পাকিস্তানের মন্ত্রিসভা সাম্প্রতিক ভারত-পাকিস্তান সংঘাতের ঠিক পরেই সেনাপ্রধান জেনারেল সৈয়দ আসিম মুনিরকে ফিল্ড মার্শাল পদে উন্নীত করেছে। ৪ দিনের মিসাইল ও ড্রোন হামলায় দুই পারমাণবিক শক্তিধর দেশ প্রায় পঞ্চম যুদ্ধে জড়িয়ে পড়তে বসেছিল; ১০ মে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘোষিত যুদ্ধবিরতি সেই বিপদ এড়ায়। সরকারের মতে, সীমান্ত জয়ের কৌশলেই মুনিরের পদোন্নতি।
পদোন্নতির কারণ
প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফের দপ্তরের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ভারতের আক্রমণ মোকাবিলায় “অন্যতম সাহসিকতা ও কৌশলে” সেনাবাহিনীকে নেতৃত্ব দিয়েছেন মুনির। একই সময়ে পশ্চিম সীমান্তে সন্ত্রাসবিরোধী লড়াইও চলছিল। স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী তালাল চৌধুরীর ভাষায়, “দুটি ফ্রন্টে” সফল যুদ্ধ পরিচালনার স্বীকৃতিই এই পদোন্নতি।
ফিল্ড মার্শাল পদ: পরিচিতি ও বিরলতা
ব্রিটিশ সামরিক ঐতিহ্য অনুসরণকারী বাহিনীতে ফিল্ড মার্শাল সর্বোচ্চ পদ, আজীবনের জন্য ধার্য। পাকিস্তানে এখন পর্যন্ত ১৭ জন সেনাপ্রধানের মধ্যে কেবল দ্বিতীয় জন—আয়ুব খানের পর—মুনিরই এই সম্মান পেলেন। ভারতেও ছয় দশকে মাত্র দু’জনকে এ পদ দেওয়া হয়েছে।
ভারতের উদাহরণ
ভারতের প্রথম ফিল্ড মার্শাল স্যাম মানেকশো ১৯৭১ সালের যুদ্ধে নেতৃত্বের জন্য ১৯৭৩-এ পদমর্যাদা পান। আর কেওডান্ডেরা এম কারিয়াপ্পা ১৯৮৬-তে, অবসরের তিন দশক পর, এই উপাধি লাভ করেন। দুই দেশেই পদটি মূলত প্রতীকী সম্মানবোধক।
পাকিস্তানে সেনাবাহিনীর প্রভাব
স্বাধীনতার পর থেকে পাকিস্তানে সেনাবাহিনীই সবচেয়ে প্রভাবশালী প্রতিষ্ঠান—মোট তিন দশক সরাসরি দেশ শাসন করেছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের দল নির্বাচনী কারচুপির অভিযোগ তুললে সেনাবাহিনীর জনপ্রিয়তা কিছুটা কমে যায়; তবে ভারতের সঙ্গে সাম্প্রতিক সংঘর্ষে সেই অবস্থান পুনরায় শক্তিশালী হয়েছে।
মুনিরের ভবিষ্যৎ ও সম্ভাব্য প্রভাব
বর্তমান আইনে মুনির ২০২৭ সাল পর্যন্ত সেনাপ্রধানের দায়িত্ব পালন করতে পারবেন; ২০২৪-এর সংশোধিত আইনে আরও পাঁচ বছরের দ্বিতীয় মেয়াদও সম্ভব। গবেষক মারিয়া রাশিদের মতে, ফিল্ড মার্শাল পদোন্নতি “প্রায় নিশ্চিতভাবে” মেয়াদ বাড়ানোর পথ খুলে দিল। সমালোচকেরা বলছেন, এতে রাজনৈতিক সুবিধাবাদই মুখ্য, কারণ বেসামরিক সরকার সেনাবাহিনীর সমর্থন ধরে রাখতে চায়। তবে সরকার দাবি করছে, পদোন্নতির উদ্দেশ্য কেবল জাতীয় নিরাপত্তা সুরক্ষা ও সাহসিকতার স্বীকৃতি।
ফিল্ড মার্শাল পদ দেশটির সামরিক-রাজনৈতিক সমীকরণে তাৎপর্যপূর্ণ বার্তা দেয়—সেনাবাহিনীর মর্যাদা আরও পোক্ত হলো, আর আসিম মুনিরের নেতৃত্বে রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক সিদ্ধান্তে সামরিক সংশ্লেষ আরও গভীর হতে পারে। এতে গণতান্ত্রিক কাঠামো কতটা চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে, তা সময়ই জানাবে।