০৮:২১ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৪ জুলাই ২০২৫

এলএনজি নিয়ে ট্রাম্পের চাপে ভিয়েতনামের সরে আসা

  • Sarakhon Report
  • ০৬:৩০:৩১ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৬ মে ২০২৫
  • 88

সারাক্ষণ রিপোর্ট

বাণিজ্য ঘাটতির চাপ

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প হুমকি দিয়েছেন, ভিয়েতনামের বিপুল বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে না পারলে দেশটির পণ্যের ওপর ৪৬ শতাংশ শুল্ক বসানো হবে। ২০২৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ভিয়েতনামের ঘাটতি ছিল ১ লাখ ২৩ হাজার কোটি ডলার, যা চীনের পর তৃতীয় সর্বোচ্চ। শুল্কের ভয় কাটাতে ভিয়েতনামের কমিউনিস্ট পার্টির প্রধান তো লাম ৪ এপ্রিল ট্রাম্পকে ফোন করে জানিয়েছেন—চুক্তি হলেই ভিয়েতনাম সব মার্কিন পণ্যের ওপর শুল্ক শূন্য করবে।

চাপে ত্বরিত এলএনজি চুক্তি

শুল্ক-ঝুঁকি সামলাতে মার্চের মাঝামাঝি পেট্রোভিয়েতনাম গ্যাস টেক্সাসভিত্তিক এক্সেলারেট এনার্জি ও কনোকোফিলিপসের সঙ্গে এলএনজি আমদানির প্রাথমিক চুক্তি করে। ২০২৬ থেকে বছরে ৯ মিলিয়ন টন এলএনজি আমদানির লক্ষ্য ২০৩০ সালে পৌঁছবে; ২০৩৫ সালে এই হার দাঁড়াবে ১৫ মিলিয়ন টন, সম্ভাব্য ব্যয় ৭.২ বিলিয়ন ডলার। পাশাপাশি পেট্রোভিয়েতনাম পাওয়ার ৪.৫ বিলিয়ন ডলারে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক জিই ভারনোভা থেকে গ্যাসবিদ্যুৎকেন্দ্রের যন্ত্রপাতি কিনবে।

জলবায়ু লক্ষ্য বনাম গ্যাস-নির্ভরতা

ভিয়েতনাম ২০২১-এর কোপ২৬ সম্মেলনে ২০৫০ সালের মধ্যে নেট শূন্য কার্বন নির্গমন লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছে। কিন্তু দীর্ঘমেয়াদি এলএনজি চুক্তি ও ২০৩৫-এর আগে নির্গমন সীমাবদ্ধ করার প্রতিশ্রুতি পরস্পর-বিরোধী। গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদনে কয়লার তুলনায় দূষণ কম হলেও একেবারে শূন্য নয়; পুরো সরবরাহশৃঙ্খলেই মিথেন-নির্গমন বড় মাথাব্যথা, যা কার্বন ডাই-অক্সাইডের চেয়ে ২০ বছরে প্রায় ৮০ গুণ বেশি তাপ ধরে রাখে।

নবায়নযোগ্য খাতে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি

সবকিছু সত্ত্বেও গত পাঁচ বছরে নবায়নযোগ্য সক্ষমতায় ভিয়েতনাম দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় শীর্ষে। ২০১৫ সালে সৌরবিদ্যুৎ ছিল মাত্র ৪ মেগাওয়াট; ২০২৩-এর শেষে এটি ১৮.৬ গিগাওয়াটে পৌঁছে ভিয়েতনামকে বিশ্বের শীর্ষ দশে তুলেছে। তবে এই অগ্রগতি ম্লান করে দিচ্ছে ২০৩০-এর পরেও কয়লায় নির্ভরতা ও গ্যাসকে ‘পরিবর্তনকালীন জ্বালানি’ হিসেবে বেছে নেওয়া। ক্লাইমেট অ্যাকশন ট্র্যাকার ভিয়েতনামের জলবায়ু-সংক্রান্ত প্রতিশ্রুতিকে ‘অত্যন্ত অপর্যাপ্ত’ আখ্যা দিয়েছে।

ভবিষ্যৎ পথ — পুনর্বিবেচনার তাগিদ

বিশেষজ্ঞদের মতে, ভিয়েতনামকে দ্রুত কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ থেকে সরে এসে গ্যাস-নির্ভরতা না বাড়িয়ে নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে বিনিয়োগ বাড়াতে হবে, বিশেষত অফশোর বায়ু-বিদ্যুতে। দেশটির ৩,০০০ কিলোমিটার উপকূল ৬০০ গিগাওয়াট সম্ভাব্য সামুদ্রিক বায়ু-শক্তির ভাণ্ডার; উপকূল থেকে ২০০ কিলোমিটারের মধ্যে ৪৭৫ গিগাওয়াট সম্ভাবনা, যা ২০২১-এর মোট স্থাপিত ক্ষমতার ছয় গুণ। এই কার্ড টেনে ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনায় গ্যাস-চুক্তির বদলে নবায়নযোগ্য বিনিয়োগ আদায় করতেই পারে হ্যানয়।Vietnam caves to Trump on LNG, undermining climate credibility – Nikkei Asia

এলএনজি নিয়ে ট্রাম্পের চাপে ভিয়েতনামের সরে আসা

০৬:৩০:৩১ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৬ মে ২০২৫

সারাক্ষণ রিপোর্ট

বাণিজ্য ঘাটতির চাপ

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প হুমকি দিয়েছেন, ভিয়েতনামের বিপুল বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে না পারলে দেশটির পণ্যের ওপর ৪৬ শতাংশ শুল্ক বসানো হবে। ২০২৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ভিয়েতনামের ঘাটতি ছিল ১ লাখ ২৩ হাজার কোটি ডলার, যা চীনের পর তৃতীয় সর্বোচ্চ। শুল্কের ভয় কাটাতে ভিয়েতনামের কমিউনিস্ট পার্টির প্রধান তো লাম ৪ এপ্রিল ট্রাম্পকে ফোন করে জানিয়েছেন—চুক্তি হলেই ভিয়েতনাম সব মার্কিন পণ্যের ওপর শুল্ক শূন্য করবে।

চাপে ত্বরিত এলএনজি চুক্তি

শুল্ক-ঝুঁকি সামলাতে মার্চের মাঝামাঝি পেট্রোভিয়েতনাম গ্যাস টেক্সাসভিত্তিক এক্সেলারেট এনার্জি ও কনোকোফিলিপসের সঙ্গে এলএনজি আমদানির প্রাথমিক চুক্তি করে। ২০২৬ থেকে বছরে ৯ মিলিয়ন টন এলএনজি আমদানির লক্ষ্য ২০৩০ সালে পৌঁছবে; ২০৩৫ সালে এই হার দাঁড়াবে ১৫ মিলিয়ন টন, সম্ভাব্য ব্যয় ৭.২ বিলিয়ন ডলার। পাশাপাশি পেট্রোভিয়েতনাম পাওয়ার ৪.৫ বিলিয়ন ডলারে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক জিই ভারনোভা থেকে গ্যাসবিদ্যুৎকেন্দ্রের যন্ত্রপাতি কিনবে।

জলবায়ু লক্ষ্য বনাম গ্যাস-নির্ভরতা

ভিয়েতনাম ২০২১-এর কোপ২৬ সম্মেলনে ২০৫০ সালের মধ্যে নেট শূন্য কার্বন নির্গমন লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছে। কিন্তু দীর্ঘমেয়াদি এলএনজি চুক্তি ও ২০৩৫-এর আগে নির্গমন সীমাবদ্ধ করার প্রতিশ্রুতি পরস্পর-বিরোধী। গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদনে কয়লার তুলনায় দূষণ কম হলেও একেবারে শূন্য নয়; পুরো সরবরাহশৃঙ্খলেই মিথেন-নির্গমন বড় মাথাব্যথা, যা কার্বন ডাই-অক্সাইডের চেয়ে ২০ বছরে প্রায় ৮০ গুণ বেশি তাপ ধরে রাখে।

নবায়নযোগ্য খাতে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি

সবকিছু সত্ত্বেও গত পাঁচ বছরে নবায়নযোগ্য সক্ষমতায় ভিয়েতনাম দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় শীর্ষে। ২০১৫ সালে সৌরবিদ্যুৎ ছিল মাত্র ৪ মেগাওয়াট; ২০২৩-এর শেষে এটি ১৮.৬ গিগাওয়াটে পৌঁছে ভিয়েতনামকে বিশ্বের শীর্ষ দশে তুলেছে। তবে এই অগ্রগতি ম্লান করে দিচ্ছে ২০৩০-এর পরেও কয়লায় নির্ভরতা ও গ্যাসকে ‘পরিবর্তনকালীন জ্বালানি’ হিসেবে বেছে নেওয়া। ক্লাইমেট অ্যাকশন ট্র্যাকার ভিয়েতনামের জলবায়ু-সংক্রান্ত প্রতিশ্রুতিকে ‘অত্যন্ত অপর্যাপ্ত’ আখ্যা দিয়েছে।

ভবিষ্যৎ পথ — পুনর্বিবেচনার তাগিদ

বিশেষজ্ঞদের মতে, ভিয়েতনামকে দ্রুত কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ থেকে সরে এসে গ্যাস-নির্ভরতা না বাড়িয়ে নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে বিনিয়োগ বাড়াতে হবে, বিশেষত অফশোর বায়ু-বিদ্যুতে। দেশটির ৩,০০০ কিলোমিটার উপকূল ৬০০ গিগাওয়াট সম্ভাব্য সামুদ্রিক বায়ু-শক্তির ভাণ্ডার; উপকূল থেকে ২০০ কিলোমিটারের মধ্যে ৪৭৫ গিগাওয়াট সম্ভাবনা, যা ২০২১-এর মোট স্থাপিত ক্ষমতার ছয় গুণ। এই কার্ড টেনে ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনায় গ্যাস-চুক্তির বদলে নবায়নযোগ্য বিনিয়োগ আদায় করতেই পারে হ্যানয়।Vietnam caves to Trump on LNG, undermining climate credibility – Nikkei Asia