০৮:০৩ অপরাহ্ন, রবিবার, ২০ জুলাই ২০২৫

৬০ থেকে ৭০ শতাংশ মানুষ ইলিশ খেতে পারছে না

পরিষ্কার সম্পাদিত ও চূড়ান্ত সংস্করণ:

ইলিশের দাম আকাশছোঁয়া: কেন এই বছর এত বেশি, কে খেতে পারছে না

বাংলাদেশের প্রিয় মাছ ইলিশ নিয়ে এবার বেশ আলোচনা চলছে। এই বছর ইলিশের দাম গত কয়েক বছরের তুলনায় অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে গেছে। ফলে বড় একটি অংশের সাধারণ মানুষ এই মাছের স্বাদ নিতে পারছে না। বাজার পর্যবেক্ষণ, জেলেদের বক্তব্য, মাছ ব্যবসায়ীদের তথ্য এবং অর্থনীতিবিদদের বিশ্লেষণ থেকে এই দাম বাড়ার কারণগুলো স্পষ্ট হচ্ছে।

সরবরাহে ঘাটতি ও নদীতে কম ধরা পড়া

প্রথম এবং প্রধান কারণ—ইলিশের সরবরাহে ঘাটতি। পদ্মা, মেঘনা, তেতুলিয়া, আড়িয়াল খাঁ, পায়রা, আন্দারমানিক—যেসব নদী ঐতিহাসিকভাবে ইলিশে সমৃদ্ধ ছিল, সেসব নদীতে এবার তুলনামূলক কম মাছ ধরা পড়ছে। এর পেছনে বেশ কিছু কারণ রয়েছে:

আজ মধ্যরাত থেকে ২২ দিন ইলিশসহ সব ধরনের মাছ ধরা নিষেধ

  • নদীর নাব্যতা কমে যাওয়া
  • ড্রেজিং না হওয়া
  • দূষণ
  • অতিমাত্রায় জাল ফেলা ও জাটকা নিধন

সরবরাহ কম মানে বাজারে ইলিশ কম আসছে। ফলে পাইকারি এবং খুচরা দামে স্বাভাবিকভাবে চড়া প্রভাব পড়েছে।

মৌসুমি চাহিদার চাপ

বাংলাদেশে ইলিশের প্রধান মৌসুম বর্ষাকাল। ঈদ, পূজা, শারদীয় উৎসব এবং বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানে ইলিশের চাহিদা তুঙ্গে ওঠে। এই মৌসুমি চাহিদা সরবরাহের ঘাটতির সঙ্গে মিলে গিয়ে দামকে আরও বাড়িয়ে তুলেছে।

ব্যবসায়ীদের অনেকে সুযোগ নিয়ে বেশি লাভের আশায় দাম বাড়িয়ে ধরছেন। সরকারিভাবে দাম নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব না হওয়ায় খোলা বাজারের নীতি চলে, ফলে চাহিদা বাড়লেই দাম ঊর্ধ্বমুখী হয়।

বেনাপোল দিয়ে ভারতে রপ্তানির অপেক্ষায় ৮০০ কেজি ইলিশ | প্রথম আলো

জ্বালানি ও পরিবহন খরচ বৃদ্ধি

বাংলাদেশে গত এক বছরে ডিজেল, পেট্রোলসহ সব ধরনের জ্বালানি তেলের দাম বেড়েছে। মাছ ধরার ট্রলারের খরচ বেড়েছে। মাছ পরিবহনও ব্যয়বহুল হয়েছে। নদীর দূরবর্তী এলাকাগুলো থেকে মাছ আনা এবং বরফ সংরক্ষণ—সবখানেই খরচ বেড়েছে। এই খরচ ব্যবসায়ীরা ভোক্তাদের ওপর চাপিয়ে দিচ্ছেন।

রপ্তানি ও সীমান্ত বাজারে চাহিদা

বাংলাদেশের ইলিশ ভারতসহ বিভিন্ন দেশে রপ্তানি হয়, এবং অনেক সীমান্ত বাজারে অবৈধ বা আধা-আইনি রপ্তানি হয়। রপ্তানিমুখী বাজারে দামের পার্থক্য বেশি থাকায় দেশের বাজারে সরবরাহ আরও কমে যায়। এতে দেশের অভ্যন্তরীণ বাজারের দামও বেড়ে যায়।

পরিচিতি-ও-ইতিহাস - পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগ-গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার

জলবায়ু পরিবর্তন ও আবহাওয়ার প্রভাব

জলবায়ু পরিবর্তন নদীর চরিত্র বদলে দিচ্ছে। অকাল বৃষ্টি, দীর্ঘ খরা, নদীর নাব্য হ্রাস—সব মিলিয়ে ইলিশের প্রজনন, অভিবাসন ও ধরা পড়া প্রক্রিয়ায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে, ইলিশের প্রজননক্ষেত্রগুলোও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে।

কত শতাংশ মানুষ ইলিশ কিনতে পারছে না

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (BBS) বা মৎস্য অধিদফতরের নির্দিষ্ট তথ্য নেই যে ঠিক কত শতাংশ মানুষ ইলিশ খেতে পারছে না। তবে বিভিন্ন বাজার সমীক্ষা ও অর্থনীতিবিদদের মতে, বাংলাদেশের ৬৫–৭০ শতাংশ নিম্ন আয়ের পরিবার বা নিম্ন-মধ্য আয়ের পরিবার এই দামে ইলিশ কিনতে পারছে না।

যেখানে এক কেজি ওজনের ইলিশের দাম ১৪০০–২৮০০ টাকা পর্যন্ত হয়েছে, সেখানে দৈনিক আয় ৫০০–৬০০ টাকার কম এমন পরিবারের পক্ষে এই মাছ কেনা প্রায় অসম্ভব। বিশেষজ্ঞদের মতে, “ইলিশ এখন মধ্যবিত্তের বড় অংশের কাছেও উৎসবের খাবার হয়ে গেছে, নিয়মিত মাছ নয়।”

ভারতে ইলিশ রফতানি বন্ধে আইনি নোটিশ

সমাধান কী?

১. নদীর নাব্যতা বৃদ্ধি ও ড্রেজিং পরিকল্পনা
২. দূষণ নিয়ন্ত্রণ
৩. জাটকা নিধন কঠোরভাবে বন্ধ
৪. সুষ্ঠু মাছ সংরক্ষণ ও বণ্টন ব্যবস্থা
৫. ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট ভেঙে দাম নিয়ন্ত্রণে উদ্যোগ

এছাড়া, গবেষকরা জোর দিচ্ছেন সমুদ্র ও নদীর ইকোসিস্টেম রক্ষার ওপর। কারণ ইলিশ শুধু অর্থনৈতিক সম্পদ নয়, বাংলাদেশের খাদ্য সংস্কৃতিরও প্রতীক।

দেশের বড় অংশ মানুষ বঞ্চিত প্রিয় মাছ থেকে

ইলিশের এই বছরের দাম বৃদ্ধির মূল কারণগুলো গভীর ও বহুমাত্রিক। সরবরাহ কমে যাওয়া, চাহিদা বৃদ্ধি, পরিবহন খরচ, রপ্তানি চাহিদা এবং পরিবেশগত পরিবর্তন সব একসঙ্গে মিলে এ দাম বাড়িয়েছে। এর ফলে বাংলাদেশের বড় অংশের মানুষ এই প্রিয় মাছ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এই প্রবণতা বন্ধ করতে হলে নীতিনির্ধারকদের সমন্বিত পরিকল্পনা ও দ্রুত বাস্তবায়ন দরকার।

৬০ থেকে ৭০ শতাংশ মানুষ ইলিশ খেতে পারছে না

১০:০০:২৫ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৭ জুলাই ২০২৫

পরিষ্কার সম্পাদিত ও চূড়ান্ত সংস্করণ:

ইলিশের দাম আকাশছোঁয়া: কেন এই বছর এত বেশি, কে খেতে পারছে না

বাংলাদেশের প্রিয় মাছ ইলিশ নিয়ে এবার বেশ আলোচনা চলছে। এই বছর ইলিশের দাম গত কয়েক বছরের তুলনায় অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে গেছে। ফলে বড় একটি অংশের সাধারণ মানুষ এই মাছের স্বাদ নিতে পারছে না। বাজার পর্যবেক্ষণ, জেলেদের বক্তব্য, মাছ ব্যবসায়ীদের তথ্য এবং অর্থনীতিবিদদের বিশ্লেষণ থেকে এই দাম বাড়ার কারণগুলো স্পষ্ট হচ্ছে।

সরবরাহে ঘাটতি ও নদীতে কম ধরা পড়া

প্রথম এবং প্রধান কারণ—ইলিশের সরবরাহে ঘাটতি। পদ্মা, মেঘনা, তেতুলিয়া, আড়িয়াল খাঁ, পায়রা, আন্দারমানিক—যেসব নদী ঐতিহাসিকভাবে ইলিশে সমৃদ্ধ ছিল, সেসব নদীতে এবার তুলনামূলক কম মাছ ধরা পড়ছে। এর পেছনে বেশ কিছু কারণ রয়েছে:

আজ মধ্যরাত থেকে ২২ দিন ইলিশসহ সব ধরনের মাছ ধরা নিষেধ

  • নদীর নাব্যতা কমে যাওয়া
  • ড্রেজিং না হওয়া
  • দূষণ
  • অতিমাত্রায় জাল ফেলা ও জাটকা নিধন

সরবরাহ কম মানে বাজারে ইলিশ কম আসছে। ফলে পাইকারি এবং খুচরা দামে স্বাভাবিকভাবে চড়া প্রভাব পড়েছে।

মৌসুমি চাহিদার চাপ

বাংলাদেশে ইলিশের প্রধান মৌসুম বর্ষাকাল। ঈদ, পূজা, শারদীয় উৎসব এবং বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানে ইলিশের চাহিদা তুঙ্গে ওঠে। এই মৌসুমি চাহিদা সরবরাহের ঘাটতির সঙ্গে মিলে গিয়ে দামকে আরও বাড়িয়ে তুলেছে।

ব্যবসায়ীদের অনেকে সুযোগ নিয়ে বেশি লাভের আশায় দাম বাড়িয়ে ধরছেন। সরকারিভাবে দাম নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব না হওয়ায় খোলা বাজারের নীতি চলে, ফলে চাহিদা বাড়লেই দাম ঊর্ধ্বমুখী হয়।

বেনাপোল দিয়ে ভারতে রপ্তানির অপেক্ষায় ৮০০ কেজি ইলিশ | প্রথম আলো

জ্বালানি ও পরিবহন খরচ বৃদ্ধি

বাংলাদেশে গত এক বছরে ডিজেল, পেট্রোলসহ সব ধরনের জ্বালানি তেলের দাম বেড়েছে। মাছ ধরার ট্রলারের খরচ বেড়েছে। মাছ পরিবহনও ব্যয়বহুল হয়েছে। নদীর দূরবর্তী এলাকাগুলো থেকে মাছ আনা এবং বরফ সংরক্ষণ—সবখানেই খরচ বেড়েছে। এই খরচ ব্যবসায়ীরা ভোক্তাদের ওপর চাপিয়ে দিচ্ছেন।

রপ্তানি ও সীমান্ত বাজারে চাহিদা

বাংলাদেশের ইলিশ ভারতসহ বিভিন্ন দেশে রপ্তানি হয়, এবং অনেক সীমান্ত বাজারে অবৈধ বা আধা-আইনি রপ্তানি হয়। রপ্তানিমুখী বাজারে দামের পার্থক্য বেশি থাকায় দেশের বাজারে সরবরাহ আরও কমে যায়। এতে দেশের অভ্যন্তরীণ বাজারের দামও বেড়ে যায়।

পরিচিতি-ও-ইতিহাস - পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগ-গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার

জলবায়ু পরিবর্তন ও আবহাওয়ার প্রভাব

জলবায়ু পরিবর্তন নদীর চরিত্র বদলে দিচ্ছে। অকাল বৃষ্টি, দীর্ঘ খরা, নদীর নাব্য হ্রাস—সব মিলিয়ে ইলিশের প্রজনন, অভিবাসন ও ধরা পড়া প্রক্রিয়ায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে, ইলিশের প্রজননক্ষেত্রগুলোও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে।

কত শতাংশ মানুষ ইলিশ কিনতে পারছে না

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (BBS) বা মৎস্য অধিদফতরের নির্দিষ্ট তথ্য নেই যে ঠিক কত শতাংশ মানুষ ইলিশ খেতে পারছে না। তবে বিভিন্ন বাজার সমীক্ষা ও অর্থনীতিবিদদের মতে, বাংলাদেশের ৬৫–৭০ শতাংশ নিম্ন আয়ের পরিবার বা নিম্ন-মধ্য আয়ের পরিবার এই দামে ইলিশ কিনতে পারছে না।

যেখানে এক কেজি ওজনের ইলিশের দাম ১৪০০–২৮০০ টাকা পর্যন্ত হয়েছে, সেখানে দৈনিক আয় ৫০০–৬০০ টাকার কম এমন পরিবারের পক্ষে এই মাছ কেনা প্রায় অসম্ভব। বিশেষজ্ঞদের মতে, “ইলিশ এখন মধ্যবিত্তের বড় অংশের কাছেও উৎসবের খাবার হয়ে গেছে, নিয়মিত মাছ নয়।”

ভারতে ইলিশ রফতানি বন্ধে আইনি নোটিশ

সমাধান কী?

১. নদীর নাব্যতা বৃদ্ধি ও ড্রেজিং পরিকল্পনা
২. দূষণ নিয়ন্ত্রণ
৩. জাটকা নিধন কঠোরভাবে বন্ধ
৪. সুষ্ঠু মাছ সংরক্ষণ ও বণ্টন ব্যবস্থা
৫. ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট ভেঙে দাম নিয়ন্ত্রণে উদ্যোগ

এছাড়া, গবেষকরা জোর দিচ্ছেন সমুদ্র ও নদীর ইকোসিস্টেম রক্ষার ওপর। কারণ ইলিশ শুধু অর্থনৈতিক সম্পদ নয়, বাংলাদেশের খাদ্য সংস্কৃতিরও প্রতীক।

দেশের বড় অংশ মানুষ বঞ্চিত প্রিয় মাছ থেকে

ইলিশের এই বছরের দাম বৃদ্ধির মূল কারণগুলো গভীর ও বহুমাত্রিক। সরবরাহ কমে যাওয়া, চাহিদা বৃদ্ধি, পরিবহন খরচ, রপ্তানি চাহিদা এবং পরিবেশগত পরিবর্তন সব একসঙ্গে মিলে এ দাম বাড়িয়েছে। এর ফলে বাংলাদেশের বড় অংশের মানুষ এই প্রিয় মাছ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এই প্রবণতা বন্ধ করতে হলে নীতিনির্ধারকদের সমন্বিত পরিকল্পনা ও দ্রুত বাস্তবায়ন দরকার।