মাত্র ৫৭ মিনিটে ২৪ বছর বয়সি পোলিশ তারকা ইগা সুইয়াটেক সেন্টার কোর্টে আমেরিকান আমান্ডা আনিসিমোভাকে ৬‑০, ৬‑০ গেমে হারিয়ে প্রথম উইম্বলডন ও ক্যারিয়ারের ছয় নম্বর গ্র্যান্ড স্ল্যাম ট্রফি জয় করেন; ফাইনালের এই ‘ডাবল বেইগেল’ স্কোরলাইন নারী একটি ফাইনালে শেষবার দেখা গিয়েছিল ১৯১১ সালে।
ইতিহাসে নাম লেখানো
এই জয়ে সুইয়াটেক তিনটি ভিন্ন সারফেসেই (ক্লে, হার্ড ও ঘাস) মেজর জয়ী সর্বকনিষ্ঠ খেলোয়াড় হলেন; তার আগের পাঁচ শিরোপার চারটি ফ্রেঞ্চ ওপেনে এবং একটি ইউএস ওপেনে।
ঘাসে দুর্বল? পরিসংখ্যান বলছে উল্টোটা
উইম্বলডন‑সহ ক্যারিয়ারের ৩৩টি ঘাস‑কোর্ট ম্যাচে তার জয়‑হার ২৫‑৮, অর্থাৎ ৭৬ শতাংশ; হার্ডকোর্টে এই হার ৭৯ শতাংশ। মোট শিরোপা ২৩টি—১২টি হার্ড, ১০টি ক্লে এবং এবার প্রথম ঘাসে।
ডোপিং বিতর্ক পাড়ি দিয়ে শিখরে ফেরা
২০২৪‑এর আগস্টে ট্রিমেটাজিডিনে পজিটিভ ধরা পড়ায় এক মাসের নিষেধাজ্ঞা ভোগ করেন সুইয়াটেক; পরে প্রমাণিত হয়, এটি ছিল মেলাটোনিন ট্যাবলেটের দূষণ। মানসিক ধকল কাটিয়ে কোর্টে ফিরলেও সে সময়ে শীর্ষস্থান হাতছাড়া হয় আরিনা সবালেঙ্কার কাছে।
কৌশলগত রূপান্তর
নতুন কোচ উইম ফিসেটের নির্দেশনায় সার্ভ ও ফ্ল্যাট ফোরহ্যান্ডে পরিবর্তন আনেন সুইয়াটেক। বেশি স্পিনের বদলে ফ্ল্যাট শটে দ্রুত গতিতে আক্রমণ করে তিনি ঘাসে ‘র্যালি’ গড়ার বদলে পয়েন্ট শেষ করার কৌশল বেছে নেন।
ফাইনালের পথে ঘুরে দাঁড়ানো
মাদ্রিদ ওপেন সেমিফাইনালে কোকো গফের কাছে ১‑৬, ১‑৬ হারের পর ছন্দ হারালেও বাড হোমবার্গে রানার্স‑আপ হওয়া থেকেই শুরু হয় প্রত্যাবর্তন। পরের টুর্নামেন্টগুলোতে সেমিফাইনাল ও কোয়ার্টার ফাইনাল নিশ্চিত করেন, তবে ফাইনাল জয়ের জন্য অপেক্ষা ছিল উইম্বলডন পর্যন্ত।
চূড়ান্ত দিনের খেলা
প্রথম মিনিটেই আনিসিমোভা সার্ভ হারানোর পর আর ঘুরে দাঁড়াতে পারেননি। সুইয়াটেকের উঁচু বাউন্স করা টপ‑স্পিন ফোরহ্যান্ড এবং ক্রস‑কোর্ট ব্যাকহ্যান্ডে আমেরিকান প্রতিপক্ষকে বারবার সাইডলাইনের বাইরে ঠেলে দেওয়া হয়েছে।
স্বপ্নের যাত্রায় ছেদ আনিসিমোভার
২০১৯ সালে ৫২ বছর বয়সে বাবা ও সাবেক কোচ কনস্টান্টিন আনিসিমোভা হার্ট অ্যাটাকে মারা যাওয়ার পর দীর্ঘ বিরতি থেকে ফিরে এ বছরই প্রথম গ্র্যান্ড স্ল্যাম ফাইনালে উঠেছিলেন আমান্ডা। উইম্বলডনের মঞ্চে তিনি স্বপ্নটা পূরণ করতে না পারলেও পুনরায় শীর্ষ পর্যায়ে ফেরার সংকটময় পথ পেরিয়ে এসেছেন।
উভয়ের প্রতিক্রিয়া
ট্রফি হাতে সুইয়াটেক বলেন, ‘ঘাসে শিরোপা জয় আমার কল্পনার বাইরে ছিল।’ আনিসিমোভা কাঁদতে কাঁদতে বলেন, ‘এভাবে ০‑৬, ০‑৬ হারা কঠিন, তবে এখান থেকেই আবার ঘুরে দাঁড়াব।’
টেনিসের নতুন মানদণ্ড
সুইয়াটেক টানা প্রথম ছয় গ্র্যান্ড স্ল্যাম ফাইনাল জয়ে সেরেনা উইলিয়ামসের পর দ্বিতীয় খেলোয়াড়; ১০০ গ্র্যান্ড স্ল্যাম ম্যাচ জয়েও তিনি সেরেনার (১১৬ ম্যাচ) রেকর্ড ছুঁয়েছেন। বিশ্লেষকদের মতে, বর্তমান যুগে সুইয়াটেক ও কোকো গফই নারীদের টেনিসে সেরা দুই অ্যাথলেট।
যেখানে চোখ ভবিষ্যতের দিকে
নাম্বার‑ওয়ান র্যাঙ্কিং পুনরুদ্ধার হয়তো সময়সাপেক্ষ, তবে ঐতিহাসিক এই ট্রফি সুইয়াটেককে টেনিসের শীর্ষ শিখরে ফিরিয়ে এনেছে—ঘাস‑কোর্টে দুর্বলতার তত্ত্বও আর টিকবে না। সামনে ইউএস ওপেন ও ডব্লিউটিএ ফাইনাল, আর তিনি যাচ্ছেন আত্মবিশ্বাসের ঝড় নিয়ে।