ইন্দোনেশিয়া ওপেনের রূপকথায় অল্পের জন্য সোনা হাতছাড়া
জাকার্তার ঐতিহাসিক ইস্তোরা সেনায়ান স্টেডিয়াম রোববারও গর্জে উঠেছিল “ইয়া-ইয়া, ইয়া-ইয়া” ধ্বনিতে। সেখানে মলিন ফলাফলও ভালোবাসাকে কমাতে পারেনি। ৩৫ বছর বয়সী তাইওয়ানের চৌ তিয়েন চেন ফাইনালের প্রথম গেমে ২০-১৭ পর্যন্ত এগিয়েও শেষ পর্যন্ত ডেনমার্কের অ্যান্ডার্স অ্যান্টনসেনের কাছে ২২-২০, ২১-১৪-তে হেরে গেছেন—তবু ইস্তোরার করতালি থামেনি। এই জয় দিয়ে অ্যান্টনসেন তাঁর প্রথম ইন্দোনেশিয়া ওপেন শিরোপা তুলে নিলেও, গ্যালারির হৃদয়ে বিজয়ী রয়ে গেছেন ‘লিটল ডাই’খ্যাত চৌ।
টুর্নামেন্টের পথে অন্যরকম ‘ম্যাজিক’
সেমিফাইনালে চৌ ২১-১৬, ২৩-২১ স্কোরে থাইল্যান্ডের বিশ্ব এক নম্বর কুনলাভুত বিতিদসর্নকে সরিয়ে ফাইনালে ওঠেন—যা তাঁর অনমনীয় মানসিক দৃঢ়তারই প্রমাণ। লড়াই-ভরা এই যাত্রা দুর্ভাগ্যজনকভাবে শিরোপা এনে না দিলেও চৌ’র ৭৮,৯৭৯ র্যাঙ্কিং পয়েন্ট তাঁকে বিশ্ব তালিকার ছয়ে রেখে দিয়েছে, যা ২০২5-এর জুনের শেষ হালনাগাদ অবস্থান।
ক্যান্সার পেরিয়ে কোর্টে ফেরা
চার বছর আগে থাইরয়েড ক্যান্সারের রিপোর্টে অনেকে ভেবেছিল ক্যারিয়ার বুঝি শেষ। কিন্তু সফল অস্ত্রোপচার ও চিকিৎসার পর ‘মিস গাও মিন-শান’ নামের ট্রেনার-মনোবিজ্ঞানী-বন্ধুর ছায়াশ্রয় আর নিজের অদম্য ইচ্ছায় তিনি দ্রুত কোর্টে ফেরেন। ধৈর্য, ফুটওয়ার্ক ও শাটল নিয়ন্ত্রণে তাঁর দৃঢ়তা এখনো শীর্ষ দশের কারও জন্য দুঃস্বপ্ন। হাল ছেড়ে দেওয়া শব্দটা তাঁর অভিধানে নেই—যা ২০২5-এর ইন্দোনেশিয়া ওপেনেও বারবার প্রমাণ হয়েছে।
মাইগ্র্যান্ট শ্রমিকদের জন্য ‘একচেটিয়া’ সহায়তা
কোভিড মহামারির বছরগুলোতে তাইওয়ানে কর্মরত ইন্দোনেশিয়ান, মালয়েশিয়ান ও ফিলিপিনো শ্রমিকদের দুঃখকষ্ট প্রথমবার কাছ থেকে দেখেন চৌ। তারপর থেকেই ‘১-ফোরটি’ নামক এনজিও-র মাধ্যমে তিনি অনুদান, সচেতনতা ক্যাম্পেইন ও সোশ্যাল-মিডিয়া পোস্টে মাইগ্র্যান্টদের স্বার্থে সরব। ক্যাথলিক বিশ্বাসী হলেও ধর্ম–বর্ণ–ভাষা পেরিয়ে এই শাটলার তাঁদের পাশে দাঁড়িয়েছেন—খাবার-প্যাকেটে ‘পারিবারিক-বন্ধুসুলভ শ্রমিক’ প্রকল্পের লোগো যুক্ত করেছেন, কনভিনিয়েন্স স্টোরে ডোনেশন বক্স বসিয়েছেন, চিকিৎসা-সহায়তার জন্য পরামর্শ দিয়েছেন। নিজের ক্যান্সার-অভিজ্ঞতা তাঁকে স্বাস্থ্যসেবা-অধিকারের পক্ষে শক্ত কণ্ঠস্বর বানিয়েছে।
ইস্তোরার ‘ভাই’—দর্শকদের ভালোবাসার নেপথ্য
ইন্দোনেশিয়ায় ব্যাডমিন্টনের প্রতি উন্মাদনা দীর্ঘদিনের। তবে মালয়েশিয়ানদের বিপক্ষে ঘরের ছেলেদের জন্য গ্যালারি যেমন কড়া, তেমনি চৌ-কে দেখলে একই গ্যালারি দাঁড়িয়ে তালি দেয়। ইন্দোনেশিয়ান দরিদ্র নারী মাইগ্র্যান্টদের প্রতি চৌ’র সমর্থন তাঁর প্রতি এ ভালোবাসার বড় কারণ। গ্যালারির শব্দপ্রাচীর—“ইয়া-ইয়া”—অ্যান্
সামনে কী? চ্যালেঞ্জ জারি
• মৌসুমি লক্ষ্য: জাপান ওপেন, চাইনিজ তাইপে ওপেন—দুটি হোম ওয়ে-মেগা ইভেন্টে ফাইনাল ধরা তাঁর প্রাথমিক টাস্ক।
• র্যাঙ্কিং লড়াই: টপ-৫-এ ফেরার স্বপ্ন বাঁচিয়ে রাখতে আরও অন্তত দুটি সুপার 750 ফাইনালে উঠতে হবে।
• সামাজিক মিশন: তাইওয়ান ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার মাইগ্র্যান্টদের স্বাস্থ্য-সহায়তা তহবিল দ্বিগুণ করাই ২০২৫-এর শেষার্ধের টার্গেট।
কোর্টে অদম্য পেশাদার, কোর্টের বাইরে নির্ভীক মানবতাবাদী—চৌ তিয়েন চেনের এই দ্বৈত পরিচয়ই তাঁকে অন্যদের থেকে আলাদা করে তুলেছে। ইস্তোরা সেনায়ানের ফলাফল যা-ই হোক, ওই গ্যালারির কানফাটানো সমর্থন এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার শ্রমিকদের কৃতজ্ঞ দৃষ্টি প্রমাণ করে—শিরোপা নয়, মানুষ জয়টাই শেষপর্যন্ত বড় হয়ে থাকে।