১২:৪৭ অপরাহ্ন, শনিবার, ০৮ নভেম্বর ২০২৫
আফগানিস্তানে মাতৃমৃত্যুর হার বেড়েছে নারীর শিক্ষা ও কর্মসংস্থানে নিষেধাজ্ঞার কারণে ভারতের রাজধানীর ৬০ নটিক্যাল মাইল এলাকাজুড়ে বিমান চলাচলে জিপিএস বিভ্রাট, পাইলট ও এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলের উদ্বেগ ভারতের কেরালা সাবরিমালা স্বর্ণ আত্মসাত মামলা: আরও এক অভিযুক্ত গ্রেপ্তার আরব আমিরাতে ডিজিটাল রূপান্তরের মাধ্যমে ব্যাংকিং খাতে বিপ্লব উপসাগরীয় অঞ্চলে ভারতীয় উদ্যোক্তা ও নেতাদের অসাধারণ অবদান মধ্যপ্রাচ্যের আকাশে নতুন অধ্যায় গড়ছে জিই অ্যারোস্পেস বিহারের অর্থনৈতিক উন্নতি কি সত্যিই দেশের বাকি অংশের সঙ্গে তাল মিলিয়েছে? রাশিয়া যে কোনো সময় ন্যাটোর বিরুদ্ধে সীমিত আক্রমণ চালাতে পারে বিপর্যস্ত ব্যাংকের বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ কে দেখবে? চট্টগ্রামে ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়ছে: ঝুঁকিপূর্ণ ২৫ এলাকা চিহ্নিত

মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়ের বিয়ের কেনাকাটা: হিসেবি স্বপ্নের বাস্তবায়ন

স্বপ্নের দিনটির প্রস্তুতি

বিয়ে একটি মেয়ের জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিনগুলোর একটি। তার পরিবার, বিশেষ করে মধ্যবিত্ত পরিবারগুলোর জন্য এটি যেমন আনন্দের, তেমনি দায়িত্ব এবং অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জের বিষয়ও বটে। আনন্দের এই আয়োজনকে সুন্দর ও সার্থক করতে হলে প্রয়োজন হয় সঠিক পরিকল্পনার। বিশেষত কেনাকাটার ক্ষেত্রে সামান্য অগোছালো সিদ্ধান্তও বাজেট ধ্বংস করে দিতে পারে। তাই আগেভাগে প্রস্তুতি নেওয়া জরুরি।

বাজেট নির্ধারণ

বিয়ের কেনাকাটার ক্ষেত্রে প্রথম এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হলো বাজেট নির্ধারণ। একটি মধ্যবিত্ত পরিবারের উচিত শুরুতেই একটি নির্দিষ্ট আর্থিক সীমা নির্ধারণ করা, যাতে অপ্রয়োজনীয় খরচ এড়ানো যায়। বাজেটে পোশাক ও গয়নার জন্য ৫০%, সাজসজ্জা ও বিউটি পার্লারের জন্য ১০%, উপহার ও আনুষঙ্গিক খরচের জন্য ১৫%, ফটোগ্রাফি ও কার্ড প্রিন্টিংয়ের জন্য ১০%, এবং হঠাৎ জরুরি খরচের জন্য ১৫% বরাদ্দ রাখা যায়।

চাহিদার তালিকা তৈরি

বাজেট নির্ধারণের পরপরই একটি বিস্তারিত চাহিদার তালিকা তৈরি করা জরুরি। এতে করে প্রয়োজনীয় এবং অপ্রয়োজনীয় জিনিসগুলোর মধ্যে স্পষ্টতা আসে। বউয়ের জন্য বিয়ের শাড়ি বা লেহেঙ্গা, গয়না, কসমেটিকস, ব্যাগ ও জুতো থেকে শুরু করে বিয়ের পরের ড্রেস—সব কিছু তালিকাভুক্ত করতে হবে। এছাড়া জামাই ও তার পরিবারের জন্য উপহার, বিয়ের কার্ড, ট্রাঙ্ক বা লাগেজ সেট, রুম সাজানোর সামগ্রী—সবকিছু আগেভাগেই পরিকল্পনার অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।

তৃতীয় ধাপ: সময় ও স্থানভিত্তিক কেনাকাটা

কখন কোথা থেকে কী কিনবেন, সেটি আগেই ঠিক করে রাখা দরকার। শাড়ি ও গয়না কেনার জন্য ঢাকার গাউছিয়া, চাঁদনী চক কিংবা নিউমার্কেট খুবই উপযোগী। কসমেটিকস ও সাজসজ্জার সামগ্রীর জন্য মালিবাগ বা বসুন্ধরা সিটি নির্ভরযোগ্য। বিয়ের পর ব্যবহারের জন্য কাপড় ও লাগেজ কেনা যায় মিরপুর বা আগারগাঁও থেকে। বেড কিংবা ঘর সাজানোর সামগ্রী নবাবপুর বা গুলিস্তানের পাইকারি বাজারে তুলনামূলক কম দামে পাওয়া যায়।

মান বজায় রেখে পছন্দ

মধ্যবিত্ত পরিবারগুলোকে মান বজায় রেখে বেছে নিতে হয়। সব কিছুতেই যেন সৌন্দর্য ও ব্যবহারযোগ্যতা থাকে, সেটা নিশ্চিত করতে হবে। গয়নার ক্ষেত্রে কৃত্রিম হলেও মানসম্মত ডিজাইন বেছে নেওয়া ভালো। পোশাকেও ডিজাইনার নয়, বরং সাদামাটা কিন্তু সুন্দর রুচিসম্পন্ন কিছু নির্বাচন করা যায়। বিয়ের জন্য কেনা জিনিস যেন বিয়ের পরও ব্যবহারযোগ্য হয়, সেটাও গুরুত্ব সহকারে ভাবতে হবে।

পরিবারের সক্রিয় অংশগ্রহণ

বিয়ের কেনাকাটা শুধু মা-মেয়ের বিষয় নয়। পুরো পরিবারকে এতে সম্পৃক্ত করা প্রয়োজন। বাজেট নির্ধারণ থেকে শুরু করে দামের তুলনা করা, দোকান খুঁজে বের করা—সব কাজেই বাবা, ভাই, বোন সবাই মিলে কাজ করলে একদিকে কাজ সহজ হয়, অন্যদিকে পারিবারিক বন্ধনও দৃঢ় হয়। এতে বিয়ের প্রস্তুতি এক সামাজিক উৎসবে পরিণত হয়।

অনলাইন ও অফলাইন মিলিয়ে কেনাকাটা

বর্তমানে অনেক বিশ্বস্ত অনলাইন প্ল্যাটফর্মে বিয়ের বিভিন্ন পণ্য পাওয়া যায়। দারাজ, ট্রেন্ডি, আর্টিজান প্রভৃতি সাইটে বিয়ের জামা, গয়না, কসমেটিকস থেকে শুরু করে হোম ডেকোর সবকিছুই পাওয়া যায়। অফারের সময় অনলাইনে কিছু পণ্য কিনে খরচ বাঁচানো যায়। তবে গয়না বা কাপড়ের ক্ষেত্রে দোকানে গিয়ে দেখে কিনলে প্রতারণার সম্ভাবনা কমে যায়।

পরিকল্পিত কেনাকাটাতেই রয়েছে সার্থকতা

মধ্যবিত্ত পরিবারের কন্যার বিয়ে মানে শুধুই জাঁকজমক নয়, বরং পরিমিত ব্যয়, রুচি ও দায়িত্বের একসঙ্গে সমন্বয়। বাজেট, চাহিদা এবং সময় অনুযায়ী পরিকল্পনা করে কেনাকাটা করলে বিয়েটা হয়ে উঠতে পারে স্মরণীয় ও শান্তিময়। বাড়তি খরচ নয়, বরং পরিবারের একসঙ্গে থাকা, সহযোগিতা এবং মনের আনন্দই একটি বিয়েকে সফল করে তোলে।

সৌন্দর্যই বড়

হিসেবি ভাবনা, আগেভাগে প্রস্তুতি এবং পরিবারের সম্মিলিত প্রচেষ্টাই একটি মধ্যবিত্ত পরিবারের বিয়ের কেনাকাটাকে করে তুলতে পারে ঝামেলাহীন ও আনন্দময়। অভাবের মধ্যেও সৌন্দর্য থাকে যদি পরিকল্পনাটা হয় ভালোবাসার।

জনপ্রিয় সংবাদ

আফগানিস্তানে মাতৃমৃত্যুর হার বেড়েছে নারীর শিক্ষা ও কর্মসংস্থানে নিষেধাজ্ঞার কারণে

মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়ের বিয়ের কেনাকাটা: হিসেবি স্বপ্নের বাস্তবায়ন

০৬:৩০:১৩ অপরাহ্ন, সোমবার, ৪ অগাস্ট ২০২৫

স্বপ্নের দিনটির প্রস্তুতি

বিয়ে একটি মেয়ের জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিনগুলোর একটি। তার পরিবার, বিশেষ করে মধ্যবিত্ত পরিবারগুলোর জন্য এটি যেমন আনন্দের, তেমনি দায়িত্ব এবং অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জের বিষয়ও বটে। আনন্দের এই আয়োজনকে সুন্দর ও সার্থক করতে হলে প্রয়োজন হয় সঠিক পরিকল্পনার। বিশেষত কেনাকাটার ক্ষেত্রে সামান্য অগোছালো সিদ্ধান্তও বাজেট ধ্বংস করে দিতে পারে। তাই আগেভাগে প্রস্তুতি নেওয়া জরুরি।

বাজেট নির্ধারণ

বিয়ের কেনাকাটার ক্ষেত্রে প্রথম এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হলো বাজেট নির্ধারণ। একটি মধ্যবিত্ত পরিবারের উচিত শুরুতেই একটি নির্দিষ্ট আর্থিক সীমা নির্ধারণ করা, যাতে অপ্রয়োজনীয় খরচ এড়ানো যায়। বাজেটে পোশাক ও গয়নার জন্য ৫০%, সাজসজ্জা ও বিউটি পার্লারের জন্য ১০%, উপহার ও আনুষঙ্গিক খরচের জন্য ১৫%, ফটোগ্রাফি ও কার্ড প্রিন্টিংয়ের জন্য ১০%, এবং হঠাৎ জরুরি খরচের জন্য ১৫% বরাদ্দ রাখা যায়।

চাহিদার তালিকা তৈরি

বাজেট নির্ধারণের পরপরই একটি বিস্তারিত চাহিদার তালিকা তৈরি করা জরুরি। এতে করে প্রয়োজনীয় এবং অপ্রয়োজনীয় জিনিসগুলোর মধ্যে স্পষ্টতা আসে। বউয়ের জন্য বিয়ের শাড়ি বা লেহেঙ্গা, গয়না, কসমেটিকস, ব্যাগ ও জুতো থেকে শুরু করে বিয়ের পরের ড্রেস—সব কিছু তালিকাভুক্ত করতে হবে। এছাড়া জামাই ও তার পরিবারের জন্য উপহার, বিয়ের কার্ড, ট্রাঙ্ক বা লাগেজ সেট, রুম সাজানোর সামগ্রী—সবকিছু আগেভাগেই পরিকল্পনার অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।

তৃতীয় ধাপ: সময় ও স্থানভিত্তিক কেনাকাটা

কখন কোথা থেকে কী কিনবেন, সেটি আগেই ঠিক করে রাখা দরকার। শাড়ি ও গয়না কেনার জন্য ঢাকার গাউছিয়া, চাঁদনী চক কিংবা নিউমার্কেট খুবই উপযোগী। কসমেটিকস ও সাজসজ্জার সামগ্রীর জন্য মালিবাগ বা বসুন্ধরা সিটি নির্ভরযোগ্য। বিয়ের পর ব্যবহারের জন্য কাপড় ও লাগেজ কেনা যায় মিরপুর বা আগারগাঁও থেকে। বেড কিংবা ঘর সাজানোর সামগ্রী নবাবপুর বা গুলিস্তানের পাইকারি বাজারে তুলনামূলক কম দামে পাওয়া যায়।

মান বজায় রেখে পছন্দ

মধ্যবিত্ত পরিবারগুলোকে মান বজায় রেখে বেছে নিতে হয়। সব কিছুতেই যেন সৌন্দর্য ও ব্যবহারযোগ্যতা থাকে, সেটা নিশ্চিত করতে হবে। গয়নার ক্ষেত্রে কৃত্রিম হলেও মানসম্মত ডিজাইন বেছে নেওয়া ভালো। পোশাকেও ডিজাইনার নয়, বরং সাদামাটা কিন্তু সুন্দর রুচিসম্পন্ন কিছু নির্বাচন করা যায়। বিয়ের জন্য কেনা জিনিস যেন বিয়ের পরও ব্যবহারযোগ্য হয়, সেটাও গুরুত্ব সহকারে ভাবতে হবে।

পরিবারের সক্রিয় অংশগ্রহণ

বিয়ের কেনাকাটা শুধু মা-মেয়ের বিষয় নয়। পুরো পরিবারকে এতে সম্পৃক্ত করা প্রয়োজন। বাজেট নির্ধারণ থেকে শুরু করে দামের তুলনা করা, দোকান খুঁজে বের করা—সব কাজেই বাবা, ভাই, বোন সবাই মিলে কাজ করলে একদিকে কাজ সহজ হয়, অন্যদিকে পারিবারিক বন্ধনও দৃঢ় হয়। এতে বিয়ের প্রস্তুতি এক সামাজিক উৎসবে পরিণত হয়।

অনলাইন ও অফলাইন মিলিয়ে কেনাকাটা

বর্তমানে অনেক বিশ্বস্ত অনলাইন প্ল্যাটফর্মে বিয়ের বিভিন্ন পণ্য পাওয়া যায়। দারাজ, ট্রেন্ডি, আর্টিজান প্রভৃতি সাইটে বিয়ের জামা, গয়না, কসমেটিকস থেকে শুরু করে হোম ডেকোর সবকিছুই পাওয়া যায়। অফারের সময় অনলাইনে কিছু পণ্য কিনে খরচ বাঁচানো যায়। তবে গয়না বা কাপড়ের ক্ষেত্রে দোকানে গিয়ে দেখে কিনলে প্রতারণার সম্ভাবনা কমে যায়।

পরিকল্পিত কেনাকাটাতেই রয়েছে সার্থকতা

মধ্যবিত্ত পরিবারের কন্যার বিয়ে মানে শুধুই জাঁকজমক নয়, বরং পরিমিত ব্যয়, রুচি ও দায়িত্বের একসঙ্গে সমন্বয়। বাজেট, চাহিদা এবং সময় অনুযায়ী পরিকল্পনা করে কেনাকাটা করলে বিয়েটা হয়ে উঠতে পারে স্মরণীয় ও শান্তিময়। বাড়তি খরচ নয়, বরং পরিবারের একসঙ্গে থাকা, সহযোগিতা এবং মনের আনন্দই একটি বিয়েকে সফল করে তোলে।

সৌন্দর্যই বড়

হিসেবি ভাবনা, আগেভাগে প্রস্তুতি এবং পরিবারের সম্মিলিত প্রচেষ্টাই একটি মধ্যবিত্ত পরিবারের বিয়ের কেনাকাটাকে করে তুলতে পারে ঝামেলাহীন ও আনন্দময়। অভাবের মধ্যেও সৌন্দর্য থাকে যদি পরিকল্পনাটা হয় ভালোবাসার।