ট্রাম্প প্রশাসনের কঠোর পদক্ষেপ
মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর জানিয়েছে, চলতি বছরে ৬ হাজারের বেশি আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীর ভিসা বাতিল করা হয়েছে। সোমবার এক কর্মকর্তা জানান, ট্রাম্প প্রশাসন যেসব বিদেশি শিক্ষার্থী আইন ভঙ্গ করেছে বলে দাবি করা শিক্ষার্থীদের লক্ষ্য করে এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
ভিসা বাতিলের কারণ
অধিকাংশ ভিসা বাতিল হয়েছে মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ার পরও দেশে থেকে যাওয়া কিংবা বিভিন্ন অপরাধে জড়িত থাকার কারণে। কর্মকর্তারা জানান, প্রায় ৪ হাজার ভিসাধারী সরাসরি আইন ভেঙেছেন। এসব অপরাধের মধ্যে রয়েছে হামলা, মদ্যপ অবস্থায় গাড়ি চালানো, চুরি এবং সন্ত্রাসবাদে সহায়তা।
এ ছাড়া ২০০ থেকে ৩০০ ভিসা বাতিল হয়েছে মার্কিন অভিবাসন ও জাতীয়তা আইনের একটি ধারা অনুযায়ী, যেখানে বলা হয়েছে, সন্ত্রাসবাদ-সংক্রান্ত কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে বিদেশিদের যুক্তরাষ্ট্রে অগ্রহণযোগ্য ঘোষণা করা যেতে পারে।
শিক্ষার্থীদের লক্ষ্য করে অভিযান
প্রথমে ফক্স নিউজে তথ্যটি প্রকাশ করে। ট্রাম্প প্রশাসন সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয় ও শিক্ষার্থী ভিসাকে কেন্দ্র করে কড়া পদক্ষেপ নিয়েছে। বিশেষ করে গাজা যুদ্ধবিরোধী আন্দোলনে অংশ নেওয়া আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের লক্ষ্য করা হচ্ছে। প্রশাসনের অভিযোগ, এসব শিক্ষার্থী ইহুদিবিদ্বেষী এবং সন্ত্রাসবাদকে সমর্থন করছে।
আলোচিত ঘটনা: টাফটস বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী
সবচেয়ে আলোচিত ঘটনার একটি হলো টাফটস বিশ্ববিদ্যালয়ের পিএইচডি শিক্ষার্থী রুমাইসা ওজতুর্কের ভিসা বাতিল। মার্চে মুখোশধারী ফেডারেল এজেন্টরা তাকে আটক করে আইসিই হেফাজতে নেয়। পরে মে মাসে বিচারক তার মুক্তির আদেশ দেন।
নতুন যাচাই প্রক্রিয়া
জুনে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর দূতাবাস ও কনস্যুলেটগুলোকে নির্দেশ দেয়, শিক্ষার্থী ভিসার আবেদনকারীদের মনোভাব পরীক্ষা করতে হবে। যদি কারও মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক, সংস্কৃতি, সরকার, প্রতিষ্ঠান বা প্রতিষ্ঠানিক নীতির প্রতি শত্রুতাপূর্ণ মনোভাব পাওয়া যায়, তা বিবেচনায় নিতে হবে।
আবেদনকারীদের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের প্রোফাইল জনসমক্ষে উন্মুক্ত রাখতে বলা হয়েছে। এক কূটনৈতিক বার্তায় উল্লেখ করা হয়, অনলাইনে সীমিত উপস্থিতি বা গোপনীয়তা বজায় রাখাকে ‘কিছু কার্যক্রম গোপন করার চেষ্টা’ হিসেবে দেখা হতে পারে।
নীতির পক্ষে রুবিওর সাফাই
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও প্রশাসনের এই কঠোর পদক্ষেপকে সমর্থন করেছেন। তিনি বলেন, শিক্ষার্থী ভিসা কোনো সাংবিধানিক অধিকার নয়; এটি যুক্তরাষ্ট্রের দেওয়া একটি সুযোগ মাত্র। রুবিওর ভাষায়, “আমরা প্রতিদিন সারা বিশ্বে অসংখ্য ভিসা আবেদন প্রত্যাখ্যান করি। যদি আগে থেকেই কোনো তথ্য জানতাম এবং সে কারণে আবেদন বাতিল করতাম, তাহলে পরে সেই তথ্য জানার পর ভিসা বাতিল করতে পারব না?”
ভিসা ইস্যুর পরিসংখ্যান ও প্রভাব
২০২৪ অর্থবছরে প্রায় ৪ লাখ শিক্ষার্থী ভিসা (এফ-১ ভিসা) ইস্যু হয়েছিল। তবে চলতি বছরে ভিসা ইস্যুর সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে কমে যাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে, কারণ নতুন সাক্ষাৎকার কার্যক্রম সাময়িকভাবে স্থগিত করা হয়েছে এবং নতুন যাচাই পদ্ধতি চালু হয়েছে।
আন্তর্জাতিক শিক্ষা বিষয়ক সংগঠন নাফসা এবং জেবি ইন্টারন্যাশনাল বিশ্লেষণে বলেছে, নতুন শিক্ষার্থী ভর্তি ৩০–৪০ শতাংশ কমতে পারে, যার ফলে চলতি শরৎ মৌসুমে মোট ভর্তি সংখ্যা ১৫ শতাংশ হ্রাস পাবে।
অর্থনীতি ও কর্মসংস্থানে প্রভাব
নাফসার হিসাবে, ভর্তি কমে গেলে স্থানীয় অর্থনীতি ৭ বিলিয়ন ডলারের ব্যয় হারাবে এবং ৬০ হাজারের বেশি চাকরি ঝুঁকিতে পড়বে। সংস্থাটি জুলাইয়ের শেষদিকে সতর্ক করে জানায়, জুলাই-আগস্টে ভিসা ইস্যুতে উল্লেখযোগ্য পুনরুদ্ধার না হলে শরতে প্রায় দেড় লাখ কম শিক্ষার্থী যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করবে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ৬ হাজারের বেশি শিক্ষার্থীর ভিসা বাতিল
-
সারাক্ষণ রিপোর্ট - ১২:৫৪:৫৩ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৯ অগাস্ট ২০২৫
- 65
জনপ্রিয় সংবাদ


















