১২:০৭ অপরাহ্ন, বুধবার, ১০ ডিসেম্বর ২০২৫
খালেদা জিয়ার সুস্থতার জন্য নির্বাসিত শেখ হাসিনার দোয়া: ভারতীয় সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশ আটকে থাকা ক্রেডিট কার্ড ঋণজাল থেকে মুক্তি: টিকটকে আয় করে ২৩ বছরের তরুণের ঘুরে দাঁড়ানো গোল্ডেন গ্লোব মনোনয়ন দৌড়ে শীর্ষে ‘ওয়ান ব্যাটল আফটার অ্যানাদার’ ইউক্রেনের নতুন শান্তি প্রস্তাব : লন্ডন বৈঠকে জেলেনস্কিকে ইউরোপীয় সমর্থন পূর্ব কঙ্গোতে নতুন ‘সমান্তরাল সরকার’: এম২৩ বিদ্রোহীদের নিয়ন্ত্রণ আরও শক্ত হচ্ছে আইবিএএইচআরআই-এর উদ্বেগ: শেখ হাসিনা ও টিউলিপ সিদ্দিককে ঘিরে বিচার সংকট—ইউনুস সরকারের আমলে ন্যায়বিচার প্রশ্নবিদ্ধ ২০২৫ সালে আইপিইউ-র হিসাবে মানবাধিকার লঙ্ঘনের শিকার এক হাজারেরও বেশি সংসদ সদস্য, এর মধ্যে বাংলাদেশি এমপিও রয়েছেন চিকিৎসকদের পরামর্শ অমান্য—তারেক রহমানের মন্তব্যে খালেদা জিয়ার অসুস্থতা নিয়ে নতুন প্রশ্ন কারাগারে থাকা সাংবাদিকদের পরিবারে ফেরানোর উদ্যোগ নিন: সিপিজের আহ্বান কার্যনির্বাহী প্রধান ইউনূসকে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা আজ সন্ধ্যায় কিংবা আগামীকাল

ট্রাম্পের লেনদেনের নীতির মুখোমুখি চীনের কৌশল

নিজ আঙিনায় বলবৎবাইরে সংযত: চীনের দ্বৈত ভূমিকা

বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি ও সামরিক শক্তি হয়েও চীনের পররাষ্ট্রনীতিতে অনেক সময় মাঝারি ক্ষমতার দেশগুলোর মতো আচরণ লক্ষ্য করা যায়। এশিয়া বা নিজের প্রতিবেশী অঞ্চলে চীন আগ্রাসী হলেও, মধ্যপ্রাচ্যের মতো দূরবর্তী অঞ্চলে তারা অত্যন্ত সংযত এবং মূলত ব্যবসাকেন্দ্রিক। এই কৌশল বহুদিন ধরেই অনুসৃত হচ্ছে, এমনকি জি চিনপিংয়ের শাসনামলেও।

জি চিনপিং চীনের গৌরবময় বিশ্বমর্যাদা ফিরিয়ে আনার কথা বললেও, আন্তর্জাতিক মঞ্চে তিনি চীনকে শান্তিপ্রিয় ও সহযোগিতামূলক হিসেবে উপস্থাপন করেন। ২০২৩ সালে বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ (বিআরআই)-এর দশ বছর পূর্তি উপলক্ষে তিনি বলেন, প্রাচীন সিল্ক রোডে চীনা বণিকরা কখনো দখলদার ছিল না, বরং তারা ছিলেন বন্ধুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক দূত।

সহিংস অঞ্চলেও উন্নয়নের বার্তা

২০১৬ সালে জি চিনপিং আরবলীগকে বলেন, “মধ্যপ্রাচ্যের বিশৃঙ্খলার মূল কারণ উন্নয়নের অভাব।” শক্তিপ্রয়োগ সেখানে শুধু বিপর্যয় ডেকে এনেছে, বরং চীনের প্রস্তাবিত বিকল্প—বাণিজ্য, প্রযুক্তি ও অবকাঠামো—স্থিতিশীলতা বজায় রেখে উন্নয়ন ঘটাতে পারে।

চীনা কূটনীতিক ও গবেষকরা এই কৌশলকে ‘চীনা প্রজ্ঞা’ হিসেবে আখ্যায়িত করেন। লিবিয়ার গৃহযুদ্ধে উভয় পক্ষের সাথেই চীন চুক্তি করে, আর ২০২৩ সালে ইরান ও সৌদি আরবের মধ্যে সম্পর্ক পুনঃস্থাপনেও চীনের মধ্যস্থতা কার্যকর হয়।

মধ্যপ্রাচ্যে চীনের ভুমিকা: বইয়ের মাধ্যমে বিশ্লেষণ

ফুদান বিশ্ববিদ্যালয়ের ঝাং চুচুর নতুন বই ‘China’s Changing Role in the Middle East’ চীনের এই ভূমিকাকে বিশ্লেষণ করে। যদিও বইটি কিছুটা পক্ষপাতদুষ্ট, তবুও এটি চীনের বাস্তবধর্মী, স্বার্থনির্ভর কূটনীতির দিকটি খোলামেলাভাবে তুলে ধরেছে।

একজন সাবেক চীনা রাষ্ট্রদূতের বক্তব্য অনুযায়ী, এক দশক আগে চীন সিরিয়ার বিরুদ্ধে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তাবগুলো ভেটো করেছিল, যাতে চীনের গুরুত্ব মধ্যপ্রাচ্যে বৃদ্ধি পায়। বইটিতে আরও জানানো হয়, সিরিয়ার গৃহযুদ্ধে চীনের প্রধান উদ্বেগ ছিল শিনজিয়াং থেকে আসা উইঘুর জঙ্গিদের উপস্থিতি।

নীতির চেয়ে স্বার্থ গুরুত্বপূর্ণ

চীনের ‘উন্নয়নই সমাধান’ দর্শনের বিপরীতে পশ্চিমা শক্তির গণতন্ত্র চাপিয়ে দেওয়ার প্রবণতা চীনের কূটনৈতিক বক্তব্যে বারবার উঠে আসে। চীন দাবি করে, তাদের বিনিয়োগে কোনো রাজনৈতিক শর্ত থাকে না। তবে সমালোচকরা বলেন, এই বিনিয়োগগুলো অনেক সময় অস্বচ্ছ এবং স্থানীয় প্রভাবশালীদের স্বার্থে ব্যবহৃত হয়।

চীনের সাহায্যও তুলনামূলকভাবে নগণ্য। ২০২৩ সালে তারা জাতিসংঘের ফিলিস্তিনি শরণার্থী সংস্থাকে মাত্র ২০ লাখ ডলার সাহায্য করে, যা আইসল্যান্ডের থেকেও কম।

ট্রাম্পের আবির্ভাব: চীনের আয়নায় আরেক চীন

ডোনাল্ড ট্রাম্পের নেতৃত্বে যুক্তরাষ্ট্র এখন চীনের মতোই লেনদেন-ভিত্তিক, অ-আদর্শবাদী পররাষ্ট্রনীতি অনুসরণ করছে। ১৩ মে সৌদি আরবে দেওয়া এক বক্তব্যে ট্রাম্প বলেন, “মধ্যপ্রাচ্যের ভবিষ্যৎ গঠিত হচ্ছে বাণিজ্য দিয়ে, বিশৃঙ্খলা নয়।” তিনি যুক্তরাষ্ট্রের আগের হস্তক্ষেপকারীদের কঠোরভাবে সমালোচনা করেন, বলেন যে তারা সমাজগুলোকে না বুঝেই ধ্বংস করেছে।

চীনের চ্যালেঞ্জ: অভ্যন্তরীণ সংকটে বৈদেশিক দুর্বলতা

চীনের অর্থনীতি ধীরগতির দিকে, ফলে বৈদেশিক বিনিয়োগেও চাপ পড়ছে। বিআরআই-ভিত্তিক ঋণের অনেকগুলো এখন পরিশোধের সময় এসেছে। মধ্যপ্রাচ্যে নিরাপত্তা দানকারী হিসেবে চীন এখনো পিছিয়ে। বিপরীতে, ট্রাম্পের সফরে যুক্তরাষ্ট্র বিলিয়ন ডলারের অস্ত্র ও প্রযুক্তিপণ্য বিক্রি করেছে।

তবে চীন এখনো গুরুত্বপূর্ণ, বিশেষত জ্বালানি ক্রেতা হিসেবে ও পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তির সরবরাহকারী হিসেবে। যারা পশ্চিমের ওপর নির্ভরশীলতা কমাতে চান, তাদের জন্য চীন একটি বিকল্প।

পরিণতি: আদর্শ নাকি প্রতিযোগিতা?

চীন সত্যিই যদি শান্তি ও উন্নয়নের কৌশলে অটল থাকে, তবে তাদের উচিত বাস্তবতাবাদ ও চুক্তিনির্ভর দৃষ্টিভঙ্গি বজায় রাখা। কিন্তু যদি তাদের প্রকৃত লক্ষ্য হয় আমেরিকাকে সরিয়ে দেওয়া, তবে ট্রাম্পের কৌশল হয়তো চীনকে আরও আদর্শিক ও আগ্রাসী করে তুলবে।

জনপ্রিয় সংবাদ

খালেদা জিয়ার সুস্থতার জন্য নির্বাসিত শেখ হাসিনার দোয়া: ভারতীয় সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশ

ট্রাম্পের লেনদেনের নীতির মুখোমুখি চীনের কৌশল

১১:৫৫:২৪ অপরাহ্ন, শনিবার, ৩১ মে ২০২৫

নিজ আঙিনায় বলবৎবাইরে সংযত: চীনের দ্বৈত ভূমিকা

বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি ও সামরিক শক্তি হয়েও চীনের পররাষ্ট্রনীতিতে অনেক সময় মাঝারি ক্ষমতার দেশগুলোর মতো আচরণ লক্ষ্য করা যায়। এশিয়া বা নিজের প্রতিবেশী অঞ্চলে চীন আগ্রাসী হলেও, মধ্যপ্রাচ্যের মতো দূরবর্তী অঞ্চলে তারা অত্যন্ত সংযত এবং মূলত ব্যবসাকেন্দ্রিক। এই কৌশল বহুদিন ধরেই অনুসৃত হচ্ছে, এমনকি জি চিনপিংয়ের শাসনামলেও।

জি চিনপিং চীনের গৌরবময় বিশ্বমর্যাদা ফিরিয়ে আনার কথা বললেও, আন্তর্জাতিক মঞ্চে তিনি চীনকে শান্তিপ্রিয় ও সহযোগিতামূলক হিসেবে উপস্থাপন করেন। ২০২৩ সালে বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ (বিআরআই)-এর দশ বছর পূর্তি উপলক্ষে তিনি বলেন, প্রাচীন সিল্ক রোডে চীনা বণিকরা কখনো দখলদার ছিল না, বরং তারা ছিলেন বন্ধুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক দূত।

সহিংস অঞ্চলেও উন্নয়নের বার্তা

২০১৬ সালে জি চিনপিং আরবলীগকে বলেন, “মধ্যপ্রাচ্যের বিশৃঙ্খলার মূল কারণ উন্নয়নের অভাব।” শক্তিপ্রয়োগ সেখানে শুধু বিপর্যয় ডেকে এনেছে, বরং চীনের প্রস্তাবিত বিকল্প—বাণিজ্য, প্রযুক্তি ও অবকাঠামো—স্থিতিশীলতা বজায় রেখে উন্নয়ন ঘটাতে পারে।

চীনা কূটনীতিক ও গবেষকরা এই কৌশলকে ‘চীনা প্রজ্ঞা’ হিসেবে আখ্যায়িত করেন। লিবিয়ার গৃহযুদ্ধে উভয় পক্ষের সাথেই চীন চুক্তি করে, আর ২০২৩ সালে ইরান ও সৌদি আরবের মধ্যে সম্পর্ক পুনঃস্থাপনেও চীনের মধ্যস্থতা কার্যকর হয়।

মধ্যপ্রাচ্যে চীনের ভুমিকা: বইয়ের মাধ্যমে বিশ্লেষণ

ফুদান বিশ্ববিদ্যালয়ের ঝাং চুচুর নতুন বই ‘China’s Changing Role in the Middle East’ চীনের এই ভূমিকাকে বিশ্লেষণ করে। যদিও বইটি কিছুটা পক্ষপাতদুষ্ট, তবুও এটি চীনের বাস্তবধর্মী, স্বার্থনির্ভর কূটনীতির দিকটি খোলামেলাভাবে তুলে ধরেছে।

একজন সাবেক চীনা রাষ্ট্রদূতের বক্তব্য অনুযায়ী, এক দশক আগে চীন সিরিয়ার বিরুদ্ধে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তাবগুলো ভেটো করেছিল, যাতে চীনের গুরুত্ব মধ্যপ্রাচ্যে বৃদ্ধি পায়। বইটিতে আরও জানানো হয়, সিরিয়ার গৃহযুদ্ধে চীনের প্রধান উদ্বেগ ছিল শিনজিয়াং থেকে আসা উইঘুর জঙ্গিদের উপস্থিতি।

নীতির চেয়ে স্বার্থ গুরুত্বপূর্ণ

চীনের ‘উন্নয়নই সমাধান’ দর্শনের বিপরীতে পশ্চিমা শক্তির গণতন্ত্র চাপিয়ে দেওয়ার প্রবণতা চীনের কূটনৈতিক বক্তব্যে বারবার উঠে আসে। চীন দাবি করে, তাদের বিনিয়োগে কোনো রাজনৈতিক শর্ত থাকে না। তবে সমালোচকরা বলেন, এই বিনিয়োগগুলো অনেক সময় অস্বচ্ছ এবং স্থানীয় প্রভাবশালীদের স্বার্থে ব্যবহৃত হয়।

চীনের সাহায্যও তুলনামূলকভাবে নগণ্য। ২০২৩ সালে তারা জাতিসংঘের ফিলিস্তিনি শরণার্থী সংস্থাকে মাত্র ২০ লাখ ডলার সাহায্য করে, যা আইসল্যান্ডের থেকেও কম।

ট্রাম্পের আবির্ভাব: চীনের আয়নায় আরেক চীন

ডোনাল্ড ট্রাম্পের নেতৃত্বে যুক্তরাষ্ট্র এখন চীনের মতোই লেনদেন-ভিত্তিক, অ-আদর্শবাদী পররাষ্ট্রনীতি অনুসরণ করছে। ১৩ মে সৌদি আরবে দেওয়া এক বক্তব্যে ট্রাম্প বলেন, “মধ্যপ্রাচ্যের ভবিষ্যৎ গঠিত হচ্ছে বাণিজ্য দিয়ে, বিশৃঙ্খলা নয়।” তিনি যুক্তরাষ্ট্রের আগের হস্তক্ষেপকারীদের কঠোরভাবে সমালোচনা করেন, বলেন যে তারা সমাজগুলোকে না বুঝেই ধ্বংস করেছে।

চীনের চ্যালেঞ্জ: অভ্যন্তরীণ সংকটে বৈদেশিক দুর্বলতা

চীনের অর্থনীতি ধীরগতির দিকে, ফলে বৈদেশিক বিনিয়োগেও চাপ পড়ছে। বিআরআই-ভিত্তিক ঋণের অনেকগুলো এখন পরিশোধের সময় এসেছে। মধ্যপ্রাচ্যে নিরাপত্তা দানকারী হিসেবে চীন এখনো পিছিয়ে। বিপরীতে, ট্রাম্পের সফরে যুক্তরাষ্ট্র বিলিয়ন ডলারের অস্ত্র ও প্রযুক্তিপণ্য বিক্রি করেছে।

তবে চীন এখনো গুরুত্বপূর্ণ, বিশেষত জ্বালানি ক্রেতা হিসেবে ও পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তির সরবরাহকারী হিসেবে। যারা পশ্চিমের ওপর নির্ভরশীলতা কমাতে চান, তাদের জন্য চীন একটি বিকল্প।

পরিণতি: আদর্শ নাকি প্রতিযোগিতা?

চীন সত্যিই যদি শান্তি ও উন্নয়নের কৌশলে অটল থাকে, তবে তাদের উচিত বাস্তবতাবাদ ও চুক্তিনির্ভর দৃষ্টিভঙ্গি বজায় রাখা। কিন্তু যদি তাদের প্রকৃত লক্ষ্য হয় আমেরিকাকে সরিয়ে দেওয়া, তবে ট্রাম্পের কৌশল হয়তো চীনকে আরও আদর্শিক ও আগ্রাসী করে তুলবে।