১০:৩৪ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৫ অক্টোবর ২০২৫
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ঢাকা (পর্ব-৩৮) অশান্তির জন্য নোবেল থাকলে বাংলাদেশ পেত”— জিএম কাদের একদিনে আরও ৪ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ৭৫৮ জন বেতন ও ভাতার দাবিতে পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙে বিক্ষোভ, শিক্ষক-কর্মচারীদের শাহবাগ অবরোধ অ্যানথ্রাক্স নিয়ন্ত্রণে গরুর জরুরী কোয়ারেন্টাইনের সিদ্ধান্ত এক দিনে ৮০ পয়েন্ট পতন, ধস নামলো ঢাকার শেয়ারবাজারে রংপুরে অ্যানথ্রাক্স: গঙ্গাচরায় প্রশাসনের অনুমতি ছাড়া গরু জবাই নিষিদ্ধ দীপিকা পাড়ুকোনের গ্লোবাল প্লেবুক: হিন্দি ছবির সুপারস্টার কীভাবে বানালেন সীমাহীন ক্যারিয়ার শিক্ষক আন্দোলনে অস্থিরতা শিক্ষায়, সমাধানে কী করছে সরকার? ১২ ম্যাচে ১১ হার, যেভাবে এক যুগে ‘সর্বনিম্ন’ অবস্থায় বাংলাদেশের ওয়ানডে ক্রিকেট

চৌ তিয়েন চেন: ক্যান্সারজয়ী চিরদিনের নায়ক

ইন্দোনেশিয়া ওপেনের রূপকথায় অল্পের জন্য সোনা হাতছাড়া

জাকার্তার ঐতিহাসিক ইস্তোরা সেনায়ান স্টেডিয়াম রোববারও গর্জে উঠেছিল ইয়া-ইয়াইয়া-ইয়া” ধ্বনিতে। সেখানে মলিন ফলাফলও ভালোবাসাকে কমাতে পারেনি। ৩৫ বছর বয়সী তাইওয়ানের চৌ তিয়েন চেন ফাইনালের প্রথম গেমে ২০-১৭ পর্যন্ত এগিয়েও শেষ পর্যন্ত ডেনমার্কের অ্যান্ডার্স অ্যান্টনসেনের কাছে ২২-২০২১-১৪-তে হেরে গেছেনতবু ইস্তোরার করতালি থামেনি। এই জয় দিয়ে অ্যান্টনসেন তাঁর প্রথম ইন্দোনেশিয়া ওপেন শিরোপা তুলে নিলেওগ্যালারির হৃদয়ে বিজয়ী রয়ে গেছেন লিটল ডাইখ্যাত চৌ।

টুর্নামেন্টের পথে অন্যরকম ম্যাজিক

সেমিফাইনালে চৌ ২১-১৬২৩-২১ স্কোরে থাইল্যান্ডের বিশ্ব এক নম্বর কুনলাভুত বিতিদসর্নকে সরিয়ে ফাইনালে ওঠেনযা তাঁর অনমনীয় মানসিক দৃঢ়তারই প্রমাণ। লড়াই-ভরা এই যাত্রা দুর্ভাগ্যজনকভাবে শিরোপা এনে না দিলেও চৌর ৭৮,৯৭৯ র‍্যাঙ্কিং পয়েন্ট তাঁকে বিশ্ব তালিকার ছয়ে রেখে দিয়েছেযা ২০২5-এর জুনের শেষ হালনাগাদ অবস্থান।

Chou Tien Chen Refuses to Make Excuses While Battling Cancer - BadmintonPlanet.com

ক্যান্সার পেরিয়ে কোর্টে ফেরা

চার বছর আগে থাইরয়েড ক্যান্সারের রিপোর্টে অনেকে ভেবেছিল ক্যারিয়ার বুঝি শেষ। কিন্তু সফল অস্ত্রোপচার ও চিকিৎসার পর মিস গাও মিন-শান’ নামের ট্রেনার-মনোবিজ্ঞানী-বন্ধুর ছায়াশ্রয় আর নিজের অদম্য ইচ্ছায় তিনি দ্রুত কোর্টে ফেরেন। ধৈর্যফুটওয়ার্ক ও শাটল নিয়ন্ত্রণে তাঁর দৃঢ়তা এখনো শীর্ষ দশের কারও জন্য দুঃস্বপ্ন। হাল ছেড়ে দেওয়া শব্দটা তাঁর অভিধানে নেইযা ২০২5-এর ইন্দোনেশিয়া ওপেনেও বারবার প্রমাণ হয়েছে।

মাইগ্র্যান্ট শ্রমিকদের জন্য একচেটিয়া’ সহায়তা

কোভিড মহামারির বছরগুলোতে তাইওয়ানে কর্মরত ইন্দোনেশিয়ানমালয়েশিয়ান ও ফিলিপিনো শ্রমিকদের দুঃখকষ্ট প্রথমবার কাছ থেকে দেখেন চৌ। তারপর থেকেই ১-ফোরটি’ নামক এনজিও-র মাধ্যমে তিনি অনুদানসচেতনতা ক্যাম্পেইন ও সোশ্যাল-মিডিয়া পোস্টে মাইগ্র্যান্টদের স্বার্থে সরব। ক্যাথলিক বিশ্বাসী হলেও ধর্মবর্ণভাষা পেরিয়ে এই শাটলার তাঁদের পাশে দাঁড়িয়েছেনখাবার-প্যাকেটে পারিবারিক-বন্ধুসুলভ শ্রমিক’ প্রকল্পের লোগো যুক্ত করেছেনকনভিনিয়েন্স স্টোরে ডোনেশন বক্স বসিয়েছেনচিকিৎসা-সহায়তার জন্য পরামর্শ দিয়েছেন। নিজের ক্যান্সার-অভিজ্ঞতা তাঁকে স্বাস্থ্যসেবা-অধিকারের পক্ষে শক্ত কণ্ঠস্বর বানিয়েছে।

Cancer survivor Tien Chen feels at home in Malaysia

ইস্তোরার ভাই’—দর্শকদের ভালোবাসার নেপথ্য

ইন্দোনেশিয়ায় ব্যাডমিন্টনের প্রতি উন্মাদনা দীর্ঘদিনের। তবে মালয়েশিয়ানদের বিপক্ষে ঘরের ছেলেদের জন্য গ্যালারি যেমন কড়াতেমনি চৌ-কে দেখলে একই গ্যালারি দাঁড়িয়ে তালি দেয়। ইন্দোনেশিয়ান দরিদ্র নারী মাইগ্র্যান্টদের প্রতি চৌর সমর্থন তাঁর প্রতি এ ভালোবাসার বড় কারণ। গ্যালারির শব্দপ্রাচীর—“ইয়া-ইয়া”—অ্যান্টনসেনকেও সময়ে সময়ে বিভ্রান্ত করেছে। চৌ নিজেও মজা করে বলেন, “ইস্তোরা আমার দ্বিতীয় বাড়ি।

সামনে কীচ্যালেঞ্জ জারি

• মৌসুমি লক্ষ্য: জাপান ওপেনচাইনিজ তাইপে ওপেনদুটি হোম ওয়ে-মেগা ইভেন্টে ফাইনাল ধরা তাঁর প্রাথমিক টাস্ক।
• র‍্যাঙ্কিং লড়াই: টপ-৫-এ ফেরার স্বপ্ন বাঁচিয়ে রাখতে আরও অন্তত দুটি সুপার 750 ফাইনালে উঠতে হবে।
• সামাজিক মিশন: তাইওয়ান ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার মাইগ্র্যান্টদের স্বাস্থ্য-সহায়তা তহবিল দ্বিগুণ করাই ২০২৫-এর শেষার্ধের টার্গেট।

কোর্টে অদম্য পেশাদারকোর্টের বাইরে নির্ভীক মানবতাবাদীচৌ তিয়েন চেনের এই দ্বৈত পরিচয়ই তাঁকে অন্যদের থেকে আলাদা করে তুলেছে। ইস্তোরা সেনায়ানের ফলাফল যা-ই হোকওই গ্যালারির কানফাটানো সমর্থন এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার শ্রমিকদের কৃতজ্ঞ দৃষ্টি প্রমাণ করেশিরোপা নয়মানুষ জয়টাই শেষপর্যন্ত বড় হয়ে থাকে।

জনপ্রিয় সংবাদ

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ঢাকা (পর্ব-৩৮)

চৌ তিয়েন চেন: ক্যান্সারজয়ী চিরদিনের নায়ক

০৫:১৯:৫৭ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৮ জুন ২০২৫

ইন্দোনেশিয়া ওপেনের রূপকথায় অল্পের জন্য সোনা হাতছাড়া

জাকার্তার ঐতিহাসিক ইস্তোরা সেনায়ান স্টেডিয়াম রোববারও গর্জে উঠেছিল ইয়া-ইয়াইয়া-ইয়া” ধ্বনিতে। সেখানে মলিন ফলাফলও ভালোবাসাকে কমাতে পারেনি। ৩৫ বছর বয়সী তাইওয়ানের চৌ তিয়েন চেন ফাইনালের প্রথম গেমে ২০-১৭ পর্যন্ত এগিয়েও শেষ পর্যন্ত ডেনমার্কের অ্যান্ডার্স অ্যান্টনসেনের কাছে ২২-২০২১-১৪-তে হেরে গেছেনতবু ইস্তোরার করতালি থামেনি। এই জয় দিয়ে অ্যান্টনসেন তাঁর প্রথম ইন্দোনেশিয়া ওপেন শিরোপা তুলে নিলেওগ্যালারির হৃদয়ে বিজয়ী রয়ে গেছেন লিটল ডাইখ্যাত চৌ।

টুর্নামেন্টের পথে অন্যরকম ম্যাজিক

সেমিফাইনালে চৌ ২১-১৬২৩-২১ স্কোরে থাইল্যান্ডের বিশ্ব এক নম্বর কুনলাভুত বিতিদসর্নকে সরিয়ে ফাইনালে ওঠেনযা তাঁর অনমনীয় মানসিক দৃঢ়তারই প্রমাণ। লড়াই-ভরা এই যাত্রা দুর্ভাগ্যজনকভাবে শিরোপা এনে না দিলেও চৌর ৭৮,৯৭৯ র‍্যাঙ্কিং পয়েন্ট তাঁকে বিশ্ব তালিকার ছয়ে রেখে দিয়েছেযা ২০২5-এর জুনের শেষ হালনাগাদ অবস্থান।

Chou Tien Chen Refuses to Make Excuses While Battling Cancer - BadmintonPlanet.com

ক্যান্সার পেরিয়ে কোর্টে ফেরা

চার বছর আগে থাইরয়েড ক্যান্সারের রিপোর্টে অনেকে ভেবেছিল ক্যারিয়ার বুঝি শেষ। কিন্তু সফল অস্ত্রোপচার ও চিকিৎসার পর মিস গাও মিন-শান’ নামের ট্রেনার-মনোবিজ্ঞানী-বন্ধুর ছায়াশ্রয় আর নিজের অদম্য ইচ্ছায় তিনি দ্রুত কোর্টে ফেরেন। ধৈর্যফুটওয়ার্ক ও শাটল নিয়ন্ত্রণে তাঁর দৃঢ়তা এখনো শীর্ষ দশের কারও জন্য দুঃস্বপ্ন। হাল ছেড়ে দেওয়া শব্দটা তাঁর অভিধানে নেইযা ২০২5-এর ইন্দোনেশিয়া ওপেনেও বারবার প্রমাণ হয়েছে।

মাইগ্র্যান্ট শ্রমিকদের জন্য একচেটিয়া’ সহায়তা

কোভিড মহামারির বছরগুলোতে তাইওয়ানে কর্মরত ইন্দোনেশিয়ানমালয়েশিয়ান ও ফিলিপিনো শ্রমিকদের দুঃখকষ্ট প্রথমবার কাছ থেকে দেখেন চৌ। তারপর থেকেই ১-ফোরটি’ নামক এনজিও-র মাধ্যমে তিনি অনুদানসচেতনতা ক্যাম্পেইন ও সোশ্যাল-মিডিয়া পোস্টে মাইগ্র্যান্টদের স্বার্থে সরব। ক্যাথলিক বিশ্বাসী হলেও ধর্মবর্ণভাষা পেরিয়ে এই শাটলার তাঁদের পাশে দাঁড়িয়েছেনখাবার-প্যাকেটে পারিবারিক-বন্ধুসুলভ শ্রমিক’ প্রকল্পের লোগো যুক্ত করেছেনকনভিনিয়েন্স স্টোরে ডোনেশন বক্স বসিয়েছেনচিকিৎসা-সহায়তার জন্য পরামর্শ দিয়েছেন। নিজের ক্যান্সার-অভিজ্ঞতা তাঁকে স্বাস্থ্যসেবা-অধিকারের পক্ষে শক্ত কণ্ঠস্বর বানিয়েছে।

Cancer survivor Tien Chen feels at home in Malaysia

ইস্তোরার ভাই’—দর্শকদের ভালোবাসার নেপথ্য

ইন্দোনেশিয়ায় ব্যাডমিন্টনের প্রতি উন্মাদনা দীর্ঘদিনের। তবে মালয়েশিয়ানদের বিপক্ষে ঘরের ছেলেদের জন্য গ্যালারি যেমন কড়াতেমনি চৌ-কে দেখলে একই গ্যালারি দাঁড়িয়ে তালি দেয়। ইন্দোনেশিয়ান দরিদ্র নারী মাইগ্র্যান্টদের প্রতি চৌর সমর্থন তাঁর প্রতি এ ভালোবাসার বড় কারণ। গ্যালারির শব্দপ্রাচীর—“ইয়া-ইয়া”—অ্যান্টনসেনকেও সময়ে সময়ে বিভ্রান্ত করেছে। চৌ নিজেও মজা করে বলেন, “ইস্তোরা আমার দ্বিতীয় বাড়ি।

সামনে কীচ্যালেঞ্জ জারি

• মৌসুমি লক্ষ্য: জাপান ওপেনচাইনিজ তাইপে ওপেনদুটি হোম ওয়ে-মেগা ইভেন্টে ফাইনাল ধরা তাঁর প্রাথমিক টাস্ক।
• র‍্যাঙ্কিং লড়াই: টপ-৫-এ ফেরার স্বপ্ন বাঁচিয়ে রাখতে আরও অন্তত দুটি সুপার 750 ফাইনালে উঠতে হবে।
• সামাজিক মিশন: তাইওয়ান ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার মাইগ্র্যান্টদের স্বাস্থ্য-সহায়তা তহবিল দ্বিগুণ করাই ২০২৫-এর শেষার্ধের টার্গেট।

কোর্টে অদম্য পেশাদারকোর্টের বাইরে নির্ভীক মানবতাবাদীচৌ তিয়েন চেনের এই দ্বৈত পরিচয়ই তাঁকে অন্যদের থেকে আলাদা করে তুলেছে। ইস্তোরা সেনায়ানের ফলাফল যা-ই হোকওই গ্যালারির কানফাটানো সমর্থন এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার শ্রমিকদের কৃতজ্ঞ দৃষ্টি প্রমাণ করেশিরোপা নয়মানুষ জয়টাই শেষপর্যন্ত বড় হয়ে থাকে।