১১:১৪ অপরাহ্ন, রবিবার, ২০ জুলাই ২০২৫

ওষুধের দাম বাড়ায় বয়স্ক রোগীর দুঃখগাঁথা

ওষুধের দাম বৃদ্ধির ভয়াবহ বাস্তবতা

গত কয়েক মাস ধরে বাংলাদেশের ওষুধের বাজারে লাগামছাড়া মূল্যবৃদ্ধি সাধারণ মানুষের জীবনে চরম সংকট তৈরি করেছে। অ্যান্টিবায়োটিক, ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ, এমনকি সাধারণ জ্বরের ওষুধও এখন অনেকের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে। ওষুধ কোম্পানি, সরবরাহ ব্যবস্থা, ডলারের দরের প্রভাব—সবকিছু মিলিয়ে পরিস্থিতি এমন দাঁড়িয়েছে যে, নিম্ন আয়ের মানুষের বাঁচার ন্যূনতম সুযোগও সংকুচিত হচ্ছে।

বৃদ্ধ রহিম উদ্দিনের জীবনের গল্প

মোহাম্মদপুরের একটি ছোট্ট টিনের ছাপড়ার ঘরে থাকেন ৭৫ বছরের রহিম উদ্দিন। এক সময় তিনি দিনমজুর ছিলেন, এখন শারীরিক সামর্থ্য নেই বললেই চলে। স্ত্রী মারা গেছেন কয়েক বছর আগে। তিন ছেলে আলাদা হয়ে গেছে, একবারও খোঁজ নেয় না। রহিম উদ্দিনের আয় বলতে এলাকায় দু-চারজনের দেওয়া দয়া-দাক্ষিণ্য। এতে দিনে এক বেলা কোনোভাবে পেটে কিছু যায়। কিন্তু বিপদ অন্যখানে—তিনি দীর্ঘদিন ধরে ডায়াবেটিস আর উচ্চ রক্তচাপে ভুগছেন।

রোজা রাখলে 'ইনসুলিন রেসিস্টেন্স' নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব?

ডাক্তার একবার লিখে দিয়েছিলেন নিয়মিত ইনসুলিন এবং রক্তচাপের ওষুধ। মাসে অন্তত দুই হাজার টাকার ওষুধ না কিনলে অবস্থার অবনতি হয়। অথচ এখন ইনসুলিনের দাম প্রতি ভায়াল ৪৫০ থেকে বেড়ে ৫৫০ টাকা ছুঁয়েছে। অন্যান্য ওষুধের দামও ২০–৩০ শতাংশ বেড়েছে। তাঁর মতো মানুষের পক্ষে এটা কল্পনার বাইরে।

বেদনার কণ্ঠে বয়স্ক রোগীর অসহায়তা

রহিম উদ্দিন কাঁপা গলায় বলেন,
“বাবা, আগে মাসে একবার ওষুধ কিনতাম কারও কাছে হাত পেতে, এখন তো তিন-চারশো টাকা বাড়তি লাগে। কার কাছে যাব? ওষুধ ছাড়া থাকলে শ্বাস নিতেই কষ্ট হয়। চিন্তা করলে মাথা ঝিমঝিম করে। ডাক্তার বলেন, ওষুধ ছাড়লে হার্ট অ্যাটাক হবে। আমি মরলে তো কেউ কাঁদবেও না, তবু বাঁচতে চাই। মরে গেলে তো আল্লাহর কাছে হিসাব দিতে হবে, এই ভয়েই চিকিৎসা চালাই।”

Blood Pressure Chart: বয়স অনুযায়ী রক্তচাপ কত থাকলে হার্ট অ্যাটাক ছুঁতে  পারবে না? জানুন - Blood Pressure Chart according to age see the average age  bp chart mdv - Aaj Tak Bangla

তার চোখে পানি চলে আসে। এক হাতে ছেঁড়া গামছা দিয়ে চোখ মুছেন। দেহে অস্থি-চর্ম বললেও কম বলা হবে। প্রতিদিনের খাবারের সঙ্গে লড়াই করে বাঁচা, তার ওপর ওষুধের এই দাম—এ যেন মৃত্যুর আগেই মৃত্যু।

নীরবতা ও সহানুভূতির অভাব

এলাকায় অনেকেই তাকে চেনে। কেউ কেউ দয়া করে দশ-বিশ টাকা দেন। কিন্তু সেসব টাকা দিয়ে এক কেজি চালও আসে না আজকাল। ওষুধের দাম নিয়ে কেউ ভাবে না। তিনি বলেন,

“ভাই, ভোটের আগে সবাই আসে বলে বয়স্ক ভাতা দেবে। পাইনি। ওষুধের দাম বাড়ছে, কিন্তু আমার তো আয় বাড়ে না। সরকার কি জানে আমরা মরি না বাঁচি?”

এ কথা শুনে পাশের এক বৃদ্ধা বলেন,
“ওষুধ তো ধনীর জিনিস। গরিবরা রোগ সারবে কেমন করে? মরাই ভালো।”

খুদে বার্তায় বাড়ছে ওষুধের দাম

স্বাস্থ্যনীতিতে দরিদ্রদের স্বার্থ কোথায়?

বাংলাদেশের ওষুধ বাজারে কোনো সুনির্দিষ্ট নিয়ন্ত্রণ নেই বললেই চলে। মানসম্মত ওষুধ উৎপাদকরাও দাম বাড়াচ্ছেন নানা অজুহাতে—ডলার সংকট, কাঁচামাল আমদানি খরচ, পরিবহন। কিন্তু এর খেসারত দিচ্ছেন রহিম উদ্দিনের মতো শত-সহস্র বৃদ্ধ, যাঁরা বয়স্ক ভাতা পান না, পরিবারের কাছে পরিত্যক্ত, সামান্য আয় নেই।

স্বাস্থ্য অর্থনীতি বিশেষজ্ঞরা বলছেন,
“এই বৃদ্ধদের জন্য ওষুধে ভর্তুকি কিংবা বিনামূল্যে সরবরাহ ছাড়া উপায় নেই। নইলে দেশের জনসংখ্যার এক বড় অংশ চিকিৎসার বাইরে থেকে মারা যাবে।”

বদলিকৃত কর্মস্থলে যোগদান না করা কর্মকর্তাদের তথ্য চায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর

মানবিক দায়িত্বের আহ্বান

রহিম উদ্দিনের কণ্ঠে শেষ আবেদন:
“আমি ভিক্ষা করে ওষুধ কিনি, লজ্জা লাগে। সরকার যদি আমাদের মতো বুড়োদের বিনা পয়সায় ওষুধ দিত, আমরা বাঁচতে পারতাম। বাঁচার ইচ্ছা কি পাপ?”

এই প্রশ্ন আমাদের সবার কাছে। সমাজ, সরকার, রাজনৈতিক দল, এনজিও—সবাই কি কেবল চোখ বুজে থাকবে, না কি মানবিকতার ডাক শুনবে?

এই বৃদ্ধের মতো হাজারো মানুষ প্রতিদিন ধুঁকে ধুঁকে মারা যাচ্ছেন শুধুই ওষুধের দাম বাড়ায়। এখনই ব্যবস্থা না নিলে ইতিহাসের কাছে আমাদের জবাবদিহি করতেই হবে।

ওষুধের দাম বাড়ায় বয়স্ক রোগীর দুঃখগাঁথা

০৯:৩৬:১৪ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৪ জুলাই ২০২৫

ওষুধের দাম বৃদ্ধির ভয়াবহ বাস্তবতা

গত কয়েক মাস ধরে বাংলাদেশের ওষুধের বাজারে লাগামছাড়া মূল্যবৃদ্ধি সাধারণ মানুষের জীবনে চরম সংকট তৈরি করেছে। অ্যান্টিবায়োটিক, ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ, এমনকি সাধারণ জ্বরের ওষুধও এখন অনেকের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে। ওষুধ কোম্পানি, সরবরাহ ব্যবস্থা, ডলারের দরের প্রভাব—সবকিছু মিলিয়ে পরিস্থিতি এমন দাঁড়িয়েছে যে, নিম্ন আয়ের মানুষের বাঁচার ন্যূনতম সুযোগও সংকুচিত হচ্ছে।

বৃদ্ধ রহিম উদ্দিনের জীবনের গল্প

মোহাম্মদপুরের একটি ছোট্ট টিনের ছাপড়ার ঘরে থাকেন ৭৫ বছরের রহিম উদ্দিন। এক সময় তিনি দিনমজুর ছিলেন, এখন শারীরিক সামর্থ্য নেই বললেই চলে। স্ত্রী মারা গেছেন কয়েক বছর আগে। তিন ছেলে আলাদা হয়ে গেছে, একবারও খোঁজ নেয় না। রহিম উদ্দিনের আয় বলতে এলাকায় দু-চারজনের দেওয়া দয়া-দাক্ষিণ্য। এতে দিনে এক বেলা কোনোভাবে পেটে কিছু যায়। কিন্তু বিপদ অন্যখানে—তিনি দীর্ঘদিন ধরে ডায়াবেটিস আর উচ্চ রক্তচাপে ভুগছেন।

রোজা রাখলে 'ইনসুলিন রেসিস্টেন্স' নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব?

ডাক্তার একবার লিখে দিয়েছিলেন নিয়মিত ইনসুলিন এবং রক্তচাপের ওষুধ। মাসে অন্তত দুই হাজার টাকার ওষুধ না কিনলে অবস্থার অবনতি হয়। অথচ এখন ইনসুলিনের দাম প্রতি ভায়াল ৪৫০ থেকে বেড়ে ৫৫০ টাকা ছুঁয়েছে। অন্যান্য ওষুধের দামও ২০–৩০ শতাংশ বেড়েছে। তাঁর মতো মানুষের পক্ষে এটা কল্পনার বাইরে।

বেদনার কণ্ঠে বয়স্ক রোগীর অসহায়তা

রহিম উদ্দিন কাঁপা গলায় বলেন,
“বাবা, আগে মাসে একবার ওষুধ কিনতাম কারও কাছে হাত পেতে, এখন তো তিন-চারশো টাকা বাড়তি লাগে। কার কাছে যাব? ওষুধ ছাড়া থাকলে শ্বাস নিতেই কষ্ট হয়। চিন্তা করলে মাথা ঝিমঝিম করে। ডাক্তার বলেন, ওষুধ ছাড়লে হার্ট অ্যাটাক হবে। আমি মরলে তো কেউ কাঁদবেও না, তবু বাঁচতে চাই। মরে গেলে তো আল্লাহর কাছে হিসাব দিতে হবে, এই ভয়েই চিকিৎসা চালাই।”

Blood Pressure Chart: বয়স অনুযায়ী রক্তচাপ কত থাকলে হার্ট অ্যাটাক ছুঁতে  পারবে না? জানুন - Blood Pressure Chart according to age see the average age  bp chart mdv - Aaj Tak Bangla

তার চোখে পানি চলে আসে। এক হাতে ছেঁড়া গামছা দিয়ে চোখ মুছেন। দেহে অস্থি-চর্ম বললেও কম বলা হবে। প্রতিদিনের খাবারের সঙ্গে লড়াই করে বাঁচা, তার ওপর ওষুধের এই দাম—এ যেন মৃত্যুর আগেই মৃত্যু।

নীরবতা ও সহানুভূতির অভাব

এলাকায় অনেকেই তাকে চেনে। কেউ কেউ দয়া করে দশ-বিশ টাকা দেন। কিন্তু সেসব টাকা দিয়ে এক কেজি চালও আসে না আজকাল। ওষুধের দাম নিয়ে কেউ ভাবে না। তিনি বলেন,

“ভাই, ভোটের আগে সবাই আসে বলে বয়স্ক ভাতা দেবে। পাইনি। ওষুধের দাম বাড়ছে, কিন্তু আমার তো আয় বাড়ে না। সরকার কি জানে আমরা মরি না বাঁচি?”

এ কথা শুনে পাশের এক বৃদ্ধা বলেন,
“ওষুধ তো ধনীর জিনিস। গরিবরা রোগ সারবে কেমন করে? মরাই ভালো।”

খুদে বার্তায় বাড়ছে ওষুধের দাম

স্বাস্থ্যনীতিতে দরিদ্রদের স্বার্থ কোথায়?

বাংলাদেশের ওষুধ বাজারে কোনো সুনির্দিষ্ট নিয়ন্ত্রণ নেই বললেই চলে। মানসম্মত ওষুধ উৎপাদকরাও দাম বাড়াচ্ছেন নানা অজুহাতে—ডলার সংকট, কাঁচামাল আমদানি খরচ, পরিবহন। কিন্তু এর খেসারত দিচ্ছেন রহিম উদ্দিনের মতো শত-সহস্র বৃদ্ধ, যাঁরা বয়স্ক ভাতা পান না, পরিবারের কাছে পরিত্যক্ত, সামান্য আয় নেই।

স্বাস্থ্য অর্থনীতি বিশেষজ্ঞরা বলছেন,
“এই বৃদ্ধদের জন্য ওষুধে ভর্তুকি কিংবা বিনামূল্যে সরবরাহ ছাড়া উপায় নেই। নইলে দেশের জনসংখ্যার এক বড় অংশ চিকিৎসার বাইরে থেকে মারা যাবে।”

বদলিকৃত কর্মস্থলে যোগদান না করা কর্মকর্তাদের তথ্য চায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর

মানবিক দায়িত্বের আহ্বান

রহিম উদ্দিনের কণ্ঠে শেষ আবেদন:
“আমি ভিক্ষা করে ওষুধ কিনি, লজ্জা লাগে। সরকার যদি আমাদের মতো বুড়োদের বিনা পয়সায় ওষুধ দিত, আমরা বাঁচতে পারতাম। বাঁচার ইচ্ছা কি পাপ?”

এই প্রশ্ন আমাদের সবার কাছে। সমাজ, সরকার, রাজনৈতিক দল, এনজিও—সবাই কি কেবল চোখ বুজে থাকবে, না কি মানবিকতার ডাক শুনবে?

এই বৃদ্ধের মতো হাজারো মানুষ প্রতিদিন ধুঁকে ধুঁকে মারা যাচ্ছেন শুধুই ওষুধের দাম বাড়ায়। এখনই ব্যবস্থা না নিলে ইতিহাসের কাছে আমাদের জবাবদিহি করতেই হবে।