১০:৩৩ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ০৯ নভেম্বর ২০২৫

প্রতিদিন একটি রুমাল (পর্ব-১৯)

জোনাকি

সাহস, উদ্যম, মনোবল যাচাই করার আত্যন্তিক আগ্রহকে তিনি বরাবরই এক ধরনের দস্যুবৃত্তি বলে মনে ক’রে এসেছেন। এই নিস্পৃহতা ভাগ্যের হাতে মার খাওয়ার রূপ নিয়ে তাঁর সংসারের অভ্যন্তরকে অন্ধকারাচ্ছন্ন করে রাখলেও, বাইরে থেকে সবসময় তাঁকে মনে হয়েছে অবিরল আত্মতৃপ্ত।

একনাগাড়ে দশদিন গ্রামে কাটানোর পর ফিরে এসে সংসারের বিশৃঙ্খলাকে কিছুতেই খুব স্বাভাবিকভাবে মেনে নিতে পারছিলেন না আবুল হোসেন। এমন শরীর জুড়ানোর কথা ভাবাও যায় না, এক আশ্চর্য উপায়ে মনের যাবতীয় গ্লানি উবে গিয়েছিলো, কেমন যেন মুক্ত পুরুষের হাওয়া

লেগেছিলো গায়ে। সংসারের হতকুচ্ছিত চেহারা ফেরার পর থেকে তাঁকে আবার অবসন্ন ক’রে ফেলেছে; জঞ্জালের মধ্যে এসে পড়েছেন, দু’দণ্ড স্বস্তি নেই, চোখমুখ জ্বালা করে। তার স্ত্রী মরিয়ম ভালো-মন্দ কোনো কথাই জিজ্ঞেস করলো না, এ ক’দিন তিনি কিভাবে কাটিয়েছেন, আত্মীয়স্বজন কে কেমন, জমাজমির হিসেব-নিকেশ কতোদূর কি হলো, কোনো কিছুই নয়। বরং ভয়ে ভয়েই ছিলেন আবুল হোসেন।

তিনি দু’দিনের নাম করে গিয়েছিলেন। গ্রামে, অর্থাৎ গজারিয়ায় সামান্য কিছু পৈতৃক জমি অবশিষ্ট আছে এখনো, যার ভোগদখল ও বিলি-ব্যবস্থা তাঁর একমাত্র সহোদর নূর হোসেনই ক’রে আসছে এযাবৎ। গত পনেরো বছর তিনি ওমুখো হননি, এবার গিয়েছিলেন ভাগের ভাগ বুঝে নিতে। যাওয়া পর্যন্তই, সেখানকার দুরবস্থা আরো চরম, আরো করুণ, নিজের চোখে না দেখা পর্যন্ত ধারণাই করতে পারেননি আবুল হোসেন। বলি বলি ক’রেও শেষ পর্যন্ত আর বিষয়-সম্পত্তির কথা তুলতে পারেননি, কেবল দু’তিন দিনের জায়গায় দশদিন সেখানে কাটিয়ে, একটা চটের থলেয় একছড়া অগ্নিসাগর কলা, কিছু কাওনের মোয়া, কয়েকটি প্রাণবল্লভ গাছের ডাল ভরে ফিরে এসেছেন। বাড়িতে একটি দা পড়ে আছে, দীর্ঘদিন ধরে তার বাঁট নেই, প্রাণবল্লভের ডাল যোগাড় করতে পেরে তাঁর আনন্দই হয়েছিলো।

ফিরে দেখলেন বাড়ি ফাঁকা, মরিয়ম একা; নাগা ও বুলুর কোনো সাড়াশব্দ নেই। নাগা এ-বাড়ির ছেলেদের মধ্যে সর্বকনিষ্ঠ। বড়টি স্ত্রী-পুত্র নিয়ে পৃথক সংসার পেতেছে বহু আগেই, তার সঙ্গে তেমন কোনো সম্পর্কই নেই বলা চলে। মেজ ছেলে একাত্তরের গোলযোগের সময় থেকেই নিখোঁজ। মেয়ে তাঁর একটাই, বুলু। গতবার স্কুল ফাইনাল দিয়েছিলো, পাস করতে পারেনি।

 

 

জনপ্রিয় সংবাদ

প্রিয়াঙ্কা চোপড়ার গানের জগতে ফিরে আসা: ‘লাস্ট ক্রিসমাস’ ডেসি ভার্সন নিয়ে নেটিজেনদের কটাক্ষ

প্রতিদিন একটি রুমাল (পর্ব-১৯)

১২:০০:৪২ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৭ জুন ২০২৫

জোনাকি

সাহস, উদ্যম, মনোবল যাচাই করার আত্যন্তিক আগ্রহকে তিনি বরাবরই এক ধরনের দস্যুবৃত্তি বলে মনে ক’রে এসেছেন। এই নিস্পৃহতা ভাগ্যের হাতে মার খাওয়ার রূপ নিয়ে তাঁর সংসারের অভ্যন্তরকে অন্ধকারাচ্ছন্ন করে রাখলেও, বাইরে থেকে সবসময় তাঁকে মনে হয়েছে অবিরল আত্মতৃপ্ত।

একনাগাড়ে দশদিন গ্রামে কাটানোর পর ফিরে এসে সংসারের বিশৃঙ্খলাকে কিছুতেই খুব স্বাভাবিকভাবে মেনে নিতে পারছিলেন না আবুল হোসেন। এমন শরীর জুড়ানোর কথা ভাবাও যায় না, এক আশ্চর্য উপায়ে মনের যাবতীয় গ্লানি উবে গিয়েছিলো, কেমন যেন মুক্ত পুরুষের হাওয়া

লেগেছিলো গায়ে। সংসারের হতকুচ্ছিত চেহারা ফেরার পর থেকে তাঁকে আবার অবসন্ন ক’রে ফেলেছে; জঞ্জালের মধ্যে এসে পড়েছেন, দু’দণ্ড স্বস্তি নেই, চোখমুখ জ্বালা করে। তার স্ত্রী মরিয়ম ভালো-মন্দ কোনো কথাই জিজ্ঞেস করলো না, এ ক’দিন তিনি কিভাবে কাটিয়েছেন, আত্মীয়স্বজন কে কেমন, জমাজমির হিসেব-নিকেশ কতোদূর কি হলো, কোনো কিছুই নয়। বরং ভয়ে ভয়েই ছিলেন আবুল হোসেন।

তিনি দু’দিনের নাম করে গিয়েছিলেন। গ্রামে, অর্থাৎ গজারিয়ায় সামান্য কিছু পৈতৃক জমি অবশিষ্ট আছে এখনো, যার ভোগদখল ও বিলি-ব্যবস্থা তাঁর একমাত্র সহোদর নূর হোসেনই ক’রে আসছে এযাবৎ। গত পনেরো বছর তিনি ওমুখো হননি, এবার গিয়েছিলেন ভাগের ভাগ বুঝে নিতে। যাওয়া পর্যন্তই, সেখানকার দুরবস্থা আরো চরম, আরো করুণ, নিজের চোখে না দেখা পর্যন্ত ধারণাই করতে পারেননি আবুল হোসেন। বলি বলি ক’রেও শেষ পর্যন্ত আর বিষয়-সম্পত্তির কথা তুলতে পারেননি, কেবল দু’তিন দিনের জায়গায় দশদিন সেখানে কাটিয়ে, একটা চটের থলেয় একছড়া অগ্নিসাগর কলা, কিছু কাওনের মোয়া, কয়েকটি প্রাণবল্লভ গাছের ডাল ভরে ফিরে এসেছেন। বাড়িতে একটি দা পড়ে আছে, দীর্ঘদিন ধরে তার বাঁট নেই, প্রাণবল্লভের ডাল যোগাড় করতে পেরে তাঁর আনন্দই হয়েছিলো।

ফিরে দেখলেন বাড়ি ফাঁকা, মরিয়ম একা; নাগা ও বুলুর কোনো সাড়াশব্দ নেই। নাগা এ-বাড়ির ছেলেদের মধ্যে সর্বকনিষ্ঠ। বড়টি স্ত্রী-পুত্র নিয়ে পৃথক সংসার পেতেছে বহু আগেই, তার সঙ্গে তেমন কোনো সম্পর্কই নেই বলা চলে। মেজ ছেলে একাত্তরের গোলযোগের সময় থেকেই নিখোঁজ। মেয়ে তাঁর একটাই, বুলু। গতবার স্কুল ফাইনাল দিয়েছিলো, পাস করতে পারেনি।