ডালাসের একটি দ্বিভাষিক বিদ্যালয়ের ষষ্ঠ-শ্রেণির গণিত শিক্ষিকা আনা সেপুলভেদা জ্যামিতি ক্লাসে নতুন উৎসাহ আনতে চেয়েছিলেন। ফুটবলপ্রেমী শিক্ষার্থীদের আগ্রহকে কাজে লাগাতে তিনি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা চ্যাটজিপিটির সাহায্য নেন। মুহূর্তেই পাঁচ পাতার এক পাঠ-পরিকল্পনা তৈরি হয়, শিরোনাম— ‘ফুটবলের প্রতিটি কোণে জ্যামিতি’। পরিকল্পনায় ছিল মাঠের বিভিন্ন আকৃতি ও কোণ, বলের নকশা এবং স্টেডিয়ামের স্থাপত্য নিয়ে আলোচনা, শ্রেণি-আলোচনা ও নিজস্ব ফুটবল মাঠ বা স্টেডিয়াম আঁকার প্রকল্প। সেপুলভেদা বলেন, ‘এআই আমার কাজের ধরনই পাল্টে দিয়েছে—পাঠ পরিকল্পনা, অভিভাবকদের সঙ্গে যোগাযোগ, এমনকি শিক্ষার্থীদের আগ্রহ বাড়াতেও।’
ফুটবলের মাধ্যমে জ্যামিতি শেখানো: এক শিক্ষকের অভিজ্ঞতা
চ্যাটজিপিটি শুধু পাঠ-পরিকল্পনা নয়, স্প্যানিশ অনুবাদও সরবরাহ করে, ফলে দ্বিভাষিক ক্লাসে ভাষাগত বাধা অনেকটাই কমেছে। সেপুলভেদা জানান, এআই-এর কারণে তিনি ক্লাসরুমের বাইরে কাগজপত্রে কম সময় ব্যয় করেন, ফলে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সরাসরি কাজের সুযোগ বাড়ে।

যুক্তরাষ্ট্রে এআই ব্যবহারের দ্রুত বিস্তার
গ্যালাপ ও ওয়ালটন ফ্যামিলি ফাউন্ডেশনের সাম্প্রতিক সমীক্ষা বলছে, মার্কিন কেএ-টু-টুয়েলভ পাবলিক স্কুলের প্রতি দশজন শিক্ষকের ছয়জনই গত শিক্ষাবর্ষে নিয়মিত এআই ব্যবহার করেছেন। উচ্চবিদ্যালয়ের ও নবীন পেশাজীবী শিক্ষকদের মধ্যে ব্যবহার সবচেয়ে বেশি। নিয়মিত ব্যবহারকারীরা জানিয়েছেন, প্রতি সপ্তাহে গড়ে ছয় ঘণ্টা পর্যন্ত সময় বাঁচে। গবেষণা পরামর্শক আন্দ্রিয়া মালেক অ্যাশের মতে, এতে শিক্ষক-অবসাদ (বার্নআউট) কমার সম্ভাবনা রয়েছে।
শিক্ষক জরিপ: সময় সাশ্রয় ও মানোন্নয়ন
সমীক্ষা অনুযায়ী, এআই টুল ব্যবহারকারী আটজন শিক্ষকের প্রায় সাতজন ওয়ার্কশিট, মূল্যায়ন বা প্রশাসনিক কাজ তৈরিতে উল্লেখযোগ্য সময় সাশ্রয় করেন। ছয়জনের বেশি মনে করেন, শিক্ষার্থীর জন্য উপাদান মানিয়ে নেওয়া কিংবা প্রতিক্রিয়া (ফিডব্যাক) দেওয়ার ক্ষেত্রে তাঁদের কাজের মান বেড়েছে। হিউস্টনের এক উচ্চবিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান শিক্ষিকা মেরি ম্যাকার্থি বলেন, ‘এআই শুধু আমার পাঠদান নয়, আমার সপ্তাহান্তও বদলে দিয়েছে—কাজ-জীবনের ভারসাম্য এখন অনেক ভালো।’

নীতিমালা ও নির্দেশিকা: রাজ্য-পর্যায়ের উদ্যোগ
শিক্ষার্থীর অপব্যবহার ঠেকাতে প্রায় দুই ডজন রাজ্য এআই-সম্পর্কিত দিকনির্দেশনা জারি করেছে, যদিও বাস্তব প্রয়োগে পার্থক্য রয়েছে। ফ্লোরিডা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা-প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ মায়া ইসরায়েল বলেন, ‘শিক্ষকের বিচারবুদ্ধি কখনোই এআইয়ের হাতে দেওয়া যাবে না।’ বহুনির্বাচনী প্রশ্ন মূল্যায়নে এআই কার্যকর হলেও বিশদ উত্তর যাচাইয়ে মানব-বিচার অপরিহার্য; শিক্ষার্থীদের যেন ভুল মূল্যায়ন ধরতে পারার সুযোগ থাকে, সে ব্যবস্থাও জরুরি।
কাজে লাগছে, তবে সীমিত ব্যবহারেই লাভজনক
কলোরাডোর ইংরেজি শিক্ষক ড্যারেন বারকেট বলেন, ‘চ্যাটজিপিটি দিয়ে আমি প্রশ্নপত্র তৈরি করি, বহুনির্বাচনী ও প্রবন্ধ মূল্যায়নে সহায়তা নিই।’ তবে তিনি দেখেছেন, নিখুঁত ব্যাকরণ ও জটিল বাক্যের অতিরিক্ত উপস্থিতি সন্দেহজনক; অতিরিক্ত নির্ভরতার ঝুঁকি এড়াতে তিনি কেবল খসড়া পর্যায়ে এআই ব্যবহার করেন। শিকাগো উপশহরের চিত্রকলা শিক্ষিকা লিন্ডসি জনসন শুধু স্কুল-স্বীকৃত নিরাপদ সফটওয়্যারেই এআই আনেন, তাও প্রকল্পের শেষ ধাপে। অষ্টম-শ্রেণির শিক্ষার্থীরা প্রভাবশালী কারও প্রতিকৃতি আঁকার সময় পটভূমি ডিজাইনে ক্যানভা-এর জেনারেটিভ এআই নিতে পারলেও অর্ধেকই নিজস্ব কল্পনার উপর ভরসা রেখে কাজটি শেষ করেছে।

শিক্ষার্থীর দক্ষতা ধরে রাখতে স্কুলের করণীয়
চ্যাটজিপিটি চালুর পর ২০২২-এর শেষ দিকে অনেক স্কুল নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিল, তবে এখন ধীরে ধীরে নিয়ন্ত্রিত ব্যবহার শেখানোর দিকে জোর দিচ্ছে। তবু অর্ধেকের বেশি শিক্ষক আশঙ্কা করেন, মাত্রাতিরিক্ত এআই-নির্ভরতা শিক্ষার্থীর সমালোচনামূলক চিন্তা ও স্থায়ী সমাধানে অটল থাকার ক্ষমতা কমাতে পারে। তাই শিক্ষকেরা মনে করেন, এআই শেখানোর পাশাপাশি এর সীমাবদ্ধতাও শেখানো জরুরি।
ক্লাসরুমকে আধুনিক করার পথে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকে অস্বীকার করার উপায় নেই। পাঠ-পরিকল্পনা থেকে প্রশাসনিক ঝক্কি কমিয়ে শিক্ষককে শিক্ষার্থীর কাছে ফিরিয়ে আনছে প্রযুক্তি। তবে মানবিক বিচারের বিকল্প কিছুই নয়। নিয়ন্ত্রিত ও সচেতন ব্যবহারে—ক্লাসভর্তি কৌতূহলী মুখকে উৎসাহিত করতে—এআই সত্যিকারের ‘গেম-চেঞ্জার’ হতে পারে।
সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















