০৮:০৪ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৭ জুন ২০২৫
চিতা-বাঘের শেষ আলোঝলক ঢাকা শহরের বাস সেবা: আধুনিকায়নের চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা ইরান ইউরেনিয়াম সরিয়ে নিয়েছে এমন কোনো গোয়েন্দা তথ্য নেই: মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী জগন্নাথ মন্দির আর প্রসাদ বিতরণ নিয়ে কেন রাজনৈতিক বিতর্ক পশ্চিমবঙ্গে? মন্দির ভাঙচুরের ঘটনা ও গঙ্গা জলচুক্তি নবায়ন নিয়ে ভারতের প্রতিক্রিয়া ইকোনমিস্টের প্রতিবেদন: বাংলাদেশের বড় একটি ভুল, প্রতিশোধ বনাম সংস্কার সাকিব আল হাসান: বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসের এক অমর কিংবদন্তি বাংলা নাটকের সুপারস্টার অপূর্বের জন্মদিন আজ শিবসা নদী: শতবর্ষী এক প্রাণপ্রবাহ ও তার সুন্দরবনের প্রভাব ইরান যুদ্ধ ও ‘ট্রাম্প নীতি’ চীনের বহুমুখী বিশ্ব দৃষ্টিভঙ্গিকে ঘোলাটে করে দিচ্ছে

ইরানের সর্বোচ্চ নেতা নাজুক অবস্থানে

ইসরায়েলের ধ্বংসাত্মক হামলা ইরানকে অস্তিত্বের সংকটে ফেলেছে এবং সেই গোয়েন্দা কাঠামোর গভীর দুর্বলতাও উন্মোচন করেছেযা প্রায় চার দশক ধরে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনেইকে ক্ষমতায় টিকিয়ে রেখেছে।

বৃহস্পতিবার ইসরায়েলি যুদ্ধবিমান ইরান জুড়ে একাধিক দফায় হামলা চালিয়ে দেশটির পারমাণবিক স্থাপনা ধ্বংস এবং শীর্ষ পর্যায়ের কয়েকজন সেনা কমান্ডার ও জ্যেষ্ঠ বিজ্ঞানীকে হত্যার পরশুক্রবার তেহরান থেকে টেল অ্যাভিভ লক্ষ্য করে ডজনখানেক ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করা হয়।

ইসরায়েলের এই হামলাগুলো ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীর মধ্যে ছড়িয়ে পড়া সংঘাতের সবচেয়ে গুরুতর আঘাত। এখন পর্যন্ত ইরান একই মাত্রায় জবাব দিতে পারেনি। টেল অ্যাভিভ-মুখী বেশিরভাগ ক্ষেপণাস্ত্রই প্রতিহত হয়েছে বা সামান্য ক্ষয়ক্ষতি ঘটিয়েছে। ফলে খামেনেই এখন কঠিন সিদ্ধান্তের মুখেকোনোটাই সুবিধাজনক নয়। ইসরায়েলের সঙ্গে ক্ষয়িষ্ণু এই লড়াই ইরানের সামরিক শক্তিকে দুর্বল করে দিয়েছে। আরও প্রতিশোধ হিতে বিপরীত হয়ে ভবিষ্যৎ আক্রমণ ঠেকাতে অপ্রতুল থেকে যেতে পারে এবং ইসরায়েলের আরও প্রবল পাল্টা আঘাত ডেকে আনতে পারে।

লোহিত সাগরে বাণিজ্য জাহাজ কিংবা যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থ ও কর্মীদের ওপর আক্রমণ করলে ওয়াশিংটনের জবাবদিহিকে আমন্ত্রণ জানাবেযা খামেনেই ঐতিহাসিকভাবে এড়িয়ে যেতে চেয়েছেন। অপরদিকেপারমাণবিক সমৃদ্ধি ক্ষমতা কঠোরভাবে সীমিত করে এমন মার্কিন পারমাণবিক চুক্তিতে সম্মত হওয়াকে খামেনেই যাদের ওপর ক্রমশ নির্ভর করছেন সেই কট্টর সমর্থকেরা অগ্রহণযোগ্য আত্মসমর্পণ’ বলেই দেখবেন।

দশকজুড়ে বিপ্লবী গার্ড ও তাদের মিত্র শিয়া মিলিশিয়া জালের মাধ্যমে মধ্যপ্রাচ্যে ইরানের সামরিক-রাজনৈতিক প্রসার ঘটানোর স্থপতি ছিলেন খামেনেই। কিন্তু ১৯৮৯-এর পর থেকে দেশ শাসন করা এই অক্টোজেনারিয়ান এখন জীবনের শেষ প্রান্তটি হয়তো কাটাবেন সম্প্রসারণ নয়বরং নিজ হাতে গড়ে তোলা ইসলামী প্রজাতন্ত্রকে টিকিয়ে রাখার লড়াইয়ে।

আমেরিকার মন্টেরেতে ন্যাভাল পোস্টগ্র্যাজুয়েট স্কুলের সহযোগী অধ্যাপক আফশন ওস্তোভার বলেন, ‘নিজের সঙ্গে যদি তিনি সৎ হনতবে স্বীকার করবেনতিনি পরাজিত। তার আজীবনের সাধনার সবকিছুই ভেঙে পড়ছে।

খামেনেই এতদিন ইরানের সামরিক শক্তি প্রদর্শন করলেও বাস্তবে সেটি খুব বেশি পরীক্ষিত হয়নি। হামাসযা ইরানের মিত্রগত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামলা চালানোর পর পরিস্থিতি বদলে যায়।

এরপর থেকে গাজায় যুদ্ধ চালাতে গিয়ে ইসরায়েল প্রায় ডজনখানেক শীর্ষ ইরানি সামরিক কমান্ডারকে হত্যা করেছেসর্বশেষ শুক্রবার বিপ্লবী গার্ডের প্রধান ও তাদের ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচি তদারককারী কমান্ডারকেও। পাশাপাশি ইরানের প্রধান আঞ্চলিক মিত্র হামাস ও হিজবুল্লাহকে অক্ষম করে দিয়েছেআর তৃতীয় মিত্র সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদ ডিসেম্বরেই ক্ষমতাচ্যুত হয়েছেন।

এত বিশাল সামরিক উপস্থিতি গড়ে তোলার পরও খামেনেই ও তার শীর্ষ উপদেষ্টারা ইসরায়েল যে সরাসরি মোকাবিলা করতে দ্বিধা করবে নাতা যথেষ্ট গুরুত্ব দেয়নি বলে মন্তব্য করেন জার্মান ইনস্টিটিউট ফর ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড সিকিউরিটি অ্যাফেয়ার্সের ভিজিটিং ফেলো হামিদরেজা আজিজি।

উত্তেজনা বাড়লেও ইরানের নিরাপত্তা কাঠামোর শীর্ষ নেতাদের নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়নি বলেই ধারণা।

আজিজি বলেন, ‘তাদের অধিকাংশই নিজ বাড়িতে লক্ষ্যবস্তু হয়েছেন। এমন পরিস্থিতিতে এটি অচিন্তনীয় আত্মবিশ্বাসের বহিঃপ্রকাশ।

ইসরায়েল যেভাবে ইরানি গোয়েন্দা ব্যবস্থায় অনুপ্রবেশ করে ইচ্ছেমতো শীর্ষ কর্মকর্তাদের নিশানা করতে পারছেতা সর্বোচ্চ নেতার জন্য গুরুতর সমস্যাপ্রথমতএতে খামেনেই নিজেও টার্গেট হওয়ার ঝুঁকিতে পড়েছেন।

দ্বিতীয়তজাতীয় নিরাপত্তার গ্যারান্টর হিসেবে নিজের ভাবমূর্তির ওপরই আংশিক নির্ভর করে খামেনেইর শাসন। ঘরে-বাইরে অজনপ্রিয়তা সত্ত্বেও প্রতিবেশী দেশগুলোতে যুদ্ধ ও সন্ত্রাস চললেও গত কয়েক দশক ইরানি নাগরিকদের তুলনামূলক নিরাপত্তা প্রদান করেছে ইসলামী প্রজাতন্ত্র। খামেনেই ক্ষমতায় আসার পর থেকে ইরান তার ভৌগোলিক সীমানা থেকে বৈরী শক্তিকে দূরে রেখেছে। গত দশকে আইএস-এর হাতে প্রতিবেশী ইরাক-আফগানিস্তানে হাজার হাজার মানুষ মারা গেলেও ইরানে বড় ধরনের মাত্র চারটি হামলায় প্রায় ১৫০ জন নিহত হয়েছেযা একই সময়ে ফ্রান্সে নিহতের চেয়ে কম।

ওস্তোভার বলেনজনপ্রিয় বিদ্রোহের সুযোগ নেওয়ার সম্ভাবনা ইরানিদের কমকারণ শাসকেরা ক্ষমতা রক্ষায় প্রয়োজন হলে যে কোনো পথ বেছে নেবে। নিজেদের বিরুদ্ধেই তারা এখনো কঠোর যুদ্ধ চালাতে সক্ষম,’ তিনি বলেন। ইরানে মানুষের জন্য এটা সত্যিই অত্যন্ত বিপজ্জনক সময়।

চিতা-বাঘের শেষ আলোঝলক

ইরানের সর্বোচ্চ নেতা নাজুক অবস্থানে

০৫:১৭:৩২ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৫ জুন ২০২৫

ইসরায়েলের ধ্বংসাত্মক হামলা ইরানকে অস্তিত্বের সংকটে ফেলেছে এবং সেই গোয়েন্দা কাঠামোর গভীর দুর্বলতাও উন্মোচন করেছেযা প্রায় চার দশক ধরে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনেইকে ক্ষমতায় টিকিয়ে রেখেছে।

বৃহস্পতিবার ইসরায়েলি যুদ্ধবিমান ইরান জুড়ে একাধিক দফায় হামলা চালিয়ে দেশটির পারমাণবিক স্থাপনা ধ্বংস এবং শীর্ষ পর্যায়ের কয়েকজন সেনা কমান্ডার ও জ্যেষ্ঠ বিজ্ঞানীকে হত্যার পরশুক্রবার তেহরান থেকে টেল অ্যাভিভ লক্ষ্য করে ডজনখানেক ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করা হয়।

ইসরায়েলের এই হামলাগুলো ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীর মধ্যে ছড়িয়ে পড়া সংঘাতের সবচেয়ে গুরুতর আঘাত। এখন পর্যন্ত ইরান একই মাত্রায় জবাব দিতে পারেনি। টেল অ্যাভিভ-মুখী বেশিরভাগ ক্ষেপণাস্ত্রই প্রতিহত হয়েছে বা সামান্য ক্ষয়ক্ষতি ঘটিয়েছে। ফলে খামেনেই এখন কঠিন সিদ্ধান্তের মুখেকোনোটাই সুবিধাজনক নয়। ইসরায়েলের সঙ্গে ক্ষয়িষ্ণু এই লড়াই ইরানের সামরিক শক্তিকে দুর্বল করে দিয়েছে। আরও প্রতিশোধ হিতে বিপরীত হয়ে ভবিষ্যৎ আক্রমণ ঠেকাতে অপ্রতুল থেকে যেতে পারে এবং ইসরায়েলের আরও প্রবল পাল্টা আঘাত ডেকে আনতে পারে।

লোহিত সাগরে বাণিজ্য জাহাজ কিংবা যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থ ও কর্মীদের ওপর আক্রমণ করলে ওয়াশিংটনের জবাবদিহিকে আমন্ত্রণ জানাবেযা খামেনেই ঐতিহাসিকভাবে এড়িয়ে যেতে চেয়েছেন। অপরদিকেপারমাণবিক সমৃদ্ধি ক্ষমতা কঠোরভাবে সীমিত করে এমন মার্কিন পারমাণবিক চুক্তিতে সম্মত হওয়াকে খামেনেই যাদের ওপর ক্রমশ নির্ভর করছেন সেই কট্টর সমর্থকেরা অগ্রহণযোগ্য আত্মসমর্পণ’ বলেই দেখবেন।

দশকজুড়ে বিপ্লবী গার্ড ও তাদের মিত্র শিয়া মিলিশিয়া জালের মাধ্যমে মধ্যপ্রাচ্যে ইরানের সামরিক-রাজনৈতিক প্রসার ঘটানোর স্থপতি ছিলেন খামেনেই। কিন্তু ১৯৮৯-এর পর থেকে দেশ শাসন করা এই অক্টোজেনারিয়ান এখন জীবনের শেষ প্রান্তটি হয়তো কাটাবেন সম্প্রসারণ নয়বরং নিজ হাতে গড়ে তোলা ইসলামী প্রজাতন্ত্রকে টিকিয়ে রাখার লড়াইয়ে।

আমেরিকার মন্টেরেতে ন্যাভাল পোস্টগ্র্যাজুয়েট স্কুলের সহযোগী অধ্যাপক আফশন ওস্তোভার বলেন, ‘নিজের সঙ্গে যদি তিনি সৎ হনতবে স্বীকার করবেনতিনি পরাজিত। তার আজীবনের সাধনার সবকিছুই ভেঙে পড়ছে।

খামেনেই এতদিন ইরানের সামরিক শক্তি প্রদর্শন করলেও বাস্তবে সেটি খুব বেশি পরীক্ষিত হয়নি। হামাসযা ইরানের মিত্রগত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামলা চালানোর পর পরিস্থিতি বদলে যায়।

এরপর থেকে গাজায় যুদ্ধ চালাতে গিয়ে ইসরায়েল প্রায় ডজনখানেক শীর্ষ ইরানি সামরিক কমান্ডারকে হত্যা করেছেসর্বশেষ শুক্রবার বিপ্লবী গার্ডের প্রধান ও তাদের ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচি তদারককারী কমান্ডারকেও। পাশাপাশি ইরানের প্রধান আঞ্চলিক মিত্র হামাস ও হিজবুল্লাহকে অক্ষম করে দিয়েছেআর তৃতীয় মিত্র সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদ ডিসেম্বরেই ক্ষমতাচ্যুত হয়েছেন।

এত বিশাল সামরিক উপস্থিতি গড়ে তোলার পরও খামেনেই ও তার শীর্ষ উপদেষ্টারা ইসরায়েল যে সরাসরি মোকাবিলা করতে দ্বিধা করবে নাতা যথেষ্ট গুরুত্ব দেয়নি বলে মন্তব্য করেন জার্মান ইনস্টিটিউট ফর ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড সিকিউরিটি অ্যাফেয়ার্সের ভিজিটিং ফেলো হামিদরেজা আজিজি।

উত্তেজনা বাড়লেও ইরানের নিরাপত্তা কাঠামোর শীর্ষ নেতাদের নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়নি বলেই ধারণা।

আজিজি বলেন, ‘তাদের অধিকাংশই নিজ বাড়িতে লক্ষ্যবস্তু হয়েছেন। এমন পরিস্থিতিতে এটি অচিন্তনীয় আত্মবিশ্বাসের বহিঃপ্রকাশ।

ইসরায়েল যেভাবে ইরানি গোয়েন্দা ব্যবস্থায় অনুপ্রবেশ করে ইচ্ছেমতো শীর্ষ কর্মকর্তাদের নিশানা করতে পারছেতা সর্বোচ্চ নেতার জন্য গুরুতর সমস্যাপ্রথমতএতে খামেনেই নিজেও টার্গেট হওয়ার ঝুঁকিতে পড়েছেন।

দ্বিতীয়তজাতীয় নিরাপত্তার গ্যারান্টর হিসেবে নিজের ভাবমূর্তির ওপরই আংশিক নির্ভর করে খামেনেইর শাসন। ঘরে-বাইরে অজনপ্রিয়তা সত্ত্বেও প্রতিবেশী দেশগুলোতে যুদ্ধ ও সন্ত্রাস চললেও গত কয়েক দশক ইরানি নাগরিকদের তুলনামূলক নিরাপত্তা প্রদান করেছে ইসলামী প্রজাতন্ত্র। খামেনেই ক্ষমতায় আসার পর থেকে ইরান তার ভৌগোলিক সীমানা থেকে বৈরী শক্তিকে দূরে রেখেছে। গত দশকে আইএস-এর হাতে প্রতিবেশী ইরাক-আফগানিস্তানে হাজার হাজার মানুষ মারা গেলেও ইরানে বড় ধরনের মাত্র চারটি হামলায় প্রায় ১৫০ জন নিহত হয়েছেযা একই সময়ে ফ্রান্সে নিহতের চেয়ে কম।

ওস্তোভার বলেনজনপ্রিয় বিদ্রোহের সুযোগ নেওয়ার সম্ভাবনা ইরানিদের কমকারণ শাসকেরা ক্ষমতা রক্ষায় প্রয়োজন হলে যে কোনো পথ বেছে নেবে। নিজেদের বিরুদ্ধেই তারা এখনো কঠোর যুদ্ধ চালাতে সক্ষম,’ তিনি বলেন। ইরানে মানুষের জন্য এটা সত্যিই অত্যন্ত বিপজ্জনক সময়।