গত এক বছরে বাংলাদেশি পাসপোর্টধারীরা এশিয়া, উপসাগরীয় অঞ্চল, ইউরোপ এবং এমনকি প্রতিবেশী ভারতসহ অন্তত এক ডজন দেশের ভিসা প্রত্যাখ্যান ও বিধিনিষেধের মুখোমুখি হয়েছেন। যেটি শুরু হয়েছিল কিছু বিচ্ছিন্ন জাল দলিল ও ওভারস্টে-র ঘটনায়, তা এখন রূপ নিয়েছে এক বিস্তৃত ভিসা সংকটে। এর প্রভাব পড়ছে ভ্রমণ, পর্যটন, শ্রম অভিবাসন ও করপোরেট যাতায়াতে।
ভারত থেকে মালয়েশিয়া: ক্রমশ সংকুচিত ভ্রমণ মানচিত্র
২০২৪ সালের শেষ দিক থেকে ভারত প্রায় সম্পূর্ণভাবে বাংলাদেশিদের ভিসা দেওয়া বন্ধ করে দিয়েছে, সীমিত সংখ্যক মেডিকেল ও শিক্ষার্থী ভিসা ছাড়া। অন্যদিকে, রেমিট্যান্সের অন্যতম প্রধান উৎস মালয়েশিয়া কম দক্ষ শ্রমিকদের ভিসা স্থগিত করেছে নিয়োগ জালিয়াতি ও বাংলাদেশিদের জঙ্গি সংশ্লিষ্টতার অভিযোগের প্রেক্ষিতে।
ভিয়েতনাম, লাওস, থাইল্যান্ডের মতো দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলো বাংলাদেশিদের জন্য ভিসা প্রদান পুরোপুরি বন্ধ করেছে বা দীর্ঘ প্রসেসিং সময় চালু করেছে। ইন্দোনেশিয়া, কম্বোডিয়া এবং এমনকি মালদ্বীপও একই পথ অনুসরণ করেছে। শুধু জুন মাসেই থাইল্যান্ডের ই-ভিসা প্রত্যাখ্যানের সংখ্যা ৪,৫০০ ছাড়িয়েছে।
ইউরোপ, উপসাগরীয় অঞ্চল ও পূর্ব এশিয়ায় কড়াকড়ি
উপসাগরীয় দেশগুলোর মধ্যে সংযুক্ত আরব আমিরাত, ওমান, বাহরাইন ও সৌদি আরব বাংলাদেশিদের জন্য কম দক্ষ শ্রমিক ও ব্লক-ওয়ার্ক ভিসা বন্ধ করেছে, কারণ হিসেবে দেখানো হয়েছে অসদাচরণ ও মানবপাচার। মধ্য এশিয়া ও পূর্ব ইউরোপের দেশ যেমন উজবেকিস্তান, কাজাখস্তান ও রোমানিয়া ভিসা প্রসেসিং বন্ধ করে দিয়েছে, আশঙ্কা থেকে যে বাংলাদেশিরা পশ্চিম ইউরোপে পাড়ি জমাতে পারেন।
জাপান, চীন, যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের মতো দেশগুলো আনুষ্ঠানিকভাবে ভিসা বন্ধ না করলেও চুপিচুপি কড়াকড়ি বাড়িয়েছে। শিক্ষার্থী, পর্যটক ও ব্যবসায়ীদের ভিসা প্রত্যাখ্যান এখন আরও বেশি সাধারণ। এক সাম্প্রতিক জালিয়াতির ঘটনার পর জাপান বাংলাদেশিদের সব ভিসা আবেদন থার্ড-পার্টি প্রসেসরে স্থানান্তর করেছে, যার ফলে বিলম্ব বেড়েছে।
জালিয়াতি, ভাবমূর্তি ও কূটনীতি
সরকারি কর্মকর্তারা ও বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নকল কাগজপত্র, রাজনৈতিক আশ্রয়ের অপব্যবহার এবং উচ্চ ওভারস্টে হারের মতো সমস্যাগুলো এই সংকটের মূল। রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে উগ্রবাদ সংক্রান্ত নেতিবাচক কভারেজ বাংলাদেশকে বিশ্বমঞ্চে আরও দুর্বল অবস্থানে ফেলেছে।
বিদেশগামী পর্যটন ৬০ শতাংশের বেশি কমেছে, করপোরেট ভ্রমণ কমেছে ৭০ শতাংশেরও বেশি। ট্রাভেল এজেন্সি, ট্যুর অপারেটর এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় প্রবল চাপের মুখে থাকলেও, অনেকেই মনে করেন সার্বিক শাসন ও নিরাপত্তা সংস্কার ছাড়া পরিস্থিতির উন্নয়ন হবে না।