০৯:১২ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১১ জুলাই ২০২৫

সরকার বনাম জনগণ: আস্থা সংকটে বাংলাদেশ

লন্ডন ভিত্তিক খ্যাতিমান সংবাদপত্র ফিন্যানশিয়াল টাইমসকে দেওয়া এক বিস্তৃত সাক্ষাৎকারে বাংলাদেশের বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার প্রধান উপদেষ্টা মন্তব্য করেছেন যেমানুষের মধ্যে সরকারকে শত্রু হিসেবে দেখার দীর্ঘদিনের প্রবণতা রয়েছে। তিনি বলেন, “আগে মানুষ শেখ হাসিনাকে শত্রু ভাবতএখন তারা আমাদের এই অন্তর্বর্তী সরকারকেও শত্রু ভাবছে।

তিনি আরও যোগ করেন, “বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতির একটি বড় সমস্যা হলো— জনগণ সবসময় মনে করে সরকার মানেই তাদের শত্রু। সরকারের যেকোনো পদক্ষেপই তারা সন্দেহের চোখে দেখেভালোমন্দ যাচাই না করেই প্রতিক্রিয়া তৈরি করে।

কেন এমন মনোভাব তৈরি হয়?

বিশেষজ্ঞরা বলেনতৃতীয় বিশ্বের অনেক দেশের মতো বাংলাদেশেও রাজনৈতিক ইতিহাসে বারবার অস্থিরতাদমন-পীড়নসেনাশাসনদুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহার হয়েছে। এসব অভিজ্ঞতা থেকে সাধারণ মানুষের মধ্যে গভীর অনাস্থা জন্মেছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের politieke ইতিহাসবিদ এক অধ্যাপক মেনে নেন, “১৯৭৫ সালের হত্যাকাণ্ড থেকে শুরু করে সামরিক শাসনএকদলীয় শাসননির্বাচন-পদ্ধতির প্রশ্নবিদ্ধতাক্র্যাকডাউনসবকিছুই মানুষে ধারণা তৈরি করেছে যে সরকার কখনো জনগণের পক্ষে নয়বরং নিজ ক্ষমতা টিকিয়ে রাখার জন্যই কাজ করে।

জনগণ আসলে কী চায়

আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষণ

লন্ডন স্কুল অফ ইকনমিক্সের গ্লোবাল গভর্নেন্স ইনস্টিটিউটের গবেষক রেবেকা হুইটম্যান বলেন, “বাংলাদেশের ক্ষেত্রে স্টেট-ভার্সাস-পিপল’ ধারা খুব স্পষ্ট। সরকার জনগণের সেবক হওয়ার বদলে নিয়ন্ত্রক ও শাস্তিদাতা হয়ে উঠেছেআর জনগণ এটিকে শত্রু মনে করে।” তিনি আরও বলেন, “দক্ষিণ এশিয়ার বহু দেশেই মানুষ রাষ্ট্রকে বন্ধু হিসেবে দেখেন নাবরং কর আদায়কারী বা শাসক শক্তি হিসেবে ভয় পান।

উন্নয়ন সত্ত্বেও অবিশ্বাস

গত দুই দশকে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিরপ্তানি বৃদ্ধিদারিদ্র্য হ্রাস ও অবকাঠামো উন্নয়নে অগ্রগতি হলেও আস্থা তৈরি হয়নি। ঢাকা ভিত্তিক সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের ফেলো ড. হক বলেন, “উন্নয়ন হয়েছে ঠিকইকিন্তু স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা দুর্বল। মানুষ মতামত প্রদান করতে পারে নাবিরোধী কণ্ঠ দমন করা হয়মানবাধিকার লঙ্ঘন হয়এসবই আস্থা ফিরিয়ে আনা কঠিন করেছে।

অন্তর্বর্তী সরকারের চ্যালেঞ্জ

প্রধান উপদেষ্টা জানান, “আমরা নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজনের চেষ্টা করছিকিন্তু অনেকে মনে করে আমরা অন্য কোনো গেম খেলছি। এটাই বাংলাদেশের রাজনীতির ট্র্যাজেডি। আমাদের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে মানুষের আস্থা ফেরানো। যদি মানুষ মনে করে সরকার শত্রুতাহলে কোনো রাজনৈতিক সমাধানই দীর্ঘস্থায়ী হবে না।

বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ

জার্মানির একজন বাংলাদেশ গবেষক বলেন, “বাংলাদেশে প্রথম শর্ত হলো— খোলা রাজনৈতিক সংস্কৃতি। বিরোধিতা সহ্য করতে শিখতে হবেআইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করতে হবেএবং সরকারি কর্মকাণ্ডকে স্বচ্ছ রাখতে হবে। যতক্ষণ পর্যন্ত সরকার নিজেকে জনগণের সেবক প্রমাণ করতে পারবে নাজনগণ সরকারকে শত্রু ভাবতে থাকবে।

সরকার বনাম জনগণ: আস্থা সংকটে বাংলাদেশ

০৪:২৮:৪৩ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১১ জুলাই ২০২৫

লন্ডন ভিত্তিক খ্যাতিমান সংবাদপত্র ফিন্যানশিয়াল টাইমসকে দেওয়া এক বিস্তৃত সাক্ষাৎকারে বাংলাদেশের বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার প্রধান উপদেষ্টা মন্তব্য করেছেন যেমানুষের মধ্যে সরকারকে শত্রু হিসেবে দেখার দীর্ঘদিনের প্রবণতা রয়েছে। তিনি বলেন, “আগে মানুষ শেখ হাসিনাকে শত্রু ভাবতএখন তারা আমাদের এই অন্তর্বর্তী সরকারকেও শত্রু ভাবছে।

তিনি আরও যোগ করেন, “বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতির একটি বড় সমস্যা হলো— জনগণ সবসময় মনে করে সরকার মানেই তাদের শত্রু। সরকারের যেকোনো পদক্ষেপই তারা সন্দেহের চোখে দেখেভালোমন্দ যাচাই না করেই প্রতিক্রিয়া তৈরি করে।

কেন এমন মনোভাব তৈরি হয়?

বিশেষজ্ঞরা বলেনতৃতীয় বিশ্বের অনেক দেশের মতো বাংলাদেশেও রাজনৈতিক ইতিহাসে বারবার অস্থিরতাদমন-পীড়নসেনাশাসনদুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহার হয়েছে। এসব অভিজ্ঞতা থেকে সাধারণ মানুষের মধ্যে গভীর অনাস্থা জন্মেছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের politieke ইতিহাসবিদ এক অধ্যাপক মেনে নেন, “১৯৭৫ সালের হত্যাকাণ্ড থেকে শুরু করে সামরিক শাসনএকদলীয় শাসননির্বাচন-পদ্ধতির প্রশ্নবিদ্ধতাক্র্যাকডাউনসবকিছুই মানুষে ধারণা তৈরি করেছে যে সরকার কখনো জনগণের পক্ষে নয়বরং নিজ ক্ষমতা টিকিয়ে রাখার জন্যই কাজ করে।

জনগণ আসলে কী চায়

আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষণ

লন্ডন স্কুল অফ ইকনমিক্সের গ্লোবাল গভর্নেন্স ইনস্টিটিউটের গবেষক রেবেকা হুইটম্যান বলেন, “বাংলাদেশের ক্ষেত্রে স্টেট-ভার্সাস-পিপল’ ধারা খুব স্পষ্ট। সরকার জনগণের সেবক হওয়ার বদলে নিয়ন্ত্রক ও শাস্তিদাতা হয়ে উঠেছেআর জনগণ এটিকে শত্রু মনে করে।” তিনি আরও বলেন, “দক্ষিণ এশিয়ার বহু দেশেই মানুষ রাষ্ট্রকে বন্ধু হিসেবে দেখেন নাবরং কর আদায়কারী বা শাসক শক্তি হিসেবে ভয় পান।

উন্নয়ন সত্ত্বেও অবিশ্বাস

গত দুই দশকে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিরপ্তানি বৃদ্ধিদারিদ্র্য হ্রাস ও অবকাঠামো উন্নয়নে অগ্রগতি হলেও আস্থা তৈরি হয়নি। ঢাকা ভিত্তিক সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের ফেলো ড. হক বলেন, “উন্নয়ন হয়েছে ঠিকইকিন্তু স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা দুর্বল। মানুষ মতামত প্রদান করতে পারে নাবিরোধী কণ্ঠ দমন করা হয়মানবাধিকার লঙ্ঘন হয়এসবই আস্থা ফিরিয়ে আনা কঠিন করেছে।

অন্তর্বর্তী সরকারের চ্যালেঞ্জ

প্রধান উপদেষ্টা জানান, “আমরা নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজনের চেষ্টা করছিকিন্তু অনেকে মনে করে আমরা অন্য কোনো গেম খেলছি। এটাই বাংলাদেশের রাজনীতির ট্র্যাজেডি। আমাদের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে মানুষের আস্থা ফেরানো। যদি মানুষ মনে করে সরকার শত্রুতাহলে কোনো রাজনৈতিক সমাধানই দীর্ঘস্থায়ী হবে না।

বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ

জার্মানির একজন বাংলাদেশ গবেষক বলেন, “বাংলাদেশে প্রথম শর্ত হলো— খোলা রাজনৈতিক সংস্কৃতি। বিরোধিতা সহ্য করতে শিখতে হবেআইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করতে হবেএবং সরকারি কর্মকাণ্ডকে স্বচ্ছ রাখতে হবে। যতক্ষণ পর্যন্ত সরকার নিজেকে জনগণের সেবক প্রমাণ করতে পারবে নাজনগণ সরকারকে শত্রু ভাবতে থাকবে।