রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধের চার বছর পূর্তির প্রাক্কালে ইউক্রেন জানাল—মঙ্গলবার তারা যুক্তরাষ্ট্রকে দেবে নতুন করে সাজানো শান্তি প্রস্তাব। লন্ডনে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার, ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ ও জার্মান চ্যান্সেলর ফ্রিডরিশ মার্জের সঙ্গে বৈঠকের পর প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি জানান, ভূখণ্ড ছাড়ার প্রশ্নে তারা কোনোভাবেই আপস করবে না। তবে যুক্তরাষ্ট্রের খসড়া প্রস্তাবের ভারসাম্য আনতেই নতুন পরিকল্পনা তৈরি করা হয়েছে।
লন্ডন/কিয়েভ: যুদ্ধ শেষের পথে সমঝোতার নতুন চেষ্টা
লন্ডন ও কিয়েভ থেকে ডেসেম্বর ৮ তারিখে পাঠানো বার্তায় বলা হয়—যুক্তরাষ্ট্র হোয়াইট হাউসের চাপের মুখে দ্রুত শান্তি চুক্তির ব্যাপারে ইউক্রেনকে সিদ্ধান্ত নিতে হচ্ছে। ওয়াশিংটন-পৃষ্ঠপোষক খসড়া পরিকল্পনাটি অনেকেই মনে করছেন রাশিয়ার পক্ষে সুবিধাজনক।
ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার, ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ, জার্মান চ্যান্সেলর ফ্রিডরিশ মার্জ ও জেলেনস্কির এই আকস্মিক বৈঠকের লক্ষ্য ছিল ইউক্রেনের কূটনৈতিক অবস্থান শক্ত করা।
জেলেনস্কি জানান—তাদের সংশোধিত পরিকল্পনায় রয়েছে ২০টি পয়েন্ট। তবে রাশিয়াকে জমি ছেড়ে দেওয়ার বিষয়ে এখনো কোনো ঐকমত্য নেই।

জমি ছাড়ার প্রস্তাবে ‘না’—জেলেনস্কির কঠোর অবস্থান
জেলেনস্কি বলেন—
“আমেরিকানদের মনোভাব মোটের ওপর আপস খোঁজার পক্ষে। কিন্তু ভূখণ্ড-সংক্রান্ত জটিল বিষয়গুলোতে এখনো কোনো সমাধান পাওয়া যায়নি। আমরা কোনো ভূমি ছাড়ব না।”
লন্ডন বৈঠকের পর তিনি ব্রাসেলসে উড়ে যান। সেখানে ইউরোপিয়ান কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন দের লেয়েন,
ইউরোপিয়ান কাউন্সিল প্রেসিডেন্ট আন্তোনিও কোস্তা
এবং ন্যাটো সেক্রেটারি-জেনারেল মার্ক রুট্টে–র সঙ্গে আলোচনা করেন।
জেলেনস্কি লেখেন—সবাই মিলে তারা “সমন্বিত ও গঠনমূলকভাবে” কাজ করছেন। ইউইউ প্রধানরা বলেন—যে কোনো শান্তি চুক্তিকে অবশ্যই ইউক্রেনের সার্বভৌমত্ব রক্ষা করতে হবে এবং দীর্ঘমেয়াদি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।
রাশিয়ার জব্দ সম্পদ ব্যবহারে ইউরোপের তাগিদ
এক ব্রিটিশ সরকারি সূত্র জানায়—লন্ডন বৈঠকের অন্যতম আলোচ্য ছিল পশ্চিমে আটকে থাকা রাশিয়ার জমাট সম্পদের মূল্য ব্যবহার করে ইউক্রেনকে সহায়তা।
এস্তোনিয়া, ফিনল্যান্ড, আয়ারল্যান্ড, লাটভিয়া, লিথুয়ানিয়া, পোল্যান্ড ও সুইডেন ইউইউকে দ্রুত উদ্যোগ নিতে বলেছেন।
এদিকে স্টারমার, ম্যাক্রোঁ, মার্জ ও জেলেনস্কি মিলে যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে দীর্ঘমেয়াদি নিরাপত্তা নিশ্চয়তা পাওয়ার চেষ্টা করছেন, যা রাশিয়ার ভবিষ্যৎ হামলা প্রতিরোধে সহায়ক হবে।
স্টারমার বলেন—
“আমরা ইউক্রেনের পাশে আছি। আর যদি যুদ্ধবিরতি হয়ও, সেটি হতে হবে ন্যায়ভিত্তিক ও স্থায়ী।”
ম্যাক্রোঁ ও মার্জও “স্পষ্ট ও দৃঢ় পরিকল্পনা” এগিয়ে নিতে চান। মার্জ বলেন—এ মুহূর্তটি “আমাদের সবার জন্যই অত্যন্ত সিদ্ধান্তমূলক সময়”।
ইউরোপ–আমেরিকার সূক্ষ্ম সমন্বয়
জেলেনস্কি বলেন—
“কিছু বিষয় আছে যা আমরা আমেরিকা ছাড়া পারি না, আর কিছু বিষয় আছে যা ইউরোপ ছাড়া সম্ভব নয়। তাই আমাদের গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে হবে।”
রবিবার রাতে ভিডিও বার্তায় তিনি বলেন—
“নতুন কূটনৈতিক সপ্তাহ শুরু হচ্ছে। প্রথমেই নিরাপত্তা, আমাদের সহনশীলতা ধরে রাখার সহায়তা, প্রতিরক্ষার প্যাকেজ—বিশেষ করে আকাশ প্রতিরক্ষা ও দীর্ঘমেয়াদি অর্থায়ন নিয়ে আলোচনা হবে। পাশাপাশি আলোচনায় একটি সমন্বিত দৃষ্টিভঙ্গি গড়ে তোলার চেষ্টা করছি।”

কঠিন সময়ে ইউক্রেন: রুশ অগ্রগতি ও জ্বালানি সংকট
যুদ্ধের এই পর্যায়ে ইউক্রেন সবচেয়ে কঠিন সময় অতিক্রম করছে।
রুশ বাহিনী পূর্বাঞ্চলে ধীরে ধীরে অগ্রসর হচ্ছে।
রাশিয়ার আক্রমণে শক্তি অবকাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় বহু শহরে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বিদ্যুৎ নেই।
মার্কিন প্রস্তাব নিয়ে টানাপোড়েন
ডোনাল্ড ট্রাম্পের দূত স্টিভ উইটকফ ও জ্যারেড কুশনার গত সপ্তাহে মস্কোতে সংশোধিত শান্তি পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা করেন। এরপর মায়ামিতে ইউক্রেনীয় প্রতিনিধিদের সঙ্গে কয়েক দিনের আলাপ শেষে কোনো সমাধান মিলেনি।
জেলেনস্কি বলেন—আলোচনাগুলো “গঠনমূলক, কিন্তু সহজ নয়।”
ট্রাম্প রবিবার বলেন—তিনি “জেলেনস্কিতে হতাশ”, কারণ তার দাবি—জেলেনস্কি নাকি যুক্তরাষ্ট্র-সমর্থিত নতুন প্রস্তাবটি পুরোপুরি পড়েননি।
#ইউক্রেন #জেলেনস্কি #রাশিয়া_ইউক্রেন_যুদ্ধ #ইউরোপ #আমেরিকা #লন্ডন_বৈঠক #স্টারমার #ম্যাক্রোঁ #ফ্রিডরিশ_মার্জ #ইউইউ #ন্যাটো #কিয়েভ #আন্তর্জাতিক_সংবাদ
সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















