১০:০১ অপরাহ্ন, সোমবার, ০৭ জুলাই ২০২৫
সন্ত্রাসবিরোধে দ্বৈত মানদণ্ড নেই: ব্রিকসের দৃঢ় ঘোষণায় পহালগাম হামলার তীব্র নিন্দা হিউএনচাঙ (পর্ব-১৪১) প্রেসিডেন্ট গার্ড রেজিমেন্ট (পিজিআর) এর ৫০তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী অনুষ্ঠানে মহামান্য রাষ্ট্রপতি ঢাকায় ৭৩ সালে বস্তিবাসী ছিলো ৮ শতাংশ এখন ৪০ শতাংশ হোলি আর্টিজান হামলায় নিহত ভারতীয় নাগরিক: সন্ত্রাসের আতঙ্ক ও ভারতের গণমাধ্যম লন্ডনের ‘এভিটা’-তে ব্যালকনি ছেড়ে জনতার গানে ডুবে গেলেন র‌্যাচেল জেগলার সাংবাদিকদের ওপর হামলা ও হয়রানির প্রতিবাদে অর্ধশতাধিক সাংবাদিকের যৌথ বিবৃতি মীর জাফরের বিশ্বাসঘাতকতা নিয়ে কী বলেন তার বংশধররা? জনগণকে বিভক্ত করলেই রাষ্ট্র ক্ষতিগ্রস্ত হয় মব ভায়োলেন্স গত এগার মাসে ৮০ থেকে একশ মিলিয়ন ডলারের ক্ষতি করেছে পর্যটন খাতে

ব্রিকসের সন্ত্রাসবাদবিরোধী অবস্থান: বাংলাদেশের নীরবতা কতটা ঝুঁকিপূর্ণ?

আন্তর্জাতিক জোট ব্রিকস (BRICS) সম্প্রতি ভারতশাসিত কাশ্মীরের পাহলগামে সন্ত্রাসী হামলার নিন্দা জানিয়ে কঠোর ভাষায় এক যৌথ বিবৃতি দিয়েছে। এতে বলা হয়েছে—সীমান্ত পেরিয়ে সন্ত্রাসী গতিবিধি, সন্ত্রাসে অর্থায়ন, নিরাপদ আশ্রয় এবং সন্ত্রাসবাদকে সমর্থন কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।

এ বক্তব্য এমন এক সময়ে এসেছে, যখন জুলাই মাসের আন্দোলনের সময় নরসিংদী কারাগারে হামলা চালিয়ে আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী সংগঠনের কয়েকজন সদস্য পালিয়ে যায়। তাদের মধ্যে অনেকে এখনো পলাতক। একই সঙ্গে মালয়েশিয়ার পুলিশ সম্প্রতি কয়েকজন বাংলাদেশি নাগরিককে সন্ত্রাসবাদের অভিযোগে গ্রেপ্তার করেছে। তদন্তকারীদের ভাষ্য, তারা বাংলাদেশে ইসলামিক স্টেট (আইএস) নেটওয়ার্ককে অর্থায়ন করছিল।

আন্তর্জাতিক বার্তা: সন্ত্রাসে অর্থায়ন কোনো সীমান্ত মানে না

ব্রিকসের বিবৃতিতে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, সন্ত্রাসবাদ একটি বৈশ্বিক হুমকি। ভারত, চীন, রাশিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা, সৌদি আরব, ইরান, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ইন্দোনেশিয়া ও ব্রাজিলের এই জোটের মতে—সন্ত্রাসবাদ রুখতে সীমান্ত পেরিয়ে চলা নেটওয়ার্ক, অর্থায়ন ও ‘সেফ হ্যাভেন’গুলো চিহ্নিত করে ধ্বংস করতে হবে। এর মাধ্যমে তারা শুধু পাহলগাম নয়, বৈশ্বিক সন্ত্রাসী কাঠামো ভেঙে দেওয়ার পক্ষে অবস্থান নিয়েছে।

এই অবস্থান যুক্তরাষ্ট্রের দীর্ঘদিনের নীতির সঙ্গেও সামঞ্জস্যপূর্ণ। ২০০১ সালের ৯/১১ হামলার পর প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশ বলেছিলেন, “Money is the blood of terrorism”—অর্থাৎ টাকার জোগান ছাড়া সন্ত্রাস বাঁচে না। তিন দশকেরও বেশি সময় ধরে যুক্তরাষ্ট্র সন্ত্রাসে অর্থায়ন ঠেকাতে বৈশ্বিক ব্যাংকিং নজরদারি, অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা ও আইনি চাপ বাড়িয়ে চলেছে।

বাংলাদেশের প্রেক্ষাপট: নীরব থাকা কি নিরাপদ?

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বাংলাদেশ সরকার সন্ত্রাস দমনে কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে। তবু আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের প্রতিবেদন ও মালয়েশিয়ার গ্রেপ্তারকৃতদের স্বীকারোক্তি ইঙ্গিত দেয়—বাংলাদেশে এখনো আইএসসহ আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী নেটওয়ার্ক সক্রিয়।

যদি সরকার বিষয়টি উপেক্ষা করে বা গা-ছাড়া মনোভাব দেখায়, কয়েকটি নেতিবাচক ফলাফল ঘটতে পারে—

  • আন্তর্জাতিক আস্থা ক্ষয়
    আন্তর্জাতিক জোট বা দেশ (যেমন ব্রিকস, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাষ্ট্র) সন্ত্রাসে অর্থায়ন ও আশ্রয়ের অভিযোগে বাংলাদেশের ওপর কূটনৈতিক চাপ বাড়াতে পারে।
  • অর্থনৈতিক চাপ ও অবরোধের ঝুঁকি
    বৈশ্বিক নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলো মানি লন্ডারিং প্রতিরোধে বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাতের ওপর বাড়তি বিধি আরোপ করতে পারে, ফলে রেমিট্যান্স ও বিদেশি বিনিয়োগ ব্যাহত হবে।
  • পর্যটন ও শ্রমবাজার ক্ষতি
    বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হলে ভিসা জটিলতা, শ্রমিক প্রত্যাবাসন বা কর্মসংস্থানের বাজার হারানোর ঝুঁকি দেখা দিতে পারে।
  • অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা ঝুঁকি
    নরসিংদীর মতো জেল হামলা সন্ত্রাসী নেটওয়ার্ককে উসকে দেয়। পালিয়ে যাওয়া সদস্যরা নতুন নাশকতার পরিকল্পনা করতে পারে, যার ফলে নিরাপত্তা পরিস্থিতি আরও অস্থিতিশীল হবে।

আঞ্চলিক এবং বৈশ্বিক চাপ বাড়ছে

ব্রিকসের স্পষ্ট বার্তার পর বিষয়টি আর বাংলাদেশের একান্ত অভ্যন্তরীণ ইস্যু নেই। মালয়েশিয়ায় গ্রেপ্তার হওয়া বাংলাদেশিদের স্বীকারোক্তি প্রমাণ করে, সীমান্ত পেরিয়ে সন্ত্রাসে অর্থায়ন চলছে। সক্রিয় পদক্ষেপ না নিলে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ‘Safe Haven’ বা ‘Terror Financing Hub’ হিসেবে চিহ্নিত হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে, যা কূটনৈতিক চাপ আরও বাড়াবে।

সম্ভাব্য করণীয়

  • পলাতক জঙ্গিদের ধরতে সমন্বিত অভিযান
  • সীমান্ত পেরিয়ে অর্থ ও লোক চলাচলের কঠোর নজরদারি
  • ব্যাংকিং সিস্টেমে মানি লন্ডারিং রোধে কঠোর আইন প্রয়োগ
  • আন্তর্জাতিক গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে তথ্য আদান–প্রদান
  • জনসচেতনতা বৃদ্ধি ও স্থানীয় পর্যায়ে চরমপন্থা মোকাবিলা

ব্রিকসের বিবৃতি জানিয়ে দিয়েছে—সন্ত্রাসবাদ আর কোনো দেশের একক সমস্যা নয়। যখন বড় জোটগুলো সীমান্ত পেরিয়ে সন্ত্রাসী নেটওয়ার্ক, অর্থায়ন ও নিরাপদ আশ্রয় ধ্বংসের ডাক দিচ্ছে, তখন বাংলাদেশের নীরব থাকা যথাযথ কূটনীতি নয়। এখনই কার্যকর ব্যবস্থা না নিলে শুধু নিরাপত্তাই নয়, অর্থনীতি, কূটনীতি ও বৈদেশিক বাণিজ্য—সবকিছুই ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।

সন্ত্রাসবিরোধে দ্বৈত মানদণ্ড নেই: ব্রিকসের দৃঢ় ঘোষণায় পহালগাম হামলার তীব্র নিন্দা

ব্রিকসের সন্ত্রাসবাদবিরোধী অবস্থান: বাংলাদেশের নীরবতা কতটা ঝুঁকিপূর্ণ?

০৬:০০:৩৯ অপরাহ্ন, সোমবার, ৭ জুলাই ২০২৫

আন্তর্জাতিক জোট ব্রিকস (BRICS) সম্প্রতি ভারতশাসিত কাশ্মীরের পাহলগামে সন্ত্রাসী হামলার নিন্দা জানিয়ে কঠোর ভাষায় এক যৌথ বিবৃতি দিয়েছে। এতে বলা হয়েছে—সীমান্ত পেরিয়ে সন্ত্রাসী গতিবিধি, সন্ত্রাসে অর্থায়ন, নিরাপদ আশ্রয় এবং সন্ত্রাসবাদকে সমর্থন কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।

এ বক্তব্য এমন এক সময়ে এসেছে, যখন জুলাই মাসের আন্দোলনের সময় নরসিংদী কারাগারে হামলা চালিয়ে আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী সংগঠনের কয়েকজন সদস্য পালিয়ে যায়। তাদের মধ্যে অনেকে এখনো পলাতক। একই সঙ্গে মালয়েশিয়ার পুলিশ সম্প্রতি কয়েকজন বাংলাদেশি নাগরিককে সন্ত্রাসবাদের অভিযোগে গ্রেপ্তার করেছে। তদন্তকারীদের ভাষ্য, তারা বাংলাদেশে ইসলামিক স্টেট (আইএস) নেটওয়ার্ককে অর্থায়ন করছিল।

আন্তর্জাতিক বার্তা: সন্ত্রাসে অর্থায়ন কোনো সীমান্ত মানে না

ব্রিকসের বিবৃতিতে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, সন্ত্রাসবাদ একটি বৈশ্বিক হুমকি। ভারত, চীন, রাশিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা, সৌদি আরব, ইরান, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ইন্দোনেশিয়া ও ব্রাজিলের এই জোটের মতে—সন্ত্রাসবাদ রুখতে সীমান্ত পেরিয়ে চলা নেটওয়ার্ক, অর্থায়ন ও ‘সেফ হ্যাভেন’গুলো চিহ্নিত করে ধ্বংস করতে হবে। এর মাধ্যমে তারা শুধু পাহলগাম নয়, বৈশ্বিক সন্ত্রাসী কাঠামো ভেঙে দেওয়ার পক্ষে অবস্থান নিয়েছে।

এই অবস্থান যুক্তরাষ্ট্রের দীর্ঘদিনের নীতির সঙ্গেও সামঞ্জস্যপূর্ণ। ২০০১ সালের ৯/১১ হামলার পর প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশ বলেছিলেন, “Money is the blood of terrorism”—অর্থাৎ টাকার জোগান ছাড়া সন্ত্রাস বাঁচে না। তিন দশকেরও বেশি সময় ধরে যুক্তরাষ্ট্র সন্ত্রাসে অর্থায়ন ঠেকাতে বৈশ্বিক ব্যাংকিং নজরদারি, অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা ও আইনি চাপ বাড়িয়ে চলেছে।

বাংলাদেশের প্রেক্ষাপট: নীরব থাকা কি নিরাপদ?

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বাংলাদেশ সরকার সন্ত্রাস দমনে কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে। তবু আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের প্রতিবেদন ও মালয়েশিয়ার গ্রেপ্তারকৃতদের স্বীকারোক্তি ইঙ্গিত দেয়—বাংলাদেশে এখনো আইএসসহ আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী নেটওয়ার্ক সক্রিয়।

যদি সরকার বিষয়টি উপেক্ষা করে বা গা-ছাড়া মনোভাব দেখায়, কয়েকটি নেতিবাচক ফলাফল ঘটতে পারে—

  • আন্তর্জাতিক আস্থা ক্ষয়
    আন্তর্জাতিক জোট বা দেশ (যেমন ব্রিকস, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাষ্ট্র) সন্ত্রাসে অর্থায়ন ও আশ্রয়ের অভিযোগে বাংলাদেশের ওপর কূটনৈতিক চাপ বাড়াতে পারে।
  • অর্থনৈতিক চাপ ও অবরোধের ঝুঁকি
    বৈশ্বিক নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলো মানি লন্ডারিং প্রতিরোধে বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাতের ওপর বাড়তি বিধি আরোপ করতে পারে, ফলে রেমিট্যান্স ও বিদেশি বিনিয়োগ ব্যাহত হবে।
  • পর্যটন ও শ্রমবাজার ক্ষতি
    বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হলে ভিসা জটিলতা, শ্রমিক প্রত্যাবাসন বা কর্মসংস্থানের বাজার হারানোর ঝুঁকি দেখা দিতে পারে।
  • অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা ঝুঁকি
    নরসিংদীর মতো জেল হামলা সন্ত্রাসী নেটওয়ার্ককে উসকে দেয়। পালিয়ে যাওয়া সদস্যরা নতুন নাশকতার পরিকল্পনা করতে পারে, যার ফলে নিরাপত্তা পরিস্থিতি আরও অস্থিতিশীল হবে।

আঞ্চলিক এবং বৈশ্বিক চাপ বাড়ছে

ব্রিকসের স্পষ্ট বার্তার পর বিষয়টি আর বাংলাদেশের একান্ত অভ্যন্তরীণ ইস্যু নেই। মালয়েশিয়ায় গ্রেপ্তার হওয়া বাংলাদেশিদের স্বীকারোক্তি প্রমাণ করে, সীমান্ত পেরিয়ে সন্ত্রাসে অর্থায়ন চলছে। সক্রিয় পদক্ষেপ না নিলে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ‘Safe Haven’ বা ‘Terror Financing Hub’ হিসেবে চিহ্নিত হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে, যা কূটনৈতিক চাপ আরও বাড়াবে।

সম্ভাব্য করণীয়

  • পলাতক জঙ্গিদের ধরতে সমন্বিত অভিযান
  • সীমান্ত পেরিয়ে অর্থ ও লোক চলাচলের কঠোর নজরদারি
  • ব্যাংকিং সিস্টেমে মানি লন্ডারিং রোধে কঠোর আইন প্রয়োগ
  • আন্তর্জাতিক গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে তথ্য আদান–প্রদান
  • জনসচেতনতা বৃদ্ধি ও স্থানীয় পর্যায়ে চরমপন্থা মোকাবিলা

ব্রিকসের বিবৃতি জানিয়ে দিয়েছে—সন্ত্রাসবাদ আর কোনো দেশের একক সমস্যা নয়। যখন বড় জোটগুলো সীমান্ত পেরিয়ে সন্ত্রাসী নেটওয়ার্ক, অর্থায়ন ও নিরাপদ আশ্রয় ধ্বংসের ডাক দিচ্ছে, তখন বাংলাদেশের নীরব থাকা যথাযথ কূটনীতি নয়। এখনই কার্যকর ব্যবস্থা না নিলে শুধু নিরাপত্তাই নয়, অর্থনীতি, কূটনীতি ও বৈদেশিক বাণিজ্য—সবকিছুই ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।