জোনাকি
ইচ্ছে হয়, ভালো করে মাথা ভিজাতে। ভরা বালতির ভেতরে মাথা গুঁজে দিতে। অবসন্নতা ক্রমশ কাবু করে ফেলে তাঁকে। অবসন্নতা, মনোবেদনা, স্থবিরতা, এদের আর এখন কোনো সংকোচ কিংবা দ্বিধা-দ্বন্দ্ব নেই। বয়েসের কাছে নিদারুণভাবে তিরস্কৃত আবুল হোসেন, বয়েস তাকে ধিক্কার দেয়। গলা পর্যন্ত ঠেলে ওঠে গ্লানির গরল, অদ্ভুত এক গ্লানি।
শৈশবে বিমাতার সংসারে নির্মমভাবে প্রহৃত হয়েছেন আবুল হোসেন, মনে পড়ে সেইসব। মনে পড়ে গ্রাম, এক একটি দীর্ঘদিন, গ্রামের জলবায়ু, মেঠোপথ, বিস্তীর্ণ শস্যক্ষেত, মাটির গন্ধ, হুহু বাতাস, প্রহৃত হলেও সেখানে এসব ছিলো।
বিছানায় উপুড় হয়ে শুয়ে পড়েন আবুল হোসেন। কেন এমন ঘটলো, ভেবে পেলেন না। কেন এভাবে বিগড়ে গেল মেজাজ। এখন আর আক্ষেপ করে কোনো লাভ নেই, জানেন একথা। তবু ইচ্ছে করলে, বন্যক্রোধকে দমন করতে পারলে, সবকিছু হয়তো এড়ানো যেত, এই ভেবে নিজেকে তাঁর অবিবেচক স্কুল বলে মনে হলো। ঘুরিয়েফিরিয়ে নানাভাবে তিনি একটি যুক্তি খাড়া করার চেষ্টা করতে থাকেন।
একবার মনে হলো সব কিছুর মূলে আছে দীর্ঘদিন পরে হঠাৎ করে তাঁর এই গ্রামে যাওয়া। তিনি যেন কেমন উন্মনা হয়ে পড়েছিলেন, কতো অচেনা এসব, ভারসাম্য রাখতে পারেননি শেষ পর্যন্ত। এতদিনের অভ্যস্ত চোখের পর্দায় নতুনভাবে কেবল অন্যায়ের চেহারা ঝিকমিক করে উঠেছিলো।
কতোদিন? হ্যাঁ দশদিন। মাত্র দশদিন। অথচ এই কয়েক দিনেই গ্রামের মাটিতে তিনি হয়ে উঠেছিলেন সুস্থ-সবল-প্রাণপূর্ণ। কেবল পেটপুরে খেয়েছেন আর ইচ্ছেমতো মাঠে মাঠে ঘুরেছেন। এক একদিন বেরিয়ে পড়েছেন এক একদিকে। কোনোদিন নাগেরচর, কোনোদিন আঁধারমানিক, কোনোদিন বা গোঁসাইচর, যেদিন যেখানে ইচ্ছে মনের সাধ মিটিয়ে ঘুরে ঘুরে বেড়িয়েছেন, খুঁজেছেন পরিচিত মানুষজন।