রাজনীতির মঞ্চে নাটকীয়তা
রাজনীতিতে কৌশল ও কূটনীতি অপ্রতিরোধ্য, তবে যখন কোনো রাজ্যের প্রধান রাজনৈতিক নাটকের আশ্রয় নেন শুধুমাত্র ক্ষমতা ধরে রাখার জন্য, তখন প্রশ্ন ওঠে—এটি কি গণতন্ত্রের জন্য ভালো, নাকি রাষ্ট্রীয় স্থিতিশীলতার জন্য হুমকি?
ক্ষমতা রক্ষায় নাটক: কীভাবে ঘটে?
রাজনৈতিক নাটক বলতে বোঝানো হচ্ছে ইচ্ছাকৃত সংকট তৈরি, আত্ম-নাট্য (self-victimisation), কেন্দ্রীয় সরকার বা বিরোধীদলের বিরুদ্ধে অপপ্রচার, রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাকে প্রশ্নবিদ্ধ করা, বা নাটকীয় পদত্যাগ-হুমকি দেওয়া, যার উদ্দেশ্য একটাই—গণমানসকে প্রভাবিত করে ক্ষমতা আঁকড়ে ধরা।
সম্প্রতি নজির: নাটক বনাম বাস্তবতা
কিছু দেশে বা অঞ্চলে দেখা গেছে, কোনো নিজেদের বিরুদ্ধে চাপ দেখিয়ে নাটকীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করেন—মিডিয়ায় আবেগতাড়িত ভাষণ দেওয়া, বা রাষ্ট্রপতির, রাজনৈতিক দলের বা জনগনের হস্তক্ষেপ চাওয়া—যা আদতে রাজনৈতিক সমর্থন বাড়াতে ব্যবহৃত হয়।
অনেক সময় এটা জনমত ঘুরিয়ে দেওয়ার জন্য পরিকল্পিত হয়। এসব পদক্ষেপে প্রশাসনিক কাঠামো দুর্বল হয়ে পড়ে এবং গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতি আস্থা কমে যায়।
এর ফলাফল কী হতে পারে?
১. গণতন্ত্রের ক্ষতি: নির্বাচিত সরকারকে অকারণে হুমকির মুখে ফেলে দিলে সংবিধান ও আইনের প্রতি সাধারণ মানুষের আস্থা কমে।
২. প্রশাসনের ব্যাঘাত: প্রশাসনিক সিদ্ধান্তে নাটকীয়তার ছাপ থাকলে জনসেবায় বিলম্ব ঘটে।
৩. অর্থনীতির ক্ষতি: রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা বিনিয়োগ ও বাজারে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।
৪. আন্তর্জাতিক ভাবমূর্তি ক্ষতিগ্রস্ত: বিদেশি কূটনীতিক ও বিনিয়োগকারীদের কাছে দেশটি অস্থিতিশীল হিসেবে চিহ্নিত হয়।
বিশেষজ্ঞদের মতামত
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, “ক্ষমতা ধরে রাখতে ‘নাটক’ করার প্রবণতা গণতন্ত্রের মেরুদণ্ড ভেঙে দেয়। জনগণের সমস্যা নয়, নেতার ক্ষমতা রক্ষা যখন প্রধান উদ্দেশ্য হয়ে ওঠে, তখন রাষ্ট্র বিপদের দিকে এগোয়।”
একজন প্রাক্তন প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেছেন, “নাটক নয়, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা থাকলেই জনগণের আস্থা অর্জন সম্ভব।”
রাজনীতি না নাটক?
রাজনীতির মঞ্চে আবেগ, সংকট ও প্রতিক্রিয়া থাকবেই, কিন্তু যখন তা ইচ্ছাকৃত ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়, তখন তা শুধু একজন নেতার নয়, গোটা রাষ্ট্রের জন্য বিপজ্জনক হয়ে ওঠে। জনগণ চায় উন্নয়ন, স্থিতিশীলতা ও নেতৃত্বের স্বচ্ছতা—নাটক নয়।