০৪:৪৯ অপরাহ্ন, শনিবার, ২১ জুন ২০২৫

অচেনা সাফল্যের পথে পাঞ্জাব কিংসের সাহসী যাত্রা

নতুন নেতৃত্বে বদলে যাওয়া পাঞ্জাব

দীর্ঘ এক দশক পর প্লে-অফে জায়গা করে নেওয়া পাঞ্জাব কিংস এখন চূড়ান্ত সাফল্যের দুয়ারে দাঁড়িয়ে। অধিনায়ক শ্রেয়াস আয়ার ও কোচ রিকি পন্টিংয়ের নেতৃত্বে দলটি শুধু পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষে উঠেই থেমে থাকেনি, বরং নিজেদের নতুন এক পরিচয়ে ফুটিয়ে তুলেছে।

শুরু থেকেই শ্রেয়াস বলেছিলেন, “আমরা শুধু প্লে-অফ নয়, চ্যাম্পিয়নশিপ জেতার কথা ভাবছিলাম।” তার সেই আত্মবিশ্বাস আজ বাস্তবতায় পরিণত।

ভবিষ্যদ্বাণী সত্য হলো

মার্চ মাসে, সিজন শুরুর আগেই ব্যাটসম্যান শশাঙ্ক সিং ঘোষণা দিয়েছিলেন—“১৪তম ম্যাচের পর আবার কথা বলবেন, আমরা শীর্ষ দুইয়ে থাকব।” সে সময় তার বক্তব্যকে অনেকেই আত্মবিশ্বাসের অতিরঞ্জন বলেছিল। কিন্তু ২৫ মে মুম্বাই ইন্ডিয়ান্সকে সাত উইকেটে হারিয়ে পাঞ্জাব পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষে উঠে যায় এবং কোয়ালিফায়ার-১-এ জায়গা করে নেয়। শশাঙ্ক যেন ভবিষ্যত দেখেই বলেছিলেন।

পুরনো পরিচয়ের পরিবর্তন

পাঞ্জাব কিংস পূর্বে পরিচিত ছিল কিংস ইলেভেন পাঞ্জাব নামে। ২০১৪ সালে জর্জ বেইলির অধীনে তারা ফাইনালে উঠেছিল, তবে কেকেআরের কাছে হেরে গিয়েছিল। এরপর একের পর এক অধিনায়ক বদলানো (১৮ বছরে ১৭ অধিনায়ক) এবং অগোছালো দলগঠনের কারণে পাঞ্জাব পরিচিত হয়ে উঠেছিল ‘চিরব্যর্থ’ হিসেবে। রাহুল, অশ্বিন, ধাওয়ানের মতো অধিনায়ক ও কুম্বলে, বেইলিসের মতো কোচের হাতেও ভাগ্য ফেরেনি।

বদলে যাওয়ার শুরু

এই বছরের বড় নিলামে পাঞ্জাব সবকিছু ঝেড়ে ফেলে নতুন করে দল গড়েছে। সবচেয়ে বড় চমক ছিল রিকি পন্টিংয়ের অধীনে শ্রেয়াস আয়ারকে ২৬.৭৫ কোটি টাকায় দলে ভেড়ানো। যদিও তখন অনেকেই প্রশ্ন তুলেছিলেন তার স্ট্রাইক রেট নিয়ে। কিন্তু পন্টিং বলেছিলেন, “আমি ওর সঙ্গে কাজ করতে চেয়েছি। ও দারুণ নেতা হবে।”

নেতৃত্বে শ্রেয়াসের জ্বালাময় উপস্থিতি

১৪ ম্যাচে শ্রেয়াস তার নেতৃত্বগুণ, ব্যাটিং দক্ষতা ও আত্মত্যাগী মনোভাব দেখিয়েছেন। তিনি ৫১৪ রান করেছেন ১৭২ স্ট্রাইক রেটে—যা তার আগের রেকর্ড থেকে অনেক উন্নত। দলের স্বার্থে তিন নম্বর ব্যাটিং পজিশন ছেড়ে দেন অস্ট্রেলিয়ান ব্যাটসম্যান জশ ইংলিসকে।

তরুণদের ওপর আস্থা: ঝুঁকিকিন্তু ফলপ্রসূ

প্রভসিমরন সিং ও প্রিয়ান্শ আর্য—দুই অনভিজ্ঞ ওপেনারকে একাদশে রাখা ছিল সাহসী সিদ্ধান্ত। তারা দু’জনে মিলে করেছেন ৪৬৭ রান। শশাঙ্ক ও নেহাল ওয়াধেরার মতো মাঝের সারির তরুণরাও দারুণ পারফর্ম করেছে। এমনকি মার্কাস স্টইনিসের মতো বিশ্বমানের অলরাউন্ডার ১০ ম্যাচে মাত্র ৬৫ বল খেলেছেন, যা স্থানীয় ব্যাটসম্যানদের সাফল্যেরই প্রমাণ।

গভীর ব্যাটিং লাইনআপ: আগ্রাসনের ছাপ

পাঞ্জাবের ব্যাটিং লাইনআপ এতটাই গভীর যে আফগানিস্তানের অলরাউন্ডার আজমাতউল্লাহ ওমারজাই পর্যন্ত নয় নম্বরে খেলেছেন। ফলাফল—তারা সাতবার ২০০-র বেশি রান করেছে, যা আইপিএলের এক মরসুমে সর্বোচ্চ।

বোলিং বিভাগেও দৃঢ়তা

পেসার অর্শদীপ সিং নিয়েছেন ১৮ উইকেট ৮.৫৬ ইকোনমিতে। যদিও মার্কো ইয়ানসেন প্লে-অফে থাকছেন না, তার সঙ্গে জুটি গড়েছেন অর্শদীপ। চাহালের পারফরম্যান্স ওঠানামা করলেও দুই ম্যাচে একাই ম্যাচ ঘুরিয়ে দিয়েছেন। বাকিরা যেমন জাভিয়ের বার্টলেট, বিশাখ বিজয়কুমার, হরপ্রীত ব্রারও প্রয়োজনমতো অবদান রেখেছেন।

ইতিহাসের হাতছানি

২৯ মে মুল্লানপুরে কোয়ালিফায়ার-১-এ আরসিবির বিরুদ্ধে নামবে পাঞ্জাব। জয় পেলে পৌঁছে যাবে ফাইনালে, যেখানে একবারও কোনো পাঞ্জাব দল পৌঁছায়নি। শ্রেয়াস ও তার দলের সামনে আছে ইতিহাস গড়ার সুযোগ। সাফল্য না এলেও, এবারের পারফরম্যান্সে পাঞ্জাব কিংস নিজেদের ক্রিকেটীয় পরিচয় স্পষ্ট করে দিয়েছে—আক্রমণাত্মক, আত্মবিশ্বাসী ও দলগত ঐক্যের এক নজির।

এবার হয়তো শুরু হলো নতুন এক যুগের—শ্রেয়াস-পন্টিং জুটির রূপকথার গল্প।

অচেনা সাফল্যের পথে পাঞ্জাব কিংসের সাহসী যাত্রা

০৪:৩৫:২৯ অপরাহ্ন, শনিবার, ৩১ মে ২০২৫

নতুন নেতৃত্বে বদলে যাওয়া পাঞ্জাব

দীর্ঘ এক দশক পর প্লে-অফে জায়গা করে নেওয়া পাঞ্জাব কিংস এখন চূড়ান্ত সাফল্যের দুয়ারে দাঁড়িয়ে। অধিনায়ক শ্রেয়াস আয়ার ও কোচ রিকি পন্টিংয়ের নেতৃত্বে দলটি শুধু পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষে উঠেই থেমে থাকেনি, বরং নিজেদের নতুন এক পরিচয়ে ফুটিয়ে তুলেছে।

শুরু থেকেই শ্রেয়াস বলেছিলেন, “আমরা শুধু প্লে-অফ নয়, চ্যাম্পিয়নশিপ জেতার কথা ভাবছিলাম।” তার সেই আত্মবিশ্বাস আজ বাস্তবতায় পরিণত।

ভবিষ্যদ্বাণী সত্য হলো

মার্চ মাসে, সিজন শুরুর আগেই ব্যাটসম্যান শশাঙ্ক সিং ঘোষণা দিয়েছিলেন—“১৪তম ম্যাচের পর আবার কথা বলবেন, আমরা শীর্ষ দুইয়ে থাকব।” সে সময় তার বক্তব্যকে অনেকেই আত্মবিশ্বাসের অতিরঞ্জন বলেছিল। কিন্তু ২৫ মে মুম্বাই ইন্ডিয়ান্সকে সাত উইকেটে হারিয়ে পাঞ্জাব পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষে উঠে যায় এবং কোয়ালিফায়ার-১-এ জায়গা করে নেয়। শশাঙ্ক যেন ভবিষ্যত দেখেই বলেছিলেন।

পুরনো পরিচয়ের পরিবর্তন

পাঞ্জাব কিংস পূর্বে পরিচিত ছিল কিংস ইলেভেন পাঞ্জাব নামে। ২০১৪ সালে জর্জ বেইলির অধীনে তারা ফাইনালে উঠেছিল, তবে কেকেআরের কাছে হেরে গিয়েছিল। এরপর একের পর এক অধিনায়ক বদলানো (১৮ বছরে ১৭ অধিনায়ক) এবং অগোছালো দলগঠনের কারণে পাঞ্জাব পরিচিত হয়ে উঠেছিল ‘চিরব্যর্থ’ হিসেবে। রাহুল, অশ্বিন, ধাওয়ানের মতো অধিনায়ক ও কুম্বলে, বেইলিসের মতো কোচের হাতেও ভাগ্য ফেরেনি।

বদলে যাওয়ার শুরু

এই বছরের বড় নিলামে পাঞ্জাব সবকিছু ঝেড়ে ফেলে নতুন করে দল গড়েছে। সবচেয়ে বড় চমক ছিল রিকি পন্টিংয়ের অধীনে শ্রেয়াস আয়ারকে ২৬.৭৫ কোটি টাকায় দলে ভেড়ানো। যদিও তখন অনেকেই প্রশ্ন তুলেছিলেন তার স্ট্রাইক রেট নিয়ে। কিন্তু পন্টিং বলেছিলেন, “আমি ওর সঙ্গে কাজ করতে চেয়েছি। ও দারুণ নেতা হবে।”

নেতৃত্বে শ্রেয়াসের জ্বালাময় উপস্থিতি

১৪ ম্যাচে শ্রেয়াস তার নেতৃত্বগুণ, ব্যাটিং দক্ষতা ও আত্মত্যাগী মনোভাব দেখিয়েছেন। তিনি ৫১৪ রান করেছেন ১৭২ স্ট্রাইক রেটে—যা তার আগের রেকর্ড থেকে অনেক উন্নত। দলের স্বার্থে তিন নম্বর ব্যাটিং পজিশন ছেড়ে দেন অস্ট্রেলিয়ান ব্যাটসম্যান জশ ইংলিসকে।

তরুণদের ওপর আস্থা: ঝুঁকিকিন্তু ফলপ্রসূ

প্রভসিমরন সিং ও প্রিয়ান্শ আর্য—দুই অনভিজ্ঞ ওপেনারকে একাদশে রাখা ছিল সাহসী সিদ্ধান্ত। তারা দু’জনে মিলে করেছেন ৪৬৭ রান। শশাঙ্ক ও নেহাল ওয়াধেরার মতো মাঝের সারির তরুণরাও দারুণ পারফর্ম করেছে। এমনকি মার্কাস স্টইনিসের মতো বিশ্বমানের অলরাউন্ডার ১০ ম্যাচে মাত্র ৬৫ বল খেলেছেন, যা স্থানীয় ব্যাটসম্যানদের সাফল্যেরই প্রমাণ।

গভীর ব্যাটিং লাইনআপ: আগ্রাসনের ছাপ

পাঞ্জাবের ব্যাটিং লাইনআপ এতটাই গভীর যে আফগানিস্তানের অলরাউন্ডার আজমাতউল্লাহ ওমারজাই পর্যন্ত নয় নম্বরে খেলেছেন। ফলাফল—তারা সাতবার ২০০-র বেশি রান করেছে, যা আইপিএলের এক মরসুমে সর্বোচ্চ।

বোলিং বিভাগেও দৃঢ়তা

পেসার অর্শদীপ সিং নিয়েছেন ১৮ উইকেট ৮.৫৬ ইকোনমিতে। যদিও মার্কো ইয়ানসেন প্লে-অফে থাকছেন না, তার সঙ্গে জুটি গড়েছেন অর্শদীপ। চাহালের পারফরম্যান্স ওঠানামা করলেও দুই ম্যাচে একাই ম্যাচ ঘুরিয়ে দিয়েছেন। বাকিরা যেমন জাভিয়ের বার্টলেট, বিশাখ বিজয়কুমার, হরপ্রীত ব্রারও প্রয়োজনমতো অবদান রেখেছেন।

ইতিহাসের হাতছানি

২৯ মে মুল্লানপুরে কোয়ালিফায়ার-১-এ আরসিবির বিরুদ্ধে নামবে পাঞ্জাব। জয় পেলে পৌঁছে যাবে ফাইনালে, যেখানে একবারও কোনো পাঞ্জাব দল পৌঁছায়নি। শ্রেয়াস ও তার দলের সামনে আছে ইতিহাস গড়ার সুযোগ। সাফল্য না এলেও, এবারের পারফরম্যান্সে পাঞ্জাব কিংস নিজেদের ক্রিকেটীয় পরিচয় স্পষ্ট করে দিয়েছে—আক্রমণাত্মক, আত্মবিশ্বাসী ও দলগত ঐক্যের এক নজির।

এবার হয়তো শুরু হলো নতুন এক যুগের—শ্রেয়াস-পন্টিং জুটির রূপকথার গল্প।