০৬:০১ অপরাহ্ন, শনিবার, ২১ জুন ২০২৫

আমেরিকার প্রথম সৌদি প্রেসিডেন্ট!

  • Sarakhon Report
  • ০৭:০০:২৭ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৭ মে ২০২৫
  • 52

সারাক্ষণ রিপোর্ট

ডোনাল্ড ট্রাম্পকে রিয়াদের রসিকেরা মাঝেমধ্যেই আমেরিকার প্রথম সৌদি প্রেসিডেন্ট’ বলে তির্যক প্রশংসা করেন। ব্যক্তিগত সম্পর্কের উষ্ণতায় ট্রাম্প সাম্প্রতিক দশকের অন্য যেকোনো মার্কিন নেতৃত্বকে ছাপিয়ে গেছেন। তবে ব্যক্তিগত সৌহার্দ্যের আড়ালে ওয়াশিংটন ও রিয়াদের কৌশলগত লক্ষ্য এখনো সমন্বয় খুঁজে পায়নি।

ব্যক্তিগত মিল বনাম নীতিগত ফারাক
ট্রাম্পের রাজকীয় আচার-আচরণপারিবারিক ব্যবসা ও রাষ্ট্রীয় স্বার্থের মিশেলসবকিছুই সৌদি শাসকগোষ্ঠীর কাছে পরিচিত দৃশ্য। ১৩ মে শুরু হওয়া তাঁর তিন-দেশীয় উপসাগর সফরে সৌদিরা তাকে উষ্ণ অভ্যর্থনাই দেবে। কিন্তু নীতিগত দিক থেকে দুপক্ষের মতভেদই বড় বাধা।

২০১৭ সালের অস্থিরতা: সৌদি কাউবয়’ রূপে
ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে সৌদি আরবই ছিল অঞ্চলের সবচেয়ে অস্থির উসকানি। ইয়েমেনে যুদ্ধকাতার অবরোধলেবাননের প্রধানমন্ত্রী অপহরণ ও ইস্তাম্বুলে সাংবাদিক খাশোগি হত্যাসহ একের পর এক ঘটনা ওয়াশিংটনকে বিপাকে ফেলেছিল। কাতার অবরোধে মধ্যপ্রাচ্যের শীর্ষ মিত্রদের ভেতরেই ফাটল ধরে।

২০২৫ সালের অস্থিরতা: এবার ট্রাম্প ঝড় তোলে
এবার উল্টো চিত্র। মার্চে ট্রাম্প ইয়েমেনে হুতি বিদ্রোহীদের লক্ষ করে বোমাবৃষ্টি শুরু করেনগাজায় যুদ্ধবিরতি ভাঙতে ইসরায়েলকে ছাড় দেনআসাদ-পরবর্তী সিরিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা বহাল রাখেন। তার ওপরপ্রেসিডেন্ট হওয়ার পর থেকে তেলের দাম ২২ শতাংশ কমে সৌদির আয়ের বড় ধাক্কা লেগেছে।

ইয়েমেনের হুদাইদা ও নীরব সৌদি
২০১৭-তে সৌদি আরব হুদাইদা পুনর্দখলে মার্কিন সমর্থন চেয়েছিল। তখনো ট্রাম্প দ্বিধায় ছিলেনকারণ খাদ্য আমদানিনির্ভর ইয়েমেনে দুর্ভিক্ষের শঙ্কা ছিল। ৫ মেদ্বিতীয় সফরের ঠিক আগে আমেরিকা ইসরায়েলি জেট দিয়ে হুদাইদায় হামলা চালালে এবার সৌদি নীরব থাকেউল্টো তারা পরিণতি নিয়ে শঙ্কিত।

সৌদির নীতি-পরিবর্তন
৬ মে সাত সপ্তাহের বোমাবর্ষণ স্থগিত করার পর পরিস্থিতি শান্ত। এখন সৌদির মূল অগ্রাধিকারভিশন ২০৩০ অর্থনৈতিক রূপকল্প নিরাপদ রাখা। পর্যটক আনতে গিয়ে ক্ষেপণাস্ত্রের ভয় কেউই চায় না। তাই কূটনীতিতে মসৃণতা এসেছে: ইয়েমেন যুদ্ধ ও কাতার বিরোধের অবসানইরানের সঙ্গে পুনঃসম্পর্কসিরিয়ার ঋণ শোধে সহযোগিতা ও লেবানন ভ্রমণ-নিষেধাজ্ঞা শিথিলের প্রস্তুতি।

আমেরিকার দ্বিধা
প্রেসিডেন্ট বদলালে আমেরিকার মধ্যপ্রাচ্য নীতি আবার শূন্য থেকে শুরু হয়। ট্রাম্প একইসঙ্গে যুদ্ধ বন্ধের প্রতিশ্রুতি ও ইরান-বিরোধী কঠোর অবস্থান বজায় রাখতে চানদুটি লক্ষ্যই সমান্তরাল নয়। শুল্কসহায়তা ছাঁটাই ও নিষেধাজ্ঞা মিলিয়ে তিনি যে সমৃদ্ধ নতুন মধ্যপ্রাচ্য’ চানবাস্তবে তা উল্টো পথে টানছে।

চুক্তির নতুন সমীকরণ?
১৯৪৫-এর তেল-বনাম-নিরাপত্তা সমঝোতা এখন অচল। যুক্তরাষ্ট্র ও সৌদি আরব চাইলে সিরিয়া স্থিতিশীলতাআঞ্চলিক বাণিজ্য সংযোগ ইত্যাদি যৌথ স্বার্থে নতুন অধ্যায় খুলতে পারে। কিন্তু ট্রাম্প প্রশাসনের অস্থির নীতি দীর্ঘমেয়াদি লক্ষ্য সাধনের পথ রুদ্ধ করে।

লেনদেনের বন্ধনেই আটকে থাকবে সম্পর্ক
ট্রাম্প রিয়াদ ত্যাগের আগে এক ট্রিলিয়ন ডলারের বাণিজ্য-বিনিয়োগ ও ১০০ বিলিয়ন ডলারের অস্ত্র চুক্তির স্বপ্ন দেখছেনযথাক্রমে সৌদির বাৎসরিক জিডিপি ও প্রতিরক্ষা বাজেটকে অতিক্রম করে যাওয়া অংক। সৌদির আশাঅন্তত একটি আনুষ্ঠানিক প্রতিরক্ষা চুক্তি হবে। রাজনীতি বদলালেওদুদেশের সম্পর্ক এখনও পুরনো লেনদেনেই আবদ্ধ।

আমেরিকার প্রথম সৌদি প্রেসিডেন্ট!

০৭:০০:২৭ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৭ মে ২০২৫

সারাক্ষণ রিপোর্ট

ডোনাল্ড ট্রাম্পকে রিয়াদের রসিকেরা মাঝেমধ্যেই আমেরিকার প্রথম সৌদি প্রেসিডেন্ট’ বলে তির্যক প্রশংসা করেন। ব্যক্তিগত সম্পর্কের উষ্ণতায় ট্রাম্প সাম্প্রতিক দশকের অন্য যেকোনো মার্কিন নেতৃত্বকে ছাপিয়ে গেছেন। তবে ব্যক্তিগত সৌহার্দ্যের আড়ালে ওয়াশিংটন ও রিয়াদের কৌশলগত লক্ষ্য এখনো সমন্বয় খুঁজে পায়নি।

ব্যক্তিগত মিল বনাম নীতিগত ফারাক
ট্রাম্পের রাজকীয় আচার-আচরণপারিবারিক ব্যবসা ও রাষ্ট্রীয় স্বার্থের মিশেলসবকিছুই সৌদি শাসকগোষ্ঠীর কাছে পরিচিত দৃশ্য। ১৩ মে শুরু হওয়া তাঁর তিন-দেশীয় উপসাগর সফরে সৌদিরা তাকে উষ্ণ অভ্যর্থনাই দেবে। কিন্তু নীতিগত দিক থেকে দুপক্ষের মতভেদই বড় বাধা।

২০১৭ সালের অস্থিরতা: সৌদি কাউবয়’ রূপে
ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে সৌদি আরবই ছিল অঞ্চলের সবচেয়ে অস্থির উসকানি। ইয়েমেনে যুদ্ধকাতার অবরোধলেবাননের প্রধানমন্ত্রী অপহরণ ও ইস্তাম্বুলে সাংবাদিক খাশোগি হত্যাসহ একের পর এক ঘটনা ওয়াশিংটনকে বিপাকে ফেলেছিল। কাতার অবরোধে মধ্যপ্রাচ্যের শীর্ষ মিত্রদের ভেতরেই ফাটল ধরে।

২০২৫ সালের অস্থিরতা: এবার ট্রাম্প ঝড় তোলে
এবার উল্টো চিত্র। মার্চে ট্রাম্প ইয়েমেনে হুতি বিদ্রোহীদের লক্ষ করে বোমাবৃষ্টি শুরু করেনগাজায় যুদ্ধবিরতি ভাঙতে ইসরায়েলকে ছাড় দেনআসাদ-পরবর্তী সিরিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা বহাল রাখেন। তার ওপরপ্রেসিডেন্ট হওয়ার পর থেকে তেলের দাম ২২ শতাংশ কমে সৌদির আয়ের বড় ধাক্কা লেগেছে।

ইয়েমেনের হুদাইদা ও নীরব সৌদি
২০১৭-তে সৌদি আরব হুদাইদা পুনর্দখলে মার্কিন সমর্থন চেয়েছিল। তখনো ট্রাম্প দ্বিধায় ছিলেনকারণ খাদ্য আমদানিনির্ভর ইয়েমেনে দুর্ভিক্ষের শঙ্কা ছিল। ৫ মেদ্বিতীয় সফরের ঠিক আগে আমেরিকা ইসরায়েলি জেট দিয়ে হুদাইদায় হামলা চালালে এবার সৌদি নীরব থাকেউল্টো তারা পরিণতি নিয়ে শঙ্কিত।

সৌদির নীতি-পরিবর্তন
৬ মে সাত সপ্তাহের বোমাবর্ষণ স্থগিত করার পর পরিস্থিতি শান্ত। এখন সৌদির মূল অগ্রাধিকারভিশন ২০৩০ অর্থনৈতিক রূপকল্প নিরাপদ রাখা। পর্যটক আনতে গিয়ে ক্ষেপণাস্ত্রের ভয় কেউই চায় না। তাই কূটনীতিতে মসৃণতা এসেছে: ইয়েমেন যুদ্ধ ও কাতার বিরোধের অবসানইরানের সঙ্গে পুনঃসম্পর্কসিরিয়ার ঋণ শোধে সহযোগিতা ও লেবানন ভ্রমণ-নিষেধাজ্ঞা শিথিলের প্রস্তুতি।

আমেরিকার দ্বিধা
প্রেসিডেন্ট বদলালে আমেরিকার মধ্যপ্রাচ্য নীতি আবার শূন্য থেকে শুরু হয়। ট্রাম্প একইসঙ্গে যুদ্ধ বন্ধের প্রতিশ্রুতি ও ইরান-বিরোধী কঠোর অবস্থান বজায় রাখতে চানদুটি লক্ষ্যই সমান্তরাল নয়। শুল্কসহায়তা ছাঁটাই ও নিষেধাজ্ঞা মিলিয়ে তিনি যে সমৃদ্ধ নতুন মধ্যপ্রাচ্য’ চানবাস্তবে তা উল্টো পথে টানছে।

চুক্তির নতুন সমীকরণ?
১৯৪৫-এর তেল-বনাম-নিরাপত্তা সমঝোতা এখন অচল। যুক্তরাষ্ট্র ও সৌদি আরব চাইলে সিরিয়া স্থিতিশীলতাআঞ্চলিক বাণিজ্য সংযোগ ইত্যাদি যৌথ স্বার্থে নতুন অধ্যায় খুলতে পারে। কিন্তু ট্রাম্প প্রশাসনের অস্থির নীতি দীর্ঘমেয়াদি লক্ষ্য সাধনের পথ রুদ্ধ করে।

লেনদেনের বন্ধনেই আটকে থাকবে সম্পর্ক
ট্রাম্প রিয়াদ ত্যাগের আগে এক ট্রিলিয়ন ডলারের বাণিজ্য-বিনিয়োগ ও ১০০ বিলিয়ন ডলারের অস্ত্র চুক্তির স্বপ্ন দেখছেনযথাক্রমে সৌদির বাৎসরিক জিডিপি ও প্রতিরক্ষা বাজেটকে অতিক্রম করে যাওয়া অংক। সৌদির আশাঅন্তত একটি আনুষ্ঠানিক প্রতিরক্ষা চুক্তি হবে। রাজনীতি বদলালেওদুদেশের সম্পর্ক এখনও পুরনো লেনদেনেই আবদ্ধ।