০৯:০৭ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২০ জুলাই ২০২৫

মাস্টার্স পাস মেয়েটির স্বপ্ন এখন অলস দুপুরে থমকে

গলির একপাশে শিউলি গাছ, অন্যপাশে পেঁয়াজকলির খালি ডাল। রোদ কেমন নিঃশব্দ হয়ে বসে আছে সেই বাড়িটায়—যেখানে আজকাল খুব কম শব্দ হয়। শুধু মেয়ে রুমার ঘর থেকে মাঝেমধ্যে শোনা যায় কি-বোর্ডের শব্দ, কিন্তু সেটা চাকরির কোনো ইমেইলের উত্তর নয়, বরং একটা অনলাইন ফর্ম আবারও পূরণ করার চেষ্টা। বয়স ২৮। মাস্টার্স শেষ করেছেন গত বছর। কিন্তু জীবন যেন ততদিনে তার জন্য ছুটে যাওয়ার গতি থামিয়ে দিয়েছে।

স্বপ্নের শুরুবাস্তবতার ধাক্কা

রুমা ছোটবেলা থেকেই ভালো ছাত্রী ছিল। রাজশাহীর সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সমাজবিজ্ঞানে মাস্টার্স পাস করে ঢাকায় ফিরে আসেন। ইচ্ছে ছিল, একটি গবেষণা সংস্থা বা এনজিওতে কাজ করবেন, সমাজের পাশে দাঁড়াবেন। কিন্তু বাস্তবতা তাকে দাঁড় করিয়েছে এক শূন্য কক্ষে, যেখানে কোনো নিয়োগপত্র আসে না।

Accountant: Everything you need to know - Financial Foothold

পরিবারে আয়ের আলো নিভে গেছে

রুমার বাবা আব্দুল কাইয়ুম, বয়স এখন ৭০। পেশায় ছিলেন প্রাইভেট অফিসের হিসাবরক্ষক। বয়স ও কোম্পানির আর্থিক সংকটের অজুহাতে পাঁচ মাস আগে চাকরি থেকে তাকে ছাঁটাই করা হয়। মা শারমিন আক্তার ৫০ বছর বয়সে হারিয়েছেন তার একমাত্র আয়ের উৎস—একটি আন্তর্জাতিক এনজিওতে কর্মরত ছিলেন তিনি। সেই এনজিওটি যুক্তরাষ্ট্রের ইউএসএইড (USAID)-এর অর্থায়নে চলত। কিন্তু গত ছয় মাসে ইউএসএইডের তহবিল না থাকায় কর্মী ছাঁটাই হয়েছে, যার তালিকায় শারমিনও ছিলেন।

সঞ্চয়পত্রেও ভরসা নেই

আব্দুল কাইয়ুম ছোট থেকে কিছু কিছু করে সঞ্চয়পত্র কিনেছিলেন। ভেবেছিলেন, অবসরের পর এই সঞ্চয়ে পরিবার চলবে। কিন্তু সম্প্রতি সরকারের সুদের হার হ্রাস পাওয়ায় সেই আয়ের উপরও চাপ পড়েছে। আগে যেখান থেকে মাসে আট হাজার টাকা আসত, এখন তা কমে দাঁড়িয়েছে সাড়ে ছয় হাজারে।

Laptop Overheating: একটুতেই ল্যাপটপ গরম হয়ে গিয়েছে? সার্ভিস সেন্টার না  গিয়ে সমাধানের উপায় জানুন |Is Your Laptop Overheating? How Can You Fix It?

চাকরির জন্য প্রতিদিনের সংগ্রাম

রুমা প্রতিদিন সকালেই ঘুম থেকে ওঠে। ল্যাপটপ চালু করে, অনলাইন জব পোর্টাল খুলে বসে। সে বলে, “প্রতিদিন অন্তত দশটা আবেদন করি। কখনো কখনো কনফার্মেশন মেইলও আসে না। যেটা আসে, সেখানে আবার অভিজ্ঞতা চায় ৩ থেকে ৫ বছর। আমি নতুন, তাই জায়গা হয় না।”

তার মধ্যে বেছে নেওয়া যায় না সরকারি চাকরির প্রস্তুতিও—কারণ কোচিং করার টাকা নেই, আর মানসিক চাপ এতটাই যে দীর্ঘ সময় ধরে পড়াও সম্ভব হয় না।

প্রতিবেশীদের দৃষ্টিআত্মীয়ের চাপ

রুমার মা বলেন, “পাশের বাসার আন্টি বলেন, এত পড়াশোনা করে কী লাভ! বিয়েই তো করতে হবে।” আত্মীয়রা বলেন, মেয়ের বয়স তো হয়ে যাচ্ছে, একটা ভালো পাত্র খোঁজো। কিন্তু এই পরিস্থিতিতে পরিবার কিভাবে বিয়ের দায়িত্ব নেবে?

রুমা বলে, “আমি চাকরি করতে চাই, সংসারের হাল ধরতে চাই। কিন্তু কেউ চাকরি দিতে চায় না। শুধু বলে, অভিজ্ঞতা নেই।”

Exploring Different Types of Note Taking for Online Schooling

বন্ধ ঘরে স্বপ্নের আলোকছায়া

রুমা এখন মাঝে মাঝে ছোট ছোট ফ্রিল্যান্সিংয়ের কাজ খোঁজে। কখনো একটি অনলাইন স্কুলে স্বল্প পারিশ্রমিকে নোট টাইপ করে দেয়। কিন্তু সেটাতে ঘর চলে না। অনেক সময় দুপুরে একবেলা রান্না হয়, রাতে সেই খাবার গরম করে খায় পরিবার।

মধ্যবিত্ত শ্রেণির এই পরিবার কারো কাছে হাত পাততেও পারে না, আবার স্বাচ্ছন্দ্যেও থাকতে পারে না। তারা কোথাও আটকে গেছে—স্বপ্ন আর বাস্তবতার মাঝখানে।

ভবিষ্যতের অপেক্ষা

রুমা এখনো হাল ছাড়েনি। “একদিন নিশ্চয়ই একটা সুযোগ আসবে”—এই আশায় সে প্রতিদিন নতুন আবেদন করে, নতুন করে জীবন গুছিয়ে নেওয়ার স্বপ্ন দেখে। তার গল্প হয়তো লাখো শিক্ষিত তরুণ-তরুণীর গল্পের প্রতিচ্ছবি। যেখানে ডিগ্রি আছে, দক্ষতাও আছে, কিন্তু সুযোগ নেই।

একটা প্রজন্ম থেমে আছে—মাস্টার্স পাস করেও অলস দুপুরে ভাত ঠান্ডা হওয়ার অপেক্ষায়, চাকরির খবরে মুঠোফোনের পর্দায় তাকিয়ে থাকা মানুষ হয়ে।

মাস্টার্স পাস মেয়েটির স্বপ্ন এখন অলস দুপুরে থমকে

১০:৩০:৪০ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৮ জুলাই ২০২৫

গলির একপাশে শিউলি গাছ, অন্যপাশে পেঁয়াজকলির খালি ডাল। রোদ কেমন নিঃশব্দ হয়ে বসে আছে সেই বাড়িটায়—যেখানে আজকাল খুব কম শব্দ হয়। শুধু মেয়ে রুমার ঘর থেকে মাঝেমধ্যে শোনা যায় কি-বোর্ডের শব্দ, কিন্তু সেটা চাকরির কোনো ইমেইলের উত্তর নয়, বরং একটা অনলাইন ফর্ম আবারও পূরণ করার চেষ্টা। বয়স ২৮। মাস্টার্স শেষ করেছেন গত বছর। কিন্তু জীবন যেন ততদিনে তার জন্য ছুটে যাওয়ার গতি থামিয়ে দিয়েছে।

স্বপ্নের শুরুবাস্তবতার ধাক্কা

রুমা ছোটবেলা থেকেই ভালো ছাত্রী ছিল। রাজশাহীর সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সমাজবিজ্ঞানে মাস্টার্স পাস করে ঢাকায় ফিরে আসেন। ইচ্ছে ছিল, একটি গবেষণা সংস্থা বা এনজিওতে কাজ করবেন, সমাজের পাশে দাঁড়াবেন। কিন্তু বাস্তবতা তাকে দাঁড় করিয়েছে এক শূন্য কক্ষে, যেখানে কোনো নিয়োগপত্র আসে না।

Accountant: Everything you need to know - Financial Foothold

পরিবারে আয়ের আলো নিভে গেছে

রুমার বাবা আব্দুল কাইয়ুম, বয়স এখন ৭০। পেশায় ছিলেন প্রাইভেট অফিসের হিসাবরক্ষক। বয়স ও কোম্পানির আর্থিক সংকটের অজুহাতে পাঁচ মাস আগে চাকরি থেকে তাকে ছাঁটাই করা হয়। মা শারমিন আক্তার ৫০ বছর বয়সে হারিয়েছেন তার একমাত্র আয়ের উৎস—একটি আন্তর্জাতিক এনজিওতে কর্মরত ছিলেন তিনি। সেই এনজিওটি যুক্তরাষ্ট্রের ইউএসএইড (USAID)-এর অর্থায়নে চলত। কিন্তু গত ছয় মাসে ইউএসএইডের তহবিল না থাকায় কর্মী ছাঁটাই হয়েছে, যার তালিকায় শারমিনও ছিলেন।

সঞ্চয়পত্রেও ভরসা নেই

আব্দুল কাইয়ুম ছোট থেকে কিছু কিছু করে সঞ্চয়পত্র কিনেছিলেন। ভেবেছিলেন, অবসরের পর এই সঞ্চয়ে পরিবার চলবে। কিন্তু সম্প্রতি সরকারের সুদের হার হ্রাস পাওয়ায় সেই আয়ের উপরও চাপ পড়েছে। আগে যেখান থেকে মাসে আট হাজার টাকা আসত, এখন তা কমে দাঁড়িয়েছে সাড়ে ছয় হাজারে।

Laptop Overheating: একটুতেই ল্যাপটপ গরম হয়ে গিয়েছে? সার্ভিস সেন্টার না  গিয়ে সমাধানের উপায় জানুন |Is Your Laptop Overheating? How Can You Fix It?

চাকরির জন্য প্রতিদিনের সংগ্রাম

রুমা প্রতিদিন সকালেই ঘুম থেকে ওঠে। ল্যাপটপ চালু করে, অনলাইন জব পোর্টাল খুলে বসে। সে বলে, “প্রতিদিন অন্তত দশটা আবেদন করি। কখনো কখনো কনফার্মেশন মেইলও আসে না। যেটা আসে, সেখানে আবার অভিজ্ঞতা চায় ৩ থেকে ৫ বছর। আমি নতুন, তাই জায়গা হয় না।”

তার মধ্যে বেছে নেওয়া যায় না সরকারি চাকরির প্রস্তুতিও—কারণ কোচিং করার টাকা নেই, আর মানসিক চাপ এতটাই যে দীর্ঘ সময় ধরে পড়াও সম্ভব হয় না।

প্রতিবেশীদের দৃষ্টিআত্মীয়ের চাপ

রুমার মা বলেন, “পাশের বাসার আন্টি বলেন, এত পড়াশোনা করে কী লাভ! বিয়েই তো করতে হবে।” আত্মীয়রা বলেন, মেয়ের বয়স তো হয়ে যাচ্ছে, একটা ভালো পাত্র খোঁজো। কিন্তু এই পরিস্থিতিতে পরিবার কিভাবে বিয়ের দায়িত্ব নেবে?

রুমা বলে, “আমি চাকরি করতে চাই, সংসারের হাল ধরতে চাই। কিন্তু কেউ চাকরি দিতে চায় না। শুধু বলে, অভিজ্ঞতা নেই।”

Exploring Different Types of Note Taking for Online Schooling

বন্ধ ঘরে স্বপ্নের আলোকছায়া

রুমা এখন মাঝে মাঝে ছোট ছোট ফ্রিল্যান্সিংয়ের কাজ খোঁজে। কখনো একটি অনলাইন স্কুলে স্বল্প পারিশ্রমিকে নোট টাইপ করে দেয়। কিন্তু সেটাতে ঘর চলে না। অনেক সময় দুপুরে একবেলা রান্না হয়, রাতে সেই খাবার গরম করে খায় পরিবার।

মধ্যবিত্ত শ্রেণির এই পরিবার কারো কাছে হাত পাততেও পারে না, আবার স্বাচ্ছন্দ্যেও থাকতে পারে না। তারা কোথাও আটকে গেছে—স্বপ্ন আর বাস্তবতার মাঝখানে।

ভবিষ্যতের অপেক্ষা

রুমা এখনো হাল ছাড়েনি। “একদিন নিশ্চয়ই একটা সুযোগ আসবে”—এই আশায় সে প্রতিদিন নতুন আবেদন করে, নতুন করে জীবন গুছিয়ে নেওয়ার স্বপ্ন দেখে। তার গল্প হয়তো লাখো শিক্ষিত তরুণ-তরুণীর গল্পের প্রতিচ্ছবি। যেখানে ডিগ্রি আছে, দক্ষতাও আছে, কিন্তু সুযোগ নেই।

একটা প্রজন্ম থেমে আছে—মাস্টার্স পাস করেও অলস দুপুরে ভাত ঠান্ডা হওয়ার অপেক্ষায়, চাকরির খবরে মুঠোফোনের পর্দায় তাকিয়ে থাকা মানুষ হয়ে।