একটি ঐতিহাসিক চুক্তির পটভূমি
২৭ জুন ২০২৫ তারিখে ওয়াশিংটনে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও, ডেমোক্রেটিক রিপাবলিক অব কঙ্গো (ডিআরসি) এবং রুয়ান্ডার পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের উপস্থিতিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ শান্তি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এই চুক্তি গত ৩০ বছরের রক্তক্ষয়ী সংঘাতের অবসান ঘটিয়ে দুই দেশের মধ্যে শান্তি, নিরাপত্তা ও সমৃদ্ধির নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে বলে আশা করা হচ্ছে।
এটি এপ্রিলে ঘোষিত ‘ডিক্লারেশন অব প্রিন্সিপলস’-এর ভিত্তির ওপর গড়ে উঠেছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নেতৃত্ব এবং অগ্রাধিকারেই এই উদ্যোগ বাস্তবায়িত হয়েছে বলে অনুষ্ঠানে বক্তারা উল্লেখ করেন।
কূটনৈতিক সমর্থন ও অংশীদারিত্ব
যুক্তরাষ্ট্রের সিনিয়র উপদেষ্টা মাসাদ বুলোস স্বাগত বক্তব্যে দুই দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের কঠোর পরিশ্রমের জন্য ধন্যবাদ জানান। তিনি কাতারের ভূমিকার কথাও বিশেষভাবে উল্লেখ করেন, যারা ডিআরসি সরকারের সাথে এম২৩ সশস্ত্র গোষ্ঠীর মধ্যে সমান্তরাল আলোচনার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। আফ্রিকান ইউনিয়নের তত্ত্বাবধানে চুক্তি বাস্তবায়নের প্রতিশ্রুতিও দেওয়া হয়।
মার্কো রুবিওর বক্তব্য
মার্কো রুবিও বলেন, এই চুক্তি করা সহজ ছিল না, বাস্তবায়নেও অনেক কাজ বাকি আছে। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের টিম, বিশেষ করে মাসাদ বুলোসের অবদানের কথা উল্লেখ করেন যিনি মাত্র দশ সপ্তাহেই এই আলোচনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন।
রুবিও কাতার এবং আফ্রিকান ইউনিয়নের সহায়তাকে অপরিহার্য বলে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প প্রকৃত অর্থেই শান্তির পক্ষে, যা ভারতের সাথে পাকিস্তানের সাম্প্রতিক দ্বন্দ্ব মীমাংসা এবং অন্য জায়গায় তার হস্তক্ষেপে প্রতিফলিত হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, শান্তি মানে কেবল যুদ্ধ থামানো নয়, বরং মানুষের স্বপ্ন দেখার সুযোগ তৈরি করা—সমৃদ্ধি, অর্থনৈতিক সম্ভাবনা, পরিবারের পুনর্মিলন—যা যুদ্ধের কারণে সম্ভব হয় না।
রুয়ান্ডার পররাষ্ট্রমন্ত্রী এনদুহুঙ্গিরেহের বক্তব্য
রুয়ান্ডার পররাষ্ট্রমন্ত্রী অলিভিয়ার এনদুহুঙ্গিরেহে বলেন, এই ঐতিহাসিক চুক্তি বাস্তবায়নে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ব্যক্তিগত উদ্যোগ এবং মার্কো রুবিওসহ যুক্তরাষ্ট্রের টিমের অবদান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
তিনি জানান, এই চুক্তির মূলে রয়েছে ডিআরসি ও রুয়ান্ডার মধ্যে যৌথ নিরাপত্তা সমন্বয় ব্যবস্থা গঠন। প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে এফডিএলআর (১৯৯৪ সালের তুতসি গণহত্যার উত্তরাধিকারী বাহিনী) নিরস্ত্রীকরণ প্রক্রিয়া শুরু হবে এবং রুয়ান্ডার প্রতিরক্ষামূলক ব্যবস্থাগুলি প্রত্যাহার করা হবে।
তিনি আরও বলেন, উভয় দেশেই শরণার্থীদের নিরাপদ ও মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবর্তন নিশ্চিত করা হবে। অর্থনৈতিক সহযোগিতা ও বিনিয়োগ বাড়ানোর প্রতিশ্রুতিও দেওয়া হয়েছে।
ডিআরসির পররাষ্ট্রমন্ত্রী থেরেসে ওয়াগনারের বক্তব্য
ডিআরসির পররাষ্ট্রমন্ত্রী থেরেসে কায়িকওয়াম্বা ওয়াগনার বলেন, দুই মাস আগে যে নীতিগত ঘোষণাপত্র স্বাক্ষরিত হয়েছিল তা আজ বাস্তবে রূপ নিল। তিনি বলেন, শান্তি শুধু একটি পছন্দ নয়, বরং আন্তর্জাতিক আইন, মানবাধিকার এবং রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্ব রক্ষার দায়িত্বও।
ওয়াগনার প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের নেতৃত্বের প্রশংসা করে বলেন, তিনিই প্রক্রিয়াকে লক্ষ্যভিত্তিক এবং ফলপ্রসূ করে রেখেছেন। তিনি প্রেসিডেন্ট ফেলিক্স শিসেকেদি এবং অন্যান্য অংশীদারদেরও ধন্যবাদ জানান।
তিনি বলেন, কাতারের সহায়তায় দুই দেশের প্রধানদের মধ্যে প্রথম সরাসরি বৈঠক মার্চে অনুষ্ঠিত হয়েছিল, যা এই সংলাপের ভিত্তি তৈরি করে। আফ্রিকান ইউনিয়নের নেতৃত্বও এই প্রক্রিয়াকে আফ্রিকান মালিকানার ভিত্তি দিয়েছে।
শান্তি চুক্তির মানবিক ও সামাজিক গুরুত্ব
ওয়াগনার বলেন, এই চুক্তি সহিংসতার কারণে যেসব নারী, পুরুষ এবং শিশু নিরাপত্তা ও মর্যাদা হারিয়েছেন তাদের জন্য একটি নতুন ভবিষ্যত গড়ার সুযোগ দেবে। তিনি বলেন, পূর্বাঞ্চলের জনগণের কথা মাথায় রেখেই এই চুক্তিতে সশস্ত্র বাহিনীর প্রত্যাহার, বেসামরিক নাগরিকদের সুরক্ষা, বাস্তুচ্যুতদের এবং শরণার্থীদের ফিরিয়ে আনার স্পষ্ট ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।
তিনি স্পষ্ট করে দেন যে, কোনো লেখা বা চুক্তি নিজেই শান্তি নিশ্চিত করতে পারে না, বরং এর বাস্তবায়নে রাজনৈতিক সদিচ্ছা, ন্যায়বিচার এবং জবাবদিহি জরুরি।
চুক্তির মূল শর্তাবলী
উভয় দেশের আঞ্চলিক অখণ্ডতার প্রতি সম্মান
শত্রুতা বন্ধ
সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর নিরস্ত্রীকরণ এবং শর্তাধীন সমন্বিতকরণ
যৌথ নিরাপত্তা সমন্বয় ব্যবস্থা গঠন
শরণার্থী ও অভ্যন্তরীণ বাস্তুচ্যুতদের প্রত্যাবর্তন
মানবিক সহায়তা
আঞ্চলিক অর্থনৈতিক সংহতির জন্য কাঠামো তৈরি
চুক্তি কার্যকর হওয়া
সব পক্ষের স্বাক্ষরের মধ্য দিয়ে চুক্তি অবিলম্বে কার্যকর হয়েছে। অনুষ্ঠানের শেষাংশে চুক্তি স্বাক্ষরিত হয় এবং উপস্থিত সবাই করতালি দিয়ে তাকে অভিনন্দন জানান।