০৪:১৩ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৫
নোভোএয়ারের ডিজিটাল সাফল্য: এক্সেলেন্স ইন বিজনেস ২০২৫ পুরস্কার অর্জন দুবাইয়ে সোনার ঝলক, ইতিহাস গড়ে ২২ ক্যারেট ছুঁল ৫০০ দিরহাম বাংলাদেশের কূটনৈতিক মিশনে হামলা নিয়ে ভারতের কাছে গভীর উদ্বেগ জানাল ঢাকা পদ্মা ব্যাংকের একশ তেত্রিশতম পর্ষদ সভা অনুষ্ঠিত ঘরের মাটিতে যুদ্ধের প্রস্তুতি: ব্রিটেনের প্রতিরক্ষা পুনর্গঠনে ধীরগতি নিয়ে বাড়ছে উদ্বেগ চিপের স্বনির্ভরতার স্বপ্নে আমেরিকার লাল ফিতার বাধা অর্গান সঙ্গীতে ধ্যানের আমন্ত্রণ এলেন আরকব্রো ম্যানহাটনে ফিরছে বামিয়ান বুদ্ধ, ধ্বংসের স্মৃতি থেকে মানবতার নতুন প্রতীক ক্যামেরায় ধরা পড়ল মেরু ভালুকের বিরল দত্তক গল্প, প্রকৃতিতে নজিরবিহীন ঘটনা আগুনের ঘরে একা কুকুর, ধোঁয়া ভেদ করে মানবতার সাহসী উদ্ধার

হিরোশিমা বোমা হামলার বেঁচে থাকা কোকো কন্ডোর ক্ষমার গল্প

শিশুকালে ভয়াবহ অভিজ্ঞতার স্মৃতি

১৯৪৫ সালের ৬ আগস্ট যুক্তরাষ্ট্রের বি-২৯ বোমারু বিমান ‘এনোলা গে’ হিরোশিমায় পারমাণবিক বোমা নিক্ষেপ করে। সে সময় কোকো কন্ডোর বয়স ছিল মাত্র ৮ মাস। তিনি বাবা-মায়ের সঙ্গে প্রাণে বেঁচে যান এবং গ্রাউন্ড জিরো থেকে মাত্র ৮৭০ মিটার দূরের নাগারেকাওয়া চার্চে কেলয়েড দাগে আক্রান্ত স্কুলছাত্রীদের সঙ্গে বসবাস শুরু করেন। নিজের স্মৃতি না থাকলেও অন্যদের ক্ষতচিহ্ন তাকে সেই ভয়াবহ ঘটনার কথা মনে করিয়ে দিত। একদিন এক মেয়ে তার চুল আঁচড়ানোর সময় কোকো দেখেন মেয়েটির আঙুলগুলো একসঙ্গে জোড়া লেগে আছে। তখনই তার মনে প্রতিজ্ঞা জন্মায়— বড় হয়ে তিনি ওই বিমানের ক্রুদের খুঁজে বের করে আঘাত করবেন।

ক্রোধ থেকে প্রথম মুখোমুখি হওয়া

দশ বছর বয়সে, ১৯৫৫ সালের ১১ মে, মার্কিন টেলিভিশন শো “দিস ইজ ইয়োর লাইফ”-এ এসে তিনি প্রথমবারের মতো ‘এনোলা গে’-এর সহ-পাইলট ক্যাপ্টেন রবার্ট লুইসের মুখোমুখি হন। শোতে তার বাবা, জাপানি মেথডিস্ট পাদ্রি কিয়োশি তানিমোতোর সাক্ষাৎকার নেওয়া হচ্ছিল। লুইস ছিলেন সেই অনুষ্ঠানের ‘চমকপ্রদ’ অতিথিদের একজন।

How an A-bomb survivor found forgiveness for Hiroshima bombers - The Japan  Times

গোপন আমন্ত্রণ ও যুক্তরাষ্ট্র যাত্রা

মূলত কিয়োশি তানিমোতো ২৫ জন ‘হিরোশিমা মেডেন’-কে কেলয়েড দাগের চিকিৎসার জন্য যুক্তরাষ্ট্রে নিয়ে যান। নিউইয়র্কে পৌঁছানোর পর পিস সেন্টারের এক পরিচালক তাকে হঠাৎ লস অ্যাঞ্জেলেসে সাক্ষাৎকারের জন্য ফিরিয়ে আনেন। এদিকে জাপানে কোকো, তার মা ও তিন ভাইবোনকে গোপনে আমন্ত্রণ জানানো হয় এবং দ্রুত পাসপোর্ট দিয়ে আমেরিকার বিমানে তোলা হয়। লস অ্যাঞ্জেলেসে পৌঁছে তারা তিন দিন হোটেলে থেকে শো-এর জন্য অপেক্ষা করেন।

অনুষ্ঠানের আবেগঘন মুহূর্ত

শোতে একে একে অতিথি হিসেবে আসেন পাদ্রির পুরনো পরিচিতরা। পরে মঞ্চে উপস্থিত হন তার স্ত্রী ও সন্তানরা। শেষ অতিথি হিসেবে আসেন লুইস, যিনি সেই দিন বোমা হামলার দৃশ্য বর্ণনা করেন। কোকো মঞ্চের আড়াল থেকে রাগ নিয়ে তাকিয়ে ছিলেন তার দিকে। তার চোখে শত্রু ছিল ‘এনোলা গে’-এর ক্রুরা, যুক্তরাষ্ট্র নয়।

USAF Operations Hiroshima Atomic Bombing | Michael Liam Kedzlie

ক্রোধ থেকে ক্ষমার পথে

লুইস তার লগবুকে লেখা “হায় ঈশ্বর, আমরা কী করলাম?” বাক্যটি স্মরণ করতে গিয়ে কেঁদে ফেলেন। এই অশ্রু দেখে কোকোর মনে হয়— তিনি একজন মানুষ, শত্রু নয়। দীর্ঘদিনের ক্ষোভের জন্য তিনি অপরাধবোধে ভুগতে থাকেন। শো শেষে তিনি লুইসের হাত স্পর্শ করে বোঝান, “আপনি নন, ঘৃণা করা উচিত যুদ্ধ শুরুকারীদের।” তখন তিনি উপলব্ধি করেন, যুদ্ধের সেই ‘অশুভ’ অনুভূতি তার ভেতরেও থাকতে পারে।

সম্পর্কের স্থায়িত্ব

পরবর্তীতে কোকো ও লুইসের মধ্যে চিঠি বিনিময় চলতে থাকে। কোকো যুদ্ধবিরোধী আন্দোলনে যুক্ত হন এবং বিশ্বব্যাপী শান্তির বার্তা ছড়িয়ে দিতে থাকেন। তিনি উপলব্ধি করেন, ক্ষমা শুধু অন্যকে মুক্তি দেয় না, নিজেকেও মুক্ত করে।

জনপ্রিয় সংবাদ

নোভোএয়ারের ডিজিটাল সাফল্য: এক্সেলেন্স ইন বিজনেস ২০২৫ পুরস্কার অর্জন

হিরোশিমা বোমা হামলার বেঁচে থাকা কোকো কন্ডোর ক্ষমার গল্প

০৬:৩৭:৪৩ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৪ অগাস্ট ২০২৫

শিশুকালে ভয়াবহ অভিজ্ঞতার স্মৃতি

১৯৪৫ সালের ৬ আগস্ট যুক্তরাষ্ট্রের বি-২৯ বোমারু বিমান ‘এনোলা গে’ হিরোশিমায় পারমাণবিক বোমা নিক্ষেপ করে। সে সময় কোকো কন্ডোর বয়স ছিল মাত্র ৮ মাস। তিনি বাবা-মায়ের সঙ্গে প্রাণে বেঁচে যান এবং গ্রাউন্ড জিরো থেকে মাত্র ৮৭০ মিটার দূরের নাগারেকাওয়া চার্চে কেলয়েড দাগে আক্রান্ত স্কুলছাত্রীদের সঙ্গে বসবাস শুরু করেন। নিজের স্মৃতি না থাকলেও অন্যদের ক্ষতচিহ্ন তাকে সেই ভয়াবহ ঘটনার কথা মনে করিয়ে দিত। একদিন এক মেয়ে তার চুল আঁচড়ানোর সময় কোকো দেখেন মেয়েটির আঙুলগুলো একসঙ্গে জোড়া লেগে আছে। তখনই তার মনে প্রতিজ্ঞা জন্মায়— বড় হয়ে তিনি ওই বিমানের ক্রুদের খুঁজে বের করে আঘাত করবেন।

ক্রোধ থেকে প্রথম মুখোমুখি হওয়া

দশ বছর বয়সে, ১৯৫৫ সালের ১১ মে, মার্কিন টেলিভিশন শো “দিস ইজ ইয়োর লাইফ”-এ এসে তিনি প্রথমবারের মতো ‘এনোলা গে’-এর সহ-পাইলট ক্যাপ্টেন রবার্ট লুইসের মুখোমুখি হন। শোতে তার বাবা, জাপানি মেথডিস্ট পাদ্রি কিয়োশি তানিমোতোর সাক্ষাৎকার নেওয়া হচ্ছিল। লুইস ছিলেন সেই অনুষ্ঠানের ‘চমকপ্রদ’ অতিথিদের একজন।

How an A-bomb survivor found forgiveness for Hiroshima bombers - The Japan  Times

গোপন আমন্ত্রণ ও যুক্তরাষ্ট্র যাত্রা

মূলত কিয়োশি তানিমোতো ২৫ জন ‘হিরোশিমা মেডেন’-কে কেলয়েড দাগের চিকিৎসার জন্য যুক্তরাষ্ট্রে নিয়ে যান। নিউইয়র্কে পৌঁছানোর পর পিস সেন্টারের এক পরিচালক তাকে হঠাৎ লস অ্যাঞ্জেলেসে সাক্ষাৎকারের জন্য ফিরিয়ে আনেন। এদিকে জাপানে কোকো, তার মা ও তিন ভাইবোনকে গোপনে আমন্ত্রণ জানানো হয় এবং দ্রুত পাসপোর্ট দিয়ে আমেরিকার বিমানে তোলা হয়। লস অ্যাঞ্জেলেসে পৌঁছে তারা তিন দিন হোটেলে থেকে শো-এর জন্য অপেক্ষা করেন।

অনুষ্ঠানের আবেগঘন মুহূর্ত

শোতে একে একে অতিথি হিসেবে আসেন পাদ্রির পুরনো পরিচিতরা। পরে মঞ্চে উপস্থিত হন তার স্ত্রী ও সন্তানরা। শেষ অতিথি হিসেবে আসেন লুইস, যিনি সেই দিন বোমা হামলার দৃশ্য বর্ণনা করেন। কোকো মঞ্চের আড়াল থেকে রাগ নিয়ে তাকিয়ে ছিলেন তার দিকে। তার চোখে শত্রু ছিল ‘এনোলা গে’-এর ক্রুরা, যুক্তরাষ্ট্র নয়।

USAF Operations Hiroshima Atomic Bombing | Michael Liam Kedzlie

ক্রোধ থেকে ক্ষমার পথে

লুইস তার লগবুকে লেখা “হায় ঈশ্বর, আমরা কী করলাম?” বাক্যটি স্মরণ করতে গিয়ে কেঁদে ফেলেন। এই অশ্রু দেখে কোকোর মনে হয়— তিনি একজন মানুষ, শত্রু নয়। দীর্ঘদিনের ক্ষোভের জন্য তিনি অপরাধবোধে ভুগতে থাকেন। শো শেষে তিনি লুইসের হাত স্পর্শ করে বোঝান, “আপনি নন, ঘৃণা করা উচিত যুদ্ধ শুরুকারীদের।” তখন তিনি উপলব্ধি করেন, যুদ্ধের সেই ‘অশুভ’ অনুভূতি তার ভেতরেও থাকতে পারে।

সম্পর্কের স্থায়িত্ব

পরবর্তীতে কোকো ও লুইসের মধ্যে চিঠি বিনিময় চলতে থাকে। কোকো যুদ্ধবিরোধী আন্দোলনে যুক্ত হন এবং বিশ্বব্যাপী শান্তির বার্তা ছড়িয়ে দিতে থাকেন। তিনি উপলব্ধি করেন, ক্ষমা শুধু অন্যকে মুক্তি দেয় না, নিজেকেও মুক্ত করে।