ২০১৮ ও ২০১৯ সালে মার্কিন-চীন বাণিজ্য যুদ্ধের সময়ও হংকংয়ে আইপিও বৃদ্ধি পেয়েছিল, যার মধ্যে আলিবাবার মতো বড় কোম্পানিরাও অন্তর্ভুক্ত ছিল।
ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা ও বিনিয়োগকারীদের অবস্থান
বিশ্লেষকরা বলছেন, সাময়িক অস্থিরতা থাকলেও দীর্ঘমেয়াদে আইপিও বাজার আবারও চাঙ্গা হবে। ডেলয়েট দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার নেতা টে হুই লিং জানান, “ব্যক্তিগত বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান ও ভেঞ্চার ক্যাপিটালগুলো কোম্পানিগুলোকে অর্থায়ন করলেও তারা শেষ পর্যন্ত বাজারে প্রবেশের মাধ্যমে লাভ নিশ্চিত করতে চাইবে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে আইপিও বাজার পুনরায় সক্রিয় হবে।”
সামগ্রিকভাবে দেখা যাচ্ছে, মার্কিন বাণিজ্য যুদ্ধের ফলে সৃষ্ট অস্থিরতা বর্তমানে এশিয়ার আইপিও বাজারে চাপ সৃষ্টি করলেও, হংকং ও সিঙ্গাপুরের মতো কয়েকটি দেশ পরিস্থিতি সামলে উঠতে সক্ষম হতে পারে। অন্যদিকে মালয়েশিয়া ও ভিয়েতনামের মতো দেশে চাপ আরও তীব্র হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।