০৬:৩৬ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৫
নরওয়ের বড়দিনে বিতর্কিত খাবার লুটেফিস্কের প্রত্যাবর্তন, ঐতিহ্যেই ফিরছে স্বাদ প্রাচীন ভারতে গণিতচর্চা (পর্ব-৩৪৫) নিউজিল্যান্ডে গ্যাং প্রতীক নিষিদ্ধ: রাস্তায় শান্তি, কিন্তু অপরাধ কি সত্যিই কমল সৌদিতে বিরল তুষারপাতের পর প্রশ্ন: সংযুক্ত আরব আমিরাতেও কি আবার তুষারপাত সম্ভব? যে রিকশায় গুলিবিদ্ধ হন হাদি, সেই চালকের আদালতে জবানবন্দি তারেক রহমানের নেতৃত্বে নির্বাচনে আমরা জয়ী হবো: মির্জা ফখরুল পারমাণবিক সাবমেরিন থেকে কে-৪ ক্ষেপণাস্ত্রের সফল পরীক্ষা ভারতের তারেক রহমানের প্রত্যাবর্তনে বহুদলীয় গণতন্ত্র আরও শক্তিশালী হবে: নাহিদ ঢাকা-১৫ আসনে জামায়াত আমিরের পক্ষে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ মগবাজারে ককটেল বিস্ফোরণে শ্রমিক নিহত, অজ্ঞাতদের বিরুদ্ধে মামলা

পল্লী কবি জসীমউদ্দীনের স্মৃতিকথা (পর্ব-২০৮)

  • Sarakhon Report
  • ১১:০০:৪৮ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ৩০ জুন ২০২৫
  • 266

নজরুল: পরিশিষ্ট

কবির সামনে বসিয়া তাঁর কবিতার কিছুটা আবৃত্তি করিলাম। শুনিয়া তিনি বড়ই খুশি হইলেন। আমি একখণ্ড কাগজ সামনে ধরিয়া বলিলাম, ‘কবিভাই! আমাকে একটি কবিতা লিখে দেন তো।’

আমার ইচ্ছা ছিল এইভাবে কবিকে পূর্ব স্ব-ভাবে ফিরাইয়া আনা। কবি আমার কাগজের উপর লিখিলেন, “আমি দশ হাজার বৎসর বাঁচিব। আমার ছেলেরা পাঁচ হাজার বৎসর বাঁচিবে। জসীম তুমি দশ হাজার বৎসর বাঁচিবে।” ইত্যাদি- সেই কাগজখানা মুড়িয়া আমি পকেটে লইতেছি, এমন সময় তখনকার দিনের কবির একজন স্ব-নির্বাচিত অভিভাবক শাস্তি-নিকেতনি ঢঙে হাত নাড়িয়া আমাকে বলিলেন, “আপনি এই কাগজটুকু লইবেন না। ওটা আমাকে দিন।”

খাল্লাআম্মা এবং ভাবি তখন কবির পার্শ্বে বসা। আমি বলিলাম, “আপনি আমাকে এই লেখা লইবার বারণ করবার কে?”

খালাআম্মা আর ভাবিও আমাকে সমর্থন করিলেন। সেই লেখাটি এখনও আমার কাছে আছে। ইহা হয়তো কবির শেষ লেখা।

তখনকার দিনে এই স্ব-নির্বাচিত অভিভাবকটির অকারণ উৎপাতে কবির বহু বন্ধু-বান্ধব ও শুভানুধ্যায়ী কবির সঙ্গে দেখা করিতে যাইয়া বিব্রত হইয়াছেন।

ইহার পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনার কাজ লইয়া আমি ঢাকা চলিয়া আসি। সেটা বোধ হয় ১৯৩৭ সন। আমার ছোট ভাই নূরউদ্‌দীন কলিকাতা কারমাইকেল হোস্টেলে থাকিয়া এম, এ, পড়িত। আমি কলিকাতা গেলেই তাহার অতিথি হইতাম। সেবার কারমাইকেল হোস্টেলে গেলে ছাত্রেরা আমাকে একটি অভ্যর্থনা দেওয়ার আয়োজন করে। সেই সভায় আমাকে প্রচুর ভাবে মাল্যভূষিত করা হয়।

অভিনন্দনের উত্তর দিতে উঠিয়া আমি ছাত্রদিগকে বলিলাম, “যে সময় আমাদের মহান কবি নজরুল ইসলাম দুরারোগ্য রোগে আক্রান্ত হইয়া শহরের পুতি-গন্ধময় একটি অন্ধকার বাড়িতে নানা অর্থ-কষ্টের সঙ্গে সংগ্রাম করিতেছেন, সেই সময়ে আমার মতো এক কবিকে এরূপ মাল্য-ভূষণ দেয়ার কোনো অর্থ হয় না।

যে কবিকে নিরাময় করিয়া তুলিতে পারিলে বিশ্বসাহিত্য-জগতে বাঙালি মুসলমানের জন্য একটি শ্রেষ্ঠ আসন অধিকৃত হইতে পারিত, আজ সেই কবি রোগের শর-শয্যায় শয়ন করিয়া মৃত্যুর জন্য অপেক্ষা করিতেছেন। বাঙালি মুসলমান কি আজ সত্যই মৃত। এই মৃত সমাজের হাতের মালা আমার কণ্ঠে স্থান পাইতে পারে না।”

এই বলিয়া আমি আমার গলার মালাগুলি ছিঁড়িয়া ফেলিলাম। সেই সভায় ছাত্রদের মধ্যে এমনই উদ্দীপনা জাগিয়াছিল যে তখনই তাহারা নজরুল সাহায্য ভাণ্ডার নামে একটি কমিটি গঠন করিয়া ফেলিল। তখনকার শিক্ষামন্ত্রী মৌলবী তমিজউদ্দীন সাহেব হইলেন এই কমিটির সভাপতি আর বেকার হোস্টেলের তদানীন্তন সুপারিনটেনডেন্ট বন্ধুবর সায়েদুর রহমান হইলেন তার সম্পাদক। ১৯৪৪ সনে আমি যখন নতুন চাকুরি পাইয়া কলিকাতা চলিয়া আসিলাম, তখন আমি এই সমিতির কোঅপটেড মেম্বর হইলাম।

 

চলবে…..

জনপ্রিয় সংবাদ

নরওয়ের বড়দিনে বিতর্কিত খাবার লুটেফিস্কের প্রত্যাবর্তন, ঐতিহ্যেই ফিরছে স্বাদ

পল্লী কবি জসীমউদ্দীনের স্মৃতিকথা (পর্ব-২০৮)

১১:০০:৪৮ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ৩০ জুন ২০২৫

নজরুল: পরিশিষ্ট

কবির সামনে বসিয়া তাঁর কবিতার কিছুটা আবৃত্তি করিলাম। শুনিয়া তিনি বড়ই খুশি হইলেন। আমি একখণ্ড কাগজ সামনে ধরিয়া বলিলাম, ‘কবিভাই! আমাকে একটি কবিতা লিখে দেন তো।’

আমার ইচ্ছা ছিল এইভাবে কবিকে পূর্ব স্ব-ভাবে ফিরাইয়া আনা। কবি আমার কাগজের উপর লিখিলেন, “আমি দশ হাজার বৎসর বাঁচিব। আমার ছেলেরা পাঁচ হাজার বৎসর বাঁচিবে। জসীম তুমি দশ হাজার বৎসর বাঁচিবে।” ইত্যাদি- সেই কাগজখানা মুড়িয়া আমি পকেটে লইতেছি, এমন সময় তখনকার দিনের কবির একজন স্ব-নির্বাচিত অভিভাবক শাস্তি-নিকেতনি ঢঙে হাত নাড়িয়া আমাকে বলিলেন, “আপনি এই কাগজটুকু লইবেন না। ওটা আমাকে দিন।”

খাল্লাআম্মা এবং ভাবি তখন কবির পার্শ্বে বসা। আমি বলিলাম, “আপনি আমাকে এই লেখা লইবার বারণ করবার কে?”

খালাআম্মা আর ভাবিও আমাকে সমর্থন করিলেন। সেই লেখাটি এখনও আমার কাছে আছে। ইহা হয়তো কবির শেষ লেখা।

তখনকার দিনে এই স্ব-নির্বাচিত অভিভাবকটির অকারণ উৎপাতে কবির বহু বন্ধু-বান্ধব ও শুভানুধ্যায়ী কবির সঙ্গে দেখা করিতে যাইয়া বিব্রত হইয়াছেন।

ইহার পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনার কাজ লইয়া আমি ঢাকা চলিয়া আসি। সেটা বোধ হয় ১৯৩৭ সন। আমার ছোট ভাই নূরউদ্‌দীন কলিকাতা কারমাইকেল হোস্টেলে থাকিয়া এম, এ, পড়িত। আমি কলিকাতা গেলেই তাহার অতিথি হইতাম। সেবার কারমাইকেল হোস্টেলে গেলে ছাত্রেরা আমাকে একটি অভ্যর্থনা দেওয়ার আয়োজন করে। সেই সভায় আমাকে প্রচুর ভাবে মাল্যভূষিত করা হয়।

অভিনন্দনের উত্তর দিতে উঠিয়া আমি ছাত্রদিগকে বলিলাম, “যে সময় আমাদের মহান কবি নজরুল ইসলাম দুরারোগ্য রোগে আক্রান্ত হইয়া শহরের পুতি-গন্ধময় একটি অন্ধকার বাড়িতে নানা অর্থ-কষ্টের সঙ্গে সংগ্রাম করিতেছেন, সেই সময়ে আমার মতো এক কবিকে এরূপ মাল্য-ভূষণ দেয়ার কোনো অর্থ হয় না।

যে কবিকে নিরাময় করিয়া তুলিতে পারিলে বিশ্বসাহিত্য-জগতে বাঙালি মুসলমানের জন্য একটি শ্রেষ্ঠ আসন অধিকৃত হইতে পারিত, আজ সেই কবি রোগের শর-শয্যায় শয়ন করিয়া মৃত্যুর জন্য অপেক্ষা করিতেছেন। বাঙালি মুসলমান কি আজ সত্যই মৃত। এই মৃত সমাজের হাতের মালা আমার কণ্ঠে স্থান পাইতে পারে না।”

এই বলিয়া আমি আমার গলার মালাগুলি ছিঁড়িয়া ফেলিলাম। সেই সভায় ছাত্রদের মধ্যে এমনই উদ্দীপনা জাগিয়াছিল যে তখনই তাহারা নজরুল সাহায্য ভাণ্ডার নামে একটি কমিটি গঠন করিয়া ফেলিল। তখনকার শিক্ষামন্ত্রী মৌলবী তমিজউদ্দীন সাহেব হইলেন এই কমিটির সভাপতি আর বেকার হোস্টেলের তদানীন্তন সুপারিনটেনডেন্ট বন্ধুবর সায়েদুর রহমান হইলেন তার সম্পাদক। ১৯৪৪ সনে আমি যখন নতুন চাকুরি পাইয়া কলিকাতা চলিয়া আসিলাম, তখন আমি এই সমিতির কোঅপটেড মেম্বর হইলাম।

 

চলবে…..