০৩:২৯ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৪ জুলাই ২০২৫

আমেরিকা – কানাডা নদী চুক্তি অনিশ্চয়তার মুখে

  • Sarakhon Report
  • ১০:০০:১১ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২০ মে ২০২৫
  • 59

ক্যারেন ওয়াইস

যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডার মধ্যে শুল্কসংক্রান্ত বিরোধের মাঝখানে পড়েছে একটি তুলনামূলক অজ্ঞাত চুক্তিযা উভয় দেশের লক্ষ লক্ষ মানুষের জীবনকে প্রভাবিত করে। ষাট বছর বয়সী এ চুক্তি ব্রিটিশ কলাম্বিয়া থেকে মন্টানাআইডাহোওয়াশিংটন ও ওরেগন অতিক্রম করে বয়ে যাওয়া কলাম্বিয়া নদীর প্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করেএই নদীই যুক্তরাষ্ট্রের বৃহত্তম জলবিদ্যুৎ উৎস। তবে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন ঘিরে চুক্তির কিছু ধারা মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে।

নতুন সংস্করণ চূড়ান্ত করার কয়েক সপ্তাহ আগেই প্রেসিডেন্ট জো বিডেনের মেয়াদ শেষ হয়। এরপর এক দশকের আলোচনায় বাধা হয়ে দাঁড়ায় প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কানাডাবিরোধী অবস্থানতিনি কানাডাকে ৫১তম অঙ্গরাজ্য’ বলে কটাক্ষ করেনরপ্তানির ওপর শুল্ক আরোপ করেন এবং কানাডার পানিসম্পদকে বড় ফসেট’ বলে দৃষ্টি দেন।

২০২৫‑এর ফেব্রুয়ারিতে তৎকালীন কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর সঙ্গে তীব্র এক ফোনালাপে ট্রাম্প দাবি করেনএই চুক্তির মাধ্যমেও কানাডা যুক্তরাষ্ট্রকে ঠকিয়েছে। স্পষ্ট ইঙ্গিত ছিলদুই দেশের সম্পর্ক পুনর্গঠনের বড় সমঝোতায় চুক্তিটি দরকষাকষির হাতিয়ার হতে পারে।

গত সপ্তাহে হোয়াইট হাউস সাক্ষাতে নতুন প্রধানমন্ত্রী মার্ক কার্নি ও ট্রাম্প উত্তেজনা কমানোর চেষ্টা করেন। তবুও ট্রাম্প প্রশাসন এমনকি পারস্পরিক লাভজনক চুক্তিকেও ছুরি‑ধার করা আলোচনায় পরিণত করেছেঅনিয়ন্ত্রিত বাণিজ্যনীতি প্রশান্ত উত্তর‑পশ্চিমাঞ্চলের বিদ্যুৎ এবং বন্যা‑নিয়ন্ত্রণসহ নানা ক্ষেত্রে অনিশ্চয়তা বাড়াচ্ছে।

ইন্টারনেট ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ডাটা সেন্টারসবই কলাম্বিয়া নদীর বিদ্যুৎ নির্ভর। নদীতীরের পার্কের সন্ধ্যাবেলা ফুটবল ম্যাচফলের বাগানে সেচপোর্টল্যান্ডসহ শহরগুলোর বন্যা‑নিয়ন্ত্রণসবই সমন্বিত বাঁধের অবদান। ট্রাম্পের বক্তব্য কানাডিয়ানদের পুরোনো আশঙ্কা চাগিয়ে তোলেমার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তাদের সম্পদবিশেষত পানিলুটে নিতে চায়। তারা আমাদের জমিসম্পদপানিসবকিছু চায়’—প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনী প্রচারে বারবার বলেন কার্নি।

ওয়াশিংটনের সদ্য সাবেক গভর্নর জে ইনসলি বলেন,‘কানাডিয়ানরা বিশ্বাসঘাতকতার তীব্র বোধে ভুগছে।সাংস্কৃতিক‑অর্থনৈতিক সম্পর্কের জটিল জাল জড়ানো এ চুক্তি নিয়ে আলোচনা সহজ নয়, ‘আর টেবিলের ওপারে বসা লোকটি আপনাকে বিশ্বাসঘাতক মনে করলে কাজ আরও কঠিন।

ব্রিটিশ কলাম্বিয়ার এক মুখপাত্র জানানমার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর প্রশাসনিক পরিবর্তনের পর আন্তর্জাতিক প্রতিশ্রুতির পর্যালোচনার অংশ হিসেবে আলোচনা স্থগিত করেছেশক্তি‑মন্ত্রী অ্যাড্রিয়ান ডিক্স ভার্চুয়াল টাউন হল‑এ বলেন, ‘বাস্তবে কী ঘটছেসেটি এ কথায় ধরা পড়ে না।’ স্থানীয় লোকজন বাজারে তাকে থামিয়ে প্রশ্ন করছেনকানাডা কি চুক্তি থেকে পুরোপুরি সরে আসবে? ‘এ অঞ্চলবাসীর জীবনেরইতিহাসেরআত্মার অংশ এটি,’ বলেন তিনি।

চুক্তি ভেঙে গেলে জলবিদ্যুৎ উৎপাদন নিয়ন্ত্রণ ও পূর্বাভাস আরও জটিল হবেবন্যা‑নিয়ন্ত্রণ অনিশ্চিত হয়ে উঠবেকংগ্রেসের এক নির্দলীয় প্রতিবেদনে এ আশঙ্কা জানানো হয়েছে। আন্তঃরাজ্য বিদ্যুৎ পরিষদের নতুন হিসাব মতেঅঞ্চলটির বিদ্যুৎ চাহিদা আগামী দুই দশকে দ্বিগুণ হতে পারে।

চুক্তির শিকড় ১৯৪৮ সালের মেমোরিয়াল ডে‑র বন্যায়পোর্টল্যান্ডের কাছে ভ্যানপোর্ট শহর ১৫ ফুট জলোচ্ছ্বাসে নিশ্চিহ্ন হয়১৮ হাজার মানুষ গৃহহীন হয়। পরের বছরগুলোতে কানাডার সঙ্গে নদী‑ব্যবস্থাপনা নিয়ে আলোচনা শুরু হয়। প্রেসিডেন্ট ডোয়াইট আইজেনহাওয়ার মেয়াদের শেষদিকে তিনি কলাম্বিয়া রিভার ট্রিটিতে সই করেনকানাডা যুক্তরাষ্ট্রের বন্যা‑নিয়ন্ত্রণের ভার নেবেবিনিময়ে যুক্তরাষ্ট্র সৃষ্ট অতিরিক্ত বিদ্যুৎয়ের অর্ধেক দেবে কানাডাকে।

১৯৬৪‑র শরতে চুক্তি কার্যকর হয়ষাট বছর পর কিছু ধারা মেয়াদোত্তীর্ণ। ২০২৪‑এর আগে চুক্তি নবায়নের আলোচনা প্রথম ট্রাম্প প্রশাসনে শুরু হয়বিডেন সাময়িক বিরতি দিয়ে ফের চালু করেন। ২০২৩‑এর মার্চে প্রশান্ত উত্তর‑পশ্চিমের সব কংগ্রেস সদস্য দ্রুত সমঝোতা চেয়ে চিঠি দেন। দীর্ঘসূত্রিতার পর ২০২৪‑এর গ্রীষ্মে ঘোষিত খসড়া আগের বাস্তবতা বদলে দেয়।

আদি চুক্তি যতটা অনুমান করা হয়েছিলউৎপাদিত বিদ্যুৎ তার চাইতে অনেক বেশি লাভের হয়কানাডার ভাগ বছরে প্রায় ৩০ কোটি ডলার ছুঁয়েছিল। প্রয়োজনের চেয়ে বেশি হওয়ায় কানাডা বিদ্যুৎ আবার যুক্তরাষ্ট্রকে বিক্রি করতযা মার্কিন ইউটিলিটিগুলোকে হতাশ করত। হালনাগাদ পরিকল্পনায় পর্যায়ক্রমে কানাডার হিস্যা প্রায় অর্ধেক কমানো হয়েছেবিদ্যুতের বাড়তি চাহিদার সময় যুক্তরাষ্ট্র বেশি বিদ্যুৎ রাখতে পারবে। সস্তাপরিচ্ছন্ন জলবিদ্যুৎ গত দুই দশকে ডাটা সেন্টার টানছেকৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার জোরে এ চাহিদা আরও বাড়ছে।

স্ট্যানফোর্ডের ইতিহাসবিদ ডেভিড কেনেডি বলেন, ‘উদীয়মান এই ছবিতে প্রশান্ত উত্তর‑পশ্চিম কতটা গুরুত্বপূর্ণতা দেশবাসীর বোঝা দরকার।

বদলেকানাডা বন্যা‑নিয়ন্ত্রণের জন্য সংরক্ষিত পানির বাধ্যবাধকতা কমিয়েছেফলে জলাধার ঘিরে জনপদ ও প্রতিবেশব্যবস্থাকে অগ্রাধিকার দিতে পারবে। আগের চুক্তিতে পানির উচ্চতা বড় ভাঁজে ওঠা‑নামা করতবরফগলা সামাল দিতে জল কমালে কাঁদামাঠে ধুলোর দুর্বিষহ অবস্থা হতো। ভ্যালেমাউন্টের কাছে এক বাসিন্দা ডিক্সকে জানান, ‘প্রতিবছর এই শুকনো তলদেশ ভয়াবহ ধুলোর সমস্যা তৈরি করে।’ নতুন পরিকল্পনায় জলাধারের স্তর স্থিতিশীল রেখে তীরবর্তী পরিবেশ পুনরুদ্ধার ও বিনোদন সুবিধা বাড়ানো হয়েছে।

আলোচনায় আদিবাসী সম্প্রদায়গুলোও যুক্ত ছিল১৯৬০‑এর দশকের চুক্তিতে তাদের মত নেওয়া হয়নিঅথচ বাঁধে তাদের মাছ ধরার ক্ষেত্র ও বসতি ধ্বংস হয়। সাইলক্স ওকানাগান জাতির কানাডীয় আলোচক জে জনসন ভার্চুয়াল টাউন হল‑এ বলেনদুই দেশের উপজাতিরা সালমন অভিবাসন পুনরুদ্ধারে ঐক্যমত পেয়েছে। নতুন পরিকল্পনায় খরার বছরে বাড়তি পানি ছাড়ার বিধান রাখা হয়েছেযা জলবায়ু পরিবর্তনের প্রেক্ষাপটে সালমনের বেঁচে থাকার জন্য অপরিহার্য

চুক্তির কয়েক ধারা অবসান হওয়ায় গত শরতে দুই দেশ তিন বছরের অন্তর্বর্তী চুক্তিতে সই করেযদিও কিছু অংশ বাস্তবায়নে কংগ্রেসের অতিরিক্ত অনুমোদন দরকার। চুক্তি ছাড়তে উভয় পক্ষকে ১০ বছরের নোটিশ দিতে হবে।

এরপর কী হবেকেউ নিশ্চিত নন। আলোচনার কিছু কর্মকর্তা এখনও বৈঠকে রয়েছেনকিন্তু ট্রাম্প পশ্চিম গোলার্ধবিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্র সচিব নিয়োগ করেননি। তাছাড়া আলোচনা‑সংশ্লিষ্ট জাতীয় সামুদ্রিক ও বন্যা‑সংস্থাগুলোর কর্মীসংখ্যা কমাতে ট্রাম্পের প্রচেষ্টা পরিস্থিতি আরও ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলেছে।

তারপরও অনেকে আশাবাদীচুক্তির নতুন সংস্করণ চূড়ান্ত করা যাবে। আইডাহো বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনজ্ঞ বারবারা কোসেন্স বলেনট্রাম্প প্রশাসন সালমন আবাসস্থল বা আদিবাসী অংশগ্রহণের প্রতি উদাসীন হলেও কানাডা তা নয়। পানি ধারা মেনে নিচে নামেতবে স্যাম তো উল্টো স্রোতে উঠে। তাই পরিবেশগত ধারা টেকসই রাখাই যুক্তরাষ্ট্রের চাপ তৈরির উপায়,’ বলেন তিনি।

ওয়াশিংটনের ডেমোক্র্যাট সিনেটর মারিয়া ক্যান্টওয়েল ও আইডাহোর রিপাবলিকান জিম রিশ বরাবরই এ ইস্যুতে একমত। জনস্বাধীন বিদ্যুৎ সংস্থাগুলোর সমন্বয়কারী পাবলিক পাওয়ার কাউন্সিলের প্রধান নির্বাহী স্কট সিমস বলেন, ‘এখানে রিপাবলিকান‑ডেমোক্র্যাটের মধ্যে কোনো ফারাক নেই।

এই ঝুঁকি কেবল তত্ত্ব নয়। ১৯৯৬‑এর শীত শেষের তুষারপাতে পর একটি পাইন্যাপল এক্সপ্রেস’ ঝড় পোর্টল্যান্ড এলাকায় উষ্ণ বৃষ্টি ঢেলে দেয়ভয়াবহ জলোচ্ছ্বাসে বাঁধ ভেঙে যায়। যুক্তরাষ্ট্র সেনা প্রকৌশলী বাহিনী ও কানাডীয় অংশীদাররা কলাম্বিয়া নদী ব্যবস্থার ৬০‑এর বেশি বাঁধ সমন্বয় করে পানি আটকে রাখে। তবু কলাম্বিয়ায় যুক্ত এক ছোট নদী প্লাবিত হয়ে আটজনের প্রাণ নেয়প্লাইউড‑স্যান্ডব্যাগের অস্থায়ী বাঁধে পোর্টল্যান্ড শহরমধ্যেন্দ্র কেবলমাত্র রক্ষা পায়।

 

 

 

 

 

আমেরিকা – কানাডা নদী চুক্তি অনিশ্চয়তার মুখে

১০:০০:১১ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২০ মে ২০২৫

ক্যারেন ওয়াইস

যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডার মধ্যে শুল্কসংক্রান্ত বিরোধের মাঝখানে পড়েছে একটি তুলনামূলক অজ্ঞাত চুক্তিযা উভয় দেশের লক্ষ লক্ষ মানুষের জীবনকে প্রভাবিত করে। ষাট বছর বয়সী এ চুক্তি ব্রিটিশ কলাম্বিয়া থেকে মন্টানাআইডাহোওয়াশিংটন ও ওরেগন অতিক্রম করে বয়ে যাওয়া কলাম্বিয়া নদীর প্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করেএই নদীই যুক্তরাষ্ট্রের বৃহত্তম জলবিদ্যুৎ উৎস। তবে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন ঘিরে চুক্তির কিছু ধারা মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে।

নতুন সংস্করণ চূড়ান্ত করার কয়েক সপ্তাহ আগেই প্রেসিডেন্ট জো বিডেনের মেয়াদ শেষ হয়। এরপর এক দশকের আলোচনায় বাধা হয়ে দাঁড়ায় প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কানাডাবিরোধী অবস্থানতিনি কানাডাকে ৫১তম অঙ্গরাজ্য’ বলে কটাক্ষ করেনরপ্তানির ওপর শুল্ক আরোপ করেন এবং কানাডার পানিসম্পদকে বড় ফসেট’ বলে দৃষ্টি দেন।

২০২৫‑এর ফেব্রুয়ারিতে তৎকালীন কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর সঙ্গে তীব্র এক ফোনালাপে ট্রাম্প দাবি করেনএই চুক্তির মাধ্যমেও কানাডা যুক্তরাষ্ট্রকে ঠকিয়েছে। স্পষ্ট ইঙ্গিত ছিলদুই দেশের সম্পর্ক পুনর্গঠনের বড় সমঝোতায় চুক্তিটি দরকষাকষির হাতিয়ার হতে পারে।

গত সপ্তাহে হোয়াইট হাউস সাক্ষাতে নতুন প্রধানমন্ত্রী মার্ক কার্নি ও ট্রাম্প উত্তেজনা কমানোর চেষ্টা করেন। তবুও ট্রাম্প প্রশাসন এমনকি পারস্পরিক লাভজনক চুক্তিকেও ছুরি‑ধার করা আলোচনায় পরিণত করেছেঅনিয়ন্ত্রিত বাণিজ্যনীতি প্রশান্ত উত্তর‑পশ্চিমাঞ্চলের বিদ্যুৎ এবং বন্যা‑নিয়ন্ত্রণসহ নানা ক্ষেত্রে অনিশ্চয়তা বাড়াচ্ছে।

ইন্টারনেট ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ডাটা সেন্টারসবই কলাম্বিয়া নদীর বিদ্যুৎ নির্ভর। নদীতীরের পার্কের সন্ধ্যাবেলা ফুটবল ম্যাচফলের বাগানে সেচপোর্টল্যান্ডসহ শহরগুলোর বন্যা‑নিয়ন্ত্রণসবই সমন্বিত বাঁধের অবদান। ট্রাম্পের বক্তব্য কানাডিয়ানদের পুরোনো আশঙ্কা চাগিয়ে তোলেমার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তাদের সম্পদবিশেষত পানিলুটে নিতে চায়। তারা আমাদের জমিসম্পদপানিসবকিছু চায়’—প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনী প্রচারে বারবার বলেন কার্নি।

ওয়াশিংটনের সদ্য সাবেক গভর্নর জে ইনসলি বলেন,‘কানাডিয়ানরা বিশ্বাসঘাতকতার তীব্র বোধে ভুগছে।সাংস্কৃতিক‑অর্থনৈতিক সম্পর্কের জটিল জাল জড়ানো এ চুক্তি নিয়ে আলোচনা সহজ নয়, ‘আর টেবিলের ওপারে বসা লোকটি আপনাকে বিশ্বাসঘাতক মনে করলে কাজ আরও কঠিন।

ব্রিটিশ কলাম্বিয়ার এক মুখপাত্র জানানমার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর প্রশাসনিক পরিবর্তনের পর আন্তর্জাতিক প্রতিশ্রুতির পর্যালোচনার অংশ হিসেবে আলোচনা স্থগিত করেছেশক্তি‑মন্ত্রী অ্যাড্রিয়ান ডিক্স ভার্চুয়াল টাউন হল‑এ বলেন, ‘বাস্তবে কী ঘটছেসেটি এ কথায় ধরা পড়ে না।’ স্থানীয় লোকজন বাজারে তাকে থামিয়ে প্রশ্ন করছেনকানাডা কি চুক্তি থেকে পুরোপুরি সরে আসবে? ‘এ অঞ্চলবাসীর জীবনেরইতিহাসেরআত্মার অংশ এটি,’ বলেন তিনি।

চুক্তি ভেঙে গেলে জলবিদ্যুৎ উৎপাদন নিয়ন্ত্রণ ও পূর্বাভাস আরও জটিল হবেবন্যা‑নিয়ন্ত্রণ অনিশ্চিত হয়ে উঠবেকংগ্রেসের এক নির্দলীয় প্রতিবেদনে এ আশঙ্কা জানানো হয়েছে। আন্তঃরাজ্য বিদ্যুৎ পরিষদের নতুন হিসাব মতেঅঞ্চলটির বিদ্যুৎ চাহিদা আগামী দুই দশকে দ্বিগুণ হতে পারে।

চুক্তির শিকড় ১৯৪৮ সালের মেমোরিয়াল ডে‑র বন্যায়পোর্টল্যান্ডের কাছে ভ্যানপোর্ট শহর ১৫ ফুট জলোচ্ছ্বাসে নিশ্চিহ্ন হয়১৮ হাজার মানুষ গৃহহীন হয়। পরের বছরগুলোতে কানাডার সঙ্গে নদী‑ব্যবস্থাপনা নিয়ে আলোচনা শুরু হয়। প্রেসিডেন্ট ডোয়াইট আইজেনহাওয়ার মেয়াদের শেষদিকে তিনি কলাম্বিয়া রিভার ট্রিটিতে সই করেনকানাডা যুক্তরাষ্ট্রের বন্যা‑নিয়ন্ত্রণের ভার নেবেবিনিময়ে যুক্তরাষ্ট্র সৃষ্ট অতিরিক্ত বিদ্যুৎয়ের অর্ধেক দেবে কানাডাকে।

১৯৬৪‑র শরতে চুক্তি কার্যকর হয়ষাট বছর পর কিছু ধারা মেয়াদোত্তীর্ণ। ২০২৪‑এর আগে চুক্তি নবায়নের আলোচনা প্রথম ট্রাম্প প্রশাসনে শুরু হয়বিডেন সাময়িক বিরতি দিয়ে ফের চালু করেন। ২০২৩‑এর মার্চে প্রশান্ত উত্তর‑পশ্চিমের সব কংগ্রেস সদস্য দ্রুত সমঝোতা চেয়ে চিঠি দেন। দীর্ঘসূত্রিতার পর ২০২৪‑এর গ্রীষ্মে ঘোষিত খসড়া আগের বাস্তবতা বদলে দেয়।

আদি চুক্তি যতটা অনুমান করা হয়েছিলউৎপাদিত বিদ্যুৎ তার চাইতে অনেক বেশি লাভের হয়কানাডার ভাগ বছরে প্রায় ৩০ কোটি ডলার ছুঁয়েছিল। প্রয়োজনের চেয়ে বেশি হওয়ায় কানাডা বিদ্যুৎ আবার যুক্তরাষ্ট্রকে বিক্রি করতযা মার্কিন ইউটিলিটিগুলোকে হতাশ করত। হালনাগাদ পরিকল্পনায় পর্যায়ক্রমে কানাডার হিস্যা প্রায় অর্ধেক কমানো হয়েছেবিদ্যুতের বাড়তি চাহিদার সময় যুক্তরাষ্ট্র বেশি বিদ্যুৎ রাখতে পারবে। সস্তাপরিচ্ছন্ন জলবিদ্যুৎ গত দুই দশকে ডাটা সেন্টার টানছেকৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার জোরে এ চাহিদা আরও বাড়ছে।

স্ট্যানফোর্ডের ইতিহাসবিদ ডেভিড কেনেডি বলেন, ‘উদীয়মান এই ছবিতে প্রশান্ত উত্তর‑পশ্চিম কতটা গুরুত্বপূর্ণতা দেশবাসীর বোঝা দরকার।

বদলেকানাডা বন্যা‑নিয়ন্ত্রণের জন্য সংরক্ষিত পানির বাধ্যবাধকতা কমিয়েছেফলে জলাধার ঘিরে জনপদ ও প্রতিবেশব্যবস্থাকে অগ্রাধিকার দিতে পারবে। আগের চুক্তিতে পানির উচ্চতা বড় ভাঁজে ওঠা‑নামা করতবরফগলা সামাল দিতে জল কমালে কাঁদামাঠে ধুলোর দুর্বিষহ অবস্থা হতো। ভ্যালেমাউন্টের কাছে এক বাসিন্দা ডিক্সকে জানান, ‘প্রতিবছর এই শুকনো তলদেশ ভয়াবহ ধুলোর সমস্যা তৈরি করে।’ নতুন পরিকল্পনায় জলাধারের স্তর স্থিতিশীল রেখে তীরবর্তী পরিবেশ পুনরুদ্ধার ও বিনোদন সুবিধা বাড়ানো হয়েছে।

আলোচনায় আদিবাসী সম্প্রদায়গুলোও যুক্ত ছিল১৯৬০‑এর দশকের চুক্তিতে তাদের মত নেওয়া হয়নিঅথচ বাঁধে তাদের মাছ ধরার ক্ষেত্র ও বসতি ধ্বংস হয়। সাইলক্স ওকানাগান জাতির কানাডীয় আলোচক জে জনসন ভার্চুয়াল টাউন হল‑এ বলেনদুই দেশের উপজাতিরা সালমন অভিবাসন পুনরুদ্ধারে ঐক্যমত পেয়েছে। নতুন পরিকল্পনায় খরার বছরে বাড়তি পানি ছাড়ার বিধান রাখা হয়েছেযা জলবায়ু পরিবর্তনের প্রেক্ষাপটে সালমনের বেঁচে থাকার জন্য অপরিহার্য

চুক্তির কয়েক ধারা অবসান হওয়ায় গত শরতে দুই দেশ তিন বছরের অন্তর্বর্তী চুক্তিতে সই করেযদিও কিছু অংশ বাস্তবায়নে কংগ্রেসের অতিরিক্ত অনুমোদন দরকার। চুক্তি ছাড়তে উভয় পক্ষকে ১০ বছরের নোটিশ দিতে হবে।

এরপর কী হবেকেউ নিশ্চিত নন। আলোচনার কিছু কর্মকর্তা এখনও বৈঠকে রয়েছেনকিন্তু ট্রাম্প পশ্চিম গোলার্ধবিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্র সচিব নিয়োগ করেননি। তাছাড়া আলোচনা‑সংশ্লিষ্ট জাতীয় সামুদ্রিক ও বন্যা‑সংস্থাগুলোর কর্মীসংখ্যা কমাতে ট্রাম্পের প্রচেষ্টা পরিস্থিতি আরও ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলেছে।

তারপরও অনেকে আশাবাদীচুক্তির নতুন সংস্করণ চূড়ান্ত করা যাবে। আইডাহো বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনজ্ঞ বারবারা কোসেন্স বলেনট্রাম্প প্রশাসন সালমন আবাসস্থল বা আদিবাসী অংশগ্রহণের প্রতি উদাসীন হলেও কানাডা তা নয়। পানি ধারা মেনে নিচে নামেতবে স্যাম তো উল্টো স্রোতে উঠে। তাই পরিবেশগত ধারা টেকসই রাখাই যুক্তরাষ্ট্রের চাপ তৈরির উপায়,’ বলেন তিনি।

ওয়াশিংটনের ডেমোক্র্যাট সিনেটর মারিয়া ক্যান্টওয়েল ও আইডাহোর রিপাবলিকান জিম রিশ বরাবরই এ ইস্যুতে একমত। জনস্বাধীন বিদ্যুৎ সংস্থাগুলোর সমন্বয়কারী পাবলিক পাওয়ার কাউন্সিলের প্রধান নির্বাহী স্কট সিমস বলেন, ‘এখানে রিপাবলিকান‑ডেমোক্র্যাটের মধ্যে কোনো ফারাক নেই।

এই ঝুঁকি কেবল তত্ত্ব নয়। ১৯৯৬‑এর শীত শেষের তুষারপাতে পর একটি পাইন্যাপল এক্সপ্রেস’ ঝড় পোর্টল্যান্ড এলাকায় উষ্ণ বৃষ্টি ঢেলে দেয়ভয়াবহ জলোচ্ছ্বাসে বাঁধ ভেঙে যায়। যুক্তরাষ্ট্র সেনা প্রকৌশলী বাহিনী ও কানাডীয় অংশীদাররা কলাম্বিয়া নদী ব্যবস্থার ৬০‑এর বেশি বাঁধ সমন্বয় করে পানি আটকে রাখে। তবু কলাম্বিয়ায় যুক্ত এক ছোট নদী প্লাবিত হয়ে আটজনের প্রাণ নেয়প্লাইউড‑স্যান্ডব্যাগের অস্থায়ী বাঁধে পোর্টল্যান্ড শহরমধ্যেন্দ্র কেবলমাত্র রক্ষা পায়।