০৩:৩৭ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২১ জুলাই ২০২৫

বাংলাদেশে OHCHR অফিস: প্রবৃদ্ধি পতন ও আস্থার সংকট

প্রবৃদ্ধির আড়ালে রাজনৈতিক সংকেত

জাতিসংঘের মানবাধিকার হাই কমিশনারের (OHCHR) একটি স্থানীয় অফিস ২০২৫ সালের জুলাইয়ে ঢাকায় খোলার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সংস্থাটি বলছে, তারা বাংলাদেশে “মানবাধিকার উন্নয়ন, গণতান্ত্রিক চর্চা ও সহিংসতা প্রতিরোধে সহযোগিতামূলকভাবে কাজ করবে”। কিন্তু বিনিয়োগ বিশ্লেষক, শিল্পপতি ও কূটনৈতিক মহল এই ঘটনাকে দেখছে ভিন্নভাবে—OHCHR-এর স্থানীয় উপস্থিতি সাধারণত হয় রাজনৈতিক দমন, সংঘাত কিংবা বিচারহীনতার পরিস্থিতিতে। তাহলে প্রশ্ন উঠছে: বাংলাদেশ এখন কি সেই সংকটপূর্ণ রাষ্ট্রগুলোর তালিকায়?

বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধির পতন: ৬.৭ শতাংশ থেকে ৩.৩ শতাংশ

একসময় বিশ্বের দ্রুততম প্রবৃদ্ধির দেশগুলোর মধ্যে ছিল বাংলাদেশ। শেখ হাসিনার সরকারের শেষ বছরে ২০২৪ অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ছিল ৬.৭ শতাংশ। কিন্তু বিশ্বব্যাংক ২০২৫ অর্থবছরের জন্য প্রবৃদ্ধি পূর্বাভাস দিয়েছে মাত্র ৩.৩ শতাংশ—যা ৩৬ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন। বিশ্লেষকদের মতে, এই পতনের পেছনে রয়েছে:
রাজনৈতিক অস্থিরতা ও সহিংসতা
প্রশাসনিক শূন্যতা
বিচারহীনতা ও নিরাপত্তা বাহিনীর অতিরিক্ত ক্ষমতার ব্যবহার
মানবাধিকার লঙ্ঘনের আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া
বৈদেশিক বিনিয়োগকারীদের আস্থা হ্রাস
বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনে স্পষ্ট করে বলা হয়েছে—বাংলাদেশে ৩০ লক্ষের বেশি মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে নেমে যেতে পারে, যদি এই ধারা অব্যাহত থাকে।

বিশ্বের ১২টি দেশ যেখানে OHCHR স্থানীয় অফিস রয়েছে

দেশ | প্রতিষ্ঠাকাল | পরিস্থিতি | বিনিয়োগ পরিবেশ
গাজা (ফিলিস্তিন) | ২০০৯ সাল | সামরিক দখল, অবরোধ | বিনিয়োগ বন্ধ
সুদান | ২০০৫ সাল | গৃহযুদ্ধ | সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্নতা
ইয়েমেন | ২০১১ সাল | সংঘাত, দুর্ভিক্ষ | আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা
হন্ডুরাস | ২০১০ সাল | গুম, সহিংসতা | বিদেশি প্রতিষ্ঠান পিছু হটেছে
মেক্সিকো | ২০০২ সাল | ড্রাগ যুদ্ধ, গুম | আংশিক সীমাবদ্ধ
কলম্বিয়া | ১৯৯৭ সাল | গেরিলা সংঘাত, শান্তিচুক্তি | ধীরে বিনিয়োগ ফিরছে
তিউনিশিয়া | ২০১১ সাল | রাজনৈতিক বিভাজন | অস্থিরতা অব্যাহত
কম্বোডিয়া | ১৯৯৩ সাল | স্বৈরাচার, দমন | গণতন্ত্র সংকুচিত
চাদ | ২০০৯ সাল | সেনা শাসন | ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চল
লাইবেরিয়া | ২০০৩ সাল | গৃহযুদ্ধ-পরবর্তী দুরবস্থা | সীমিত বিদেশি অংশগ্রহণ
গিনি | ২০০৫ সাল | সেনা অভ্যুত্থান | রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা
মৌরিতানিয়া | ২০১০ সাল | দাসপ্রথা, বৈষম্য | আইনি সংস্কার চলমান
এই তালিকায় এখন বাংলাদেশের নাম যুক্ত হওয়ায় বিনিয়োগকারীদের মধ্যে স্পষ্ট আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।

শিল্পপতিদের ভাষ্য: একটি লাল সংকেত

গার্মেন্টস খাতের এক্সপোর্টার মাহমুদুল করিম বলেন— “একটি দেশ যখন OHCHR-এর স্থানীয় পর্যবেক্ষণে আসে, তখন আন্তর্জাতিক ক্রেতারা সেটিকে ‘হাই রিস্ক মার্কেট’ হিসেবে চিহ্নিত করে। আমরা ইতিমধ্যে দুটি ব্র্যান্ডের কাছ থেকে চুক্তি স্থগিত হওয়ার খবর পেয়েছি।”
টেক্সটাইল ইনোভেশন সেক্টরের একজন উদ্যোক্তা মিসেস রহমান বলেন— “এটা কোনো উন্নয়ন প্রকল্প নয়, এটি একটি সতর্ক সংকেত। এই সংকেত বিনিয়োগকারীদের ব্যাংকিং সিদ্ধান্তেও প্রভাব ফেলছে।”

বিশ্লেষকদের মত: উন্নয়ন আর পর্যবেক্ষণ একসাথে চলে না

ড. আফরোজা হাসান, আন্তর্জাতিক রাজনীতি বিশ্লেষক বলেন— “OHCHR-এর স্থানীয় উপস্থিতি সাধারণত এমন দেশগুলোতেই হয়, যেখানে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় মনে করে, সেখানকার সরকার আর নিজেরাই পরিস্থিতি সামাল দিতে পারছে না।”
মানবাধিকার গবেষক ড. আসিফুর রহমান বলেন— “এটা রাজনীতির প্রতিশোধ নয়, এটা বাস্তবতা: গুম, বিচারবহির্ভূত হত্যা, দমনমূলক প্রশাসন—এইসবের দায় আজ আন্তর্জাতিকভাবে প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে।”

সুযোগ না সংকেত?

৩.৩ শতাংশ প্রবৃদ্ধির বাংলাদেশ এখন শুধুই অর্থনৈতিক দুর্বলতায় আক্রান্ত নয়, বরং একটি রাজনৈতিকভাবে পর্যবেক্ষণাধীন দেশ হিসেবে চিহ্নিত হচ্ছে। OHCHR কার্যালয় খোলা এই সংকেত দেয় যে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বাংলাদেশ এখন ‘বিশ্বাসযোগ্যতার সংকটে’ পড়েছে। এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য

প্রয়োজন:

মানবাধিকার লঙ্ঘন বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ
বিচারিক স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা
রাজনৈতিক সংলাপ ও স্থিতিশীল প্রশাসনিক কাঠামো
বিনিয়োগ-বান্ধব আইন ও আন্তর্জাতিক আস্থার পুনঃপ্রতিষ্ঠা

বাংলাদেশে OHCHR অফিস খোলার অর্থ, আন্তর্জাতিকভাবে রাষ্ট্রটি মানবাধিকার সংকটে রয়েছে বলে বিবেচিত। প্রবৃদ্ধি ৬.৭ শতাংশ থেকে ৩.৩ শতাংশে নেমে এসেছে। বিনিয়োগকারীরা উদ্বিগ্ন। বিশ্বের OHCHR-এর ১২টি স্থানীয় অফিসের দেশগুলোর অভিজ্ঞতা বলছে: একবার এই পর্যায়ে নামলে আস্থা পুনঃপ্রতিষ্ঠা কঠিন হয়।

বাংলাদেশে OHCHR অফিস: প্রবৃদ্ধি পতন ও আস্থার সংকট

১১:০০:১১ অপরাহ্ন, রবিবার, ২০ জুলাই ২০২৫

প্রবৃদ্ধির আড়ালে রাজনৈতিক সংকেত

জাতিসংঘের মানবাধিকার হাই কমিশনারের (OHCHR) একটি স্থানীয় অফিস ২০২৫ সালের জুলাইয়ে ঢাকায় খোলার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সংস্থাটি বলছে, তারা বাংলাদেশে “মানবাধিকার উন্নয়ন, গণতান্ত্রিক চর্চা ও সহিংসতা প্রতিরোধে সহযোগিতামূলকভাবে কাজ করবে”। কিন্তু বিনিয়োগ বিশ্লেষক, শিল্পপতি ও কূটনৈতিক মহল এই ঘটনাকে দেখছে ভিন্নভাবে—OHCHR-এর স্থানীয় উপস্থিতি সাধারণত হয় রাজনৈতিক দমন, সংঘাত কিংবা বিচারহীনতার পরিস্থিতিতে। তাহলে প্রশ্ন উঠছে: বাংলাদেশ এখন কি সেই সংকটপূর্ণ রাষ্ট্রগুলোর তালিকায়?

বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধির পতন: ৬.৭ শতাংশ থেকে ৩.৩ শতাংশ

একসময় বিশ্বের দ্রুততম প্রবৃদ্ধির দেশগুলোর মধ্যে ছিল বাংলাদেশ। শেখ হাসিনার সরকারের শেষ বছরে ২০২৪ অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ছিল ৬.৭ শতাংশ। কিন্তু বিশ্বব্যাংক ২০২৫ অর্থবছরের জন্য প্রবৃদ্ধি পূর্বাভাস দিয়েছে মাত্র ৩.৩ শতাংশ—যা ৩৬ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন। বিশ্লেষকদের মতে, এই পতনের পেছনে রয়েছে:
রাজনৈতিক অস্থিরতা ও সহিংসতা
প্রশাসনিক শূন্যতা
বিচারহীনতা ও নিরাপত্তা বাহিনীর অতিরিক্ত ক্ষমতার ব্যবহার
মানবাধিকার লঙ্ঘনের আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া
বৈদেশিক বিনিয়োগকারীদের আস্থা হ্রাস
বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনে স্পষ্ট করে বলা হয়েছে—বাংলাদেশে ৩০ লক্ষের বেশি মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে নেমে যেতে পারে, যদি এই ধারা অব্যাহত থাকে।

বিশ্বের ১২টি দেশ যেখানে OHCHR স্থানীয় অফিস রয়েছে

দেশ | প্রতিষ্ঠাকাল | পরিস্থিতি | বিনিয়োগ পরিবেশ
গাজা (ফিলিস্তিন) | ২০০৯ সাল | সামরিক দখল, অবরোধ | বিনিয়োগ বন্ধ
সুদান | ২০০৫ সাল | গৃহযুদ্ধ | সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্নতা
ইয়েমেন | ২০১১ সাল | সংঘাত, দুর্ভিক্ষ | আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা
হন্ডুরাস | ২০১০ সাল | গুম, সহিংসতা | বিদেশি প্রতিষ্ঠান পিছু হটেছে
মেক্সিকো | ২০০২ সাল | ড্রাগ যুদ্ধ, গুম | আংশিক সীমাবদ্ধ
কলম্বিয়া | ১৯৯৭ সাল | গেরিলা সংঘাত, শান্তিচুক্তি | ধীরে বিনিয়োগ ফিরছে
তিউনিশিয়া | ২০১১ সাল | রাজনৈতিক বিভাজন | অস্থিরতা অব্যাহত
কম্বোডিয়া | ১৯৯৩ সাল | স্বৈরাচার, দমন | গণতন্ত্র সংকুচিত
চাদ | ২০০৯ সাল | সেনা শাসন | ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চল
লাইবেরিয়া | ২০০৩ সাল | গৃহযুদ্ধ-পরবর্তী দুরবস্থা | সীমিত বিদেশি অংশগ্রহণ
গিনি | ২০০৫ সাল | সেনা অভ্যুত্থান | রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা
মৌরিতানিয়া | ২০১০ সাল | দাসপ্রথা, বৈষম্য | আইনি সংস্কার চলমান
এই তালিকায় এখন বাংলাদেশের নাম যুক্ত হওয়ায় বিনিয়োগকারীদের মধ্যে স্পষ্ট আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।

শিল্পপতিদের ভাষ্য: একটি লাল সংকেত

গার্মেন্টস খাতের এক্সপোর্টার মাহমুদুল করিম বলেন— “একটি দেশ যখন OHCHR-এর স্থানীয় পর্যবেক্ষণে আসে, তখন আন্তর্জাতিক ক্রেতারা সেটিকে ‘হাই রিস্ক মার্কেট’ হিসেবে চিহ্নিত করে। আমরা ইতিমধ্যে দুটি ব্র্যান্ডের কাছ থেকে চুক্তি স্থগিত হওয়ার খবর পেয়েছি।”
টেক্সটাইল ইনোভেশন সেক্টরের একজন উদ্যোক্তা মিসেস রহমান বলেন— “এটা কোনো উন্নয়ন প্রকল্প নয়, এটি একটি সতর্ক সংকেত। এই সংকেত বিনিয়োগকারীদের ব্যাংকিং সিদ্ধান্তেও প্রভাব ফেলছে।”

বিশ্লেষকদের মত: উন্নয়ন আর পর্যবেক্ষণ একসাথে চলে না

ড. আফরোজা হাসান, আন্তর্জাতিক রাজনীতি বিশ্লেষক বলেন— “OHCHR-এর স্থানীয় উপস্থিতি সাধারণত এমন দেশগুলোতেই হয়, যেখানে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় মনে করে, সেখানকার সরকার আর নিজেরাই পরিস্থিতি সামাল দিতে পারছে না।”
মানবাধিকার গবেষক ড. আসিফুর রহমান বলেন— “এটা রাজনীতির প্রতিশোধ নয়, এটা বাস্তবতা: গুম, বিচারবহির্ভূত হত্যা, দমনমূলক প্রশাসন—এইসবের দায় আজ আন্তর্জাতিকভাবে প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে।”

সুযোগ না সংকেত?

৩.৩ শতাংশ প্রবৃদ্ধির বাংলাদেশ এখন শুধুই অর্থনৈতিক দুর্বলতায় আক্রান্ত নয়, বরং একটি রাজনৈতিকভাবে পর্যবেক্ষণাধীন দেশ হিসেবে চিহ্নিত হচ্ছে। OHCHR কার্যালয় খোলা এই সংকেত দেয় যে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বাংলাদেশ এখন ‘বিশ্বাসযোগ্যতার সংকটে’ পড়েছে। এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য

প্রয়োজন:

মানবাধিকার লঙ্ঘন বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ
বিচারিক স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা
রাজনৈতিক সংলাপ ও স্থিতিশীল প্রশাসনিক কাঠামো
বিনিয়োগ-বান্ধব আইন ও আন্তর্জাতিক আস্থার পুনঃপ্রতিষ্ঠা

বাংলাদেশে OHCHR অফিস খোলার অর্থ, আন্তর্জাতিকভাবে রাষ্ট্রটি মানবাধিকার সংকটে রয়েছে বলে বিবেচিত। প্রবৃদ্ধি ৬.৭ শতাংশ থেকে ৩.৩ শতাংশে নেমে এসেছে। বিনিয়োগকারীরা উদ্বিগ্ন। বিশ্বের OHCHR-এর ১২টি স্থানীয় অফিসের দেশগুলোর অভিজ্ঞতা বলছে: একবার এই পর্যায়ে নামলে আস্থা পুনঃপ্রতিষ্ঠা কঠিন হয়।