০৫:০৩ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৩০ অক্টোবর ২০২৫
অনিশ্চয়তার ভেতর ভাবনার সিনেমা—‘আফটার দ্য হান্ট’-এ জুলিয়া রবার্টস ও গুয়ার্ডানিনোর নতুন দৃষ্টিভঙ্গি ঋণ কমাতে কেরিং-এর বড় পদক্ষেপ ড্রোন প্রতিরোধে বৈশ্বিক দৌড় পিয়ানোর অলিম্পিকের চূড়ান্ত পর্বে সুরের লড়াই , কানাডার কেভিন চেন ফাইনালে জেমস ফক্সের ‘ক্রাফ্টল্যান্ড’—ব্রিটেনের হারিয়ে যাওয়া হস্তশিল্পের জীবন্ত ইতিহাস বিলুপ্তির তালিকায় নতুন নাম—একটি পাখি, একটি শুঁয়োপোকা ও একটি শ্রু প্রজাতি হারিয়ে গেল পৃথিবী থেকে মুর্শিদাবাদ-কাহিনী (পর্ব-৩৫৬) কানাডায় অনিরাপদ বোধ করছেন ভারতীয়রা, উদ্বেগ জানালেন নয়াদিল্লির হাইকমিশনার নির্বাচন বানচালে হঠাৎ আক্রমণও হতে পারে জেএমবির তৎপরতার সময় বোয়ালমারীতে নির্মম হত্যাকাণ্ড—পলাতক চার আসামির অনুপস্থিতিতে আদালতের দণ্ডাদেশ

পাকিস্তানে ভারী বর্ষণ ও বন্যায় ৩০০-এর বেশি নিহত

দুই দিনের ভারী বর্ষণ ও হঠাৎ বন্যায় পাকিস্তানের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে ৩০০ জনেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন। সাধারণত বর্ষাকালে বিরল এমন প্রবল ঝড়, বাতাসের সঙ্গে বজ্রপাত, ভূমিধস ও হঠাৎ জলপ্রবাহ (ফ্ল্যাশ ফ্লাড) মিলিয়ে এ মৃত্যুঘণ্টা বাজিয়েছে। ঘটনাটি এই বর্ষাকালের মধ্যে সবচেয়ে প্রাণঘাতী বলে চিহ্নিত করা হয়েছে।

প্রাদেশিক দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, শনিবারের হিসেবে নিশ্চিত মৃতের সংখ্যা ৩০৭। এখনও অনেকে নিখোঁজ রয়েছেন। প্রতিবেশী ভারত ও নেপালেও সাম্প্রতিক দিনগুলোতে ভারী বর্ষণ ও বন্যায় ব্যাপক দুর্ভোগ বেড়েছে।

দুর্যোগের কাহিনী
বাজাউর জেলার এক বাসিন্দা রাতের বেলা বজ্রধ্বনিতে ঘুম থেকে জেগে দেখেন তার বাড়ির ছাদ ধসে পড়েছে। প্রতিবেশীদের সহায়তা নিয়ে ধ্বংসাবশেষ সরিয়ে তিনি ধারণা করেন বজ্রপাতের পর আগুন লেগে ভূমিধস হয়ে পরিবারের ছয় সদস্য — তার স্ত্রী ও পাঁচ সন্তান — প্রাণ হারান। তারপর শুক্রবার তিনি ও স্থানীয়রা মাটিতে দাফন করেছিলেন। স্থানীয় এক প্রত্যক্ষদর্শী বলেছেন, “চারদিকে শুধু ধ্বংস, সর্বত্র ধ্বংস।”

বুনের জেলার বাশোনরাই গ্রামের ৬২-বছরের জাহিদ হোসেন বলেন, “আমার গ্রামের ৬০-এরও বেশি মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন, এবং ২০-এর বেশি নিখোঁজ।” তিনি কয়েক মুহূর্তের মধ্যে বাড়ি ভেসে যাওয়ার দৃশ্য বর্ণনা করেছেন।

জেলা উদ্ধার তৎপরতা (Rescue 1122)-এর মুখপাত্র বিলাল ফাইজি জানিয়েছেন, মৃতের সংখ্যা বাড়তে পারে কারণ এখনও অনেক দেহ ধ্বংসস্তূপ থেকে বের করা হচ্ছে।

আরও তথ্য অনুযায়ী, বুনের জেলা সবচেয়ে কঠিনভাবে প্রভাবিত হয়েছে—ওই জেলা থেকে এখন পর্যন্ত ১৮৪ জনের মৃত্যুর তথ্য পাওয়া গেছে। এখানকার হঠাৎ আকাশভাঙা বর্ষণে গ্রামগুলো এক মুহূর্তের মধ্যে প্লাবিত হয়ে যায়।

সরকারি প্রতিক্রিয়া ও ত্রাণ কার্যক্রম
উপপ্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দার জানিয়েছেন, সেনা ও নাগরিক উভয় স্তরের টিম উদ্ধার কাজে নিয়োজিত রয়েছে, আর প্রধানমন্ত্রী জরুরি বৈঠকও করেছেন। প্রাদেশিক চিফ সেক্রেটারি শাবাব আলী শাহ যুক্ত করেছেন, উদ্ধার-তথ্য নিরীক্ষণের কাজে স্থানীয় কর্মকর্তাদের পাঠানো হয়েছে, এবং আশ্রয়কেন্দ্র, মেডিক্যাল ক্যাম্প ও খাদ্য সরবরাহের ব্যবস্থা চলছে।

বিমানের দুর্ঘটনা
শুক্রবার এক উদ্ধার হেলিকপ্টার মন্দ আবহাওয়ার কারণে বিধ্বস্ত হয়ে যায় ও পাঁচ সদস্য নিহত হন — এই ঘটনাও উদ্ধার কার্যক্রমকে জটিল করে তোলে।

জলবায়ু ও নির্মাণগত দুর্বলতা
দেশের প্রধান আবহাওয়া বিশেষজ্ঞ জাহির বাবর জানিয়েছেন, এলাকায় তীব্র আবহাওয়ার ঘটনা বেড়েছে, যা সীমিত সময়ের মধ্যে বিপুল বৃষ্টিপাত ও হঠাৎ বন্যার কারণ। মানুষ নিচু এলাকায় তা বুঝে ওঠার আগেই প্লাবিত হচ্ছে। এ অবস্থাকে একদিকে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব বলা যায়, অন্যদিকে নদীপাড় ও খালের পাশে অনিয়ন্ত্রিত নির্মাণ, বর্জ্য ফেলা, প্রবাহের বাধা পরিস্থিতিকে আরও বিপজ্জনক করে তুলেছে।

সংক্ষিপ্ত চিত্র

৩০০+ নিহত, শতাধিক নিখোঁজ
বাজাউর ও বুনের সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত জেলা
উদ্ধার ও ত্রাণ তৎপরতা চলছে, হেলিকপ্টার দুর্ঘটনা ঘটেছে
জলবায়ু পরিবর্তন ও অবৈজ্ঞানিক নির্মাণ প্রবাহরোধ বাড়িয়েছে বিপদ

মধ্য আগস্ট ২০২৫-এ পাকিস্তানের বিশেষত উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে ভয়াবহ বর্ষণ ও ফ্ল্যাশ ফ্লাডে ৩০০ জনেরও বেশি মানুষের প্রাণহানি ঘটে। বুনের ও বাজাউর জেলা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত; উদ্ধার কার্যক্রম জোরদার করা হলেও হেলিকপ্টার দুর্ঘটনা, অবৈজ্ঞানিক নির্মাণ, বর্জ্য ও জলবায়ু পরিবর্তনের সম্মিলিত প্রভাবে বিপর্যয় আরও প্রকট হয়ে ওঠে। সরকারি পর্যায়ে জরুরি ব্যবস্থা নেয়া হলেও চরম প্রস্তুতির অভাব ও দুর্ব্যবস্থাপনাই এ দুর্যোগকে মারাত্মক আকার দিয়েছে।

শেষ পর্যায়ে, এ সংকট মনে করিয়ে দিচ্ছে প্রতিটি অপরিকল্পিত নির্মাণ, নদীপাড়ে অনিয়ন্ত্রিত বসবাস ও বর্জ্য নিক্ষেপ আমাদের প্রাকৃতিক প্রতিরোধ ক্ষমতা হ্রাস করে — আর তীব্র জলবায়ু প্রভাবে জলের প্রবাহ আরও ভয়াবহ রূপ নেয়

জনপ্রিয় সংবাদ

অনিশ্চয়তার ভেতর ভাবনার সিনেমা—‘আফটার দ্য হান্ট’-এ জুলিয়া রবার্টস ও গুয়ার্ডানিনোর নতুন দৃষ্টিভঙ্গি

পাকিস্তানে ভারী বর্ষণ ও বন্যায় ৩০০-এর বেশি নিহত

১১:২৩:১৯ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৭ অগাস্ট ২০২৫

দুই দিনের ভারী বর্ষণ ও হঠাৎ বন্যায় পাকিস্তানের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে ৩০০ জনেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন। সাধারণত বর্ষাকালে বিরল এমন প্রবল ঝড়, বাতাসের সঙ্গে বজ্রপাত, ভূমিধস ও হঠাৎ জলপ্রবাহ (ফ্ল্যাশ ফ্লাড) মিলিয়ে এ মৃত্যুঘণ্টা বাজিয়েছে। ঘটনাটি এই বর্ষাকালের মধ্যে সবচেয়ে প্রাণঘাতী বলে চিহ্নিত করা হয়েছে।

প্রাদেশিক দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, শনিবারের হিসেবে নিশ্চিত মৃতের সংখ্যা ৩০৭। এখনও অনেকে নিখোঁজ রয়েছেন। প্রতিবেশী ভারত ও নেপালেও সাম্প্রতিক দিনগুলোতে ভারী বর্ষণ ও বন্যায় ব্যাপক দুর্ভোগ বেড়েছে।

দুর্যোগের কাহিনী
বাজাউর জেলার এক বাসিন্দা রাতের বেলা বজ্রধ্বনিতে ঘুম থেকে জেগে দেখেন তার বাড়ির ছাদ ধসে পড়েছে। প্রতিবেশীদের সহায়তা নিয়ে ধ্বংসাবশেষ সরিয়ে তিনি ধারণা করেন বজ্রপাতের পর আগুন লেগে ভূমিধস হয়ে পরিবারের ছয় সদস্য — তার স্ত্রী ও পাঁচ সন্তান — প্রাণ হারান। তারপর শুক্রবার তিনি ও স্থানীয়রা মাটিতে দাফন করেছিলেন। স্থানীয় এক প্রত্যক্ষদর্শী বলেছেন, “চারদিকে শুধু ধ্বংস, সর্বত্র ধ্বংস।”

বুনের জেলার বাশোনরাই গ্রামের ৬২-বছরের জাহিদ হোসেন বলেন, “আমার গ্রামের ৬০-এরও বেশি মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন, এবং ২০-এর বেশি নিখোঁজ।” তিনি কয়েক মুহূর্তের মধ্যে বাড়ি ভেসে যাওয়ার দৃশ্য বর্ণনা করেছেন।

জেলা উদ্ধার তৎপরতা (Rescue 1122)-এর মুখপাত্র বিলাল ফাইজি জানিয়েছেন, মৃতের সংখ্যা বাড়তে পারে কারণ এখনও অনেক দেহ ধ্বংসস্তূপ থেকে বের করা হচ্ছে।

আরও তথ্য অনুযায়ী, বুনের জেলা সবচেয়ে কঠিনভাবে প্রভাবিত হয়েছে—ওই জেলা থেকে এখন পর্যন্ত ১৮৪ জনের মৃত্যুর তথ্য পাওয়া গেছে। এখানকার হঠাৎ আকাশভাঙা বর্ষণে গ্রামগুলো এক মুহূর্তের মধ্যে প্লাবিত হয়ে যায়।

সরকারি প্রতিক্রিয়া ও ত্রাণ কার্যক্রম
উপপ্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দার জানিয়েছেন, সেনা ও নাগরিক উভয় স্তরের টিম উদ্ধার কাজে নিয়োজিত রয়েছে, আর প্রধানমন্ত্রী জরুরি বৈঠকও করেছেন। প্রাদেশিক চিফ সেক্রেটারি শাবাব আলী শাহ যুক্ত করেছেন, উদ্ধার-তথ্য নিরীক্ষণের কাজে স্থানীয় কর্মকর্তাদের পাঠানো হয়েছে, এবং আশ্রয়কেন্দ্র, মেডিক্যাল ক্যাম্প ও খাদ্য সরবরাহের ব্যবস্থা চলছে।

বিমানের দুর্ঘটনা
শুক্রবার এক উদ্ধার হেলিকপ্টার মন্দ আবহাওয়ার কারণে বিধ্বস্ত হয়ে যায় ও পাঁচ সদস্য নিহত হন — এই ঘটনাও উদ্ধার কার্যক্রমকে জটিল করে তোলে।

জলবায়ু ও নির্মাণগত দুর্বলতা
দেশের প্রধান আবহাওয়া বিশেষজ্ঞ জাহির বাবর জানিয়েছেন, এলাকায় তীব্র আবহাওয়ার ঘটনা বেড়েছে, যা সীমিত সময়ের মধ্যে বিপুল বৃষ্টিপাত ও হঠাৎ বন্যার কারণ। মানুষ নিচু এলাকায় তা বুঝে ওঠার আগেই প্লাবিত হচ্ছে। এ অবস্থাকে একদিকে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব বলা যায়, অন্যদিকে নদীপাড় ও খালের পাশে অনিয়ন্ত্রিত নির্মাণ, বর্জ্য ফেলা, প্রবাহের বাধা পরিস্থিতিকে আরও বিপজ্জনক করে তুলেছে।

সংক্ষিপ্ত চিত্র

৩০০+ নিহত, শতাধিক নিখোঁজ
বাজাউর ও বুনের সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত জেলা
উদ্ধার ও ত্রাণ তৎপরতা চলছে, হেলিকপ্টার দুর্ঘটনা ঘটেছে
জলবায়ু পরিবর্তন ও অবৈজ্ঞানিক নির্মাণ প্রবাহরোধ বাড়িয়েছে বিপদ

মধ্য আগস্ট ২০২৫-এ পাকিস্তানের বিশেষত উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে ভয়াবহ বর্ষণ ও ফ্ল্যাশ ফ্লাডে ৩০০ জনেরও বেশি মানুষের প্রাণহানি ঘটে। বুনের ও বাজাউর জেলা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত; উদ্ধার কার্যক্রম জোরদার করা হলেও হেলিকপ্টার দুর্ঘটনা, অবৈজ্ঞানিক নির্মাণ, বর্জ্য ও জলবায়ু পরিবর্তনের সম্মিলিত প্রভাবে বিপর্যয় আরও প্রকট হয়ে ওঠে। সরকারি পর্যায়ে জরুরি ব্যবস্থা নেয়া হলেও চরম প্রস্তুতির অভাব ও দুর্ব্যবস্থাপনাই এ দুর্যোগকে মারাত্মক আকার দিয়েছে।

শেষ পর্যায়ে, এ সংকট মনে করিয়ে দিচ্ছে প্রতিটি অপরিকল্পিত নির্মাণ, নদীপাড়ে অনিয়ন্ত্রিত বসবাস ও বর্জ্য নিক্ষেপ আমাদের প্রাকৃতিক প্রতিরোধ ক্ষমতা হ্রাস করে — আর তীব্র জলবায়ু প্রভাবে জলের প্রবাহ আরও ভয়াবহ রূপ নেয়