মানবাধিকার দিবসের প্রাক্কালে আইপিইউ যে তথ্য প্রকাশ করেছে, তাতে দেখা যায়—২০২৫ সালে বিশ্বের ৫৮টি দেশে এক হাজারেরও বেশি সংসদ সদস্য নানাভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘনের শিকার হয়েছেন। এ তালিকায় একাধিক বাংলাদেশি এমপির নামও রয়েছে, যা বিষয়টিকে আরও উদ্বেগজনক করে তুলেছে।
সংসদ সদস্যদের মানবাধিকার রক্ষায় আইপিইউ-র ভূমিকা
আন্তর্জাতিক সংসদীয় ইউনিয়ন আইপিইউ-র অধীন সংসদ সদস্যদের মানবাধিকার বিষয়ক কমিটি এসব অভিযোগ তদন্ত করে। এটি বিশ্বের একমাত্র আন্তর্জাতিক অভিযোগ গ্রহণকারী কাঠামো, যার কাজ সংসদ সদস্যদের মানবাধিকার সুরক্ষা নিশ্চিত করা।
২০২৫ সালে রেকর্ড পর্যালোচনা
২০২৫ সালে আইপিইউ মোট ১,০২৭টি পৃথক অভিযোগ পর্যালোচনা করে—যা সংগঠনের ইতিহাসে সর্বোচ্চ। অভিযোগগুলো এসেছে ৫৮টি দেশ থেকে, যা প্রমাণ করে যে সংসদ সদস্যদের ওপর নির্যাতনের ঘটনা সব অঞ্চলে বৃদ্ধি পাচ্ছে।
নারী সংসদ সদস্যদের ওপর নির্যাতনের আশঙ্কাজনক বৃদ্ধি
গত দশ বছরে নারী এমপিদের বিরুদ্ধে নির্যাতনের ঘটনা ছয় গুণ বেড়েছে। ২০১৫ সালে যেখানে অভিযোগ ছিল ৩৭টি, ২০২৫ সালে তা দাঁড়িয়েছে ২২৬টিতে। একই সময়ে পুরুষ এমপিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তিন গুণ বেড়ে ২০১৫ সালের ২৮৩ থেকে ২০২৫ সালে ৮০১-এ পৌঁছেছে।
বিরোধী সংসদ সদস্যরা বেশি ঝুঁকিতে
২০২৫ সালের অভিযোগের ৮৩ শতাংশই বিরোধী দলের এমপিদের বিরুদ্ধে। দীর্ঘদিন ধরেই দেখা যাচ্ছে, বিরোধী রাজনীতিকরা সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে থাকেন—বিশেষ করে সংসদ সদস্যপদ স্থগিত বা বাতিল হওয়া এবং মত প্রকাশের স্বাধীনতা হরণের ঘটনায়।

মত প্রকাশ এখনো ঝুঁকিপূর্ণ
তথ্য বলছে, সরকারবিরোধী বা সমালোচনামূলক বক্তব্য দেওয়া এমপিরাই সর্বাধিক চাপে থাকেন। রাজনৈতিক প্রতিশোধ, বেছে নেওয়া মামলা বা ভিন্নমত দমন করার প্রচেষ্টার ফলেই এসব ঘটনা ঘটে। বিপরীতে, ক্ষমতাসীন দলের এমপিদের বিরুদ্ধে মতপ্রকাশসংক্রান্ত অভিযোগ তুলনামূলকভাবে কম।
কিছু অগ্রগতি ও সফলতা
অভিযোগ সামগ্রিকভাবে বাড়লেও ২০২৫ সালে কলম্বিয়া, কোট দিভোয়ার, মালয়েশিয়া, সেনেগাল, থাইল্যান্ড ও জিম্বাবুয়ের বেশ কয়েকটি মামলার সন্তোষজনক সমাধান হয়েছে।
ইরাকে এক দশকেরও বেশি সময় আটক থাকা সাবেক এমপি আহমেদ জামিল সালমান আল-আলওয়ানি ২০২৫ সালে মুক্তি পান। ২০২৩ সালের আইপিইউ মিশনের পর কূটনৈতিক প্রচেষ্টার ফলে তাঁর মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হওয়া ঠেকানো সম্ভব হয়।
চলমান উদ্বেগজনক মামলা
আইপিইউ এখনো বাংলাদেশ, ইরিত্রিয়া, এস্বাতিনি, মিয়ানমার, নিকারাগুয়া, পাকিস্তান, তিউনিসিয়া ও তুরস্কের আটক এমপিদের বিষয়ে নজরদারি করছে।
এদের মধ্যে রয়েছেন ফিলিস্তিনি আইনসভা পরিষদের সাবেক সদস্য মারওয়ান বারঘুতি, যিনি ২৩ বছর ধরে ইসরাইলে বন্দি। তাঁর বিরুদ্ধে পাঁচটি যাবজ্জীবন এবং দুটি ২০ বছরের সাজা রয়েছে; বিচারপ্রক্রিয়ায় গুরুতর অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। আইপিইউ তাঁর অবিলম্বে মুক্তি দাবি করছে।
বাংলাদেশের মামলাগুলোর প্রতি বিশেষ উদ্বেগ
বাংলাদেশে আইপিইউ-র সম্মানীয় সভাপতি ও সাবেক এমপি সাবের চৌধুরীর ব্যক্তিগত নিরাপত্তা নিয়ে গভীর উদ্বেগ জানানো হয়েছে। তাঁর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ, ষড়যন্ত্র ও বেআইনি সমাবেশসহ একাধিক অভিযোগ আনা হয়েছে, যা রাজনৈতিকভাবে প্রভাবিত বলে মনে করা হচ্ছে।
এছাড়া সাবেক এমপি ও সংসদ সদস্যদের মানবাধিকার কমিটির প্রাক্তন সভাপতি ফজলে করিম চৌধুরীর পরিস্থিতিকেও অত্যন্ত উদ্বেগজনক বলা হয়েছে। তিনি কঠোর পরিবেশে আটক রয়েছেন এবং অসুস্থ থাকা সত্ত্বেও যথাযথ চিকিৎসা পাচ্ছেন না। তাঁর জীবন ঝুঁকিতে রয়েছে বলে আইপিইউ সতর্ক করেছে।
আইপিইউ সদস্য রাষ্ট্রগুলো, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে বাংলাদেশসহ বিশ্বের সব দেশের আটক এমপিদের অধিকার রক্ষায় সংহতি ও উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।
২০২৬: আইপিইউ-তে মানবাধিকার অগ্রাধিকার বছর
২০২৬ সালকে আইপিইউ মানবাধিকার অগ্রাধিকার বছর হিসেবে ঘোষণা করেছে। বছরের শুরুতেই এমপিদের বিরুদ্ধে অনলাইন ও সরাসরি হয়রানি–নির্যাতন নিয়ে একটি বৈশ্বিক প্রতিবেদন প্রকাশ করা হবে।
#HumanRights #IPU #Bangladesh
সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















