১১:৩৬ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ০১ জুলাই ২০২৫

ট্রাম্প-সি বৈঠকের সম্ভাবনায় চীন-যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্য বিরোধে শিথিলতার ইঙ্গিত

ট্রাম্প-সির ফোনালাপ শিগগিরই হতে পারে

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের অর্থনৈতিক দলের একজন জ্যেষ্ঠ সদস্য জানিয়েছেন, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ও চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের মধ্যে শিগগিরই একটি ফোনালাপ হতে পারে। এই আলোচনার মাধ্যমে বিশ্বের বৃহত্তম দুই অর্থনীতির মধ্যে চলমান বাণিজ্য বিরোধ নিরসনের পথ খুলে যেতে পারে।

যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি সেক্রেটারি স্কট বেসেন্ট বলেন, “আমি আত্মবিশ্বাসী, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ও পার্টি চেয়ারম্যান শির মধ্যে কথা হলে এই জট খুলে যাবে।” তিনি আরও দাবি করেন, চীন পূর্বের চুক্তিতে রাজি হওয়া কিছু পণ্য রপ্তানি বন্ধ করে রেখেছে।

CBS-এর “Face the Nation” অনুষ্ঠানে বেসেন্ট স্বীকার করেন যে তিনি যেসব পণ্যের কথা বলছেন, তার মধ্যে দুর্লভ খনিজ (rare earths) রয়েছে। তিনি বলেন, “সম্ভবত এটা চীনের প্রশাসনিক গড়মিল, আবার ইচ্ছাকৃতও হতে পারে। প্রেসিডেন্ট শির সঙ্গে কথা বলার পরই বিষয়টি পরিষ্কার হবে।”

চুক্তিভঙ্গের অভিযোগ ও দুর্লভ খনিজ নিয়ে উদ্বেগ

শুক্রবার ট্রাম্প চীনকে অভিযুক্ত করেন, গত মাসে জেনেভায় হওয়া পারস্পরিক চুক্তি ভঙ্গ করার জন্য। চুক্তিটি অনুযায়ী দুই পক্ষ ৯০ দিনের জন্য শুল্ক হ্রাসে রাজি হয়েছিল। যদিও ট্রাম্প এই অভিযোগে সরাসরি দুর্লভ খনিজের প্রসঙ্গ তোলেননি, তবে বিশ্লেষকরা মনে করেন, চীন এই খনিজ ও সংশ্লিষ্ট উপকরণ রপ্তানিতে বিলম্ব করায় ট্রাম্প ক্ষুব্ধ।

চীন বর্তমানে বিশ্ববাজারে দুর্লভ খনিজের বড় অংশের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে, যা সামরিক ও ভোক্তা প্রযুক্তিতে অপরিহার্য। তাই এর ওপর নির্ভরতা মার্কিন উদ্বেগের কেন্দ্রে।

জেনেভা চুক্তির পরও অনিশ্চয়তা

গত মাসে জেনেভা চুক্তি ঘোষণার পর ট্রাম্প বলেছিলেন, শি’র সঙ্গে দ্রুতই ফোনে কথা হবে। কিন্তু দুই সপ্তাহ পার হলেও তা হয়নি। এপ্রিলেও ট্রাম্প দাবি করেন, তিনি শির সঙ্গে কথা বলেছেন, যা চীন অস্বীকার করে।

২০ জানুয়ারি হোয়াইট হাউসে ফিরে আসার পর থেকে ট্রাম্প অধিকাংশ আমদানি পণ্যে ব্যাপক হারে শুল্ক বসিয়েছেন, যার বড় লক্ষ্য ছিল চীন। পাল্টা পদক্ষেপে চীনও শুল্ক আরোপ করে। এই দ্বন্দ্বে মার্কিন শুল্ক ১৪৫ শতাংশ পর্যন্ত এবং চীনা শুল্ক ১২৫ শতাংশ পর্যন্ত উঠে যায়। জেনেভা চুক্তির পর এই শুল্ক যথাক্রমে ৩০ ও ১০ শতাংশে নামিয়ে আনা হয়।

বিশ্লেষকরা বলছেন, বিশ্বের দুই বৃহৎ অর্থনীতির মধ্যে আরও ভালো যোগাযোগ প্রয়োজন। কারণ তাদের মধ্যে চলমান উত্তেজনা বিশ্ববাজারে অনিশ্চয়তা তৈরি করছে। শুধু ২০২৪ সালেই দুই দেশের পারস্পরিক বাণিজ্য ছিল ৬৬০ বিলিয়ন ডলার।

চাপের কৌশল কাজ করছে না?

ইউরেশিয়া গ্রুপের বিশ্লেষক জেরেমি চান বলেন, “জেনেভার পর হঠাৎ গঠিত শান্ত পরিস্থিতি এখন বিপর্যয়ের মুখে, দুই পক্ষেরই স্থিতিশীলতা ফেরাতে দ্রুত পদক্ষেপ প্রয়োজন।” তিনি আরও বলেন, শি-ট্রাম্প ফোনালাপের পথে এখনো বাধা রয়েছে এবং ট্রাম্পের চাপ প্রয়োগের কৌশল এখন পর্যন্ত ব্যর্থ।

চান মনে করেন, চীন আলোচনার পথ খুঁজতে আগ্রহী, তবে তারা ট্রাম্পের প্রতিশ্রুতিতে আস্থা পায় না। তাই তারা ছাড় দিতে অনিচ্ছুক, যাতে নিজেদের দর-কষাকষির অবস্থান না হারায়।

অ্যাপলের ওপর শুল্ক হুমকি ও উৎপাদন ফেরানোর পরিকল্পনা

ট্রাম্প সম্প্রতি হুমকি দিয়েছেন, যদি অ্যাপল যুক্তরাষ্ট্রে আইফোন তৈরি না করে তবে তার ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হবে। এটি ট্রাম্পের ‘মেড ইন ইউএসএ’ নীতির অংশ। বিশ্লেষক মাইকেল হিরসন বলেন, “ট্রাম্প চায় যুক্তরাষ্ট্রে উৎপাদন ফিরিয়ে আনতে। যদিও বেসেন্ট বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র চীনের সঙ্গে বিচ্ছিন্নতা চায় না, প্রেসিডেন্ট এই অবস্থান সবসময় অনুসরণ করেন না।”

হিরসন আরও বলেন, জেনেভায় সাময়িকভাবে উত্তেজনা কমিয়ে আনা হয়েছিল যাতে ঘরোয়া রাজনৈতিক চাপ প্রশমিত হয় এবং জুলাইয়ে ট্রাম্পের বড় কর কমানোর বিলটি পাস হতে পারে। তবে বিলটি পাস হলে ট্রাম্প আবার চীনের ওপর চাপ বাড়াতে পারেন।

Who is Howard Lutnick, the US Commerce Secretary? - The Economic Times

হোয়াইট হাউসের অন্যান্য সদস্যদের প্রতিক্রিয়া

রবিবার ABC চ্যানেলের “This Week” অনুষ্ঠানে বাণিজ্য সচিব হাওয়ার্ড লুটনিক বলেন, চীন চুক্তি বাস্তবায়নে ‘ধীরগতির’ আচরণ করছে। তিনি বলেন, “আমরা কিছু পদক্ষেপ নিচ্ছি যাতে চীন বুঝতে পারে তাদের আচরণের প্রতিক্রিয়া কেমন হয়।”

লুটনিক আরও বলেন, ট্রাম্পের শুল্কনীতি নিয়ে যে মামলাটি চলছে, তা শেষ পর্যন্ত প্রেসিডেন্টের পক্ষেই যাবে এবং “শুল্কের যুগ শেষ হচ্ছে না।”

একই অনুষ্ঠানে হোয়াইট হাউসের জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের পরিচালক কেভিন হ্যাসেট বলেন, “আমরা আশা করছি ট্রাম্প ও শি এই সপ্তাহেই বাণিজ্য নিয়ে ফলপ্রসূ আলোচনা করবেন।”

চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে চলমান বাণিজ্য বিরোধের অবসান এখনো স্পষ্ট নয়। উভয় পক্ষই চাপ প্রয়োগের কৌশল নিচ্ছে, তবে বাস্তবতা হচ্ছে—বিশ্ব অর্থনীতির স্থিতিশীলতা এই দুই দেশের সম্মতিতেই নির্ভরশীল। শি-ট্রাম্প কথোপকথন যদি হয়, তা হতে পারে এই বিরোধ নিরসনের মোড় ঘোরানো এক মুহূর্ত।

ট্রাম্প-সি বৈঠকের সম্ভাবনায় চীন-যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্য বিরোধে শিথিলতার ইঙ্গিত

০৫:৫২:০৩ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৩ জুন ২০২৫

ট্রাম্প-সির ফোনালাপ শিগগিরই হতে পারে

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের অর্থনৈতিক দলের একজন জ্যেষ্ঠ সদস্য জানিয়েছেন, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ও চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের মধ্যে শিগগিরই একটি ফোনালাপ হতে পারে। এই আলোচনার মাধ্যমে বিশ্বের বৃহত্তম দুই অর্থনীতির মধ্যে চলমান বাণিজ্য বিরোধ নিরসনের পথ খুলে যেতে পারে।

যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি সেক্রেটারি স্কট বেসেন্ট বলেন, “আমি আত্মবিশ্বাসী, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ও পার্টি চেয়ারম্যান শির মধ্যে কথা হলে এই জট খুলে যাবে।” তিনি আরও দাবি করেন, চীন পূর্বের চুক্তিতে রাজি হওয়া কিছু পণ্য রপ্তানি বন্ধ করে রেখেছে।

CBS-এর “Face the Nation” অনুষ্ঠানে বেসেন্ট স্বীকার করেন যে তিনি যেসব পণ্যের কথা বলছেন, তার মধ্যে দুর্লভ খনিজ (rare earths) রয়েছে। তিনি বলেন, “সম্ভবত এটা চীনের প্রশাসনিক গড়মিল, আবার ইচ্ছাকৃতও হতে পারে। প্রেসিডেন্ট শির সঙ্গে কথা বলার পরই বিষয়টি পরিষ্কার হবে।”

চুক্তিভঙ্গের অভিযোগ ও দুর্লভ খনিজ নিয়ে উদ্বেগ

শুক্রবার ট্রাম্প চীনকে অভিযুক্ত করেন, গত মাসে জেনেভায় হওয়া পারস্পরিক চুক্তি ভঙ্গ করার জন্য। চুক্তিটি অনুযায়ী দুই পক্ষ ৯০ দিনের জন্য শুল্ক হ্রাসে রাজি হয়েছিল। যদিও ট্রাম্প এই অভিযোগে সরাসরি দুর্লভ খনিজের প্রসঙ্গ তোলেননি, তবে বিশ্লেষকরা মনে করেন, চীন এই খনিজ ও সংশ্লিষ্ট উপকরণ রপ্তানিতে বিলম্ব করায় ট্রাম্প ক্ষুব্ধ।

চীন বর্তমানে বিশ্ববাজারে দুর্লভ খনিজের বড় অংশের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে, যা সামরিক ও ভোক্তা প্রযুক্তিতে অপরিহার্য। তাই এর ওপর নির্ভরতা মার্কিন উদ্বেগের কেন্দ্রে।

জেনেভা চুক্তির পরও অনিশ্চয়তা

গত মাসে জেনেভা চুক্তি ঘোষণার পর ট্রাম্প বলেছিলেন, শি’র সঙ্গে দ্রুতই ফোনে কথা হবে। কিন্তু দুই সপ্তাহ পার হলেও তা হয়নি। এপ্রিলেও ট্রাম্প দাবি করেন, তিনি শির সঙ্গে কথা বলেছেন, যা চীন অস্বীকার করে।

২০ জানুয়ারি হোয়াইট হাউসে ফিরে আসার পর থেকে ট্রাম্প অধিকাংশ আমদানি পণ্যে ব্যাপক হারে শুল্ক বসিয়েছেন, যার বড় লক্ষ্য ছিল চীন। পাল্টা পদক্ষেপে চীনও শুল্ক আরোপ করে। এই দ্বন্দ্বে মার্কিন শুল্ক ১৪৫ শতাংশ পর্যন্ত এবং চীনা শুল্ক ১২৫ শতাংশ পর্যন্ত উঠে যায়। জেনেভা চুক্তির পর এই শুল্ক যথাক্রমে ৩০ ও ১০ শতাংশে নামিয়ে আনা হয়।

বিশ্লেষকরা বলছেন, বিশ্বের দুই বৃহৎ অর্থনীতির মধ্যে আরও ভালো যোগাযোগ প্রয়োজন। কারণ তাদের মধ্যে চলমান উত্তেজনা বিশ্ববাজারে অনিশ্চয়তা তৈরি করছে। শুধু ২০২৪ সালেই দুই দেশের পারস্পরিক বাণিজ্য ছিল ৬৬০ বিলিয়ন ডলার।

চাপের কৌশল কাজ করছে না?

ইউরেশিয়া গ্রুপের বিশ্লেষক জেরেমি চান বলেন, “জেনেভার পর হঠাৎ গঠিত শান্ত পরিস্থিতি এখন বিপর্যয়ের মুখে, দুই পক্ষেরই স্থিতিশীলতা ফেরাতে দ্রুত পদক্ষেপ প্রয়োজন।” তিনি আরও বলেন, শি-ট্রাম্প ফোনালাপের পথে এখনো বাধা রয়েছে এবং ট্রাম্পের চাপ প্রয়োগের কৌশল এখন পর্যন্ত ব্যর্থ।

চান মনে করেন, চীন আলোচনার পথ খুঁজতে আগ্রহী, তবে তারা ট্রাম্পের প্রতিশ্রুতিতে আস্থা পায় না। তাই তারা ছাড় দিতে অনিচ্ছুক, যাতে নিজেদের দর-কষাকষির অবস্থান না হারায়।

অ্যাপলের ওপর শুল্ক হুমকি ও উৎপাদন ফেরানোর পরিকল্পনা

ট্রাম্প সম্প্রতি হুমকি দিয়েছেন, যদি অ্যাপল যুক্তরাষ্ট্রে আইফোন তৈরি না করে তবে তার ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হবে। এটি ট্রাম্পের ‘মেড ইন ইউএসএ’ নীতির অংশ। বিশ্লেষক মাইকেল হিরসন বলেন, “ট্রাম্প চায় যুক্তরাষ্ট্রে উৎপাদন ফিরিয়ে আনতে। যদিও বেসেন্ট বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র চীনের সঙ্গে বিচ্ছিন্নতা চায় না, প্রেসিডেন্ট এই অবস্থান সবসময় অনুসরণ করেন না।”

হিরসন আরও বলেন, জেনেভায় সাময়িকভাবে উত্তেজনা কমিয়ে আনা হয়েছিল যাতে ঘরোয়া রাজনৈতিক চাপ প্রশমিত হয় এবং জুলাইয়ে ট্রাম্পের বড় কর কমানোর বিলটি পাস হতে পারে। তবে বিলটি পাস হলে ট্রাম্প আবার চীনের ওপর চাপ বাড়াতে পারেন।

Who is Howard Lutnick, the US Commerce Secretary? - The Economic Times

হোয়াইট হাউসের অন্যান্য সদস্যদের প্রতিক্রিয়া

রবিবার ABC চ্যানেলের “This Week” অনুষ্ঠানে বাণিজ্য সচিব হাওয়ার্ড লুটনিক বলেন, চীন চুক্তি বাস্তবায়নে ‘ধীরগতির’ আচরণ করছে। তিনি বলেন, “আমরা কিছু পদক্ষেপ নিচ্ছি যাতে চীন বুঝতে পারে তাদের আচরণের প্রতিক্রিয়া কেমন হয়।”

লুটনিক আরও বলেন, ট্রাম্পের শুল্কনীতি নিয়ে যে মামলাটি চলছে, তা শেষ পর্যন্ত প্রেসিডেন্টের পক্ষেই যাবে এবং “শুল্কের যুগ শেষ হচ্ছে না।”

একই অনুষ্ঠানে হোয়াইট হাউসের জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের পরিচালক কেভিন হ্যাসেট বলেন, “আমরা আশা করছি ট্রাম্প ও শি এই সপ্তাহেই বাণিজ্য নিয়ে ফলপ্রসূ আলোচনা করবেন।”

চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে চলমান বাণিজ্য বিরোধের অবসান এখনো স্পষ্ট নয়। উভয় পক্ষই চাপ প্রয়োগের কৌশল নিচ্ছে, তবে বাস্তবতা হচ্ছে—বিশ্ব অর্থনীতির স্থিতিশীলতা এই দুই দেশের সম্মতিতেই নির্ভরশীল। শি-ট্রাম্প কথোপকথন যদি হয়, তা হতে পারে এই বিরোধ নিরসনের মোড় ঘোরানো এক মুহূর্ত।