বিশ্বজুড়ে অনিশ্চয়তা ও উত্তেজনা বাড়লেও নিরাপত্তা ও শান্তির আকাঙ্ক্ষা কখনও কমে না। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বৈশ্বিক সংঘাতের মাত্রা বেড়েছে, তবুও বহু দেশ এখনো স্থিতিশীল ও নিরাপদ পরিবেশ বজায় রেখে চলেছে।
শান্তির বর্তমান চিত্র বোঝার একটি স্বীকৃত উপায় হলো গ্লোবাল পিস ইনডেক্স (জিপিআই)। ইনস্টিটিউট ফর ইকোনমিক্স অ্যান্ড পিস (আইইপি) পরিচালিত এ সূচকে ২০২৫ সালের নতুন র্যাঙ্কিং সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে। ২০২৫ সালের জিপিআই অনুযায়ী বিশ্বের শীর্ষ ১০ শান্তিপূর্ণ দেশ হচ্ছে-

১. আইসল্যান্ড | স্কোর: ১.০৯৫
২০০৮ সাল থেকে অবিরত শীর্ষ স্থান ধরে রাখা আইসল্যান্ড এ বছরও বড় ব্যবধানে শীর্ষে রয়েছে। উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, ন্যাটো জোটের সদস্য হয়েও সেনাবাহিনী না থাকা একমাত্র দেশ এটি।

২. আয়ারল্যান্ড | স্কোর: ১.২৬০
গ্লোবাল পিস ইনডেক্সে আবারও দ্বিতীয় অবস্থানে আয়ারল্যান্ড। ইউরোপে শান্তির দিক থেকে আইসল্যান্ডের পরেই এর অবস্থান। জাতিসংঘ শান্তিরক্ষায় দেশটির দীর্ঘদিনের সক্রিয় ভূমিকা রয়েছে।

৩. নিউজিল্যান্ড | স্কোর: ১.২৮২
গত বছরের তুলনায় এক ধাপ এগিয়ে শীর্ষ তিনে উঠে এসেছে নিউজিল্যান্ড। গত এক বছরে তাদের শান্তি সূচকে ৩ দশমিক ১ শতাংশ উন্নতি হয়েছে। প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের একমাত্র দেশ হিসেবে শীর্ষ দশে জায়গা করে নিয়েছে তারা।

৪. অস্ট্রিয়া | স্কোর: ১.২৯৪
এক ধাপ পিছিয়ে এবার চতুর্থ স্থানে অস্ট্রিয়া, যা পশ্চিম ও মধ্য ইউরোপের তালিকায় তৃতীয়। আফ্রিকা, বাল্কান ও মধ্যপ্রাচ্যে জাতিসংঘ মিশনে তাদের ৫০ বছরের অংশীদারিত্ব ২০২৪ সালে পূর্ণ হয়েছে।

৫. সুইজারল্যান্ড | স্কোর: ১.২৯৪
এক ধাপ এগিয়ে পঞ্চম স্থানে সুইজারল্যান্ড। ইউরোপের মধ্যে এটি চতুর্থ শান্তিপূর্ণ দেশ। ২০০৬ সালে শুরু হওয়া জাতিসংঘ পিসবিল্ডিং ফান্ডে তারা ৩৪ মিলিয়ন ডলারের বেশি সহায়তা দিয়েছে।

৬. সিঙ্গাপুর | স্কোর: ১.৩৫৭
এ বছর এক ধাপ পিছিয়ে ষষ্ঠে সিঙ্গাপুর, যা এশিয়া–প্রশান্ত অঞ্চলের দ্বিতীয় শান্তিপূর্ণ দেশ। গত ৩৫ বছরে সিঙ্গাপুরের সামরিক ও পুলিশ বাহিনী ১৭টি শান্তিরক্ষা ও পর্যবেক্ষণ মিশনে অংশ নিয়েছে।

৭. পর্তুগাল | স্কোর: ১.৩৭১
গত বছরের মতোই সপ্তম স্থানে পর্তুগাল। ৬৫ বছর ধরে তারা জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে যুক্ত, বিশেষ করে মধ্য আফ্রিকান প্রজাতন্ত্র, কলোম্বিয়া ও দক্ষিণ সুদান মিশনে সক্রিয়।

৮. ডেনমার্ক | স্কোর: ১.৩৯৩
ডেনমার্কও গত বছরের স্থান ধরে রেখেছে। ২০২৫ সালে সামরিকায়নে উল্লেখযোগ্য অবনতি রেকর্ড করলেও জাতিসংঘ পিসবিল্ডিং কমিশন গঠনে তাদের অগ্রণী ভূমিকা স্মরণীয়; ২০২৩ ও ২০২৪ সালে কমিশনের সদস্যও ছিল দেশটি।

৯. স্লোভেনিয়া | স্কোর: ১.৪০৯
স্লোভেনিয়ার অবস্থান অপরিবর্তিত। সম্প্রতি দ্বিতীয়বারের মতো জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের অস্থায়ী সদস্য নির্বাচিত হওয়া তাদের বড় অবদান।

১০. ফিনল্যান্ড | স্কোর: ১.৪২০
তিন ধাপ উন্নতি করে ২০২৫ সালে শীর্ষ দশে প্রবেশ করেছে ফিনল্যান্ড, যা ইউরোপে অষ্টম শান্তিপূর্ণ দেশ। ২০২৩–২৫ সময়কালে জাতিসংঘ পিসবিল্ডিং ফান্ডে তারা বার্ষিক ২০ লক্ষ ইউরো অনুদান দিয়েছে।
সবচেয়ে কম শান্তিপূর্ণ দেশগুলো
শান্তির সূচকে নীচের দিকে থাকা ১০টি দেশ (শান্তি স্কোরের ক্রমানুসারে):
মালি (#১৫৪)
ইসরায়েল (#১৫৫)
দক্ষিণ সুদান (#১৫৬)

সিরিয়া (#১৫৭)
আফগানিস্তান (#১৫৮)
ইয়েমেন (#১৫৯)
কঙ্গো গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র (#১৬০)
সুদান (#১৬১)
ইউক্রেন (#১৬২)
রাশিয়া (#১৬৩)
শান্তি স্কোর কীভাবে নির্ধারণ করা হয়?
আইইপি অনুযায়ী গ্লোবাল পিস ইনডেক্স তিনটি প্রধান মানদণ্ডে ২০টির বেশি সূচক বিবেচনা করে:
● সামাজিক নিরাপত্তা ও সুরক্ষার মাত্রা
● অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক সংঘাতের বিস্তার
● সামরিকায়নের মাত্রা
সারাক্ষণ রিপোর্ট 


















