চীনের শেয়ারবাজার সোমবার ঊর্ধ্বমুখী অবস্থায় বন্ধ হয়েছে। সাংহাই বেঞ্চমার্ক সূচক প্রায় এক দশকের মধ্যে সর্বোচ্চ স্থানে পৌঁছেছে এবং এ-শেয়ারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর বাজারমূল্য প্রথমবারের মতো ১০০ ট্রিলিয়ন ইউয়ান (প্রায় ১৩.৯২ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার) অতিক্রম করেছে। বিশ্লেষকরা বলেছেন, এ অর্জন সরকারের পুঁজিবাজার স্থিতিশীল করা এবং উদ্ভাবন-নির্ভর প্রবৃদ্ধি ত্বরান্বিত করার নীতির কার্যকারিতা তুলে ধরেছে।
বিনিয়োগকারীদের আস্থা ও অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপট
চীনের পুঁজিবাজারের এই স্থিতিশীল প্রবৃদ্ধির পেছনে বিনিয়োগকারীদের বাড়তি আস্থার ভূমিকা রয়েছে। চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে দেশটির অর্থনীতি ৫.৩ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে, যা বাজারকে আরও শক্তিশালী করেছে।
সূচকের অগ্রগতি
সোমবার সাংহাই কম্পোজিট সূচক ০.৮৫ শতাংশ বেড়ে ৩,৭২৮.০৩ পয়েন্টে দাঁড়ায়, যা আগস্ট ২০১৫ সালের পর সর্বোচ্চ। দিনের ভেতরে লেনদেনে সূচকটি ৩,৭৪৫.৯৪ পয়েন্টে উঠেছিল। শেনঝেন কম্পোনেন্ট সূচক ১.৭৩ শতাংশ বেড়ে ১১,৮৩৫.৫৭ পয়েন্টে এবং চি-নেক্সট সূচক ২.৮৪ শতাংশ বেড়ে ২,৬০৬.২ পয়েন্টে পৌঁছেছে।
৪,০০০-রও বেশি শেয়ারের দাম বাড়ে, যেখানে ব্রোকারেজ, ফিনটেক, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) হার্ডওয়্যার, রেয়ার-আর্থ ম্যাগনেট এবং ফিল্ম খাত সবচেয়ে বেশি লাভ করে।
উদ্ভাবনের প্রভাব
বিশ্লেষকরা জানান, বছরের শুরু থেকেই এই ঊর্ধ্বগতি তৈরি হয়েছে চীনের ধারাবাহিক প্রযুক্তি উদ্ভাবন প্রচেষ্টার কারণে। বিশেষ করে প্রযুক্তি কোম্পানি ও উদ্ভাবনী প্রতিষ্ঠানগুলো বাজারে অগ্রগতির গতি তৈরি করেছে।
বিশেষজ্ঞদের মন্তব্য
শাংহাই ইউনিভার্সিটি অব ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইকোনমিকস-এর অধ্যাপক শি জুনইয়াং বলেছেন, চীনের এ-শেয়ার বাজারের পুনরুদ্ধার বিনিয়োগকারীদের দৃষ্টিভঙ্গির মৌলিক পরিবর্তনের ফল। দেশটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে বাণিজ্য সংঘাতসহ নানা বাহ্যিক চাপ ও অভ্যন্তরীণ চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও এখন পর্যন্ত ভালো অবস্থানে রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, সরকারের ধারাবাহিক সহায়ক নীতি—ভোক্তা ব্যয় ও বিনিয়োগ বাড়ানো, পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পদক্ষেপ—সব মিলিয়ে বাজারকে শক্ত ভিত দিয়েছে।
চংইয়াং ইনস্টিটিউট ফর ফাইন্যান্সিয়াল স্টাডিজ-এর গবেষক দং শাওপেং বলেন, সোমবারের এই মাইলফলক চলমান অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের প্রতীক। চীনের পুঁজিবাজারের প্রবৃদ্ধি সম্ভাবনা নিয়ে আশাবাদ এখন মূলধারার ঐকমত্যে পরিণত হচ্ছে।
সরকারি নীতি ও বৈদেশিক বিনিয়োগ
সম্প্রতি ঘোষিত নতুন নীতিমালার মধ্যে ব্যক্তিগত ভোক্তা ঋণে সুদ ভর্তুকির পরিকল্পনা রয়েছে, যা ভোক্তা ব্যয় বাড়াতে সহায়তা করবে।
একই সময়ে, বৈদেশিক বিনিয়োগকারীরাও চীনের বাজারকে ইতিবাচকভাবে দেখছেন। ২০২৫ সালের প্রথমার্ধে বিদেশি পুঁজি প্রবাহ স্থিতিশীল থেকেছে এবং বাজারের দৃঢ় পারফরম্যান্স এতে আস্থা যোগাচ্ছে।
ফেব্রুয়ারিতে ডয়চে ব্যাংকের বিশ্লেষক পিটার মিলিকেন লিখেছিলেন, মধ্যমেয়াদে চীনা শেয়ারবাজার পূর্ববর্তী সর্বোচ্চ স্তর অতিক্রম করবে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাভিত্তিক পণ্য ‘ডিপসিক’ এবং বৈদ্যুতিক গাড়ি শিল্পে উদ্ভাবন এর প্রধান চালক হবে। এরপর বিভিন্ন আন্তর্জাতিক বিনিয়োগ ব্যাংক চীনের অর্থনৈতিক সম্ভাবনা নিয়ে আশাবাদ ব্যক্ত করে এবং দেশটির সম্পদের রেটিং ‘নিউট্রাল’ থেকে ‘ওভারওয়েট’-এ উন্নীত করে।
বৈদেশিক পুঁজির প্রবাহ
জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত বিদেশি বিনিয়োগকারীরা চীনা ইকুইটি ও মিউচুয়াল ফান্ডে ১০.১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করেছেন, যা গত দুই বছরের ধারা উল্টে দিয়েছে। শুধু মে ও জুন মাসেই এই বিনিয়োগ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৮.৮ বিলিয়ন ডলারে। বৈদেশিক মুদ্রা প্রশাসনের কর্মকর্তা জিয়া নিং জুলাইয়ে জানান, ইউয়ানভিত্তিক সম্পদে বিদেশি বিনিয়োগ সাধারণত স্থিতিশীল রয়েছে। বর্তমানে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের হাতে থাকা ইউয়ান বন্ডের পরিমাণ ৬০০ বিলিয়ন ডলার অতিক্রম করেছে, যা নতুন রেকর্ড।
ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা
বিশ্লেষকদের মতে, চীনের দ্রুত শিল্প রূপান্তর এবং কাঠামোগত সংস্কার, বিশেষ করে প্রযুক্তিগত উদ্ভাবনে অগ্রগতি, নতুন খাতগুলোতে প্রবৃদ্ধির বিশাল সম্ভাবনা তৈরি করছে।
শেনঝেনভিত্তিক ফার্স্ট সিফ্রন্ট ফান্ডের প্রধান অর্থনীতিবিদ ইয়াং দেলং বলেন, জুলাই মাসে শিল্প পুঁজি ও বিদেশি পুঁজির পাশাপাশি আরও বেশি মানুষের ব্যাংক আমানত পুঁজিবাজারে প্রবাহিত হয়েছে। তিনি মনে করেন, মধ্যমেয়াদে ভোগ্যপণ্য, আর্থিক খাত এবং প্রযুক্তি শেয়ার বাজারে প্রবৃদ্ধির প্রধান চালিকা শক্তি হতে পারে।
চীনা শেয়ারবাজার দশকের সর্বোচ্চ পর্যায়ের কাছাকাছি, বাজারমূল্য দাঁড়াল ১০০ ট্রিলিয়ন ইউয়ান
-
সারাক্ষণ রিপোর্ট - ১২:২২:১৫ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৯ অগাস্ট ২০২৫
- 34
জনপ্রিয় সংবাদ
























