০৯:৫৭ অপরাহ্ন, সোমবার, ০৭ জুলাই ২০২৫
সন্ত্রাসবিরোধে দ্বৈত মানদণ্ড নেই: ব্রিকসের দৃঢ় ঘোষণায় পহালগাম হামলার তীব্র নিন্দা হিউএনচাঙ (পর্ব-১৪১) প্রেসিডেন্ট গার্ড রেজিমেন্ট (পিজিআর) এর ৫০তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী অনুষ্ঠানে মহামান্য রাষ্ট্রপতি ঢাকায় ৭৩ সালে বস্তিবাসী ছিলো ৮ শতাংশ এখন ৪০ শতাংশ হোলি আর্টিজান হামলায় নিহত ভারতীয় নাগরিক: সন্ত্রাসের আতঙ্ক ও ভারতের গণমাধ্যম লন্ডনের ‘এভিটা’-তে ব্যালকনি ছেড়ে জনতার গানে ডুবে গেলেন র‌্যাচেল জেগলার সাংবাদিকদের ওপর হামলা ও হয়রানির প্রতিবাদে অর্ধশতাধিক সাংবাদিকের যৌথ বিবৃতি মীর জাফরের বিশ্বাসঘাতকতা নিয়ে কী বলেন তার বংশধররা? জনগণকে বিভক্ত করলেই রাষ্ট্র ক্ষতিগ্রস্ত হয় মব ভায়োলেন্স গত এগার মাসে ৮০ থেকে একশ মিলিয়ন ডলারের ক্ষতি করেছে পর্যটন খাতে

সন্ত্রাস কেন সর্বদা মানবতার বিরুদ্ধে? হলি আর্টিজান বেকারি হামলার আলোকে

মানবতাবিরোধী সহিংসতার নির্মম উদাহরণ

বাংলাদেশের ইতিহাসে অন্যতম নির্মম ও হৃদয়বিদারক সন্ত্রাসী হামলা হিসেবে চিহ্নিত হয়ে আছে ২০১৬ সালের ১ জুলাই রাতে ঢাকার গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারি হামলা। সেদিন দেশি-বিদেশি নাগরিকদের ওপর নজিরবিহীন নৃশংসতা চালিয়ে সন্ত্রাসীরা প্রমাণ করেছিল যে সন্ত্রাস কোনো ধর্ম, কোনো মতাদর্শ বা কোনো ন্যায়বোধের প্রতিনিধি নয়—এটি কেবল মানবতার চরম শত্রু।

হলি আর্টিজান হামলায় ২০ জন নিরস্ত্র সাধারণ মানুষ—যাদের মধ্যে ইতালি, জাপান, ভারত ও বাংলাদেশের নাগরিক ছিলেন—পাশবিক নৃশংসতায় প্রাণ হারান। নিহতদের বেশির ভাগ ছিলেন বিদেশি নাগরিক, যারা বাংলাদেশে কাজ করছিলেন উন্নয়ন, বাণিজ্য ও কূটনৈতিক সম্পর্কের অগ্রগতির জন্য। জঙ্গিরা ঠান্ডা মাথায় বেছে বেছে বিদেশিদের হত্যা করে, মুসলিম পরিচয় যাচাই করে কয়েকজনকে ছেড়ে দেয়—এটি প্রমাণ করে যে তাদের উদ্দেশ্য ছিল জাতিগত বিদ্বেষ উসকে দিয়ে সমাজে বিভাজন সৃষ্টি করা।

এই হামলাটি বাংলাদেশি আতিথেয়তার সংস্কৃতির ওপর সরাসরি আঘাত। বাংলাদেশের ঐতিহ্য—অতিথিপরায়ণতা, সহনশীলতা ও বৈচিত্র্য—সম্মান করে। জঙ্গিরা সেই বুনোট ছিঁড়ে দিয়ে বাংলাদেশের পরিচয়কে কলঙ্কিত করতে চেয়েছিল।

সন্ত্রাস মানবতার শত্রু কেন?

জীবনের অধিকারকে অস্বীকার

সন্ত্রাসীরা মানুষের সবচেয়ে মৌলিক অধিকার—জীবনের অধিকার—হরণ করে। হলি আর্টিজান হামলায় নিরপরাধ, নিরস্ত্র মানুষকে হত্যা করা হয়েছিল কেবল ভয়ের বাতাবরণ সৃষ্টি করতে।

ভয় ও ঘৃণা ছড়ানো

সন্ত্রাসের প্রধান অস্ত্র হলো আতঙ্ক। হামলাকারীরা পুরো ঢাকা শহরে ভয় ছড়াতে, বিদেশি বিনিয়োগ ও সহযোগিতা নিরুৎসাহিত করতে চেয়েছিল। এতে দেশের অর্থনীতি ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিপন্ন হয়।

বৈচিত্র্য ও সহাবস্থান ধ্বংস

বাংলাদেশের সমাজে বহু ধর্ম, জাতি ও সংস্কৃতি সহাবস্থান করে। হলি আর্টিজান হামলায় বিদেশি নাগরিকদের হত্যার মধ্য দিয়ে এই সহাবস্থানের ধারণাতেই আঘাত হানা হয়েছে।

ধর্মের অপব্যাখ্যা ও অপপ্রয়োগ

হামলাকারীরা ধর্মের নামে হত্যাকাণ্ড চালিয়ে ইসলামকে কলঙ্কিত করেছে। অথচ ইসলামসহ কোনো ধর্মই নিরীহ মানুষের হত্যার অনুমোদন দেয় না।

সমাজে বিভাজন সৃষ্টি

বিদেশিদের হত্যা করে তারা বাংলাদেশিদের বিশ্বসম্প্রদায় থেকে বিচ্ছিন্ন করতে চেয়েছিল। এর ফলে জাতীয় সংহতি ও আন্তর্জাতিক বন্ধুত্বের ওপর আঘাত লেগেছে।

বাংলাদেশের প্রতিরোধ

হলি আর্টিজান বেকারির হামলার পর বাংলাদেশ সরকার, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও জনগণ দৃঢ় প্রতিজ্ঞা করে যে এই বর্বরতা আর সহ্য করা হবে না। নিরাপত্তা বাহিনীর কঠোর অভিযান, গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি, কঠোর মনিটরিং এবং জনসচেতনতা বাড়ানো হয়। মসজিদ, স্কুল, গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সন্ত্রাসবিরোধী বার্তা ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।

মানবতার পক্ষে ঐক্য

হলি আর্টিজান হামলার সবচেয়ে বড় শিক্ষা হলো—সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে ঐক্যবদ্ধ মানবতার শক্তিতে। কোনো ধর্ম, জাতি বা মতাদর্শ নয়—মানবতাই আমাদের প্রধান পরিচয়। একে ধ্বংস করতে চায় যারা, তারা মানবজাতির শত্রু।

সন্ত্রাস কোনো ন্যায়বোধের আন্দোলন নয়—এটি মানুষের ওপর মানুষের বর্বরতা। এর বিরুদ্ধে দাঁড়ানো মানে শুধু নিরাপত্তা নিশ্চিত করা নয়, বরং মানবিক মূল্যবোধ ও সভ্যতাকে রক্ষা করা।

সন্ত্রাসবিরোধে দ্বৈত মানদণ্ড নেই: ব্রিকসের দৃঢ় ঘোষণায় পহালগাম হামলার তীব্র নিন্দা

সন্ত্রাস কেন সর্বদা মানবতার বিরুদ্ধে? হলি আর্টিজান বেকারি হামলার আলোকে

০৬:২০:৫৬ অপরাহ্ন, সোমবার, ৭ জুলাই ২০২৫

মানবতাবিরোধী সহিংসতার নির্মম উদাহরণ

বাংলাদেশের ইতিহাসে অন্যতম নির্মম ও হৃদয়বিদারক সন্ত্রাসী হামলা হিসেবে চিহ্নিত হয়ে আছে ২০১৬ সালের ১ জুলাই রাতে ঢাকার গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারি হামলা। সেদিন দেশি-বিদেশি নাগরিকদের ওপর নজিরবিহীন নৃশংসতা চালিয়ে সন্ত্রাসীরা প্রমাণ করেছিল যে সন্ত্রাস কোনো ধর্ম, কোনো মতাদর্শ বা কোনো ন্যায়বোধের প্রতিনিধি নয়—এটি কেবল মানবতার চরম শত্রু।

হলি আর্টিজান হামলায় ২০ জন নিরস্ত্র সাধারণ মানুষ—যাদের মধ্যে ইতালি, জাপান, ভারত ও বাংলাদেশের নাগরিক ছিলেন—পাশবিক নৃশংসতায় প্রাণ হারান। নিহতদের বেশির ভাগ ছিলেন বিদেশি নাগরিক, যারা বাংলাদেশে কাজ করছিলেন উন্নয়ন, বাণিজ্য ও কূটনৈতিক সম্পর্কের অগ্রগতির জন্য। জঙ্গিরা ঠান্ডা মাথায় বেছে বেছে বিদেশিদের হত্যা করে, মুসলিম পরিচয় যাচাই করে কয়েকজনকে ছেড়ে দেয়—এটি প্রমাণ করে যে তাদের উদ্দেশ্য ছিল জাতিগত বিদ্বেষ উসকে দিয়ে সমাজে বিভাজন সৃষ্টি করা।

এই হামলাটি বাংলাদেশি আতিথেয়তার সংস্কৃতির ওপর সরাসরি আঘাত। বাংলাদেশের ঐতিহ্য—অতিথিপরায়ণতা, সহনশীলতা ও বৈচিত্র্য—সম্মান করে। জঙ্গিরা সেই বুনোট ছিঁড়ে দিয়ে বাংলাদেশের পরিচয়কে কলঙ্কিত করতে চেয়েছিল।

সন্ত্রাস মানবতার শত্রু কেন?

জীবনের অধিকারকে অস্বীকার

সন্ত্রাসীরা মানুষের সবচেয়ে মৌলিক অধিকার—জীবনের অধিকার—হরণ করে। হলি আর্টিজান হামলায় নিরপরাধ, নিরস্ত্র মানুষকে হত্যা করা হয়েছিল কেবল ভয়ের বাতাবরণ সৃষ্টি করতে।

ভয় ও ঘৃণা ছড়ানো

সন্ত্রাসের প্রধান অস্ত্র হলো আতঙ্ক। হামলাকারীরা পুরো ঢাকা শহরে ভয় ছড়াতে, বিদেশি বিনিয়োগ ও সহযোগিতা নিরুৎসাহিত করতে চেয়েছিল। এতে দেশের অর্থনীতি ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিপন্ন হয়।

বৈচিত্র্য ও সহাবস্থান ধ্বংস

বাংলাদেশের সমাজে বহু ধর্ম, জাতি ও সংস্কৃতি সহাবস্থান করে। হলি আর্টিজান হামলায় বিদেশি নাগরিকদের হত্যার মধ্য দিয়ে এই সহাবস্থানের ধারণাতেই আঘাত হানা হয়েছে।

ধর্মের অপব্যাখ্যা ও অপপ্রয়োগ

হামলাকারীরা ধর্মের নামে হত্যাকাণ্ড চালিয়ে ইসলামকে কলঙ্কিত করেছে। অথচ ইসলামসহ কোনো ধর্মই নিরীহ মানুষের হত্যার অনুমোদন দেয় না।

সমাজে বিভাজন সৃষ্টি

বিদেশিদের হত্যা করে তারা বাংলাদেশিদের বিশ্বসম্প্রদায় থেকে বিচ্ছিন্ন করতে চেয়েছিল। এর ফলে জাতীয় সংহতি ও আন্তর্জাতিক বন্ধুত্বের ওপর আঘাত লেগেছে।

বাংলাদেশের প্রতিরোধ

হলি আর্টিজান বেকারির হামলার পর বাংলাদেশ সরকার, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও জনগণ দৃঢ় প্রতিজ্ঞা করে যে এই বর্বরতা আর সহ্য করা হবে না। নিরাপত্তা বাহিনীর কঠোর অভিযান, গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি, কঠোর মনিটরিং এবং জনসচেতনতা বাড়ানো হয়। মসজিদ, স্কুল, গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সন্ত্রাসবিরোধী বার্তা ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।

মানবতার পক্ষে ঐক্য

হলি আর্টিজান হামলার সবচেয়ে বড় শিক্ষা হলো—সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে ঐক্যবদ্ধ মানবতার শক্তিতে। কোনো ধর্ম, জাতি বা মতাদর্শ নয়—মানবতাই আমাদের প্রধান পরিচয়। একে ধ্বংস করতে চায় যারা, তারা মানবজাতির শত্রু।

সন্ত্রাস কোনো ন্যায়বোধের আন্দোলন নয়—এটি মানুষের ওপর মানুষের বর্বরতা। এর বিরুদ্ধে দাঁড়ানো মানে শুধু নিরাপত্তা নিশ্চিত করা নয়, বরং মানবিক মূল্যবোধ ও সভ্যতাকে রক্ষা করা।