১১:২১ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৪ অক্টোবর ২০২৫
‘ওয়ান ব্যাটল আফটার অ্যানাদার’: প্রশংসায় ভাসলেও কেন বক্স অফিসে ব্যর্থ পল টমাস অ্যান্ডারসনের নতুন ছবি উপদেষ্টাদের ‘পক্ষপাত’ নিয়ে কোন দলের কী অবস্থান চীনে অবিবাহিত সন্তানদের জন্য পাত্র-পাত্রীর খোঁজে প্রবীণদের ভিড়—‘বিবাহবাজার’ হয়ে উঠেছে পার্ক নাসার সঙ্গে স্পেসএক্সের চাঁদ মিশনে অনিশ্চয়তা—এলন মাস্কের তীব্র আক্রমণ শন ডাফির বিরুদ্ধে কেভিন পার্কারের নতুন অ্যালবাম ‘ডেডবিট’: প্রযুক্তিগত পরিপূর্ণতায় হারিয়ে যাওয়া মানবিক স্পর্শ বিএনপি, জামায়াতের চোখে বিতর্কিত উপদেষ্টা কারা মোহাম্মদপুরে ভয় ও অনিশ্চয়তার ছায়া—এক বছরে বেড়েছে বোমা বিস্ফোরণ, গ্যাং সহিংসতা ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ধানের শীষে ভোট দিন’ -তালিমুদ্দিন মাদ্রাসা মাঠে জনসভায় বিএনপি নেতা কাজী গনি চৌধুরীর বক্তব্য দুর্যোগ ও জরুরি পরিস্থিতিতে সহজলভ্য মানসিক স্বাস্থ্য সহায়তা নিশ্চিতের তাগিদ বিশেষজ্ঞদের বাংলাদেশে বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন জরুরি—জার্মান রাষ্ট্রদূত রুডিগার লোটজ

ন্যাটো কি পরবর্তী লক্ষ্য? রাশিয়া সামরিক শক্তি বাড়িয়ে প্রতিবেশীদের ভয় জাগাচ্ছে

  • Sarakhon Report
  • ০১:৪৮:৩৩ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৯ মে ২০২৫
  • 157

সারাক্ষণ রিপোর্ট

সীমান্তে অস্বস্তির ছায়া

এস্তোনিয়ার নরভা নদীর উপর হেরমান দুর্গ ও ইভানগোরোদ দুর্গের মাঝের সেতুযা দেশ দুটির সীমান্তএখন মুক্ত বিশ্বের প্রান্ত’ বলে পরিচিত। রুশ পক্ষের নতুন বিশাল স্ক্রিনে ৯ মে-র বিজয় দিবসের প্যারেড দেখানো হয়আর নদীর গর্জন যেন অতীত দখলের স্মৃতি ফিরিয়ে আনে। নিয়মিত জিপিএস চ্যানেল জ্যামসীমান্ত চিহ্নিতকারী বয়া তুলে নেওয়া ও নজরদারি বেলুনএসবই প্রতিবেশীদের উদ্বেগ বাড়াচ্ছে।

রাশিয়ার পুনর্গঠন পরিকল্পনা

মস্কো ঘোষণা করেছে সক্রিয় বাহিনী ১৩ লাখ থেকে বাড়িয়ে ১৫ লাখ করবে। ফিনল্যান্ড সীমান্ত ঘেঁষে কারেলিয়ায় ৪৪তম আর্মি কোর গঠন শুরু হয়েছেকয়েকটি ব্রিগেডকে পূর্ণাঙ্গ ডিভিশনে উন্নীত করা হচ্ছে। পরিকল্পনা বাস্তবায়ন শেষ হতে বছর কয়েক লাগবেকিন্তু সফল হলে পশ্চিম সীমান্তে সৈন্য-সরঞ্জাম ৩০-৫০ শতাংশ বেড়ে যাবে বলে লিথুয়ানিয়ার গোয়েন্দাদের ধারণা।

উদ্দেশ্য বনাম সামর্থ্য

এখনই ন্যাটো আক্রমণের কোনো সুনির্দিষ্ট গোয়েন্দা তথ্য নেইতবে ভ্লাদিমির পুতিনের বক্তব্যে সাবেক রুশ সাম্রাজ্যের ভূখণ্ড পুনরুদ্ধারের আভাস মিলেছে। ক্ষমতা টিকিয়ে রাখতে তিনি অতীতে পাঁচটি যুদ্ধ শুরু করেছেনজনপ্রিয়তা কমলেই যুদ্ধতারপরই কর্তৃত্ব বৃদ্ধিএটাই তার ধারাবাহিকতা।

গণের মনোভাব ও অর্থনৈতিক বাস্তবতা

চিকাগো কাউন্সিল ও লেভাদা সেন্টারের সার্ভে দেখায়অধিকাংশ রাশিয়ান যুদ্ধ শেষ দেখতে চাইলেও দেশের মহাশক্তি’ ভাবমূর্তি বেড়েছে বলে মনে করে। একসময় ৬০ শতাংশ নাগরিক উন্নত জীবনমানকে অগ্রাধিকার দিতএখন ৫৫ শতাংশ বড় শক্তি হওয়াকেই বেশি গুরুত্বপূর্ণ বলে। অথচ উচ্চ মুদ্রাস্ফীতি ও স্থবির প্রবৃদ্ধি অর্থনীতিকে চাপে ফেলছে।

সামরিক সক্ষমতার প্রকৃত চিত্র

ইউক্রেনে টানা নয় মাসের ছোট একটি শহর দখলের চেষ্টায় প্রতিদিন সহস্রাধিক হতাহত হয়েছে। ইস্কান্দার ব্যালিস্টিক ও খ-১০১ ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্রের উৎপাদন রেকর্ড হলেও ট্যাংকের অধিকাংশই পুরোনো সোভিয়েত ভাণ্ডার থেকে সংস্কারকৃতএই ভাণ্ডার ২০২৬ এর মধ্যে ফুরিয়ে যেতে পারে। জনশক্তি সংকটও বাড়ছেনিয়মিত ৩০ হাজার করে সৈনিক ভর্তিও বয়সভিত্তিক জনসংখ্যা হ্রাসে স্থায়ী সমাধান নয়। বৃহৎ আকারের সমন্বিত অভিযান চালানোর মতো দক্ষ অফিসার ও স্টাফের ঘাটতি প্রকট।

কত সময় লাগবে পূর্ণ প্রস্তুতিতে

আমেরিকা বলছেরাশিয়াকে সেনাবহিনী গুছাতে দশক লাগবেনরওয়ে পাঁচ থেকে দশ বছরজার্মানি পাঁচ থেকে আটইউক্রেন পাঁচ থেকে সাতআর এস্তোনিয়া তিন থেকে পাঁচ বছরের কথা বলছেসবই যুদ্ধের গতিঅর্থনীতি ও নিষেধাজ্ঞার ওপর নির্ভরশীল।

সীমিত সংঘাতের ঝুঁকি

ডেনমার্কের গোয়েন্দা হিসাবরাশিয়া বড় পাল্লার যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হতে পাঁচ বছর লাগলেওবাল্টিক অঞ্চলে আঞ্চলিক যুদ্ধের প্রস্তুতি দুই বছরে এবং একক কোনও প্রতিবেশীর বিরুদ্ধে স্থানীয় লড়াই ছয় মাসেই সম্ভব। ইউক্রেন থেকে মাত্র ৫০ হাজার সৈন্য সরালেও এস্তোনিয়ার সামনে শক্তির ভারসাম্য বদলে যেতে পারে।

ন্যাটোর প্রস্তুতি ও দুর্বলতা

সুইডেন-ফিনল্যান্ডের ন্যাটো যোগদানে রাশিয়ার উত্তরে চাপ বেড়েছে। আটটি সীমান্ত রাষ্ট্রে ২৮ দেশের ফরওয়ার্ড’ ব্যাটলগ্রুপ আছেআমেরিকান সেনার সংস্থানও রয়েছে। তবে বহু ইউরোপীয় দেশ লক্ষ্যবস্তুর তথ্য সংগ্রহজটিল বিমান অভিযানের সমন্বয় ও রুশ আকাশ প্রতিরক্ষা ভাঙার মতো মার্কিন সক্ষমতার উপর এখনো নির্ভরশীল। তবু ট্রাম্প-যুগের অনিশ্চয়তা ইউরোপকে দ্রুত সামরিক ব্যয়ে ঝুঁকতে বাধ্য করছে।

সম্ভাব্য নরম’ লক্ষ্য

পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধের বদলে রাশিয়া সীমিত অভিযান বেছে নিতে পারেউদাহরণস্বরূপআর্কটিকের স্পিত্সবার্গেন (স্ভালবার্ড) দ্বীপপুঞ্জ বা ন্যাটো-বহির্ভূত মলদোভায় ট্রান্সনিস্ট্রিয়া থেকে অগ্রসর হওয়াযাতে মিত্রদের একতাবদ্ধ প্রতিক্রিয়া পেতে সময় লাগে।

উপসংহার: বড় যুদ্ধ কম সম্ভাব্যছোট উত্তেজনা নয়

বর্তমানে ইউক্রেন যুদ্ধে জড়িয়ে থাকা ও আঘাতপ্রাপ্ত রুশ বাহিনী ন্যাটোর বিরুদ্ধে বড় আক্রমণ চালাতে পারবে না। তবে আগামী কয়েক বছরেবিশেষত পশ্চিমা সংহতি দুর্বল হলেরাশিয়া সীমিত সামরিক পদক্ষেপ বা প্ররোচনা বাড়াতে পারে। বিভ্রান্তিকর পূর্বাভাসের যুগে অতিরিক্ত আত্মতুষ্টি যতটা বিপজ্জনকঅতিরিক্ত আতঙ্কও ততটাই ক্ষতিকরনীতিনির্ধারকদের দুয়ের মাঝে সঠিক ভারসাম্য খুঁজে নিতে হবে।

জনপ্রিয় সংবাদ

‘ওয়ান ব্যাটল আফটার অ্যানাদার’: প্রশংসায় ভাসলেও কেন বক্স অফিসে ব্যর্থ পল টমাস অ্যান্ডারসনের নতুন ছবি

ন্যাটো কি পরবর্তী লক্ষ্য? রাশিয়া সামরিক শক্তি বাড়িয়ে প্রতিবেশীদের ভয় জাগাচ্ছে

০১:৪৮:৩৩ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৯ মে ২০২৫

সারাক্ষণ রিপোর্ট

সীমান্তে অস্বস্তির ছায়া

এস্তোনিয়ার নরভা নদীর উপর হেরমান দুর্গ ও ইভানগোরোদ দুর্গের মাঝের সেতুযা দেশ দুটির সীমান্তএখন মুক্ত বিশ্বের প্রান্ত’ বলে পরিচিত। রুশ পক্ষের নতুন বিশাল স্ক্রিনে ৯ মে-র বিজয় দিবসের প্যারেড দেখানো হয়আর নদীর গর্জন যেন অতীত দখলের স্মৃতি ফিরিয়ে আনে। নিয়মিত জিপিএস চ্যানেল জ্যামসীমান্ত চিহ্নিতকারী বয়া তুলে নেওয়া ও নজরদারি বেলুনএসবই প্রতিবেশীদের উদ্বেগ বাড়াচ্ছে।

রাশিয়ার পুনর্গঠন পরিকল্পনা

মস্কো ঘোষণা করেছে সক্রিয় বাহিনী ১৩ লাখ থেকে বাড়িয়ে ১৫ লাখ করবে। ফিনল্যান্ড সীমান্ত ঘেঁষে কারেলিয়ায় ৪৪তম আর্মি কোর গঠন শুরু হয়েছেকয়েকটি ব্রিগেডকে পূর্ণাঙ্গ ডিভিশনে উন্নীত করা হচ্ছে। পরিকল্পনা বাস্তবায়ন শেষ হতে বছর কয়েক লাগবেকিন্তু সফল হলে পশ্চিম সীমান্তে সৈন্য-সরঞ্জাম ৩০-৫০ শতাংশ বেড়ে যাবে বলে লিথুয়ানিয়ার গোয়েন্দাদের ধারণা।

উদ্দেশ্য বনাম সামর্থ্য

এখনই ন্যাটো আক্রমণের কোনো সুনির্দিষ্ট গোয়েন্দা তথ্য নেইতবে ভ্লাদিমির পুতিনের বক্তব্যে সাবেক রুশ সাম্রাজ্যের ভূখণ্ড পুনরুদ্ধারের আভাস মিলেছে। ক্ষমতা টিকিয়ে রাখতে তিনি অতীতে পাঁচটি যুদ্ধ শুরু করেছেনজনপ্রিয়তা কমলেই যুদ্ধতারপরই কর্তৃত্ব বৃদ্ধিএটাই তার ধারাবাহিকতা।

গণের মনোভাব ও অর্থনৈতিক বাস্তবতা

চিকাগো কাউন্সিল ও লেভাদা সেন্টারের সার্ভে দেখায়অধিকাংশ রাশিয়ান যুদ্ধ শেষ দেখতে চাইলেও দেশের মহাশক্তি’ ভাবমূর্তি বেড়েছে বলে মনে করে। একসময় ৬০ শতাংশ নাগরিক উন্নত জীবনমানকে অগ্রাধিকার দিতএখন ৫৫ শতাংশ বড় শক্তি হওয়াকেই বেশি গুরুত্বপূর্ণ বলে। অথচ উচ্চ মুদ্রাস্ফীতি ও স্থবির প্রবৃদ্ধি অর্থনীতিকে চাপে ফেলছে।

সামরিক সক্ষমতার প্রকৃত চিত্র

ইউক্রেনে টানা নয় মাসের ছোট একটি শহর দখলের চেষ্টায় প্রতিদিন সহস্রাধিক হতাহত হয়েছে। ইস্কান্দার ব্যালিস্টিক ও খ-১০১ ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্রের উৎপাদন রেকর্ড হলেও ট্যাংকের অধিকাংশই পুরোনো সোভিয়েত ভাণ্ডার থেকে সংস্কারকৃতএই ভাণ্ডার ২০২৬ এর মধ্যে ফুরিয়ে যেতে পারে। জনশক্তি সংকটও বাড়ছেনিয়মিত ৩০ হাজার করে সৈনিক ভর্তিও বয়সভিত্তিক জনসংখ্যা হ্রাসে স্থায়ী সমাধান নয়। বৃহৎ আকারের সমন্বিত অভিযান চালানোর মতো দক্ষ অফিসার ও স্টাফের ঘাটতি প্রকট।

কত সময় লাগবে পূর্ণ প্রস্তুতিতে

আমেরিকা বলছেরাশিয়াকে সেনাবহিনী গুছাতে দশক লাগবেনরওয়ে পাঁচ থেকে দশ বছরজার্মানি পাঁচ থেকে আটইউক্রেন পাঁচ থেকে সাতআর এস্তোনিয়া তিন থেকে পাঁচ বছরের কথা বলছেসবই যুদ্ধের গতিঅর্থনীতি ও নিষেধাজ্ঞার ওপর নির্ভরশীল।

সীমিত সংঘাতের ঝুঁকি

ডেনমার্কের গোয়েন্দা হিসাবরাশিয়া বড় পাল্লার যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হতে পাঁচ বছর লাগলেওবাল্টিক অঞ্চলে আঞ্চলিক যুদ্ধের প্রস্তুতি দুই বছরে এবং একক কোনও প্রতিবেশীর বিরুদ্ধে স্থানীয় লড়াই ছয় মাসেই সম্ভব। ইউক্রেন থেকে মাত্র ৫০ হাজার সৈন্য সরালেও এস্তোনিয়ার সামনে শক্তির ভারসাম্য বদলে যেতে পারে।

ন্যাটোর প্রস্তুতি ও দুর্বলতা

সুইডেন-ফিনল্যান্ডের ন্যাটো যোগদানে রাশিয়ার উত্তরে চাপ বেড়েছে। আটটি সীমান্ত রাষ্ট্রে ২৮ দেশের ফরওয়ার্ড’ ব্যাটলগ্রুপ আছেআমেরিকান সেনার সংস্থানও রয়েছে। তবে বহু ইউরোপীয় দেশ লক্ষ্যবস্তুর তথ্য সংগ্রহজটিল বিমান অভিযানের সমন্বয় ও রুশ আকাশ প্রতিরক্ষা ভাঙার মতো মার্কিন সক্ষমতার উপর এখনো নির্ভরশীল। তবু ট্রাম্প-যুগের অনিশ্চয়তা ইউরোপকে দ্রুত সামরিক ব্যয়ে ঝুঁকতে বাধ্য করছে।

সম্ভাব্য নরম’ লক্ষ্য

পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধের বদলে রাশিয়া সীমিত অভিযান বেছে নিতে পারেউদাহরণস্বরূপআর্কটিকের স্পিত্সবার্গেন (স্ভালবার্ড) দ্বীপপুঞ্জ বা ন্যাটো-বহির্ভূত মলদোভায় ট্রান্সনিস্ট্রিয়া থেকে অগ্রসর হওয়াযাতে মিত্রদের একতাবদ্ধ প্রতিক্রিয়া পেতে সময় লাগে।

উপসংহার: বড় যুদ্ধ কম সম্ভাব্যছোট উত্তেজনা নয়

বর্তমানে ইউক্রেন যুদ্ধে জড়িয়ে থাকা ও আঘাতপ্রাপ্ত রুশ বাহিনী ন্যাটোর বিরুদ্ধে বড় আক্রমণ চালাতে পারবে না। তবে আগামী কয়েক বছরেবিশেষত পশ্চিমা সংহতি দুর্বল হলেরাশিয়া সীমিত সামরিক পদক্ষেপ বা প্ররোচনা বাড়াতে পারে। বিভ্রান্তিকর পূর্বাভাসের যুগে অতিরিক্ত আত্মতুষ্টি যতটা বিপজ্জনকঅতিরিক্ত আতঙ্কও ততটাই ক্ষতিকরনীতিনির্ধারকদের দুয়ের মাঝে সঠিক ভারসাম্য খুঁজে নিতে হবে।