০৩:৩১ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৮ জুন ২০২৫

পাকিস্তান-ভারত সংঘাত নিয়ে ডনের সম্পাদকীয়

  • Sarakhon Report
  • ০৫:১৭:৩৯ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৬ মে ২০২৫
  • 43

সংকট এড়ানো

পাকিস্তান ও ভারত যখন তাদের হতাহতদের হিসাব করছেআহতদের চিকিৎসা দিচ্ছে এবং নিহতদের জন্য শোক প্রকাশ করছেতখন দুই দেশের নেতৃত্ব ও জনগণকে নিজেদেরই প্রশ্ন করা উচিতঅন্তহীন এই দ্বন্দ্ব কি সত্যিই তাদের স্বার্থে?

গত সপ্তাহে দুই দেশের সামরিক মুখোমুখি সংঘর্ষ সীমিত হলেও পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধে সীমান্তের উভয় পাশে যে ধ্বংস নেমে আসতে পারেতার কেবল এক ঝলকই দেখা গেছে। দুই পক্ষের মধ্যে যুদ্ধবিরতি আনতে মধ্যস্থতা করা মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেছেনতাঁর প্রশাসন একটি সম্ভাব্য পারমাণবিক সংঘর্ষ ঠেকাতে সহায়তা করেছে।

শত্রুতা যদি সেই পর্যায়ে পৌঁছাততবে ভারত ও পাকিস্তানউভয় দেশের নেতৃত্বই তাদের সবচেয়ে মৌলিক দায়িত্বঅর্থাৎ বিপর্যয় প্রতিরোধে ব্যর্থ হতো। পারমাণবিক শক্তিধর রাষ্ট্র হিসেবে উভয়েরই ক্ষমতা সর্বোচ্চ দায়িত্বশীলতা ও অসীম সংযমের সঙ্গে পরিচালনার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। সর্বাত্মক যুদ্ধ এড়ানো দুই দেশের কৌশলগত স্বার্থেযুদ্ধবিরতি কোনো ছাড় নয়বরং অপূরণীয় ক্ষতি প্রতিরোধে অপরিহার্য ধাপ।

পাকিস্তানের মূল ভূখণ্ডে হামলা চালিয়ে শত্রুতা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত ভারতের জন্য চরম উসকানিমূলক ও গুরুতর ভুল হিসেব প্রমাণ হয়েছে। সীমান্তের দুই পাশে গণমাধ্যমের উল্লাসমুখর উস্কানিও পরিস্থিতি ঘোলাটে করেছে। আক্রমণ-পাল্টা আক্রমণের চাপ এত বেড়েছিল যে মনে হচ্ছিল উভয় দেশই পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধে জড়াতে প্রস্তুত। এখনপেছন ফিরে তাকিয়ে বলা হচ্ছেআমরা নাকি পারমাণবিক যুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে গিয়েছিলাম। উভয় দেশের নাগরিকদের বুঝতে হবেসেটি ঘটলে তার পরিণতি কী ভয়াবহ হতো।

কখনও পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহৃত হলে তার পরিণতি কল্পনাতীত বিপর্যয় ডেকে আনবে। যারা প্রাথমিক বিস্ফোরণে বেঁচে যাবেতাদের জন্য বিকিরণ নিশ্চিত করবে অসহনীয় দুর্ভোগে ভরা দীর্ঘ জীবন। ঘণ্টা দুয়েকের মধ্যেই হাজার বছরের ইতিহাসসংস্কৃতি ও সভ্যতা ধ্বংসস্তূপে পরিণত হবেদুই দেশে অসংখ্য বৃহৎ শহর নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে। এই বোমা কাউকেই রেহাই দেবে নানারী-পুরুষশিশু-বৃদ্ধ সবাই আক্রান্ত হবে।

পরবর্তী সপ্তাহে আরও কোটি কোটি মানুষ আঘাতজনিত জটিলতা বা বিকিরণজনিত রোগে মারা যাবে। উপমহাদেশের স্বাস্থ্য ও খাদ্য সরবরাহ-ব্যবস্থা ভেঙে পড়ায় ব্যাপক রোগবালাই ও দুর্ভিক্ষ দেখা দেবে। এর প্রভাব কেবল এই অঞ্চলেই সীমাবদ্ধ থাকবে নাবোমা ও তৎপরবর্তী অগ্নিকাণ্ড বায়ুতে তেজস্ক্রিয় কণা ছড়িয়ে দেবেযা বিশ্বময় ঘুরে বেড়াবে পারমাণবিক শীত’ ডেকে আনবে এবং কৃষি উৎপাদন বিধ্বস্ত করবে। ফলে বিশ্বজুড়ে আরও শত কোটি মানুষ অনাহারের ঝুঁকিতে পড়বে।

এই তুলনায় দুই দেশের মধ্যকার বিরোধগুলো যথেষ্ট নিয়ন্ত্রণযোগ্য বলেই মনে হয়। সেগুলোর সমাধানে কাজ করাই অনেক বেশি বুদ্ধিমানের কাজবিশ্ব ধ্বংসের ঝুঁকি নেওয়ার তুলনায়। এ ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক কূটনীতি হয়তো উত্তেজনা কমিয়েছেকিন্তু টেকসই শান্তি কেবল ভারত ও পাকিস্তানের নেতৃত্বের রাজনৈতিক সদিচ্ছা ও প্রজ্ঞার ফলেই আসতে পারে। এই দায়িত্ব অন্য কারও কাছে অর্পণ করা সম্ভব নয়।

পাকিস্তান-ভারত সংঘাত নিয়ে ডনের সম্পাদকীয়

০৫:১৭:৩৯ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৬ মে ২০২৫

সংকট এড়ানো

পাকিস্তান ও ভারত যখন তাদের হতাহতদের হিসাব করছেআহতদের চিকিৎসা দিচ্ছে এবং নিহতদের জন্য শোক প্রকাশ করছেতখন দুই দেশের নেতৃত্ব ও জনগণকে নিজেদেরই প্রশ্ন করা উচিতঅন্তহীন এই দ্বন্দ্ব কি সত্যিই তাদের স্বার্থে?

গত সপ্তাহে দুই দেশের সামরিক মুখোমুখি সংঘর্ষ সীমিত হলেও পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধে সীমান্তের উভয় পাশে যে ধ্বংস নেমে আসতে পারেতার কেবল এক ঝলকই দেখা গেছে। দুই পক্ষের মধ্যে যুদ্ধবিরতি আনতে মধ্যস্থতা করা মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেছেনতাঁর প্রশাসন একটি সম্ভাব্য পারমাণবিক সংঘর্ষ ঠেকাতে সহায়তা করেছে।

শত্রুতা যদি সেই পর্যায়ে পৌঁছাততবে ভারত ও পাকিস্তানউভয় দেশের নেতৃত্বই তাদের সবচেয়ে মৌলিক দায়িত্বঅর্থাৎ বিপর্যয় প্রতিরোধে ব্যর্থ হতো। পারমাণবিক শক্তিধর রাষ্ট্র হিসেবে উভয়েরই ক্ষমতা সর্বোচ্চ দায়িত্বশীলতা ও অসীম সংযমের সঙ্গে পরিচালনার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। সর্বাত্মক যুদ্ধ এড়ানো দুই দেশের কৌশলগত স্বার্থেযুদ্ধবিরতি কোনো ছাড় নয়বরং অপূরণীয় ক্ষতি প্রতিরোধে অপরিহার্য ধাপ।

পাকিস্তানের মূল ভূখণ্ডে হামলা চালিয়ে শত্রুতা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত ভারতের জন্য চরম উসকানিমূলক ও গুরুতর ভুল হিসেব প্রমাণ হয়েছে। সীমান্তের দুই পাশে গণমাধ্যমের উল্লাসমুখর উস্কানিও পরিস্থিতি ঘোলাটে করেছে। আক্রমণ-পাল্টা আক্রমণের চাপ এত বেড়েছিল যে মনে হচ্ছিল উভয় দেশই পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধে জড়াতে প্রস্তুত। এখনপেছন ফিরে তাকিয়ে বলা হচ্ছেআমরা নাকি পারমাণবিক যুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে গিয়েছিলাম। উভয় দেশের নাগরিকদের বুঝতে হবেসেটি ঘটলে তার পরিণতি কী ভয়াবহ হতো।

কখনও পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহৃত হলে তার পরিণতি কল্পনাতীত বিপর্যয় ডেকে আনবে। যারা প্রাথমিক বিস্ফোরণে বেঁচে যাবেতাদের জন্য বিকিরণ নিশ্চিত করবে অসহনীয় দুর্ভোগে ভরা দীর্ঘ জীবন। ঘণ্টা দুয়েকের মধ্যেই হাজার বছরের ইতিহাসসংস্কৃতি ও সভ্যতা ধ্বংসস্তূপে পরিণত হবেদুই দেশে অসংখ্য বৃহৎ শহর নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে। এই বোমা কাউকেই রেহাই দেবে নানারী-পুরুষশিশু-বৃদ্ধ সবাই আক্রান্ত হবে।

পরবর্তী সপ্তাহে আরও কোটি কোটি মানুষ আঘাতজনিত জটিলতা বা বিকিরণজনিত রোগে মারা যাবে। উপমহাদেশের স্বাস্থ্য ও খাদ্য সরবরাহ-ব্যবস্থা ভেঙে পড়ায় ব্যাপক রোগবালাই ও দুর্ভিক্ষ দেখা দেবে। এর প্রভাব কেবল এই অঞ্চলেই সীমাবদ্ধ থাকবে নাবোমা ও তৎপরবর্তী অগ্নিকাণ্ড বায়ুতে তেজস্ক্রিয় কণা ছড়িয়ে দেবেযা বিশ্বময় ঘুরে বেড়াবে পারমাণবিক শীত’ ডেকে আনবে এবং কৃষি উৎপাদন বিধ্বস্ত করবে। ফলে বিশ্বজুড়ে আরও শত কোটি মানুষ অনাহারের ঝুঁকিতে পড়বে।

এই তুলনায় দুই দেশের মধ্যকার বিরোধগুলো যথেষ্ট নিয়ন্ত্রণযোগ্য বলেই মনে হয়। সেগুলোর সমাধানে কাজ করাই অনেক বেশি বুদ্ধিমানের কাজবিশ্ব ধ্বংসের ঝুঁকি নেওয়ার তুলনায়। এ ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক কূটনীতি হয়তো উত্তেজনা কমিয়েছেকিন্তু টেকসই শান্তি কেবল ভারত ও পাকিস্তানের নেতৃত্বের রাজনৈতিক সদিচ্ছা ও প্রজ্ঞার ফলেই আসতে পারে। এই দায়িত্ব অন্য কারও কাছে অর্পণ করা সম্ভব নয়।