১০:৪৪ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৯ নভেম্বর ২০২৫

সাদা পাথর: পাচারকারীদের নজরে এর বিশেষ আকর্ষণ

সাদা পাথর (White Stone) শব্দটি সাধারণভাবে অনেক কিছুকে বোঝাতে ব্যবহৃত হতে পারে। তবে পাচার ও অবৈধ ব্যবসার ক্ষেত্রে এর অর্থ সাধারণত মূল্যবান বা অর্ধ-মূল্যবান প্রাকৃতিক পাথর, বিশেষ ধরনের খনিজ, অথবা উচ্চ চাহিদাসম্পন্ন নির্মাণ ও অলংকার উপকরণ। এই পাথরগুলো কখনো শিল্পের কাঁচামাল, কখনো রত্ন, আবার কখনো ভাস্কর্য ও সাজসজ্জার জন্য ব্যবহৃত হয়। সাদা পাথরের বাণিজ্যে বিশ্বজুড়ে বৈধ বাজার থাকলেও, অনেক অঞ্চলে অবৈধ আহরণ ও পাচারের মাধ্যমে বিপুল অর্থ প্রবাহ ঘটে।

উচ্চ আর্থিক মূল্য ও বাজার চাহিদা

সাদা পাথরের কিছু প্রজাতি যেমন মার্বেল, কোয়ার্টজ, হোয়াইট জেড বা বিশেষ খনিজযুক্ত স্ফটিক পাথর আন্তর্জাতিক বাজারে অত্যন্ত দামী। স্থাপত্য, মসজিদ-গির্জা নির্মাণ, রাজকীয় প্রাসাদ সাজানো এবং উচ্চমানের মূর্তি তৈরিতে এদের ব্যবহার চাহিদা বাড়ায়। উন্নত দেশগুলোতে এই পাথরের প্রতি ঝোঁক অনেক বেশি, ফলে পাচারকারীরা অল্প সময়ে বিপুল মুনাফা পেতে পারে।

ডেমরা থেকে ৪০ হাজার ঘনফুট সাদা পাথর উদ্ধার - Bangla news

বিরলতা ও সীমিত সরবরাহ

সব অঞ্চলে এই ধরনের সাদা পাথর পাওয়া যায় না। কিছু বিশেষ খনিজ শুধুমাত্র নির্দিষ্ট ভূখণ্ডে গঠিত হয়, যেমন হিমালয়ের কিছু এলাকা, মিয়ানমার বা আফগানিস্তানের কিছু খনি। সীমিত সরবরাহ ও উচ্চ চাহিদা পাচারের প্রলুব্ধতা বাড়িয়ে দেয়।

সহজে লুকানো ও পরিবহনযোগ্য

সাদা পাথরের অনেক প্রকারই ছোট আকারের, কিন্তু দামে বেশি। ফলে সেগুলো সহজে ব্যাগ, কনটেইনার, এমনকি ব্যক্তিগত লাগেজে লুকিয়ে আন্তর্জাতিক সীমান্ত পার করা যায়। আবার বড় আকারের মার্বেল ব্লকও “নির্মাণ সামগ্রী” হিসেবে বৈধ চালান আড়ালে অবৈধভাবে পাঠানো হয়।

অর্থপাচার ও জঙ্গি অর্থায়ন রোধে বাংলাদেশের উন্নতি – Padmatimes24

অর্থপাচার ও অবৈধ বিনিয়োগের মাধ্যম

মূল্যবান সাদা পাথর প্রায়ই অর্থপাচারের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হয়। নগদ অর্থের পরিবর্তে এই পাথর লেনদেন করা হলে, তার উৎস ট্র্যাক করা কঠিন হয়। তাছাড়া, এগুলো আন্তর্জাতিক বাজারে বিক্রি করে বৈধ আয়ের আড়ালে অবৈধ অর্থ বৈধ করা সম্ভব।

সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় গুরুত্ব

অনেক সাদা পাথরের বিশেষ সাংস্কৃতিক বা ধর্মীয় মূল্য রয়েছে। যেমন, শ্বেত মার্বেল দিয়ে তাজমহল বা বিশ্ববিখ্যাত মসজিদ ও মন্দির নির্মাণের ঐতিহ্য। ফলে ধনী ক্রেতারা ব্যক্তিগত প্রাসাদ, সমাধি বা স্মৃতিস্তম্ভে আসল সাদা পাথর ব্যবহার করতে চায়। এই প্রবণতা পাচারকারীদের জন্য বাজার তৈরি করে।

ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে নজরদারি বৃদ্ধি

দুর্বল আইন-শৃঙ্খলা ও দুর্নীতি

যেসব দেশে খনিজ আহরণে কড়া আইন নেই, অথবা আইন থাকলেও দুর্নীতি ও সীমান্ত নিয়ন্ত্রণের দুর্বলতা আছে, সেসব স্থানে সাদা পাথরের পাচার বেশি হয়। স্থানীয় প্রশাসনের কিছু অংশ ঘুষের বিনিময়ে পাচার কার্যক্রমে চোখ বন্ধ করে থাকে।

 শিল্প ও গয়না খাতে বহুমুখী ব্যবহার

সাদা পাথরের অনেক প্রকারই গয়না, অলঙ্কার, ভাস্কর্য, শোরুম সাজসজ্জা, উচ্চমানের ফ্লোরিং এবং অভ্যন্তরীণ ডিজাইনে ব্যবহৃত হয়। এই বহুমুখী ব্যবহারের জন্য আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে এর দাম স্থিতিশীল থাকে, যা পাচারকারীদের লাভের নিশ্চয়তা দেয়।

উপসংহার

সাদা পাথরের প্রতি পাচারকারী ও অবৈধ ব্যবসায়ীদের আকর্ষণের মূল কারণ হলো এর উচ্চ অর্থনৈতিক মূল্য, সীমিত প্রাপ্যতা, সাংস্কৃতিক মর্যাদা এবং সহজে পাচারের সুবিধা। বৈধ বাজার থাকলেও অবৈধ চাহিদা ও দুর্বল আইন-শৃঙ্খলার সুযোগে পাচারকারীরা ঝুঁকি নিয়ে তারা এর বাণিজ্যে জড়িয়ে পড়ে। ফলে শুধু প্রাকৃতিক সম্পদ নয়, রাষ্ট্রের অর্থনীতি ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যও ক্ষতির মুখে পড়ে।

জনপ্রিয় সংবাদ

সাদা পাথর: পাচারকারীদের নজরে এর বিশেষ আকর্ষণ

০৭:৩৪:১৪ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৫ অগাস্ট ২০২৫

সাদা পাথর (White Stone) শব্দটি সাধারণভাবে অনেক কিছুকে বোঝাতে ব্যবহৃত হতে পারে। তবে পাচার ও অবৈধ ব্যবসার ক্ষেত্রে এর অর্থ সাধারণত মূল্যবান বা অর্ধ-মূল্যবান প্রাকৃতিক পাথর, বিশেষ ধরনের খনিজ, অথবা উচ্চ চাহিদাসম্পন্ন নির্মাণ ও অলংকার উপকরণ। এই পাথরগুলো কখনো শিল্পের কাঁচামাল, কখনো রত্ন, আবার কখনো ভাস্কর্য ও সাজসজ্জার জন্য ব্যবহৃত হয়। সাদা পাথরের বাণিজ্যে বিশ্বজুড়ে বৈধ বাজার থাকলেও, অনেক অঞ্চলে অবৈধ আহরণ ও পাচারের মাধ্যমে বিপুল অর্থ প্রবাহ ঘটে।

উচ্চ আর্থিক মূল্য ও বাজার চাহিদা

সাদা পাথরের কিছু প্রজাতি যেমন মার্বেল, কোয়ার্টজ, হোয়াইট জেড বা বিশেষ খনিজযুক্ত স্ফটিক পাথর আন্তর্জাতিক বাজারে অত্যন্ত দামী। স্থাপত্য, মসজিদ-গির্জা নির্মাণ, রাজকীয় প্রাসাদ সাজানো এবং উচ্চমানের মূর্তি তৈরিতে এদের ব্যবহার চাহিদা বাড়ায়। উন্নত দেশগুলোতে এই পাথরের প্রতি ঝোঁক অনেক বেশি, ফলে পাচারকারীরা অল্প সময়ে বিপুল মুনাফা পেতে পারে।

ডেমরা থেকে ৪০ হাজার ঘনফুট সাদা পাথর উদ্ধার - Bangla news

বিরলতা ও সীমিত সরবরাহ

সব অঞ্চলে এই ধরনের সাদা পাথর পাওয়া যায় না। কিছু বিশেষ খনিজ শুধুমাত্র নির্দিষ্ট ভূখণ্ডে গঠিত হয়, যেমন হিমালয়ের কিছু এলাকা, মিয়ানমার বা আফগানিস্তানের কিছু খনি। সীমিত সরবরাহ ও উচ্চ চাহিদা পাচারের প্রলুব্ধতা বাড়িয়ে দেয়।

সহজে লুকানো ও পরিবহনযোগ্য

সাদা পাথরের অনেক প্রকারই ছোট আকারের, কিন্তু দামে বেশি। ফলে সেগুলো সহজে ব্যাগ, কনটেইনার, এমনকি ব্যক্তিগত লাগেজে লুকিয়ে আন্তর্জাতিক সীমান্ত পার করা যায়। আবার বড় আকারের মার্বেল ব্লকও “নির্মাণ সামগ্রী” হিসেবে বৈধ চালান আড়ালে অবৈধভাবে পাঠানো হয়।

অর্থপাচার ও জঙ্গি অর্থায়ন রোধে বাংলাদেশের উন্নতি – Padmatimes24

অর্থপাচার ও অবৈধ বিনিয়োগের মাধ্যম

মূল্যবান সাদা পাথর প্রায়ই অর্থপাচারের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হয়। নগদ অর্থের পরিবর্তে এই পাথর লেনদেন করা হলে, তার উৎস ট্র্যাক করা কঠিন হয়। তাছাড়া, এগুলো আন্তর্জাতিক বাজারে বিক্রি করে বৈধ আয়ের আড়ালে অবৈধ অর্থ বৈধ করা সম্ভব।

সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় গুরুত্ব

অনেক সাদা পাথরের বিশেষ সাংস্কৃতিক বা ধর্মীয় মূল্য রয়েছে। যেমন, শ্বেত মার্বেল দিয়ে তাজমহল বা বিশ্ববিখ্যাত মসজিদ ও মন্দির নির্মাণের ঐতিহ্য। ফলে ধনী ক্রেতারা ব্যক্তিগত প্রাসাদ, সমাধি বা স্মৃতিস্তম্ভে আসল সাদা পাথর ব্যবহার করতে চায়। এই প্রবণতা পাচারকারীদের জন্য বাজার তৈরি করে।

ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে নজরদারি বৃদ্ধি

দুর্বল আইন-শৃঙ্খলা ও দুর্নীতি

যেসব দেশে খনিজ আহরণে কড়া আইন নেই, অথবা আইন থাকলেও দুর্নীতি ও সীমান্ত নিয়ন্ত্রণের দুর্বলতা আছে, সেসব স্থানে সাদা পাথরের পাচার বেশি হয়। স্থানীয় প্রশাসনের কিছু অংশ ঘুষের বিনিময়ে পাচার কার্যক্রমে চোখ বন্ধ করে থাকে।

 শিল্প ও গয়না খাতে বহুমুখী ব্যবহার

সাদা পাথরের অনেক প্রকারই গয়না, অলঙ্কার, ভাস্কর্য, শোরুম সাজসজ্জা, উচ্চমানের ফ্লোরিং এবং অভ্যন্তরীণ ডিজাইনে ব্যবহৃত হয়। এই বহুমুখী ব্যবহারের জন্য আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে এর দাম স্থিতিশীল থাকে, যা পাচারকারীদের লাভের নিশ্চয়তা দেয়।

উপসংহার

সাদা পাথরের প্রতি পাচারকারী ও অবৈধ ব্যবসায়ীদের আকর্ষণের মূল কারণ হলো এর উচ্চ অর্থনৈতিক মূল্য, সীমিত প্রাপ্যতা, সাংস্কৃতিক মর্যাদা এবং সহজে পাচারের সুবিধা। বৈধ বাজার থাকলেও অবৈধ চাহিদা ও দুর্বল আইন-শৃঙ্খলার সুযোগে পাচারকারীরা ঝুঁকি নিয়ে তারা এর বাণিজ্যে জড়িয়ে পড়ে। ফলে শুধু প্রাকৃতিক সম্পদ নয়, রাষ্ট্রের অর্থনীতি ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যও ক্ষতির মুখে পড়ে।