গঙ্গাগোবিন্দ জেসিংহ তৎকালে কোম্পানীর রাজস্ব-সমিতির দেওয়ান, দেশের একরূপ সর্ব্বেসর্ব্বা বলিলেও অত্যুক্তি হয় না। গঙ্গাগোবিন্দ ও দেবীসিংহের মধ্যে একটু ঈর্ষ্যার ভাব প্রচলিত থাকার কথা শুনা যায়। উভয়েই হেষ্টিংসের প্রিয়পাত্র বলিয়া, উভয়ে উভয়কে হিংসার চক্ষে দেখিতেন। উপস্থিত ক্ষেত্রে এই দুই প্রতিদ্বন্দ্বী পুরুষের মিলন হইল। দেবীসিংহ নানাপ্রকারে গঙ্গাগোবিন্দ সিংহকে সন্তুষ্ট করিলেন এবং গঙ্গাগোবিন্দও দেখিলেন যে, দেবীসিংহ ভিন্ন তাঁহার ও তাঁহার প্রভু হেষ্টিংস সাহেবের আকাঙ্ক্ষা পরিতৃপ্তির জন্য উপযুক্ত ব্যক্তি দুর্লভ।
কাজেই এই দুই ভীষণ ব্যক্তির সংযোগে দিনাজপুর প্রদেশে পৈশাচিক অত্যাচারের অভিনয় আরব্ধ হইল। দেবী সিংহ ১০০০ হাজার টাকা বেতনে দিনাজপুরের নাবালগ রাজার দেওয়ান নিযুক্ত হইলেন। বৈজনাথের বিধবা রাণী যদিও অভিভাবকরূপে রহিলেন, তথাপি দেবীসিংহই কাৰ্য্যতঃ সমস্ত বিষয়ের ভার গ্রহণ করিলেন। তিনি নামে দিনাজপুরের দেওয়ান হইলেও কার্য্যতঃ সেই প্রদেশের অধীশ্বর হইয়া উঠিলেন। দেবী সিংহ যাহা মনে করিতেন, তাহাই অবিলম্বে সম্পাদিত হইত। রাজার শিক্ষাদির ভারও তাঁহার উপর রুস্ত হয়।
এরূপ লোকের হস্তে শিক্ষার ভার থাকিলে যেরূপ হইবার সম্ভাবনা, রাধানাথের শিক্ষা দিন দিন তেমনই হইতে লাগিল। দিনাজপুর-সংসারে যে সমস্ত পুরাতন কৰ্ম্মচারী ছিল, সকলেরই পদচ্যুতি ঘটিল। দেবীসিংহ নিজের মনোমত লোক নিযুক্ত করিলেন। এই সময়ে হেষ্টিংসের প্রিয়পাত্র গুড ল্যাড সাহেব রঙ্গপুরের কালেক্টর ছিলেন। দেবী সিংহের সহিত তাঁহার মিত্রতা থাকায় তাঁহারা পরামর্শ করিয়া রাধানাথের মাসহারা ১৬০০ হইতে ৬০০ শত টাকা করিয়া দিলেন। ১০০০ টাকা মাসহারার লাঘব হওয়ায় রাধানাথের কিরূপ কষ্ট উপস্থিত হইল, তাহা সকলে অনুমান করিতে পারেন।
অনেকে মনে করেন, দেবীসিংহ হেষ্টিংস সাহেবকে তিন লক্ষ টাকা দিয়া দিনাজপুরের দেওয়ানী লাভ করায়, সেই টাকাসংগ্রহের জন্য তিনি এরূপ পন্থা অবলম্বন করিতে বাধ্য হন। দিনাজপুরের দেওয়ান নিযুক্ত হইয়া দেবী সিংহ পর বৎসরে দিনাজপুর, রঙ্গপুর ও ইদ্রাকপুর প্রদেশ-এয়ের ইজারা বন্দোবস্ত করিয়া লয়েন। তৎকালে যে ব্যক্তি যে প্রদেশের দেওয়ান নিযুক্ত হইত, তাহাকে সে প্রদেশের ইজারা দেওয়া হইত না; কিন্তু কল্যাণ সিংহ ও দেবী সিংহ এতছভয়ে দেওয়ান হইয়াও বিহার ও দিনাজপুর প্রদেশদ্বয়ের ইজারা গ্রহণ করেন।
শ্রী নিখিলনাথ রায় 



















