০১:১০ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৩ নভেম্বর ২০২৫
কম্পিউটিং দুনিয়ায় নতুন বিপ্লবের দুয়ারে বিশ্ব: সামনে আসছে কোয়ান্টাম যুগ তিউনিসিয়ায় কারাগারে বর্বর নির্যাতন! বিরোধী নেতার পরিবারে চরম ক্ষোভ প্রো- ও অ্যান্টি-লকডাউন মিছিল গাজীপুরে পেট্রল ঢেলে বরিশালের উজিরপুরে বিএনপি কার্যালয়ে অগ্নিসংযোগ ফরিদপুরে ঢাকা-খুলনা ও ঢাকা-বরিশাল মহাসড়ক অবরোধে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী টাঙ্গাইল ও ফেনীতে দুই বাসে আগুন ফরিদপুরে রাস্তায় গাছ ফেলে মহাসড়ক অবরোধ বরগুনায় জুলাই শহীদ স্মৃতিস্তম্ভে অগ্নিসংযোগের অভিযোগ যাত্রী কমায় ফাঁকা দূরপাল্লার বাস—নিষিদ্ধ দলের ‘ঢাকা লকডাউন’ কর্মসূচির প্রভাব পদ্মা সেতুর সামনে এক্সপ্রেসওয়ে অবরোধ: ট্রাকে আগুন ও ককটেল বিস্ফোরণ

শেখ হাসিনার বক্তব্য প্রচারে সরকারের সতর্কতা, যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন

বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্য প্রচারের ক্ষেত্রে দেশের গণমাধ্যমকে সতর্ক করে বিবৃতি দিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। যেখানে এই বক্তব্যের প্রচারণাকে অপরাধ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। এমনকি বক্তব্য প্রচার করা হলে তাৎক্ষণিক আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও বলা হয়েছে।

শুক্রবার সরকারের ওই বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “বিধিনিষেধ অমান্যকারী যেকোনো সংবাদমাধ্যম বাংলাদেশের আইনের অধীনে আইনি জবাবদিহিতার আওতায় পড়বে।”

সরকারের এমন অবস্থানকে স্ববিরোধীতা বলছেন সিনিয়র সাংবাদিক এবং বিশ্লেষকদের অনেকেই। এমনকি এই সিদ্ধান্তের যৌক্তিকতা নিয়েও প্রশ্ন তুলছেন তারা।

তারা বলছেন, এই সিদ্ধান্ত গণমাধ্যমের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপের সামিল। একদিকে গণমাধ্যমের স্বাধীনতার কথা বলা হচ্ছে, অন্যদিকে নানাভাবে নিয়ন্ত্রণ আরোপের চেষ্টা করা হচ্ছে।

শেখ হাসিনার ‘বিদ্বেষমূলক বক্তব্য’ প্রচারে আগেই নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিল আদালত। কিন্তু এই বিবৃতির মাধ্যমে সরকার নিজেও এখন সরাসরি এই পদক্ষেপের অংশ হয়ে গেলো বলেও মনে করেন বিশ্লেষকদের অনেকে।
সরকারের এই পদক্ষেপের সঙ্গে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বক্তব্য প্রচারে নিষেধাজ্ঞার সিদ্ধান্তেরও মিল দেখছেন অনেকে।

অবশ্য রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর তারেক রহমানের বক্তব্য-বিবৃতি সব ধরনের গণমাধ্যমে প্রচার ও প্রকাশে নিষেধাজ্ঞা সংক্রান্ত আগের সব নির্দেশনা প্রত্যাহার করেছে হাইকোর্ট।


সরকারের বিবৃতিতে যা বলা হয়েছে


প্রসিকিউশনের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গত বছরের পাঁচ ডিসেম্বর শেখ হাসিনার ‘বিদ্বেষমূলক বক্তব্য’ গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিল আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।

একইসঙ্গে, তিনি এর আগে যত ‘বিদ্বেষমূলক বক্তব্য’ দিয়েছেন, তা সব মাধ্যম থেকে দ্রুততম সময়ের মধ্যে সরিয়ে নিতেও বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনকে (বিটিআরসি) নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল।

সম্প্রতি বিভিন্ন গণমাধ্যমে শেখ হাসিনার বক্তব্য প্রচারের বিষয়টি সামনে এনে শুক্রবার একটি বিবৃতি দিল বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার।

যেখানে দাবি করা হয়েছে, আদালতের নির্দেশ উপেক্ষা করে গত বৃহস্পতিবার শেখ হাসিনার একটি ভাষণ প্রচার করেছে বিভিন্ন গণমাধ্যম। যা ২০০৯ সালের সন্ত্রাসবিরোধী আইনের গুরুতর লঙ্ঘন বলেও উল্লেখ করা হয়েছে।

গত বছরের ডিসেম্বরে, শেখ হাসিনার এমন কোনো বক্তব্য যা ঘৃণা ছড়ায় তা সম্প্রচার নিষিদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের দেওয়া নির্দেশনার বিষয়টিও উল্লেখ করা হয়েছে ওই বিবৃতিতে।

সরকার বলছে, “আমরা এধরনের অপরাধমূলক প্রচারকর্মে জড়িত গণমাধ্যমের কর্মকর্তাদের সতর্ক করে দিচ্ছি এবং দৃঢ়ভাবে জানাচ্ছি যে, শেখ হাসিনার বক্তব্য কেউ ভবিষ্যতে প্রকাশ করলে তাৎক্ষণিক আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

এছাড়া জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময় বিক্ষোভ দমনে শেখ হাসিনার নেয়া নানা পদক্ষেপ এবং অন্তর্বর্তী সরকারের বর্তমান উন্নয়ন প্রচেষ্টার কথাও উল্লেখ করা হয়েছে বিবৃতিতে।

আদালতের নির্দেশ অমান্য করে শেখ হাসিনার বক্তব্য প্রচার করলে কোন আইনে কী ধরনের ব্যবস্থা নেয়া হতে পারে উল্লেখ রয়েছে সে বিষয়েও।

বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “বাংলাদেশের আইন অনুসারে, আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা হয়েছে এবং একই সন্ত্রাসবিরোধী আইন ২০০৯ অনুসারে, যে কোনো ব্যক্তি বা সংগঠন যারা তাদের নেতাদের কার্যকলাপ বা বক্তৃতা প্রচার, প্রকাশ বা সম্প্রচার করে তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার বিধান রয়েছে।”

গণমাধ্যমে শেখ হাসিনার বক্তব্য প্রচার করা হলে সংবাদমাধ্যমগুলো বাংলাদেশের আইনের অধীনে জবাবদিহিতার আওতায় পড়বে বলেও সাবধান করা হয়েছে। এছাড়া ওই বক্তব্য প্রচারের মাধ্যমে বাংলাদেশের স্থিতিশীলতা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার ঝুঁকির কথাও বলছে সরকার।


‘এটা স্ববিরোধীতা’


আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ২০১৫ সালে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বক্তব্য প্রচারে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিল আদালত। ওই সময় আইনের দৃষ্টিতে পলাতক থাকা অবস্থায় তারেক রহমানের বক্তব্য প্রচারে নিষেধাজ্ঞা চেয়ে রিট করেছিলেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী নাসরিন সিদ্দিকী।

পরদিন তারেক রহমানের কোনো ধরনের বক্তব্য বা বিবৃতি সব ধরনের গণমাধ্যমে প্রচার ও প্রকাশ নিষিদ্ধ করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দিয়েছিল আদালত।

অবশ্য গত বছর বাংলাদেশের রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর ২২শে অগাস্ট এই সংক্রান্ত আগের সব নির্দেশনা প্রত্যাহার করে হাইকোর্ট।

একইভাবে বিদ্বেশমূলক বক্তব্য প্রচারের অভিযোগ এনে প্রসিকিউশনের আবেদনের প্রেক্ষিতে গত বছরের ডিসেম্বরে বিচারাধীন অবস্থায় শেখ হাসিনার বক্তব্য প্রচারে নিষেধাজ্ঞা দেয় ট্রাইব্যুনাল।

এবার বিচারাধীন ও পলাতক আসামী হওয়ায় শেখ হাসিনার বক্তব্য দেশের গণমাধ্যমে প্রচার আইনের গুরুতর লঙ্ঘন উল্লেখ করে বিবৃতি দিল অন্তর্বর্তী সরকারও।

যা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন সিনিয়র সাংবাদিক এবং বিশ্লেষকদের অনেকেই। তারা বলছেন, আদালতের সিদ্ধান্তের পর সরকারের এই বিবৃতি আওয়ামী লীগের অবস্থানেরই পুনরাবৃত্তি ঘটালো।

এই সিদ্ধান্ত গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের স্ববিরোধী অবস্থানই সামনে নিয়ে এসেছে বলেও মনে করেন তারা।

মানবজমিন পত্রিকার সম্পাদক ও সিনিয়র সাংবাদিক মতিউর রহমান চৌধুরী বিবিসি বাংলাকে বলছেন, “এটা স্ববিরোধীতা, একদিকে আমরা বলছি গণমাধ্যমের অবাধ স্বাধীনতায় বিশ্বাস করি। অন্যদিকে নিয়ন্ত্রণ আরোপ করছি।”

এছাড়া বিবৃতি দেওয়ার মাধ্যমে এই পদক্ষেপে সরকার নিজেকেও যুক্ত করলো বলেই মনে করেন বিশ্লেষকদের কেউ কেউ। তাদের মতে, গণমাধ্যম কি করবে না করবে সেই সিদ্ধান্ত গণমাধ্যমের ওপরই ছেড়ে দেয়া উচিৎ।

অতীতে এ ধরনের সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দিয়ে তেমন ফল হয়নি বলেও মনে করেন অনেকে। তারা বলছেন, সামাজিক মাধ্যম ব্যবহার করে ঠিকই এসব বক্তব্য মানুষের কাছে পৌঁছে যায়।

মি. চৌধুরী বলছেন, “এর আগেও বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বক্তৃতা ছাপার ব্যাপারে টানা ১০ বছর নিষেধাজ্ঞা ছিল। সেটাও ছিল মত প্রকাশের স্বাধীনতার উপর সরাসরি হস্তক্ষেপ। দুর্ভাগ্য হচ্ছে আমরা সেদিন কোনো কথাই বলিনি। তখন গণমাধ্যম ছিল নিয়ন্ত্রিত।”

“এখনও আমরা (সরকার) বলছি গণমাধ্যমের স্বাধীনতার ওপর কোন হস্তক্ষেপ করা হবে না। অন্যদিকে একের পর এক নিয়ন্ত্রণ আরোপ করছি,” বলেন তিনি।

গণমাধ্যমে শেখ হাসিনার বক্তব্য প্রচারে সরকার নিষেধাজ্ঞা দিলেও ইউটিউব, ফেসবুকের মাধ্যমে এগুলো মানুষের কাছে পৌঁছে যায়, এটি বন্ধ করবেন কিভাবে? এই প্রশ্নও করছেন বিশ্লেষকদের অনেকে।

                                                                                                                                                                             বিবিসি নিউজ বাংলা

জনপ্রিয় সংবাদ

কম্পিউটিং দুনিয়ায় নতুন বিপ্লবের দুয়ারে বিশ্ব: সামনে আসছে কোয়ান্টাম যুগ

শেখ হাসিনার বক্তব্য প্রচারে সরকারের সতর্কতা, যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন

১০:৫১:৩৭ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৩ অগাস্ট ২০২৫

বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্য প্রচারের ক্ষেত্রে দেশের গণমাধ্যমকে সতর্ক করে বিবৃতি দিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। যেখানে এই বক্তব্যের প্রচারণাকে অপরাধ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। এমনকি বক্তব্য প্রচার করা হলে তাৎক্ষণিক আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও বলা হয়েছে।

শুক্রবার সরকারের ওই বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “বিধিনিষেধ অমান্যকারী যেকোনো সংবাদমাধ্যম বাংলাদেশের আইনের অধীনে আইনি জবাবদিহিতার আওতায় পড়বে।”

সরকারের এমন অবস্থানকে স্ববিরোধীতা বলছেন সিনিয়র সাংবাদিক এবং বিশ্লেষকদের অনেকেই। এমনকি এই সিদ্ধান্তের যৌক্তিকতা নিয়েও প্রশ্ন তুলছেন তারা।

তারা বলছেন, এই সিদ্ধান্ত গণমাধ্যমের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপের সামিল। একদিকে গণমাধ্যমের স্বাধীনতার কথা বলা হচ্ছে, অন্যদিকে নানাভাবে নিয়ন্ত্রণ আরোপের চেষ্টা করা হচ্ছে।

শেখ হাসিনার ‘বিদ্বেষমূলক বক্তব্য’ প্রচারে আগেই নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিল আদালত। কিন্তু এই বিবৃতির মাধ্যমে সরকার নিজেও এখন সরাসরি এই পদক্ষেপের অংশ হয়ে গেলো বলেও মনে করেন বিশ্লেষকদের অনেকে।
সরকারের এই পদক্ষেপের সঙ্গে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বক্তব্য প্রচারে নিষেধাজ্ঞার সিদ্ধান্তেরও মিল দেখছেন অনেকে।

অবশ্য রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর তারেক রহমানের বক্তব্য-বিবৃতি সব ধরনের গণমাধ্যমে প্রচার ও প্রকাশে নিষেধাজ্ঞা সংক্রান্ত আগের সব নির্দেশনা প্রত্যাহার করেছে হাইকোর্ট।


সরকারের বিবৃতিতে যা বলা হয়েছে


প্রসিকিউশনের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গত বছরের পাঁচ ডিসেম্বর শেখ হাসিনার ‘বিদ্বেষমূলক বক্তব্য’ গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিল আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।

একইসঙ্গে, তিনি এর আগে যত ‘বিদ্বেষমূলক বক্তব্য’ দিয়েছেন, তা সব মাধ্যম থেকে দ্রুততম সময়ের মধ্যে সরিয়ে নিতেও বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনকে (বিটিআরসি) নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল।

সম্প্রতি বিভিন্ন গণমাধ্যমে শেখ হাসিনার বক্তব্য প্রচারের বিষয়টি সামনে এনে শুক্রবার একটি বিবৃতি দিল বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার।

যেখানে দাবি করা হয়েছে, আদালতের নির্দেশ উপেক্ষা করে গত বৃহস্পতিবার শেখ হাসিনার একটি ভাষণ প্রচার করেছে বিভিন্ন গণমাধ্যম। যা ২০০৯ সালের সন্ত্রাসবিরোধী আইনের গুরুতর লঙ্ঘন বলেও উল্লেখ করা হয়েছে।

গত বছরের ডিসেম্বরে, শেখ হাসিনার এমন কোনো বক্তব্য যা ঘৃণা ছড়ায় তা সম্প্রচার নিষিদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের দেওয়া নির্দেশনার বিষয়টিও উল্লেখ করা হয়েছে ওই বিবৃতিতে।

সরকার বলছে, “আমরা এধরনের অপরাধমূলক প্রচারকর্মে জড়িত গণমাধ্যমের কর্মকর্তাদের সতর্ক করে দিচ্ছি এবং দৃঢ়ভাবে জানাচ্ছি যে, শেখ হাসিনার বক্তব্য কেউ ভবিষ্যতে প্রকাশ করলে তাৎক্ষণিক আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

এছাড়া জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময় বিক্ষোভ দমনে শেখ হাসিনার নেয়া নানা পদক্ষেপ এবং অন্তর্বর্তী সরকারের বর্তমান উন্নয়ন প্রচেষ্টার কথাও উল্লেখ করা হয়েছে বিবৃতিতে।

আদালতের নির্দেশ অমান্য করে শেখ হাসিনার বক্তব্য প্রচার করলে কোন আইনে কী ধরনের ব্যবস্থা নেয়া হতে পারে উল্লেখ রয়েছে সে বিষয়েও।

বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “বাংলাদেশের আইন অনুসারে, আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা হয়েছে এবং একই সন্ত্রাসবিরোধী আইন ২০০৯ অনুসারে, যে কোনো ব্যক্তি বা সংগঠন যারা তাদের নেতাদের কার্যকলাপ বা বক্তৃতা প্রচার, প্রকাশ বা সম্প্রচার করে তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার বিধান রয়েছে।”

গণমাধ্যমে শেখ হাসিনার বক্তব্য প্রচার করা হলে সংবাদমাধ্যমগুলো বাংলাদেশের আইনের অধীনে জবাবদিহিতার আওতায় পড়বে বলেও সাবধান করা হয়েছে। এছাড়া ওই বক্তব্য প্রচারের মাধ্যমে বাংলাদেশের স্থিতিশীলতা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার ঝুঁকির কথাও বলছে সরকার।


‘এটা স্ববিরোধীতা’


আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ২০১৫ সালে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বক্তব্য প্রচারে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিল আদালত। ওই সময় আইনের দৃষ্টিতে পলাতক থাকা অবস্থায় তারেক রহমানের বক্তব্য প্রচারে নিষেধাজ্ঞা চেয়ে রিট করেছিলেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী নাসরিন সিদ্দিকী।

পরদিন তারেক রহমানের কোনো ধরনের বক্তব্য বা বিবৃতি সব ধরনের গণমাধ্যমে প্রচার ও প্রকাশ নিষিদ্ধ করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দিয়েছিল আদালত।

অবশ্য গত বছর বাংলাদেশের রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর ২২শে অগাস্ট এই সংক্রান্ত আগের সব নির্দেশনা প্রত্যাহার করে হাইকোর্ট।

একইভাবে বিদ্বেশমূলক বক্তব্য প্রচারের অভিযোগ এনে প্রসিকিউশনের আবেদনের প্রেক্ষিতে গত বছরের ডিসেম্বরে বিচারাধীন অবস্থায় শেখ হাসিনার বক্তব্য প্রচারে নিষেধাজ্ঞা দেয় ট্রাইব্যুনাল।

এবার বিচারাধীন ও পলাতক আসামী হওয়ায় শেখ হাসিনার বক্তব্য দেশের গণমাধ্যমে প্রচার আইনের গুরুতর লঙ্ঘন উল্লেখ করে বিবৃতি দিল অন্তর্বর্তী সরকারও।

যা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন সিনিয়র সাংবাদিক এবং বিশ্লেষকদের অনেকেই। তারা বলছেন, আদালতের সিদ্ধান্তের পর সরকারের এই বিবৃতি আওয়ামী লীগের অবস্থানেরই পুনরাবৃত্তি ঘটালো।

এই সিদ্ধান্ত গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের স্ববিরোধী অবস্থানই সামনে নিয়ে এসেছে বলেও মনে করেন তারা।

মানবজমিন পত্রিকার সম্পাদক ও সিনিয়র সাংবাদিক মতিউর রহমান চৌধুরী বিবিসি বাংলাকে বলছেন, “এটা স্ববিরোধীতা, একদিকে আমরা বলছি গণমাধ্যমের অবাধ স্বাধীনতায় বিশ্বাস করি। অন্যদিকে নিয়ন্ত্রণ আরোপ করছি।”

এছাড়া বিবৃতি দেওয়ার মাধ্যমে এই পদক্ষেপে সরকার নিজেকেও যুক্ত করলো বলেই মনে করেন বিশ্লেষকদের কেউ কেউ। তাদের মতে, গণমাধ্যম কি করবে না করবে সেই সিদ্ধান্ত গণমাধ্যমের ওপরই ছেড়ে দেয়া উচিৎ।

অতীতে এ ধরনের সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দিয়ে তেমন ফল হয়নি বলেও মনে করেন অনেকে। তারা বলছেন, সামাজিক মাধ্যম ব্যবহার করে ঠিকই এসব বক্তব্য মানুষের কাছে পৌঁছে যায়।

মি. চৌধুরী বলছেন, “এর আগেও বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বক্তৃতা ছাপার ব্যাপারে টানা ১০ বছর নিষেধাজ্ঞা ছিল। সেটাও ছিল মত প্রকাশের স্বাধীনতার উপর সরাসরি হস্তক্ষেপ। দুর্ভাগ্য হচ্ছে আমরা সেদিন কোনো কথাই বলিনি। তখন গণমাধ্যম ছিল নিয়ন্ত্রিত।”

“এখনও আমরা (সরকার) বলছি গণমাধ্যমের স্বাধীনতার ওপর কোন হস্তক্ষেপ করা হবে না। অন্যদিকে একের পর এক নিয়ন্ত্রণ আরোপ করছি,” বলেন তিনি।

গণমাধ্যমে শেখ হাসিনার বক্তব্য প্রচারে সরকার নিষেধাজ্ঞা দিলেও ইউটিউব, ফেসবুকের মাধ্যমে এগুলো মানুষের কাছে পৌঁছে যায়, এটি বন্ধ করবেন কিভাবে? এই প্রশ্নও করছেন বিশ্লেষকদের অনেকে।

                                                                                                                                                                             বিবিসি নিউজ বাংলা