সারাক্ষণ রিপোর্ট
সাত সপ্তাহে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইয়েমেনের ইরানসমর্থিত হুথি বিদ্রোহীদের ওপর প্রায় ১,০০০ বার বোমা হামলা চালান—তার পূর্বসূরি পুরো এক বছরে যে সংখ্যক হামলা করেন, তার দ্বিগুণ। এরপর আকস্মিকভাবে ৬ মে বোমাবর্ষণ বন্ধ করে দেন তিনি। কানাডার প্রধানমন্ত্রীকে পাশে নিয়ে দেয়া সংবাদ সম্মেলনে ট্রাম্প ঘোষণা করেন, হুথিদের সঙ্গে একটি সমঝোতায় পৌঁছেছেন: হুথিরা লোহিত সাগরে বাণিজ্যিক জাহাজে হামলা বন্ধ করবে, আর আমেরিকা বোমা হামলা থামাবে। ওমানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বদর আলবুসাইদি, যিনি মধ্যস্থতা করেন, এটিকে “আন্তর্জাতিক জাহাজ চলাচলের স্বাধীনতা” বলে টুইট করেন।
মার্কিন কৌশল বদলের কারণ
১ শ’ কোটি ডলারের সামরিক অভিযানের খরচ ক্রমেই বাড়ছিল। তারপরও হুথিদের দমিয়ে রাখা যাচ্ছিল না, বরং হামলা আরও ছড়িয়ে পড়ছিল। মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি প্রচারে যাওয়ার ঠিক আগে বাড়তি সংঘাতের ঝুঁকি ট্রাম্প নিতে চাননি। এরই মধ্যে হুথি-সমর্থন প্রশ্নে হুঁশিয়ারি দেয়ায় ইরান পরমাণু আলোচনা স্থগিত করেছিল। ৪ মে হুথিদের একটি ক্ষেপণাস্ত্র ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা ভেদ করে তেল আবিবের প্রধান বিমানবন্দরের উপকণ্ঠে আঘাত হানে; পাল্টা জবাবে ইসরায়েল ইয়েমেনের হোদেইদা বন্দরসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ধ্বংস করে। যুক্তরাষ্ট্র–ইসরায়েল বনাম ইরান ও তার মিত্রদের পুরোনো রূপ যেন ফিরে এসেছিল।
ইরান–আমেরিকা আলোচনার গতি
সমঝোতার সরাসরি সুবিধা পেল ইরান। হুথি ইস্যু আড়ালে সরায় ট্রাম্প প্রশাসন, আর তাতেই টেবিলে ফেরেন ইরানি আলোচকরা। দু’পক্ষ দ্রুতই চতুর্থ দফার আলোচনা শুরুর ঘোষণা দেয়। আলোচনায় ৪৫ বছর পর কূটনৈতিক সম্পর্ক পুনঃস্থাপনের খসড়া চুক্তি ঘুরছে বলে জানানো হয়, যেখানে ইরান কম মাত্রায় ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করতে পারবে। ১৩ মে উপসাগর সফরের আগে ট্রাম্প “অত্যন্ত বড় ঘোষণা” আসছে বলে ইঙ্গিত দেন।
হুথিদের অবস্থান ও ইয়েমেনের বাস্তবতা
ট্রাম্প বলেছেন, হুথিরা নতি স্বীকার করেছে; বিদ্রোহীরা দাবি করছে, আমেরিকাই পিছু হ্টেছে। ব্যাপক হামলায় তাদের দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র সামর্থ্য অনেকটাই ক্ষতিগ্রস্ত, তবে মুছে যায়নি। জাতিসংঘের হিসাবে ২০১৫ সাল থেকে তাদের যোদ্ধা ১২ গুণ বেড়ে ৩.৫ লাখে পৌঁছেছে—ইয়েমেনের সবচেয়ে শক্ত বাহিনী এখন তারাই। এক দশকের অবরোধ ও বিমান হামলায় দেশের অবকাঠামো ধ্বংসপ্রাপ্ত; হুথিরা উচ্চ হারে কর তুললেও সেবা খাতে আগ্রহ কম, বরং সামরিক শক্তি ও মতাদর্শগত নিয়ন্ত্রণে মনোযোগী। পর্যবেক্ষকদের আশঙ্কা, তারা এবার মারিব ও শাবওয়াসহ তেলক্ষেত্র দখলে ঝাঁপাতে পারে।
ইসরায়েলের প্রতি অস্বাভাবিক নির্মোহতা
মার্চে ইসরায়েলের ওপর হুথি হামলা বাড়ায় ট্রাম্প অভিযান শুরু করেছিলেন; অথচ সমঝোতা ইসরায়েলবিরোধী ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া থামায়নি। গাজার অবরোধ অব্যাহত থাকলে হুথিরা ইসরায়েলকে নিশানা রাখবে বলেই জানিয়েছে। নেটানিয়াহুর প্রতি ট্রাম্পের বিরক্তি, না-কি ইরানের সঙ্গে চুক্তি পেতে দৃঢ় সংকল্প—যাই হোক, ইসরায়েলকে অন্ধকারে রেখে পাশ কাটিয়ে যাওয়া বেশ নজরকাড়া।
ভবিষ্যৎ প্রভাব
চুক্তি ভঙ্গ হলে কূটনৈতিক অগ্রগতি থমকে যাওয়ার ঝুঁকি রয়ে গেছে। তবে আপাতত মধ্যপ্রাচ্যের পুরোনো শত্রুতা থেকে সরে এসে ওয়াশিংটন ও তেহরানের মধ্যে বিরল সমঝোতার সুযোগ তৈরি হয়েছে। ইয়েমেনের সাধারণ মানুষের দুঃখ না ঘোচালেও আঞ্চলিক কূটনীতিতে এ সমাধান বড় ধরনের মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছে।