প্রেক্ষাপট ও প্রাথমিক নীতি
তিন বছর আগে বাইডেন প্রশাসন রাশিয়ার ইউক্রেন যুদ্ধের অর্থায়ন কমাতে এক কৌশল নেয়। বিশ্ববাজারে রাশিয়ার তেল সরবরাহ বন্ধ করে অর্থনৈতিক ধাক্কা দেওয়ার পরিবর্তে, যুক্তরাষ্ট্র নীরবে ভারতসহ কিছু দেশকে তেল কিনতে উৎসাহিত করে—তবে শর্ত ছিল, মস্কোকে বাজারদরের চেয়ে অনেক কম দামে বিক্রি করতে হবে। এই মূল্যসীমা কৌশল ক্রেতাদের, বিশেষ করে ভারত ও চীনের জন্য, লাভজনক হলেও রাশিয়ার অর্থনীতি বা প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের যুদ্ধাভিলাষ কমাতে ব্যর্থ হয়।
ট্রাম্পের নতুন চাপ
বর্তমানে ব্রেন্ট তেলের দাম ব্যারেলপ্রতি ৬৭ ডলার। এই সুযোগে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প মস্কোর উপর চাপ বাড়াতে উদ্যোগী হয়েছেন। তিনি ঘোষণা দেন—রাশিয়ার তেল কেনার কারণে ভারতের উপর অতিরিক্ত ২৫% শুল্ক আরোপ হবে এবং চীনসহ অন্যান্য ক্রেতাদের বিরুদ্ধেও একই ব্যবস্থা নেওয়া হতে পারে। এই পদক্ষেপে কয়েক দশকের মধ্যে প্রথমবারের মতো ওয়াশিংটন-নয়াদিল্লি সম্পর্কে বড় ধরনের উত্তেজনা তৈরি হয়েছে।
লক্ষ্য: যুদ্ধবিরতিতে বাধ্য করা
রাশিয়ার তেল ও তেলজাত পণ্যের রপ্তানি দিনে ৫০০ মিলিয়ন ডলারেরও বেশি, যা সৈন্য নিয়োগ ও যুদ্ধশিল্পে ব্যয় হয়। ইউক্রেনের প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী তিমোফি মিলোভানোভ বলেন, যদি নিষেধাজ্ঞা কড়াভাবে কার্যকর হয় এবং কয়েক মাস টিকে থাকে, তবে পুতিনের ঘনিষ্ঠদের মধ্যে উদ্বেগ তৈরি হবে। তবে গ্যাজপ্রম নেফটের সাবেক কৌশল পরিচালক সের্গেই ভাকুলেঙ্কোর মতে, রাশিয়ার তেল বিশ্ববাজার থেকে বাদ পড়লে দাম ব্যারেলপ্রতি ১০০ ডলারের বেশি হবে এবং বিশ্ব অর্থনীতি মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হবে—যা পুতিনের কাছে পশ্চিমাদের চেয়ে বেশি সহনীয়।

ইউরোপীয় ইউনিয়নের ভূমিকা
গত মাসে ইইউ নতুন নিষেধাজ্ঞায় রাশিয়ার তেলের জন্য বাজারদরের চেয়ে ১৫% কম দামে রপ্তানি সীমা নির্ধারণ করে এবং তেল পরিবহনকারী ‘শ্যাডো ফ্লিট’-এর উপর চাপ বাড়ায়। বিশেষজ্ঞ এলিনা রিবাকোভার মতে, যুক্তরাষ্ট্রের দ্বিতীয় স্তরের নিষেধাজ্ঞা রাশিয়া-চীন বাণিজ্যে ধীরগতি আনতে পারে।
রাশিয়ার অর্থনৈতিক চাপে ফাটল
নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও রাশিয়ার অর্থনীতি প্রত্যাশিতভাবে ভেঙে পড়েনি, তবে চাপ বাড়ছে। তেল কর থেকে আয় করা রাশিয়ার ন্যাশনাল ওয়েলথ ফান্ডের তরল সম্পদের ৮০% শেষ হয়ে গেছে। বাজেট ঘাটতিও বাড়ছে, যা পূরণে পুতিন সামাজিক খাতে ব্যয় কমাতে পারেন।
ভারতের প্রতিক্রিয়া
প্রথমে ভারত চুপিসারে রাশিয়ার তেল আমদানি কমাতে রাজি ছিল, কিন্তু ট্রাম্পের প্রকাশ্য সমালোচনার পর বিষয়টি রাজনৈতিক ইস্যুতে পরিণত হয়। ভারত অভিযোগ করছে, যুক্তরাষ্ট্র এখনও রাশিয়ার ইউরেনিয়াম কিনছে এবং ইউরোপ রাশিয়ার তরল প্রাকৃতিক গ্যাসের বড় ক্রেতা—যা দ্বিচারিতা। ফলে ভারত এখন রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের সংঘাতের মাঝে আটকা পড়েছে।

চীনের অবস্থান
চীন যুক্তরাষ্ট্রের চাপ মানার সম্ভাবনা কম, কারণ তারা মস্কোকে কৌশলগত অংশীদার হিসেবে দেখে। চীন রাশিয়াকে অর্থ ও প্রযুক্তি সরবরাহ করছে।
ইউক্রেনের পাল্টা আঘাত
ইউক্রেন সম্প্রতি ড্রোন হামলায় রাশিয়ার তেল শোধনাগার ও জ্বালানি মজুত কেন্দ্রকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। রুশ বিশ্লেষক আনাতোলি নেসমিয়ান মনে করেন, বন্ধ হওয়া অনেক কূপ পুনরায় চালু করা যাবে না, যদিও ভাকুলেঙ্কো একমত নন।
দীর্ঘমেয়াদি সংকেত
বিশ্লেষক এরিক গ্রিন বলেন, রাশিয়া বার্তা দিচ্ছে যে তারা দীর্ঘ সময় ইউক্রেন যুদ্ধে অটল থাকতে প্রস্তুত। তবে বিশ্ববাজারে তেলের দাম, নিষেধাজ্ঞার স্থায়িত্ব ও ক্রেতাদের অবস্থানই নির্ধারণ করবে কে আগে সমঝোতায় আসবে।
সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















