০৭:৫৯ অপরাহ্ন, শনিবার, ০২ অগাস্ট ২০২৫
মাশরাফি বিন মর্তুজা: বাংলাদেশের এক মহান ক্রিকেটারের জীবনগাথা ট্রাম্পের শুল্ক ভারতের ৪০ বিলিয়ন ডলারের রফতানির ওপর প্রভাব ফেলতে পারে ফেডারেল তহবিল কাটা যাওয়ায় পাবলিক ব্রডকাস্টিং কর্পোরেশন বন্ধ, স্থানীয় গণমাধ্যমে বড় ধাক্কা ট্রেড আলোচনা স্থবির, শুল্ক হুমকি বাড়ছে: যুক্তরাষ্ট্র–ভারত অংশীদারিত্বে টানাপোড়ন  বাংলাদেশে দুই কোটি হিন্দুর ও প্রগতিশীল মুসলিমদের ভবিষ্যত কি? জলঢাকা নদী: ইতিহাস, পথচলা ও বর্তমান বাস্তবতা বাংলাদেশে কার্প মাছ চাষ: দেশি মাছের বৈচিত্র্য ধ্বংসের হুমকি ও করণীয় বম জনগোষ্ঠীর তিন সদস্যের কারা মৃত্যু—বিচারবিভাগীয় তদন্ত ও নিরপরাধ বন্দিদের মুক্তির দাবিতে ১৫৫ নাগরিকের বিবৃতি উন্নত দেশগুলোর জন্য কৃষিপণ্যের বাজার উন্মুক্ত করা কি সুবিবেচনার কাজ? এ.টি.এম. শামসুজ্জামান: অভিনয়ের কিংবদন্তি এক জীবনগাথা

বাংলাদেশে কার্প মাছ চাষ: দেশি মাছের বৈচিত্র্য ধ্বংসের হুমকি ও করণীয়

কার্প মাছ চাষের বিস্তার

বর্তমানে বিশ্বের অনেক দেশেই কার্প (Carp) জাতীয় মাছের চাষ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। বাংলাদেশেও এর ব্যতিক্রম নয়। রুই, কাতলা, মৃগেল, সিলভার কার্প, গ্রাস কার্প, বিগহেড কার্পসহ নানা প্রজাতির কার্প মাছ এখন দেশের খামার ও পুকুরগুলোতে ব্যাপকহারে চাষ হচ্ছে। বিশেষ করে বাণিজ্যিকভাবে দ্রুত বর্ধনশীল এবং সহজলভ্য খাদ্যে বেড়ে ওঠার ক্ষমতার কারণে কার্প মাছ চাষ সহজ ও লাভজনক হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

বাংলাদেশে প্রতি বছর কয়েক লক্ষ মেট্রিক টন কার্প মাছ উৎপাদিত হচ্ছে। এতে করে দেশের মাছের চাহিদা পূরণ হচ্ছে, কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হচ্ছে এবং রপ্তানি বাজারেও সম্ভাবনা তৈরি হচ্ছে।

বৈজ্ঞানিক গবেষণার উদ্বেগ

তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশের বিজ্ঞানীরা একাধিক গবেষণায় আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন—কার্প মাছ চাষের কারণে দেশি মাছের জীববৈচিত্র্য ভয়াবহভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। কারণ:

কার্পজাতীয় মাছের নার্সারি ব্যবস্থাপনা

  • কার্প মাছ দ্রুত বাড়ে,বেশি খাদ্য গ্রহণ করে এবং অন্যান্য মাছের খাদ্যসংগ্রহে প্রতিযোগিতা সৃষ্টি করে।
  • কার্প মাছ মাটি খোঁড়ে খায়,ফলে পুকুর বা জলাশয়ের নিচের স্তর ঘোলা হয়ে যায়। এতে করে দেশি প্রজাতির মাছের প্রজনন ও ডিম ফুটার পরিবেশ নষ্ট হয়।
  • কিছু বিদেশি কার্প প্রজাতি যেমনসিলভার কার্প ও বিগহেড কার্প অত্যধিক আগ্রাসী প্রকৃতির, যারা অন্যান্য মাছের প্রাকৃতিক বাসস্থান দখল করে নেয়।
  • এই মাছগুলো একসময়েপানির অক্সিজেন কমিয়ে দেয়, যার ফলে তুলনামূলক দুর্বল দেশি মাছগুলো মারা যেতে থাকে।

দেশি মাছের অস্তিত্ব সংকট

বাংলাদেশের নদ-নদী, বিল, হাওর-বাঁওড় ও পুকুরে একসময় প্রচুর দেশি মাছ পাওয়া যেত—যেমন পুঁটি, টেংরা, শিং, মাগুর, কৈ, ফলি, বাইম, গজার, বেলি, ভেদা ইত্যাদি। এসব মাছ শুধু স্বাদের জন্য নয়, পুষ্টিগুণ এবং স্থানীয় জৈব পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায়ও গুরুত্বপূর্ণ।

কিন্তু এখন এসব মাছের প্রাপ্যতা আশঙ্কাজনক হারে কমে গেছে। মাছ গবেষণা প্রতিষ্ঠান ও স্থানীয় জেলেদের ভাষ্যমতে, অনেক দেশি প্রজাতি বিলুপ্তির পথে।

অবিলম্বে করণীয়

বাংলাদেশের জন্য এখনই সময় এসেছে বিষয়টি নিয়ে সচেতন হওয়ার। নিচের পদক্ষেপগুলো গ্রহণ করা জরুরি:

দেশি মাছের সংরক্ষণে সরকারি নীতিমালা তৈরি ও বাস্তবায়ন করতে হবে।

কার্পজাতীয় মাছ চাষের নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবন

কার্প মাছ চাষে নিয়ন্ত্রণ আনতে হবে—বিশেষ করে আগ্রাসী প্রজাতির চাষ সীমিত করতে হবে।

মিশ্র মাছচাষে বৈজ্ঞানিক দিকনির্দেশনা অনুসরণ বাধ্যতামূলক করতে হবে, যাতে পরিবেশ ভারসাম্য বজায় থাকে।

দেশি প্রজাতির প্রজনন কেন্দ্র স্থাপন ও কৃত্রিম প্রজননের মাধ্যমে তাদের সংখ্যা বাড়াতে হবে।

জেলেদের প্রশিক্ষণ ও উদ্বুদ্ধকরণ করতে হবে, যাতে তারা পরিবেশবান্ধব মাছচাষে আগ্রহী হন।

জলাশয়ের প্রাকৃতিক বাস্তুতন্ত্র রক্ষা করার জন্য তদারকি ও মনিটরিং ব্যবস্থা জোরদার করতে হবে।

পরিবেশগত প্রভাব

বাংলাদেশে কার্প মাছ চাষ অর্থনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ হলেও এর পরিবেশগত প্রভাব এখনই গুরুত্বসহকারে মূল্যায়ন করতে হবে। দেশি মাছের অস্তিত্ব রক্ষা না করা গেলে একসময় আমাদের নদ-নদী, বিল-ঝিল ও হাওরে শুধু কিছু কার্প মাছ ছাড়া আর কিছুই থাকবে না। এটি শুধু খাদ্য ও পুষ্টির জন্য নয়, বাংলাদেশের জীববৈচিত্র্য ও সংস্কৃতির জন্যও এক বড় ক্ষতি হবে। তাই এখনই প্রয়োজন, বিজ্ঞানভিত্তিক নীতিমালা গ্রহণ করে টেকসই মাছচাষ নিশ্চিত করা।

জনপ্রিয় সংবাদ

মাশরাফি বিন মর্তুজা: বাংলাদেশের এক মহান ক্রিকেটারের জীবনগাথা

বাংলাদেশে কার্প মাছ চাষ: দেশি মাছের বৈচিত্র্য ধ্বংসের হুমকি ও করণীয়

০৩:৫২:৫৭ অপরাহ্ন, শনিবার, ২ অগাস্ট ২০২৫

কার্প মাছ চাষের বিস্তার

বর্তমানে বিশ্বের অনেক দেশেই কার্প (Carp) জাতীয় মাছের চাষ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। বাংলাদেশেও এর ব্যতিক্রম নয়। রুই, কাতলা, মৃগেল, সিলভার কার্প, গ্রাস কার্প, বিগহেড কার্পসহ নানা প্রজাতির কার্প মাছ এখন দেশের খামার ও পুকুরগুলোতে ব্যাপকহারে চাষ হচ্ছে। বিশেষ করে বাণিজ্যিকভাবে দ্রুত বর্ধনশীল এবং সহজলভ্য খাদ্যে বেড়ে ওঠার ক্ষমতার কারণে কার্প মাছ চাষ সহজ ও লাভজনক হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

বাংলাদেশে প্রতি বছর কয়েক লক্ষ মেট্রিক টন কার্প মাছ উৎপাদিত হচ্ছে। এতে করে দেশের মাছের চাহিদা পূরণ হচ্ছে, কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হচ্ছে এবং রপ্তানি বাজারেও সম্ভাবনা তৈরি হচ্ছে।

বৈজ্ঞানিক গবেষণার উদ্বেগ

তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশের বিজ্ঞানীরা একাধিক গবেষণায় আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন—কার্প মাছ চাষের কারণে দেশি মাছের জীববৈচিত্র্য ভয়াবহভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। কারণ:

কার্পজাতীয় মাছের নার্সারি ব্যবস্থাপনা

  • কার্প মাছ দ্রুত বাড়ে,বেশি খাদ্য গ্রহণ করে এবং অন্যান্য মাছের খাদ্যসংগ্রহে প্রতিযোগিতা সৃষ্টি করে।
  • কার্প মাছ মাটি খোঁড়ে খায়,ফলে পুকুর বা জলাশয়ের নিচের স্তর ঘোলা হয়ে যায়। এতে করে দেশি প্রজাতির মাছের প্রজনন ও ডিম ফুটার পরিবেশ নষ্ট হয়।
  • কিছু বিদেশি কার্প প্রজাতি যেমনসিলভার কার্প ও বিগহেড কার্প অত্যধিক আগ্রাসী প্রকৃতির, যারা অন্যান্য মাছের প্রাকৃতিক বাসস্থান দখল করে নেয়।
  • এই মাছগুলো একসময়েপানির অক্সিজেন কমিয়ে দেয়, যার ফলে তুলনামূলক দুর্বল দেশি মাছগুলো মারা যেতে থাকে।

দেশি মাছের অস্তিত্ব সংকট

বাংলাদেশের নদ-নদী, বিল, হাওর-বাঁওড় ও পুকুরে একসময় প্রচুর দেশি মাছ পাওয়া যেত—যেমন পুঁটি, টেংরা, শিং, মাগুর, কৈ, ফলি, বাইম, গজার, বেলি, ভেদা ইত্যাদি। এসব মাছ শুধু স্বাদের জন্য নয়, পুষ্টিগুণ এবং স্থানীয় জৈব পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায়ও গুরুত্বপূর্ণ।

কিন্তু এখন এসব মাছের প্রাপ্যতা আশঙ্কাজনক হারে কমে গেছে। মাছ গবেষণা প্রতিষ্ঠান ও স্থানীয় জেলেদের ভাষ্যমতে, অনেক দেশি প্রজাতি বিলুপ্তির পথে।

অবিলম্বে করণীয়

বাংলাদেশের জন্য এখনই সময় এসেছে বিষয়টি নিয়ে সচেতন হওয়ার। নিচের পদক্ষেপগুলো গ্রহণ করা জরুরি:

দেশি মাছের সংরক্ষণে সরকারি নীতিমালা তৈরি ও বাস্তবায়ন করতে হবে।

কার্পজাতীয় মাছ চাষের নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবন

কার্প মাছ চাষে নিয়ন্ত্রণ আনতে হবে—বিশেষ করে আগ্রাসী প্রজাতির চাষ সীমিত করতে হবে।

মিশ্র মাছচাষে বৈজ্ঞানিক দিকনির্দেশনা অনুসরণ বাধ্যতামূলক করতে হবে, যাতে পরিবেশ ভারসাম্য বজায় থাকে।

দেশি প্রজাতির প্রজনন কেন্দ্র স্থাপন ও কৃত্রিম প্রজননের মাধ্যমে তাদের সংখ্যা বাড়াতে হবে।

জেলেদের প্রশিক্ষণ ও উদ্বুদ্ধকরণ করতে হবে, যাতে তারা পরিবেশবান্ধব মাছচাষে আগ্রহী হন।

জলাশয়ের প্রাকৃতিক বাস্তুতন্ত্র রক্ষা করার জন্য তদারকি ও মনিটরিং ব্যবস্থা জোরদার করতে হবে।

পরিবেশগত প্রভাব

বাংলাদেশে কার্প মাছ চাষ অর্থনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ হলেও এর পরিবেশগত প্রভাব এখনই গুরুত্বসহকারে মূল্যায়ন করতে হবে। দেশি মাছের অস্তিত্ব রক্ষা না করা গেলে একসময় আমাদের নদ-নদী, বিল-ঝিল ও হাওরে শুধু কিছু কার্প মাছ ছাড়া আর কিছুই থাকবে না। এটি শুধু খাদ্য ও পুষ্টির জন্য নয়, বাংলাদেশের জীববৈচিত্র্য ও সংস্কৃতির জন্যও এক বড় ক্ষতি হবে। তাই এখনই প্রয়োজন, বিজ্ঞানভিত্তিক নীতিমালা গ্রহণ করে টেকসই মাছচাষ নিশ্চিত করা।