০৪:০৫ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৭ জুন ২০২৫

বাংলাদেশের মুহাম্মদ ইউনুস প্রশাসনের ভবিষ্যৎ কেন অনিশ্চিত- আল জাজিরা

অভ্যন্তরীণ সংকট ও টানাপোড়েনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের অস্থায়ী প্রশাসন নেতৃত্ব দিচ্ছেন নোবেলজয়ী মুহাম্মদ ইউনুস। সামরিক ও রাজনৈতিক চাপ, নির্বাচনের সময়সূচি, সংস্কার পরিকল্পনা এবং পদত্যাগের গুঞ্জন—সব মিলিয়ে প্রশাসনের পথচলা অনিশ্চিত হয়ে উঠেছে। নিচে আল জাজিরার রিপোর্টের মূল বিষয়টি সংক্ষেপে তুলে ধরা হলো।

অস্থায়ী সরকারের ভেতরে শীতল যুদ্ধ

২০ মে ঢাকায় তিন বাহিনী প্রধানের সঙ্গে ইউনুসের বৈঠকটিকে নিয়মিত আইনশৃঙ্খলা আলোচনার অংশ বলা হলেও অভ্যন্তরীণ সূত্রগুলো এটিকে ক্ষমতার টানাপোড়েনের ইঙ্গিত হিসেবে দেখছে। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অপসারণের পর নয় মাস পার হতে না হতেই সেনাবাহিনী ও অস্থায়ী প্রশাসনের সম্পর্ক তিক্ত হয়ে উঠেছে।

সেনাবাহিনীর অবস্থান ও নির্বাচনের দাবি

জাতীয় নিরাপত্তা বিঘ্নিত হচ্ছে—এই যুক্তিতে ২০২৪-এর আন্দোলনের সময় থেকে সেনাবাহিনী মাঠে রয়েছে। ২১ মে সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান স্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দেন, সেনা মোতায়েন দীর্ঘায়িত হলে প্রতিরক্ষা সক্ষমতা ক্ষতিগ্রস্ত হবে; তাই ২০২৫-এর ডিসেম্বরের মধ্যেই নির্বাচন দরকার। তিনি বলেন, “নির্বাচিত সরকার ছাড়া রাজনৈতিক স্থিতি আসবে না।” সেনাবাহিনীর মতে, মানবিক করিডর, চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবস্থাপনা বা স্টারলিঙ্ক চালু—এসব গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নির্বাচিত সরকারের অধিকার।

রাজনৈতিক দলগুলোর চাপ

  • বিএনপি নির্বাচন পেছাতে নারাজ; ক্যাবিনেট হ্রাস ও বিতর্কিত উপদেষ্টা অপসারণের দাবিতে লাগাতার কর্মসূচি ঘোষণা করেছে।
  • ন্যাশনাল সিটিজেন পার্টি (এনসিপি) ও ইসলামপন্থী দলগুলো বলছে, বিচার ও নির্বাচনী সংস্কার শেষ না করে ভোট নয়।
  • পাঁচটি দলের জোট ‘অ্যান্টি-ফ্যাসিস্ট ফোরাম’ নির্বাচনপূর্ব সাংবিধানিক সংস্কার ও আনুপাতিক ভোটব্যবস্থার দাবিতে জোরালো।

ইউনুস কি সত্যিই পদত্যাগ করতে যাচ্ছিলেন?

২৩ মে পর্যন্ত গুঞ্জন ছিল—দায়িত্ব পালনে বাধাগ্রস্ত হয়ে ইউনুস পদত্যাগ-বক্তব্য দিতে পারেন। এনসিপি নেতা নাহিদ ইসলামের সঙ্গে বৈঠকের পরও তিনি নাকি “বাধ্য হয়ে কাজ করছেন” বলেছিলেন। তবে ২৪ মে মন্ত্রিসভা বৈঠকের পর পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান ওহিদ উদ্দিন মাহমুদ নিশ্চিত করেন—ইউনুস ও উপদেষ্টারা কাজে থাকছেন।

পদত্যাগের সম্ভাব্য কারণ

  • রাজনৈতিক দল ও রাষ্ট্রযন্ত্রের সমন্বয়হীনতা
  • করখাত বিভাজনসহ সংস্কার এজেন্ডা আটকে যাওয়া
  • নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজনের সম্ভাবনা ক্ষীণ হওয়া
  • লাগাতার আন্দোলন-অবরোধে ‘পণবন্দি’ অনুভূতি

বিএনপির অবস্থান

বিএনপি নেতা আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীর মতে, তাদের লক্ষ্য ইউনুসের পদত্যাগ নয়; বরং দ্রুত সুষ্ঠু নির্বাচনের রূপরেখা। তারা অস্থায়ী সরকারকে ‘কেয়ারটেকার’ কাঠামোয় এনে ভোটের তফসিল চায়। খসরুর ভাষ্য, “সংস্কার ও নির্বাচন একসঙ্গে এগোতে পারে, দরকার ঐকমত্য।”

অন্য দলগুলোর মতামত

এনসিপি নিশ্চিত—ইউনুস দায়িত্বে থাকবেন। তারা বিএনপিকে ‘পেশিশক্তি নির্ভর পুরোনো কৌশল’ ছেড়ে জাতীয় স্বার্থে ঐক্যের আহ্বান জানায়। ইসলামপন্থী দলসমূহও জাতীয় সার্বভৌমত্ব রক্ষায় ইউনুসের অধীনে নির্বাচন-পূর্ব সংস্কার চায়।

সামনে কী হতে পারে

রাজনৈতিক বিশ্লেষক রেজাউল করিম রনি মনে করেন, পদত্যাগ-আলোচনা মূলত ঐক্য জোরদারের ‘সিগন্যাল’। অপরিকল্পিত নিয়োগ ও দলীয় এজেন্ডা প্রশাসনিক সমন্বয় ভেঙে দিচ্ছে। অন্যদিকে এনসিপি নেতারা সতর্ক করছেন—‘১/১১-ধাঁচের’ নতুন সামরিক হস্তক্ষেপের চক্রান্ত চলছে।

উপসংহারে, আগামী কয়েক সপ্তাহে ইউনুসের সিদ্ধান্ত ও রাজনৈতিক দলগুলোর সমঝোতা নির্ধারণ করবে—বাংলাদেশ দ্রুত নির্বাচনের পথে এগোবে, নাকি আরেক দফা অস্থিরতায় ঢুকে পড়বে। দেশের মানুষ ও আন্তর্জাতিক মহল তাই গোটা পরিস্থিতির ওপর সজাগ দৃষ্টি রাখছে।

বাংলাদেশের মুহাম্মদ ইউনুস প্রশাসনের ভবিষ্যৎ কেন অনিশ্চিত- আল জাজিরা

০৭:২৭:৫৯ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৫ মে ২০২৫

অভ্যন্তরীণ সংকট ও টানাপোড়েনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের অস্থায়ী প্রশাসন নেতৃত্ব দিচ্ছেন নোবেলজয়ী মুহাম্মদ ইউনুস। সামরিক ও রাজনৈতিক চাপ, নির্বাচনের সময়সূচি, সংস্কার পরিকল্পনা এবং পদত্যাগের গুঞ্জন—সব মিলিয়ে প্রশাসনের পথচলা অনিশ্চিত হয়ে উঠেছে। নিচে আল জাজিরার রিপোর্টের মূল বিষয়টি সংক্ষেপে তুলে ধরা হলো।

অস্থায়ী সরকারের ভেতরে শীতল যুদ্ধ

২০ মে ঢাকায় তিন বাহিনী প্রধানের সঙ্গে ইউনুসের বৈঠকটিকে নিয়মিত আইনশৃঙ্খলা আলোচনার অংশ বলা হলেও অভ্যন্তরীণ সূত্রগুলো এটিকে ক্ষমতার টানাপোড়েনের ইঙ্গিত হিসেবে দেখছে। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অপসারণের পর নয় মাস পার হতে না হতেই সেনাবাহিনী ও অস্থায়ী প্রশাসনের সম্পর্ক তিক্ত হয়ে উঠেছে।

সেনাবাহিনীর অবস্থান ও নির্বাচনের দাবি

জাতীয় নিরাপত্তা বিঘ্নিত হচ্ছে—এই যুক্তিতে ২০২৪-এর আন্দোলনের সময় থেকে সেনাবাহিনী মাঠে রয়েছে। ২১ মে সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান স্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দেন, সেনা মোতায়েন দীর্ঘায়িত হলে প্রতিরক্ষা সক্ষমতা ক্ষতিগ্রস্ত হবে; তাই ২০২৫-এর ডিসেম্বরের মধ্যেই নির্বাচন দরকার। তিনি বলেন, “নির্বাচিত সরকার ছাড়া রাজনৈতিক স্থিতি আসবে না।” সেনাবাহিনীর মতে, মানবিক করিডর, চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবস্থাপনা বা স্টারলিঙ্ক চালু—এসব গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নির্বাচিত সরকারের অধিকার।

রাজনৈতিক দলগুলোর চাপ

  • বিএনপি নির্বাচন পেছাতে নারাজ; ক্যাবিনেট হ্রাস ও বিতর্কিত উপদেষ্টা অপসারণের দাবিতে লাগাতার কর্মসূচি ঘোষণা করেছে।
  • ন্যাশনাল সিটিজেন পার্টি (এনসিপি) ও ইসলামপন্থী দলগুলো বলছে, বিচার ও নির্বাচনী সংস্কার শেষ না করে ভোট নয়।
  • পাঁচটি দলের জোট ‘অ্যান্টি-ফ্যাসিস্ট ফোরাম’ নির্বাচনপূর্ব সাংবিধানিক সংস্কার ও আনুপাতিক ভোটব্যবস্থার দাবিতে জোরালো।

ইউনুস কি সত্যিই পদত্যাগ করতে যাচ্ছিলেন?

২৩ মে পর্যন্ত গুঞ্জন ছিল—দায়িত্ব পালনে বাধাগ্রস্ত হয়ে ইউনুস পদত্যাগ-বক্তব্য দিতে পারেন। এনসিপি নেতা নাহিদ ইসলামের সঙ্গে বৈঠকের পরও তিনি নাকি “বাধ্য হয়ে কাজ করছেন” বলেছিলেন। তবে ২৪ মে মন্ত্রিসভা বৈঠকের পর পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান ওহিদ উদ্দিন মাহমুদ নিশ্চিত করেন—ইউনুস ও উপদেষ্টারা কাজে থাকছেন।

পদত্যাগের সম্ভাব্য কারণ

  • রাজনৈতিক দল ও রাষ্ট্রযন্ত্রের সমন্বয়হীনতা
  • করখাত বিভাজনসহ সংস্কার এজেন্ডা আটকে যাওয়া
  • নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজনের সম্ভাবনা ক্ষীণ হওয়া
  • লাগাতার আন্দোলন-অবরোধে ‘পণবন্দি’ অনুভূতি

বিএনপির অবস্থান

বিএনপি নেতা আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীর মতে, তাদের লক্ষ্য ইউনুসের পদত্যাগ নয়; বরং দ্রুত সুষ্ঠু নির্বাচনের রূপরেখা। তারা অস্থায়ী সরকারকে ‘কেয়ারটেকার’ কাঠামোয় এনে ভোটের তফসিল চায়। খসরুর ভাষ্য, “সংস্কার ও নির্বাচন একসঙ্গে এগোতে পারে, দরকার ঐকমত্য।”

অন্য দলগুলোর মতামত

এনসিপি নিশ্চিত—ইউনুস দায়িত্বে থাকবেন। তারা বিএনপিকে ‘পেশিশক্তি নির্ভর পুরোনো কৌশল’ ছেড়ে জাতীয় স্বার্থে ঐক্যের আহ্বান জানায়। ইসলামপন্থী দলসমূহও জাতীয় সার্বভৌমত্ব রক্ষায় ইউনুসের অধীনে নির্বাচন-পূর্ব সংস্কার চায়।

সামনে কী হতে পারে

রাজনৈতিক বিশ্লেষক রেজাউল করিম রনি মনে করেন, পদত্যাগ-আলোচনা মূলত ঐক্য জোরদারের ‘সিগন্যাল’। অপরিকল্পিত নিয়োগ ও দলীয় এজেন্ডা প্রশাসনিক সমন্বয় ভেঙে দিচ্ছে। অন্যদিকে এনসিপি নেতারা সতর্ক করছেন—‘১/১১-ধাঁচের’ নতুন সামরিক হস্তক্ষেপের চক্রান্ত চলছে।

উপসংহারে, আগামী কয়েক সপ্তাহে ইউনুসের সিদ্ধান্ত ও রাজনৈতিক দলগুলোর সমঝোতা নির্ধারণ করবে—বাংলাদেশ দ্রুত নির্বাচনের পথে এগোবে, নাকি আরেক দফা অস্থিরতায় ঢুকে পড়বে। দেশের মানুষ ও আন্তর্জাতিক মহল তাই গোটা পরিস্থিতির ওপর সজাগ দৃষ্টি রাখছে।