ওয়াশিংটন পোস্ট ছেড়ে নতুন যাত্রা
টিকটক ও ইউটিউবে ওয়াশিংটন পোস্টের মুখ হিসেবে পরিচিত ডেভ জর্জেনসন এবার প্রতিষ্ঠানটি ছাড়ছেন। ৩৪ বছর বয়স্ক এই সাংবাদিক নিজের ইউটিউব চ্যানেল ‘লোকাল নিউজ ইন্টারন্যাশনাল’-কে কেন্দ্র করে একটি নতুন ভিডিও কোম্পানি গড়ছেন। এর মাধ্যমে তিনি মূলধারার সাংবাদিকতা থেকে সরে এসে নিজের স্বাধীন ব্র্যান্ড প্রতিষ্ঠা করতে যাচ্ছেন।
তাঁর সঙ্গে এই যাত্রায় আছেন ওয়াশিংটন পোস্টের সাবেক ভিডিও পরিচালক মাইকা গেলম্যান ও ডেপুটি লরেন স্যাক্স। তাঁদের এই নতুন উদ্যোগের লক্ষ্য হচ্ছে: সামাজিক মাধ্যমে খবরের প্রতি দর্শকদের মধ্যে বাস্তবচেতনা তৈরি করা।
ব্যক্তিগত উদ্যোগে সাহসী সিদ্ধান্ত
ডেভ জানান, “তিন-চার বছর আগেই এই উদ্যোগ নিতে পারতাম, কিন্তু তখন ব্যর্থ হব এই ভয় ছিল। এখন আর সে ভয় নেই।”
জর্জেনসনের ক্যারিয়ার শুরু হয় ‘দ্য কোলবার্ট রিপোর্ট’-এ ইন্টার্ন হিসেবে। পরে স্টারবাকসে বারিস্টা এবং IJR নামের একটি ডিজিটাল মিডিয়া স্টার্টআপে কাজ করেন। এরপর ৮ বছর ওয়াশিংটন পোস্টে কাটান, যেখানে তিনি ভিডিও বিভাগে ব্যঙ্গাত্মক ও বিশ্লেষণধর্মী কনটেন্টের মাধ্যমে লাখ লাখ অনুসারী গড়েন।

তবে এসব অনুসারী তিনি তাঁর ব্যক্তিগত চ্যানেলে নিতে পারবেন না। এখন তাঁর চ্যানেলে অনুসারীর সংখ্যা তুলনামূলকভাবে অনেক কম। তবুও তিনি বিশ্বাস করেন, ওয়াশিংটন পোস্টের সময়কার তাঁর ভক্তরাই তাঁকে নতুন উদ্যোগে অনুসরণ করবে।
কেন বিদায় ওয়াশিংটন পোস্ট থেকে?
ওয়াশিংটন পোস্টে নেতৃত্ব ও দৃষ্টিভঙ্গির অসামঞ্জস্য এবং গ্রাফিক্স ও অডিও টিমে অনিশ্চয়তা তাঁকে বিদায়ের দিকে ঠেলে দেয়। “আমি নিশ্চিত না যে তারা সঠিক রোডম্যাপের পথেই আছে,” বলেন ডেভ।
ওয়াশিংটন পোস্টের এক অভ্যন্তরীণ ইমেইলে কর্মীদের বিকল্প চাকরির প্রস্তাব গ্রহণের আহ্বান জানানো হয়েছিল, যা ডেভের মতে ছিল ‘রেড কার্পেট রোল আউট’—অর্থাৎ পদত্যাগের পথ তৈরি করে দেওয়া।
নতুন কোম্পানি ‘ফ্যামিলি লুজার’
ডেভের নতুন কোম্পানির নাম ‘ফ্যামিলি লুজার’। এতে শুধু ভিডিও কনটেন্ট নয়, অন্যান্য ভিডিও নির্মাতাদের জন্য পরামর্শ এবং বিজ্ঞাপন বিক্রির কৌশলও থাকবে। বর্তমানে কোম্পানির সব খরচ তাঁরা নিজেদের পকেট থেকেই চালাচ্ছেন, তবে ভবিষ্যতে বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে আলোচনার পরিকল্পনা রয়েছে।
ভবিষ্যতের ভিডিও আইডিয়ার মধ্যে আছে ‘ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স’ চরিত্রে মেকআপ টিউটোরিয়াল, যেখানে খবর বিশ্লেষণ করা হবে। এ ছাড়া একটি ধারাবাহিক থাকবে যেখানে তিনি ‘ফ্যামিলি লুজার’ নামে একটি হাইওয়ে দত্তক নেবেন।

সাংবাদিকতা থেকে বিনোদনে উত্তরণ?
ডেভ বলেন, তিনি তাঁর কিছু পুরনো কৌতুক ও চরিত্র যেমন ‘স্প্যাম ক্যান’-এর ব্যবহার চালিয়ে যাবেন, তবে সাংবাদিকতার কঠোর নিয়ম যেমন ‘মিথ্যা’ শব্দের ব্যবহার বা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস স্টাইল অনুসরণ—এসব থেকে সরে আসবেন।
একবার ক্যালিফোর্নিয়ার নাম সংক্ষেপে ভুল লেখার কারণে পুরো টিকটক ভিডিও আবার তৈরি করতে হয়েছিল—এমন উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, এসব ছোটখাটো নিয়মে তিনি আর আবদ্ধ থাকবেন না।
রাজনৈতিক নিরপেক্ষতা বজায় রাখার চেষ্টা
ডেভের মতে, সংবাদভিত্তিক অনেক কনটেন্টকে মাঝারি বামপন্থী ভাবা হয়, তবে তিনি নিজেকে কোনো রাজনৈতিক পক্ষের সঙ্গে যুক্ত করতে চান না। “আমি শুধু আমার নিজের নৈতিক বোধ অনুসরণ করছি—মিডওয়েস্টের একজন প্রেসবাইটেরিয়ান পরিবারের সন্তান হিসেবে,” বলেন তিনি।
গত বছর রিপাবলিকান ন্যাশনাল কনভেনশন থেকে ভিডিও তৈরির সময় ডানপন্থী দর্শকরাও এসে জানিয়েছিলেন যে তারা তাঁর ভিডিও দেখেন। ডেভ এটিকে ইতিবাচক লক্ষণ হিসেবে দেখছেন।
সাংবাদিকতার নতুন ধারা
ডেভ জর্জেনসনের এই উদ্যোগ একটি বড় প্রশ্ন উত্থাপন করছে—একজন সাংবাদিক কি তাঁর প্রতিষ্ঠানের ছায়া থেকে বেরিয়ে নিজেই একটি সফল ব্র্যান্ড হয়ে উঠতে পারেন? সাবস্ট্যাক ও ইউটিউবে এর আগে আরও কিছু সাংবাদিক এমন চেষ্টা করেছেন—কারও সাফল্য এসেছে, কারও নয়। তবে ডেভের এই পদক্ষেপ সামাজিক মাধ্যমে সাংবাদিকতার নতুন যুগের ইঙ্গিত দিচ্ছেন।
এখন দেখার বিষয়, তাঁর ‘লোকাল নিউজ ইন্টারন্যাশনাল’ ও ‘ফ্যামিলি লুজার’ কতটা জনপ্রিয়তা পায়। সাংবাদিকতা আর বিনোদনের সীমারেখা মিলিয়ে দিচ্ছেন ডেভ — তবে তাতে দর্শকরা কীভাবে সাড়া দেন, সেটাই ভবিষ্যতের উত্তর দেবে।
সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















