প্রথম টেস্ট: ব্যাট হাতে বাংলাদেশ, আবহাওয়ায় শ্রীলঙ্কার রক্ষা
গলের প্রথম টেস্টে টানা পাঁচ দিন জুড়ে ব্যাট ও বৃষ্টির দ্বৈরথে জয় আসেনি কোনো দলের ভাগ্যে। বাংলাদেশের ব্যাটাররা শক্ত ভিত্তি গড়ে ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ নিলেও শেষ পর্যন্ত আবহাওয়াই প্রধান চরিত্রে আবির্ভূত হয়। ম্যাচটি ড্র হলেও ব্যাটিং ও মনস্তাত্ত্বিক দিক থেকে বাংলাদেশ অনেকখানি এগিয়ে থেকেছে।
প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশের সংগ্রহ ৪৯৫ রান—যেখানে নাজমুল হোসেন শান্ত (১৪৮) ও মুশফিকুর রহিম (১৬৩) একটি অনবদ্য ২৪৭ রানের জুটি গড়েন। এটি ছিল শ্রীলঙ্কার মাটিতে বাংলাদেশের যেকোনো জুটির সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড। জবাবে শ্রীলঙ্কা লড়াই করে ৪৮৫ রান তোলে, যেখানে পাথুম নিসাঙ্কার ১৮৭ রানের ইনিংস ছিল চোখ ধাঁধানো।
দ্বিতীয় ইনিংসে শান্ত আবারও ব্যাট হাতে নেতৃত্ব দেন (১২৫*) এবং বাংলাদেশের সংগ্রহ দাঁড়ায় ২৮৫/৬ (ডিক্লেয়ার)। শ্রীলঙ্কার সামনে লক্ষ্য ছিল ২৯৬ রান, কিন্তু বৃষ্টি ও আলো স্বল্পতায় তাদের ইনিংস গুটিয়ে যায় ৮ উইকেটে ২১৪ রানে।
খেলোয়াড় পারফরম্যান্স: শান্ত ও মুশফিক নজর কাড়েন, নিসাঙ্কার লড়াই প্রশংসিত
প্রথম টেস্টে সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি ছিল শান্ত ও মুশফিকের ধারাবাহিকতা। দু’জনই চাপের মুখে ইনিংস গড়ে তুলেছেন, আবার দ্বিতীয় ইনিংসেও শান্ত দলের জন্য নির্ভরতার প্রতীক হয়ে উঠেছেন। অপরদিকে, শ্রীলঙ্কার তরুণ ওপেনার নিসাঙ্কা নিজ দেশে দুর্দান্ত ইনিংস খেলে দলের সম্মান বাঁচিয়েছেন।
বোলিংয়ে বাংলাদেশের স্পিনার তাইজুল ইসলাম ও নাঈম হাসান গুরুত্বপূর্ণ সময়ে উইকেট এনে দেন। শেষ দিন লঙ্কানদের আট উইকেট ফেলে দিয়ে জয় থেকে মাত্র দুই উইকেট দূরে ছিল বাংলাদেশ, তবে সময় শেষ হয়ে আসে আগে।
কৌশলগত প্রশ্ন: দেরিতে ঘোষণা কি জয় হাতছাড়া করল?
বাংলাদেশের পক্ষ থেকে দ্বিতীয় ইনিংসে ডিক্লেয়ারের সময় নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠেছে। বিশ্লেষকদের মতে, শান্তের শতরান পূর্ণ করার, অপেক্ষায় অনেকটা সময় ব্যয় হওয়ায় লঙ্কানদের লক্ষ্য তাড়া করার পর্যাপ্ত সময় দেওয়া হয়নি। আরও আগে ইনিংস ঘোষণা করলে ম্যাচের ফল হয়তো ভিন্ন হতে পারত।
দ্বিতীয় টেস্ট: SSC কলম্বোতে ব্যাটিং স্বর্গ নাকি স্পিনের লড়াই?
২৫ জুন থেকে দ্বিতীয় ও শেষ টেস্ট শুরু হচ্ছে কলম্বোর সিংহলিজ স্পোর্টস ক্লাব মাঠে। ঐতিহাসিকভাবে এটি ব্যাটসম্যানদের পক্ষে হলেও ম্যাচের মাঝামাঝি সময় থেকে স্পিনাররা নিয়ন্ত্রণ নিতে পারেন। আবহাওয়ার পূর্বাভাস বলছে কিছুটা বৃষ্টির সম্ভাবনা থাকলেও ম্যাচে পর্যাপ্ত সময় পাওয়া যাবে।
বাংলাদেশ এই মুহূর্তে আত্মবিশ্বাসে ভরপুর। তাদের ব্যাটিং লাইনআপ অনেকটাই গুছানো ও দৃঢ়। শান্ত, মুশফিক, লিটন এবং মেহেদী মিরাজ—সবাই রানের মধ্যে রয়েছেন। বোলিংয়ে স্পিন আক্রমণ তুখোড় অবস্থায়। তবে পেসাররা এখনো সেভাবে কার্যকর হতে পারেননি।
শ্রীলঙ্কা প্রথম টেস্টে সম্মানজনক ড্র করলেও তাদের বোলিং ইউনিট ততটা ধারালো নয় বলে মনে হয়েছে। তারা দ্বিতীয় টেস্টে পরিবর্তন আনতে পারে। মিডিয়াম পেসার মিলান রথনায়েকের ইনজুরির কারণে বিশ্ব ফার্নান্দো দলে ফিরতে পারেন। নিসাঙ্কা ও কামিন্দু মেন্ডিস ভালো ফর্মে আছেন, তবে মিডল অর্ডার ও স্পিন আক্রমণে ঘাটতি স্পষ্ট।
পরিসংখ্যান ও ভবিষ্যৎ পূর্বাভাস
বিষয়ে | বাংলাদেশ | শ্রীলঙ্কা |
ব্যাটিং গভীরতা | অধিক | মধ্যম |
স্পিন শক্তি | উচ্চ | মাঝারি |
পেস বোলিং | দুর্বল | কিছুটা শক্তিশালী |
আত্মবিশ্বাস | টেস্টের পারফরম্যান্সে বেশী | হোম কন্ডিশনে নির্ভরশীল |
অধিনায়কত্ব ও কৌশল | শান্ত এখনো শিখছেন | করুনারত্নে অভিজ্ঞ |
বাংলাদেশ যদি একই ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে পারে এবং সময়োচিত সিদ্ধান্ত নিতে পারে, তবে দ্বিতীয় টেস্টে জয় তাদের জন্য খুব দূরের কিছু হবে না। তবে শ্রীলঙ্কা যদি নিজেদের মাঠের সুবিধা কাজে লাগাতে পারে এবং স্পিনে ঘুরে দাঁড়াতে পারে, ম্যাচ তখন হাড্ডাহাড্ডি রূপ নিতে পারে।
গলে ড্র হলেও বাংলাদেশ টেস্টে আধিপত্য দেখিয়েছে। এখন তাদের সামনে সুযোগ, কলম্বোতে ইতিহাস গড়ে সিরিজ জেতার। শ্রীলঙ্কা ঘরের মাঠে সহজে হার মেনে নেয় না, কিন্তু বাংলাদেশের ব্যাটিং ও স্পিন আক্রমণের কাছে তারা কিছুটা পিছিয়ে থাকবে। সময়মতো সঠিক সিদ্ধান্ত ও বোলারদের ধারাবাহিকতা—এই দুইটি ঠিক থাকলে আগামী টেস্টে ফেভারিট থাকবে বাংলাদেশই।