১০:২৭ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৯ অক্টোবর ২০২৫
ঐতিহ্যের সূক্ষ্ম বিন্দুতে ইতিহাসের পুনর্জাগরণ সৌন্দর্যের নতুন সংজ্ঞা ত্বকের প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানো আনোয়ার, ট্রাম্প এবং সম্পৃক্ততার কৌশল গণভোট বিতর্ক রেখেই সুপারিশ অদৃশ্য বিপদে পৃথিবী ক্ষুদ্র প্লাস্টিক কণায় স্বাস্থ্যঝুঁকি ও পরিবেশ সংকট আমেরিকার প্রতিষ্ঠার নেপথ্যের বৈপরীত্য ও আত্মসমালোচনা,গৌরব ও পাপের দ্বৈত মুখোশ উন্মোচন ‘গ্রিন ট্রি সাপ’—সবুজ পাতার আড়ালে লুকানো নীরব সৌন্দর্য আরব আমিরাতের আল আইন জাদুঘর—পাথর যুগ থেকে ইসলামি যুগের ঐতিহ্যের সেতুবন্ধন মিশরে সূচালো দাঁতওয়ালা ৮ কোটি বছর আগের সামুদ্রিক কুমিরের জীবাশ্ম আবিষ্কার আমেরিকার জন্মকথা—ইতিহাসের দ্বন্দ্ব, স্বাধীনতার গল্প ও মানবতার প্রতিচ্ছবি

ডোনাল্ড ট্রাম্পের শুল্ক: রাশিয়া থেকে তেল আমদানি বন্ধ হলে ভারতের জ্বালানি ব্যয় কত বাড়বে ও বিকল্প উৎস কোথায়?

ভারতের জ্বালানি ব্যয়ের সম্ভাব্য বৃদ্ধি

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ভারতের রপ্তানি পণ্যে ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেওয়ার পর, যদি ভারত রাশিয়া থেকে অপরিশোধিত তেল আমদানি বন্ধ করে, তবে দেশের জ্বালানি ব্যয় উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়ে যাবে। স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়া (এসবিআই) অনুমান করেছে, এই সিদ্ধান্ত নিলে ২০২৫-২৬ অর্থবছরে ভারতের জ্বালানি বিল প্রায় ৯ বিলিয়ন ডলার বাড়তে পারে। আর ২০২৬-২৭ অর্থবছরে মূল্যবৃদ্ধির কারণে এই ব্যয় প্রায় ১১.৭ বিলিয়ন ডলার পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে।

এসবিআই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চলতি অর্থবছরের বাকি সময়ে রাশিয়া থেকে তেল আমদানি বন্ধ করলে জ্বালানি ব্যয় ৯ বিলিয়ন ডলার বাড়বে। তবে দীর্ঘমেয়াদে বাজারদর বৃদ্ধির ফলে এই চাপ আরও বাড়তে পারে।

রাশিয়ান তেলের প্রতি ভারতের আগ্রহ

২০২২ সাল থেকে ভারত রাশিয়া থেকে বড় আকারে তেল আমদানি বাড়িয়েছে। পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার কারণে রাশিয়া তেল কম দামে (প্রতি ব্যারেল ৬০ ডলারের সীমা) সরবরাহ করায় ভারত এই সুযোগ কাজে লাগিয়েছে। ইউক্রেন যুদ্ধের পর রাশিয়া ভারতের প্রধান তেল সরবরাহকারী হয়ে উঠেছে। ২০১৯-২০ অর্থবছরে যেখানে রাশিয়ার অংশ ছিল মাত্র ১.৭ শতাংশ, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৫.১ শতাংশে। ওই অর্থবছরে ভারতের মোট ২৪৫ মিলিয়ন মেট্রিক টন তেল আমদানির মধ্যে রাশিয়ার সরবরাহ ছিল ৮৮ মিলিয়ন মেট্রিক টন।

ইউক্রেন যুদ্ধের আগে ভারতের প্রধান তেল সরবরাহকারী ছিল ইরাক, সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাত। বর্তমানে রাশিয়ান তেল বিশ্ব সরবরাহের প্রায় ১০ শতাংশ। যদি বৈশ্বিকভাবে রাশিয়ার তেল বর্জন করা হয়, তবে অপরিশোধিত তেলের দাম ১০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়তে পারে।

বিকল্প সরবরাহকারী ও চুক্তি

ভারতীয় শোধনাগারগুলো সাধারণত মধ্যপ্রাচ্যের উৎপাদকদের সঙ্গে বার্ষিক চুক্তিতে তেল কিনে থাকে, যেখানে মাসভিত্তিক সরবরাহ সামঞ্জস্যের সুযোগ থাকে। রাশিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞার পর ভারত তার তেল সরবরাহ নেটওয়ার্কে যুক্ত করেছে যুক্তরাষ্ট্র, পশ্চিম আফ্রিকা ও আজারবাইজানকে। সম্প্রতি গায়ানা, ব্রাজিল ও কানাডাও সরবরাহ তালিকায় যুক্ত হয়েছে, যা জ্বালানি নিরাপত্তা বাড়িয়েছে।

এসবিআই বলছে, রাশিয়ার সরবরাহ বন্ধ হলেও ভারত তার পুরনো মধ্যপ্রাচ্যের অংশীদারদের কাছ থেকে তেল কিনতে পারবে, যা আমদানি ব্যবস্থাপনা সহজ করবে। তবে রাশিয়ার তেল কমে গেলে বিশ্ববাজারে দাম বাড়ার ঝুঁকি থেকে যাবে।

ট্রাম্পের শুল্ক চাপ ও কূটনৈতিক লক্ষ্য

ট্রাম্প ভারতের ওপর অতিরিক্ত ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়েছেন, যা রাশিয়ান তেল ক্রয়ের জন্য বিশেষভাবে প্রযোজ্য হবে ২৭ আগস্ট থেকে। এর আগে ভারতের রপ্তানিতে ২৫ শতাংশ সাধারণ শুল্ক আজ থেকেই কার্যকর।

বিশ্লেষকদের মতে, এই অতিরিক্ত শুল্কের উদ্দেশ্য রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের ওপর চাপ সৃষ্টি করে ইউক্রেন যুদ্ধ শেষ করতে উৎসাহিত করা। ট্রাম্পের দাবি, ভারত কম দামে রাশিয়ার তেল কিনে “যুদ্ধযন্ত্রে জ্বালানি” যোগাচ্ছে, যা বন্ধ হওয়া উচিত। একই সঙ্গে, তিনি যুক্তরাষ্ট্রের ভারতের সঙ্গে বাণিজ্য ঘাটতি কমাতেও আগ্রহী।

ভারতের প্রতিক্রিয়া

ভারত স্পষ্ট জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের এই শুল্ক আরোপ অযৌক্তিক। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “রাশিয়া থেকে আমাদের তেল আমদানি বাজার পরিস্থিতি ও ১৪০ কোটি মানুষের জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করার উদ্দেশ্যে করা হয়। বহু দেশ তাদের নিজস্ব স্বার্থে একই কাজ করছে। যুক্তরাষ্ট্রের এই অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ অন্যায়, অযৌক্তিক ও অগ্রহণযোগ্য। জাতীয় স্বার্থ রক্ষায় ভারত প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপ নেবে।”

জনপ্রিয় সংবাদ

ঐতিহ্যের সূক্ষ্ম বিন্দুতে ইতিহাসের পুনর্জাগরণ

ডোনাল্ড ট্রাম্পের শুল্ক: রাশিয়া থেকে তেল আমদানি বন্ধ হলে ভারতের জ্বালানি ব্যয় কত বাড়বে ও বিকল্প উৎস কোথায়?

০৩:২৪:৪৯ অপরাহ্ন, শনিবার, ৯ অগাস্ট ২০২৫

ভারতের জ্বালানি ব্যয়ের সম্ভাব্য বৃদ্ধি

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ভারতের রপ্তানি পণ্যে ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেওয়ার পর, যদি ভারত রাশিয়া থেকে অপরিশোধিত তেল আমদানি বন্ধ করে, তবে দেশের জ্বালানি ব্যয় উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়ে যাবে। স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়া (এসবিআই) অনুমান করেছে, এই সিদ্ধান্ত নিলে ২০২৫-২৬ অর্থবছরে ভারতের জ্বালানি বিল প্রায় ৯ বিলিয়ন ডলার বাড়তে পারে। আর ২০২৬-২৭ অর্থবছরে মূল্যবৃদ্ধির কারণে এই ব্যয় প্রায় ১১.৭ বিলিয়ন ডলার পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে।

এসবিআই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চলতি অর্থবছরের বাকি সময়ে রাশিয়া থেকে তেল আমদানি বন্ধ করলে জ্বালানি ব্যয় ৯ বিলিয়ন ডলার বাড়বে। তবে দীর্ঘমেয়াদে বাজারদর বৃদ্ধির ফলে এই চাপ আরও বাড়তে পারে।

রাশিয়ান তেলের প্রতি ভারতের আগ্রহ

২০২২ সাল থেকে ভারত রাশিয়া থেকে বড় আকারে তেল আমদানি বাড়িয়েছে। পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার কারণে রাশিয়া তেল কম দামে (প্রতি ব্যারেল ৬০ ডলারের সীমা) সরবরাহ করায় ভারত এই সুযোগ কাজে লাগিয়েছে। ইউক্রেন যুদ্ধের পর রাশিয়া ভারতের প্রধান তেল সরবরাহকারী হয়ে উঠেছে। ২০১৯-২০ অর্থবছরে যেখানে রাশিয়ার অংশ ছিল মাত্র ১.৭ শতাংশ, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৫.১ শতাংশে। ওই অর্থবছরে ভারতের মোট ২৪৫ মিলিয়ন মেট্রিক টন তেল আমদানির মধ্যে রাশিয়ার সরবরাহ ছিল ৮৮ মিলিয়ন মেট্রিক টন।

ইউক্রেন যুদ্ধের আগে ভারতের প্রধান তেল সরবরাহকারী ছিল ইরাক, সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাত। বর্তমানে রাশিয়ান তেল বিশ্ব সরবরাহের প্রায় ১০ শতাংশ। যদি বৈশ্বিকভাবে রাশিয়ার তেল বর্জন করা হয়, তবে অপরিশোধিত তেলের দাম ১০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়তে পারে।

বিকল্প সরবরাহকারী ও চুক্তি

ভারতীয় শোধনাগারগুলো সাধারণত মধ্যপ্রাচ্যের উৎপাদকদের সঙ্গে বার্ষিক চুক্তিতে তেল কিনে থাকে, যেখানে মাসভিত্তিক সরবরাহ সামঞ্জস্যের সুযোগ থাকে। রাশিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞার পর ভারত তার তেল সরবরাহ নেটওয়ার্কে যুক্ত করেছে যুক্তরাষ্ট্র, পশ্চিম আফ্রিকা ও আজারবাইজানকে। সম্প্রতি গায়ানা, ব্রাজিল ও কানাডাও সরবরাহ তালিকায় যুক্ত হয়েছে, যা জ্বালানি নিরাপত্তা বাড়িয়েছে।

এসবিআই বলছে, রাশিয়ার সরবরাহ বন্ধ হলেও ভারত তার পুরনো মধ্যপ্রাচ্যের অংশীদারদের কাছ থেকে তেল কিনতে পারবে, যা আমদানি ব্যবস্থাপনা সহজ করবে। তবে রাশিয়ার তেল কমে গেলে বিশ্ববাজারে দাম বাড়ার ঝুঁকি থেকে যাবে।

ট্রাম্পের শুল্ক চাপ ও কূটনৈতিক লক্ষ্য

ট্রাম্প ভারতের ওপর অতিরিক্ত ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়েছেন, যা রাশিয়ান তেল ক্রয়ের জন্য বিশেষভাবে প্রযোজ্য হবে ২৭ আগস্ট থেকে। এর আগে ভারতের রপ্তানিতে ২৫ শতাংশ সাধারণ শুল্ক আজ থেকেই কার্যকর।

বিশ্লেষকদের মতে, এই অতিরিক্ত শুল্কের উদ্দেশ্য রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের ওপর চাপ সৃষ্টি করে ইউক্রেন যুদ্ধ শেষ করতে উৎসাহিত করা। ট্রাম্পের দাবি, ভারত কম দামে রাশিয়ার তেল কিনে “যুদ্ধযন্ত্রে জ্বালানি” যোগাচ্ছে, যা বন্ধ হওয়া উচিত। একই সঙ্গে, তিনি যুক্তরাষ্ট্রের ভারতের সঙ্গে বাণিজ্য ঘাটতি কমাতেও আগ্রহী।

ভারতের প্রতিক্রিয়া

ভারত স্পষ্ট জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের এই শুল্ক আরোপ অযৌক্তিক। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “রাশিয়া থেকে আমাদের তেল আমদানি বাজার পরিস্থিতি ও ১৪০ কোটি মানুষের জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করার উদ্দেশ্যে করা হয়। বহু দেশ তাদের নিজস্ব স্বার্থে একই কাজ করছে। যুক্তরাষ্ট্রের এই অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ অন্যায়, অযৌক্তিক ও অগ্রহণযোগ্য। জাতীয় স্বার্থ রক্ষায় ভারত প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপ নেবে।”