০২:১৬ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৬ ডিসেম্বর ২০২৫
শেক্‌সপিয়ারের নীরব স্ত্রীকে কেন্দ্র করে হ্যামনেট: শোকের গল্পে নতুন ভাষা ইভি আমদানি বাড়ায় মানদণ্ড কঠোর করছে ভিয়েতনাম মুদ্রাস্ফীতি কমলেও সুদহার নিয়ে সতর্ক শ্রীলঙ্কা মরুভূমিতে হঠাৎ বন্যা: ওমানে প্রাণঘাতী বৃষ্টির নতুন বাস্তবতা চীনের বিনিয়োগে ঐতিহাসিক মোড়, তিন দশকের ধারাবাহিকতা ভাঙার মুখে অর্থনীতি ভারতের বিচ্ছিন্নতাবাদীদের আশ্রয় দিয়ে সেভেন সিস্টার্স আলাদা করে দেব সাংবাদিক আনিস আলমগীরের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবিরোধী মামলা প্রত্যাহারের দাবি সম্পাদক পরিষদের সিনিয়র সাংবাদিক আনিস আলমগীর পাঁচ দিনের রিমান্ডে সমালোচনা করা যাবে না- এই বার্তাই কি দেওয়া হলো আনিস আলমগীরের ঘটনায় ড. ইউনূস চাইলে সারা দেশকে কারাগার বানাতে পারেন: আদালতে সাংবাদিক আনিস আলমগীর

রুপিতে বাণিজ্য সহজ করছে ভারত, মার্কিন শুল্ক চাপের প্রেক্ষাপটে নতুন কৌশল

রিজার্ভ ব্যাংকের সিদ্ধান্ত ও এর প্রেক্ষাপট

ভারতের কেন্দ্রীয় ব্যাংক (রিজার্ভ ব্যাংক অব ইন্ডিয়া বা আরবিআই) আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে রুপি ব্যবহার সহজ করার জন্য নতুন নিয়ম চালু করেছে। এর ফলে এখন থেকে বিশেষ ভসট্রো অ্যাকাউন্ট খুলতে ব্যাংকগুলোকে আরবিআই-এর পূর্বানুমতি নিতে হবে না। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই পদক্ষেপ রুপির বৈশ্বিক মর্যাদা বাড়াবে এবং মার্কিন ডলারের ওপর নির্ভরতা কমাবে।

এই সিদ্ধান্ত এসেছে এমন এক সময়ে যখন যুক্তরাষ্ট্র ভারত থেকে আমদানি হওয়া পণ্যে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক আরোপ করেছে। একইসঙ্গে ব্রাজিলের মতো দেশ ব্রিকস বাণিজ্য মুদ্রার দাবি তুলছে, যা মার্কিন ডলারের বিকল্প হতে পারে।

Indian central bank hikes overnight fund infusion post heavy FX  intervention | Reuters

ভারতের অবস্থান: ডি-ডলারাইজেশন নয়রুপির আন্তর্জাতিকীকরণ

ভারত একাধিকবার জানিয়েছে যে তারা ব্রিকসের যৌথ মুদ্রার পক্ষে নয় এবং ডলারকে দুর্বল করার প্রচেষ্টাতেও নেই। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল সম্প্রতি বলেছেন, “ডি-ডলারাইজেশন ভারতের আর্থিক এজেন্ডায় নেই।”

একই সুরে মার্চ মাসে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস. জয়শঙ্করও মন্তব্য করেছিলেন যে ভারত ডলারকে দুর্বল করতে আগ্রহী নয়, বরং রুপির ব্যবহার বাড়াতে চায়। তার ভাষায়, “আমরা রুপির আন্তর্জাতিকীকরণকে এগিয়ে নিচ্ছি কারণ ভারতকে বৈশ্বিক অর্থনীতিতে আরও সংযুক্ত করা হচ্ছে।”

রুপিতে লেনদেন ও বিনিময় হার সুরক্ষা

রুপিতে লেনদেন বাড়লে ভারতীয় কোম্পানিগুলো ডলারের ওঠানামা থেকে কিছুটা সুরক্ষিত হবে। কারণ আমদানি চুক্তির পর যদি ডলারের বিপরীতে রুপির দর পড়ে যায়, তাহলে ভারতীয় আমদানিকারকদের বেশি টাকা গুনতে হয়। গত এক বছরে রুপির মান ৩.৫ শতাংশের বেশি কমেছে।

কিংস কলেজ লন্ডনের অধ্যাপক হর্ষ পন্ত বলেন, “ভারত স্পষ্টভাবে বলছে যে তারা ডি-ডলারাইজেশনে তেমন আগ্রহী নয়। তবে স্থানীয় মুদ্রায় লেনদেন বৃদ্ধিতে আগ্রহী।”

যুক্তরাষ্ট্রের চাপ ও ভারতের প্রতিক্রিয়া

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সতর্ক করে দিয়েছেন, ব্রিকস যদি ডলারের রিজার্ভ মুদ্রার অবস্থান দুর্বল করতে চায়, তাহলে শুল্ক আরও বাড়ানো হবে। এর প্রেক্ষিতে পর্যবেক্ষকরা বলছেন, রুপিতে লেনদেন সহজ করার পদক্ষেপ আসলে ওয়াশিংটনের চাপ মোকাবিলার একধরনের সংকেত।

অবজারভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের বিশ্লেষক বিবেক মিশ্রার মতে, এটি ভারতের পক্ষ থেকে এক “ক্ষুদ্র কিন্তু দৃঢ় বার্তা” যে তারা মার্কিন চাপ মুখ বুজে মেনে নেবে না।

দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক ও সম্ভাবনা

যদিও শুল্ক বিরোধ বড় উত্তেজনা তৈরি করেছে, বিশ্লেষকদের মতে ভারত-আমেরিকা বাণিজ্যিক সম্পর্ক দীর্ঘমেয়াদে ব্যাহত হওয়ার সম্ভাবনা কম। প্রযুক্তি সেবা থেকে শুরু করে ফার্মাসিউটিক্যাল পর্যন্ত অনেক খাতে দুই দেশের অর্থনীতি ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত।

আইনজীবী রাসেল এ. স্ট্যামেটস মন্তব্য করেছেন, “এটি সাময়িক সমস্যা, দীর্ঘমেয়াদে সম্পর্ক স্বাভাবিক পথে ফিরে যাবে। মার্কিন কোম্পানিগুলো আসলে ভারতের পণ্য আমদানিতে আগ্রহী।”

Why the dollar keeps winning in the global economy | Reuters

ডলারের আধিপত্য ও বিকল্প খোঁজার প্রয়াস

বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এখনও মার্কিন ডলারের কোনো শক্তিশালী বিকল্প নেই, তাই এর আধিপত্য অদূর ভবিষ্যতে টিকে থাকবে। তবে ব্রিকস দেশগুলো মুদ্রা বিনিময়ের ব্যবস্থা (কারেন্সি সুইপ) বা যৌথ মুদ্রা তহবিল গঠনের মতো উদ্যোগ নিয়ে আলোচনা করছে।

দিল্লির অর্থনীতিবিদ বিশ্বজিৎ ধর বলেন, “ডি-ডলারাইজেশন একদিনে হবে না, তবে বিকল্প তৈরি করা জরুরি। সেটাই প্রথম পদক্ষেপ।”

অন্যদিকে, ইএসএসইসি বিজনেস স্কুলের অধ্যাপক জামুস লিম বলেন, গত ২৫ বছরে ধীরে ধীরে ডলারের ব্যবহার কমছে, তবে এখনো এর স্থলে পর্যাপ্ত বিশ্বাসযোগ্য বিকল্প গড়ে ওঠেনি। তার মতে, “যতক্ষণ না এমন কোনো শক্তিশালী বিকল্প হাজির হচ্ছে, ততক্ষণ ডলারকে সরানো সম্ভব নয়।”

ভারত সরাসরি ডলারের আধিপত্য চ্যালেঞ্জ না করলেও নিজেদের অর্থনীতি ও বাণিজ্যকে সুরক্ষিত করতে রুপির ব্যবহার বাড়াচ্ছে। এটি একদিকে মার্কিন শুল্ক চাপ মোকাবিলার কৌশল, অন্যদিকে বৈশ্বিক অর্থনীতিতে রুপির ভূমিকা শক্তিশালী করার উদ্যোগ।

জনপ্রিয় সংবাদ

শেক্‌সপিয়ারের নীরব স্ত্রীকে কেন্দ্র করে হ্যামনেট: শোকের গল্পে নতুন ভাষা

রুপিতে বাণিজ্য সহজ করছে ভারত, মার্কিন শুল্ক চাপের প্রেক্ষাপটে নতুন কৌশল

০৩:০০:৫৬ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২০ অগাস্ট ২০২৫

রিজার্ভ ব্যাংকের সিদ্ধান্ত ও এর প্রেক্ষাপট

ভারতের কেন্দ্রীয় ব্যাংক (রিজার্ভ ব্যাংক অব ইন্ডিয়া বা আরবিআই) আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে রুপি ব্যবহার সহজ করার জন্য নতুন নিয়ম চালু করেছে। এর ফলে এখন থেকে বিশেষ ভসট্রো অ্যাকাউন্ট খুলতে ব্যাংকগুলোকে আরবিআই-এর পূর্বানুমতি নিতে হবে না। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই পদক্ষেপ রুপির বৈশ্বিক মর্যাদা বাড়াবে এবং মার্কিন ডলারের ওপর নির্ভরতা কমাবে।

এই সিদ্ধান্ত এসেছে এমন এক সময়ে যখন যুক্তরাষ্ট্র ভারত থেকে আমদানি হওয়া পণ্যে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক আরোপ করেছে। একইসঙ্গে ব্রাজিলের মতো দেশ ব্রিকস বাণিজ্য মুদ্রার দাবি তুলছে, যা মার্কিন ডলারের বিকল্প হতে পারে।

Indian central bank hikes overnight fund infusion post heavy FX  intervention | Reuters

ভারতের অবস্থান: ডি-ডলারাইজেশন নয়রুপির আন্তর্জাতিকীকরণ

ভারত একাধিকবার জানিয়েছে যে তারা ব্রিকসের যৌথ মুদ্রার পক্ষে নয় এবং ডলারকে দুর্বল করার প্রচেষ্টাতেও নেই। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল সম্প্রতি বলেছেন, “ডি-ডলারাইজেশন ভারতের আর্থিক এজেন্ডায় নেই।”

একই সুরে মার্চ মাসে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস. জয়শঙ্করও মন্তব্য করেছিলেন যে ভারত ডলারকে দুর্বল করতে আগ্রহী নয়, বরং রুপির ব্যবহার বাড়াতে চায়। তার ভাষায়, “আমরা রুপির আন্তর্জাতিকীকরণকে এগিয়ে নিচ্ছি কারণ ভারতকে বৈশ্বিক অর্থনীতিতে আরও সংযুক্ত করা হচ্ছে।”

রুপিতে লেনদেন ও বিনিময় হার সুরক্ষা

রুপিতে লেনদেন বাড়লে ভারতীয় কোম্পানিগুলো ডলারের ওঠানামা থেকে কিছুটা সুরক্ষিত হবে। কারণ আমদানি চুক্তির পর যদি ডলারের বিপরীতে রুপির দর পড়ে যায়, তাহলে ভারতীয় আমদানিকারকদের বেশি টাকা গুনতে হয়। গত এক বছরে রুপির মান ৩.৫ শতাংশের বেশি কমেছে।

কিংস কলেজ লন্ডনের অধ্যাপক হর্ষ পন্ত বলেন, “ভারত স্পষ্টভাবে বলছে যে তারা ডি-ডলারাইজেশনে তেমন আগ্রহী নয়। তবে স্থানীয় মুদ্রায় লেনদেন বৃদ্ধিতে আগ্রহী।”

যুক্তরাষ্ট্রের চাপ ও ভারতের প্রতিক্রিয়া

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সতর্ক করে দিয়েছেন, ব্রিকস যদি ডলারের রিজার্ভ মুদ্রার অবস্থান দুর্বল করতে চায়, তাহলে শুল্ক আরও বাড়ানো হবে। এর প্রেক্ষিতে পর্যবেক্ষকরা বলছেন, রুপিতে লেনদেন সহজ করার পদক্ষেপ আসলে ওয়াশিংটনের চাপ মোকাবিলার একধরনের সংকেত।

অবজারভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের বিশ্লেষক বিবেক মিশ্রার মতে, এটি ভারতের পক্ষ থেকে এক “ক্ষুদ্র কিন্তু দৃঢ় বার্তা” যে তারা মার্কিন চাপ মুখ বুজে মেনে নেবে না।

দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক ও সম্ভাবনা

যদিও শুল্ক বিরোধ বড় উত্তেজনা তৈরি করেছে, বিশ্লেষকদের মতে ভারত-আমেরিকা বাণিজ্যিক সম্পর্ক দীর্ঘমেয়াদে ব্যাহত হওয়ার সম্ভাবনা কম। প্রযুক্তি সেবা থেকে শুরু করে ফার্মাসিউটিক্যাল পর্যন্ত অনেক খাতে দুই দেশের অর্থনীতি ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত।

আইনজীবী রাসেল এ. স্ট্যামেটস মন্তব্য করেছেন, “এটি সাময়িক সমস্যা, দীর্ঘমেয়াদে সম্পর্ক স্বাভাবিক পথে ফিরে যাবে। মার্কিন কোম্পানিগুলো আসলে ভারতের পণ্য আমদানিতে আগ্রহী।”

Why the dollar keeps winning in the global economy | Reuters

ডলারের আধিপত্য ও বিকল্প খোঁজার প্রয়াস

বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এখনও মার্কিন ডলারের কোনো শক্তিশালী বিকল্প নেই, তাই এর আধিপত্য অদূর ভবিষ্যতে টিকে থাকবে। তবে ব্রিকস দেশগুলো মুদ্রা বিনিময়ের ব্যবস্থা (কারেন্সি সুইপ) বা যৌথ মুদ্রা তহবিল গঠনের মতো উদ্যোগ নিয়ে আলোচনা করছে।

দিল্লির অর্থনীতিবিদ বিশ্বজিৎ ধর বলেন, “ডি-ডলারাইজেশন একদিনে হবে না, তবে বিকল্প তৈরি করা জরুরি। সেটাই প্রথম পদক্ষেপ।”

অন্যদিকে, ইএসএসইসি বিজনেস স্কুলের অধ্যাপক জামুস লিম বলেন, গত ২৫ বছরে ধীরে ধীরে ডলারের ব্যবহার কমছে, তবে এখনো এর স্থলে পর্যাপ্ত বিশ্বাসযোগ্য বিকল্প গড়ে ওঠেনি। তার মতে, “যতক্ষণ না এমন কোনো শক্তিশালী বিকল্প হাজির হচ্ছে, ততক্ষণ ডলারকে সরানো সম্ভব নয়।”

ভারত সরাসরি ডলারের আধিপত্য চ্যালেঞ্জ না করলেও নিজেদের অর্থনীতি ও বাণিজ্যকে সুরক্ষিত করতে রুপির ব্যবহার বাড়াচ্ছে। এটি একদিকে মার্কিন শুল্ক চাপ মোকাবিলার কৌশল, অন্যদিকে বৈশ্বিক অর্থনীতিতে রুপির ভূমিকা শক্তিশালী করার উদ্যোগ।