একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় জামায়াতে ইসলামীর নেতা এ টি এম আজহারুল ইসলামকে মৃত্যুদন্ড থেকে খালাস দিয়েছেন আপিল বিভাগ। প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বে ৭ বিচারপতির পূর্ণাঙ্গ আপিল বেঞ্চ মঙ্গলবার সকালে এই রায় ঘোষণা করেন। রায়ে আপিল বিভাগ অবিলম্বে এটিএম আজহারুল ইসলামকে মুক্তির নির্দেশ দিয়েছেন। মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় মৃত্যুদন্ড থেকে খালাস পাওয়া বাংলাদেশের ইতিহাসে নয়, পৃথিবীর ইতিহাসে এটি একটি নজিরবিহীন ঘটনা হয়ে থাকবে বলে জানিয়েছেন আইনজীবী।
‘মঙ্গলবার রায় ঘোষণার সময় রাষ্ট্র ও আসামি উভয়পক্ষের আইনজীবী, জামায়াতের শীর্ষ নেতা ও তাদের দলীয় আইনজীবীরা উপস্থিত ছিলেন। সকাল ৯ টা ৫০ মিনিটে প্রধানবিচারপতির নেতৃত্বে সাত বিচরপতি এজলাসে উঠেন। এরপর রাষ্ট্রপক্ষের প্রসিকিউটর গাজি এমএইচ তামিম আইনি বিষয় তুলে ধরেন। এরপর রায় ঘোষণা শুরু হয় ৯টা ৫৫ মিনিটে। এদিকে তার আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির জানিয়েছেন আজ বুধবার মুক্তি পাবেন এটিএম আজহারুল ইসলাম। তিনি বলেন, ইনশাআল্লাহ , আশা করি আজ সকালে এটিএম আজহারুল ইসলাম মুক্তি পাবেন। রায়ের পর আদালত প্রাঙ্গণে উল্লাস প্রকাশ করেন আইনজীবীরা। রায় শোনার জন্য আদালত প্রাঙ্গনে ও এজলাস কক্ষে সাংবাদিক ,আইনজীবী রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ সহ অনেকেই এসেছিলেন। আজহারুল ইমলামের আইনজীবী মো শিশির মনির তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় বলেন, “এই রায়ের মধ্য দিয়ে সত্য জয়ী হয়েছে, মিথ্যা পরাজিত হয়েছে।” রায়ের সময় রাষ্ট্রপক্ষে উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল অনীক আর হক। রায়ের পর তিনি কোনো মন্তব্য করেননি।
আদালতে জামায়াত নেতা আজহারের পক্ষে উপস্থিত ছিলেন আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির, ব্যারিস্টার এহসান আবদুল্লাহ সিদ্দিক, ব্যারিস্টার ইমরান আবদুল্লাহ সিদ্দিক, ব্যারিস্টার নাজিব মোমেন। রাষ্ট্রপক্ষে উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল ব্যারিস্টার অনীক আর হক ও প্রসিকিউশনের পক্ষে প্রসিকিউটর গাজী এম এইচ তামিম। এ টি এম আজহারুল ইসলামের রায় ঘোষণার সময় সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে উপস্থিত ছিলেন,জামায়াতের নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মো. তাহের, জামায়াতের ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা এটি এম মাসুম, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান, অ্যাডভোকেট এহসানুল মাহবুব জোবায়ের, অ্যাডভোকেট মোয়াজ্জেম হোসেন হেলাল, নির্বাহী পরিষদ সদস্য মোবারক হোসেন,মাওলানা আব্দুল হালিম, অ্যাডভোকেট মতিউর রহমান, মাসুদ সাঈদী, জামায়াতের ঢাকা মহানগর উত্তরে আমির মোহাম্মদ সেলিম উদ্দিন, জামায়াতের ঢাকা মহানগর দক্ষিণের নায়েবে আমির ড.হেলাল উদ্দিন, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সহকারী সেক্রেটারি দেলোয়ার হোসেন প্রমুখ।
বাংলাদেশের বিচার বিভাগের ইতিহাসে এই প্রথম মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত কোনো ব্যক্তি আপিল বিভাগের রায়ে খালাস পেলেন। এই রায়ের ফলে জামায়াত নেতা আজহারুল ইসলামের মুক্তিতে বাধা নেই বলে জানিয়েছেন আইনজীবীরা। এদিকে আপিল বিভাগের রায়ে বিচারপতিগণ স্বাক্ষর করেছেন। তিন পৃষ্টার সংক্ষিপ্ত রায়ও প্রকাশ করেছেন। এর পর এটিএম আজাহারের খালাসের রায়ের কপি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে পৌছেছে।
মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় মৃত্যুদন্ড থেকে জামায়াত নেতা এ টি এম আজহারুল ইসলামের খালাসের রায়ে পর্যবেক্ষণ দিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। রায়ে সর্বোচ্চ আদালত চারটি পর্যবেক্ষণ দিয়েছেন বলে সাংবাদিকদের জানান, আজহারুল ইসলামের আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির। পর্যবেক্ষন গুলোর মধ্যে রয়েছে , অতীতের রায়ে বাংলাদেশ সহ এই ভারতীয় সাব কন্টিনেন্টে ক্রিমিনাল বিচার ব্যবস্থার পদ্ধতি চেঞ্জ করে দেয়া হয়েছিল, এটা ছিল সবচাইতে বড় ভুল। আদালতের সামনে উপস্থাপিত সাক্ষ্যপ্রমাণ এসেসমেন্ট করা ছাড়াই জনাব এটিএম আজহারুল ইসলাম সাহেবকে ফাঁসি দেয়া হয়েছিল। পৃথিবীর ইতিহাসে এটি একটি ঃৎধাবংঃু ড়ভ ঃৎঁঃয অর্থাৎ বিচারের নামে অবিচার। যে সমস্ত তথ্য প্রমাণ আদালতে হাজির করা হয়েছিল, অতীতের আপিল বিভাগ তা সঠিকভাবে বিবেচনা করতে ব্যর্থ হয়েছে।
রায় ঘোষনার পর আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির তার প্রতিক্রিয়ায় সাংবাদিকদের বলেন, ‘আজকের এই রায়ের মাধ্যমে আমরা মনে করি সত্য জয়ী হয়েছে, মিথ্যা পরাজিত হয়েছে। ইতোপূর্বে জামায়াতের এবং বিএনপির ছয়জন শীর্ষস্থানীয় নেতৃবৃন্দের মৃত্যুদন্ড কার্যকর করা হয়েছে। এছাড়া অন্ততপক্ষে পাঁচজন জেলে মৃত্যুবরণ করেছেন। যেটা দুনিয়ার ইতিহাসে নজিরবিহীন নির্যাতনের শামিল।’ তিনি আরো বলেন, ‘এ টি এম আজহারুল ইসলাম সৌভাগ্যবান, তিনি ন্যায় বিচার পেয়েছেন। আল্লাহ তায়ালা তাকে বাঁচিয়ে রেখেছিলেন বলে। আমরা মনে করি, এই রায়ের মাধ্যমে সিন্ডিকেটেড ইনজাস্টিজের অবসান হয়েছে। আমরা এটাও মনে করি এই রায় ঘোষণার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের আদালতের মর্যাদা সমুন্নত হয়েছে।