০৯:২৭ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৯ নভেম্বর ২০২৫
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ঢাকা (পর্ব-৫৯) শেয়ারবাজারে টানা উত্থান, বিনিয়োগকারীদের মনোভাব আরও ইতিবাচক সিরাজগঞ্জে ব্র্যাক–ফিলিপস ফাউন্ডেশনের নতুন চার হেলথ সেন্টার প্রশান্ত মহাসাগরে যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তা কমলেও আস্থার লড়াইয়ে এগোচ্ছে চীন কাশ্মীরি মানেই সন্ত্রাসী নন- ওমর আব্দুল্লাহ গোপন সস রক্ষায় কঠোর নজরদারি: রেইজিং কেইনসের রহস্যময় নিরাপত্তা ব্যবস্থা খাশোগি হত্যাকাণ্ডে সিআইএ–এর মূল্যায়নকে অস্বীকার করলেন ট্রাম্প ট্রাম্পের কৃষিপণ্য শুল্ক ছাড়ে যুক্তরাষ্ট্রে বাড়তে পারে ভারতের রপ্তানি ডেঙ্গুতে আরও ৬ জনের মৃত্যু, ২৪ ঘণ্টায় হাসপাতালে ৭৮৮ রোগী দিল্লি–ঢাকা অংশীদারত্বে ওষুধ শিল্পের গুরুত্ব

চরমোনিকা দ্বীপ হারিয়ে যেতে পারে কোন একদিন

দ্বীপের জন্ম ও বিকাশ

বাংলাদেশের দক্ষিণ উপকূলে জন্ম নেওয়া চরমোনিকা দ্বীপ আজ এক অনিশ্চিত ভবিষ্যতের মুখে দাঁড়িয়ে। প্রায় পাঁচ থেকে ছয় দশক আগে নদীর পলি ও সমুদ্রের জোয়ারভাটার কারণে গড়ে ওঠা এই দ্বীপ শুরুতে ছিল বিচ্ছিন্ন ছোট ছোট চরভূমির সমষ্টি। ধীরে ধীরে এসব ভূমি একত্রিত হয়ে তৈরি হয় একটি পূর্ণাঙ্গ দ্বীপ। উর্বর মাটির কারণে এখানে কৃষি জমি গড়ে ওঠে, আর আশ্রয়ের খোঁজে মানুষ আসতে শুরু করে।

স্থানীয়দের ভাষায়, “শুরুর দিকে আমরা ভেবেছিলাম হয়তো এই জমি স্থায়ী হবে না। কিন্তু দেখতে দেখতে ঘরবাড়ি গড়ে উঠল, ধান-ডাল ফলতে শুরু করল। তখনই বুঝলাম, এখানে বসবাস সম্ভব।”

মানুষের বসতি ও জীবন

প্রথমদিকে চরমোনিকায় আসেন জেলে পরিবার ও কৃষকরা। তাঁরা অস্থায়ী কুঁড়েঘর বানিয়ে বাস শুরু করেন। মূল জীবিকা ছিল নদী ও সাগরে মাছ ধরা, ধান ও শাকসবজি চাষ। দ্বীপের উর্বর মাটিতে ধান, পাট, মরিচ, শাকপাতা—সবই ভালো ফলত।

তবে সুখের পাশাপাশি ছিল সীমাহীন কষ্ট। বিদ্যুৎ ছিল না, স্বাস্থ্যকেন্দ্রের কোনো ব্যবস্থা ছিল না, স্কুলও ছিল দূরে। এক স্থানীয় বাসিন্দা মো. হারুন মিয়া বলেন,

“আমার ছেলেমেয়েদের পড়াশোনা করাতে হলে নদী পার হয়ে স্কুলে পাঠাতে হতো। বর্ষায় সেটা অসম্ভব হয়ে যেত। কিন্তু জীবনের জন্য আমাদের লড়াই থেমে থাকেনি।”

বঙ্গোপসাগরে এবার ঘূর্ণিঝড় 'মিগজাউম', ডিসেম্বরেই ...

ঘূর্ণিঝড় ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের আঘাত

চরমোনিকার মানুষের সবচেয়ে বড় আতঙ্ক ছিল ঘূর্ণিঝড়। প্রায় প্রতি পাঁচ থেকে সাত বছর অন্তর একেকটি বড় ঝড় দ্বীপটিকে বিধ্বস্ত করেছে। ১৯৯১ সালের ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড়ে শত শত ঘরবাড়ি ভেসে যায়, অসংখ্য মানুষ মারা যায়।

২০০৭ সালের সিডর, ২০০৯ সালের আইলা, ২০১৩ সালের মহাসেন ও ২০২০ সালের আম্পান—প্রতিটি ঝড় দ্বীপকে ক্ষতবিক্ষত করেছে। ঘরবাড়ি ভাঙচুর হয়েছে, কৃষিজমি লবণ পানিতে ডুবে গেছে, মানুষ হয়ে পড়েছে গৃহহীন।

একজন স্থানীয় নারী রোকেয়া বেগম স্মৃতি তার অভিজ্ঞতা বর্ণনা করেন,

“আম্পানের রাতে আমরা বাচ্চাদের নিয়ে মসজিদের পাশে আশ্রয় নিয়েছিলাম। ভোরে ফিরে দেখি আমাদের ঘর আর নেই। শুধু ভাঙা বেড়া আর ভেজা কাপড় পড়ে আছে।”

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট)

জলবায়ু পরিবর্তন ও বৈজ্ঞানিক সতর্কবার্তা

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তন চরমোনিকার ভবিষ্যৎকে আরও বিপজ্জনক করে তুলেছে। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) জলবায়ু গবেষক ড. মাহবুব হাসান জানান,

“উপকূলীয় চরাঞ্চলগুলো সবচেয়ে ঝুঁকিতে রয়েছে। স্যাটেলাইট ডেটা বিশ্লেষণ থেকে জানা যাচ্ছে, আগামী ২০ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা যদি বর্তমান হারে বাড়তে থাকে, তবে চরমোনিকার মতো ছোট দ্বীপগুলো ধীরে ধীরে বিলীন হয়ে যাবে।”

তিনি আরও যোগ করেন,

“প্রতিদিনের জোয়ারের চাপে জমি ভাঙছে, নতুন অংশ সমুদ্রের নিচে চলে যাচ্ছে। দীর্ঘমেয়াদে কোনো প্রতিরোধ ব্যবস্থা না নিলে এই দ্বীপ হারিয়ে যাবে।”

বাস্তবতা পরিসংখ্যানে

চরমোনিকার মতো দ্বীপ ও চরাঞ্চলে ভাঙন ও ক্ষতির পরিমাণ বিশাল।

  • • বাংলাদেশে প্রতি বছর গড়ে৩৪ বর্গকিলোমিটার ভূমি নদী ও সমুদ্র গিলে খায়, যদিও প্রায় ৫৪ বর্গকিলোমিটার নতুন ভূমি জেগে ওঠে। তবু ক্ষতিগ্রস্ত মানুষদের জীবনে এই হিসাব কোনো সান্ত্বনা আনে না।
  • • চরাঞ্চল ও দ্বীপের হাজার হাজার মানুষ নদীভাঙনেবাস্তুচ্যুত হচ্ছে। কেবল ভোলা জেলার একটি এলাকাতেই সাম্প্রতিক ভাঙনে ,০০০ পরিবার ঝুঁকিতে পড়েছে, ২৫০ একর কৃষিজমি হারিয়ে গেছে, স্কুল, মসজিদ, সড়ক ধ্বংস হয়েছে।
  • • মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলার একটি পরিসংখ্যানে দেখা গেছে,নদী ভাঙনে ,৩৪৩ পরিবার— প্রায় ,৪৮০ মানুষ—বাসস্থান হারিয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ১২,০০০ একর জমি১৭টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান২২টি ধর্মীয় উপাসনালয় এবং ,২২২ পুকুর
  • • UNICEF-এর তথ্যমতে,দেশব্যাপী প্রায় ৫ লক্ষাধিক মানুষ বর্তমানে অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্র বা শেল্টারে বসবাস করছে।
  • • সরকারের আশ্রয়ণ প্রকল্পে ইতিমধ্যেই৪ লক্ষাধিক পরিবারকে নতুন বাড়ি দেওয়া হয়েছে, কিন্তু বাস্তবতার তুলনায় এ সংখ্যা অপ্রতুল।

স্থানীয় কৃষক নুরুল ইসলাম বলেন,

“একসময় এখানে দশ বিঘা জমি ছিল আমার। এখন মাত্র দুই বিঘা আছে, বাকিটা নদী-সমুদ্র খেয়ে নিয়েছে। আমার ছেলেরা হয়তো এই দ্বীপে আর টিকে থাকতে পারবে না।”

আজকের সংকট ও ভবিষ্যতের শঙ্কা

চরমোনিকার মানুষ আজ এক স্থায়ী অনিশ্চয়তায় বসবাস করছে। ভাঙন, ঝড় আর পানিবন্দী জীবন তাদের নিত্যসঙ্গী। ত্রাণ ও পুনর্বাসন প্রকল্প এলে সাময়িক স্বস্তি মিললেও দীর্ঘমেয়াদে বেঁচে থাকার কোনো নিশ্চয়তা নেই।

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা)-এর নেত্রী সুলতানা কামরুন নাহার মনে করেন,

“উপকূলীয় দ্বীপগুলোকে রক্ষার জন্য এখনই টেকসই বাঁধ, বিকল্প জীবিকা এবং সামাজিক অবকাঠামো তৈরি করা জরুরি। নইলে শুধু চরমোনিকা নয়, বরং পুরো উপকূলীয় অঞ্চল ঝুঁকিতে পড়বে।”

চরমোনিকা দ্বীপ আজ বাংলাদেশের জলবায়ু সংকটের প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়েছে। মানুষের সংগ্রামী জীবন, বারবার দুর্যোগে ভেঙে পড়া ঘরবাড়ি, পরিসংখ্যানে হারিয়ে যাওয়া জমি ও বাস্তুচ্যুত মানুষ—সব মিলিয়ে এটি এক হৃদয়বিদারক বাস্তবতা। দ্বীপটি শুধু ভৌগোলিক একাংশ নয়; এটি এক সম্প্রদায়ের ইতিহাস, শ্রম ও জীবনের গল্প।

যদি এখনই কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া না হয়, তবে হয়তো অচিরেই চরমোনিকা দ্বীপ কেবল ইতিহাসের পাতায় থেকে যাবে—মানুষগুলো হারিয়ে যাবে নতুন ভিটেমাটির সন্ধানে, আর আমরা হারাব বাংলাদেশের এক জীবন্ত ভূখণ্ড।

জনপ্রিয় সংবাদ

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ঢাকা (পর্ব-৫৯)

চরমোনিকা দ্বীপ হারিয়ে যেতে পারে কোন একদিন

০৪:৩৭:৩২ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৬ অগাস্ট ২০২৫

দ্বীপের জন্ম ও বিকাশ

বাংলাদেশের দক্ষিণ উপকূলে জন্ম নেওয়া চরমোনিকা দ্বীপ আজ এক অনিশ্চিত ভবিষ্যতের মুখে দাঁড়িয়ে। প্রায় পাঁচ থেকে ছয় দশক আগে নদীর পলি ও সমুদ্রের জোয়ারভাটার কারণে গড়ে ওঠা এই দ্বীপ শুরুতে ছিল বিচ্ছিন্ন ছোট ছোট চরভূমির সমষ্টি। ধীরে ধীরে এসব ভূমি একত্রিত হয়ে তৈরি হয় একটি পূর্ণাঙ্গ দ্বীপ। উর্বর মাটির কারণে এখানে কৃষি জমি গড়ে ওঠে, আর আশ্রয়ের খোঁজে মানুষ আসতে শুরু করে।

স্থানীয়দের ভাষায়, “শুরুর দিকে আমরা ভেবেছিলাম হয়তো এই জমি স্থায়ী হবে না। কিন্তু দেখতে দেখতে ঘরবাড়ি গড়ে উঠল, ধান-ডাল ফলতে শুরু করল। তখনই বুঝলাম, এখানে বসবাস সম্ভব।”

মানুষের বসতি ও জীবন

প্রথমদিকে চরমোনিকায় আসেন জেলে পরিবার ও কৃষকরা। তাঁরা অস্থায়ী কুঁড়েঘর বানিয়ে বাস শুরু করেন। মূল জীবিকা ছিল নদী ও সাগরে মাছ ধরা, ধান ও শাকসবজি চাষ। দ্বীপের উর্বর মাটিতে ধান, পাট, মরিচ, শাকপাতা—সবই ভালো ফলত।

তবে সুখের পাশাপাশি ছিল সীমাহীন কষ্ট। বিদ্যুৎ ছিল না, স্বাস্থ্যকেন্দ্রের কোনো ব্যবস্থা ছিল না, স্কুলও ছিল দূরে। এক স্থানীয় বাসিন্দা মো. হারুন মিয়া বলেন,

“আমার ছেলেমেয়েদের পড়াশোনা করাতে হলে নদী পার হয়ে স্কুলে পাঠাতে হতো। বর্ষায় সেটা অসম্ভব হয়ে যেত। কিন্তু জীবনের জন্য আমাদের লড়াই থেমে থাকেনি।”

বঙ্গোপসাগরে এবার ঘূর্ণিঝড় 'মিগজাউম', ডিসেম্বরেই ...

ঘূর্ণিঝড় ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের আঘাত

চরমোনিকার মানুষের সবচেয়ে বড় আতঙ্ক ছিল ঘূর্ণিঝড়। প্রায় প্রতি পাঁচ থেকে সাত বছর অন্তর একেকটি বড় ঝড় দ্বীপটিকে বিধ্বস্ত করেছে। ১৯৯১ সালের ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড়ে শত শত ঘরবাড়ি ভেসে যায়, অসংখ্য মানুষ মারা যায়।

২০০৭ সালের সিডর, ২০০৯ সালের আইলা, ২০১৩ সালের মহাসেন ও ২০২০ সালের আম্পান—প্রতিটি ঝড় দ্বীপকে ক্ষতবিক্ষত করেছে। ঘরবাড়ি ভাঙচুর হয়েছে, কৃষিজমি লবণ পানিতে ডুবে গেছে, মানুষ হয়ে পড়েছে গৃহহীন।

একজন স্থানীয় নারী রোকেয়া বেগম স্মৃতি তার অভিজ্ঞতা বর্ণনা করেন,

“আম্পানের রাতে আমরা বাচ্চাদের নিয়ে মসজিদের পাশে আশ্রয় নিয়েছিলাম। ভোরে ফিরে দেখি আমাদের ঘর আর নেই। শুধু ভাঙা বেড়া আর ভেজা কাপড় পড়ে আছে।”

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট)

জলবায়ু পরিবর্তন ও বৈজ্ঞানিক সতর্কবার্তা

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তন চরমোনিকার ভবিষ্যৎকে আরও বিপজ্জনক করে তুলেছে। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) জলবায়ু গবেষক ড. মাহবুব হাসান জানান,

“উপকূলীয় চরাঞ্চলগুলো সবচেয়ে ঝুঁকিতে রয়েছে। স্যাটেলাইট ডেটা বিশ্লেষণ থেকে জানা যাচ্ছে, আগামী ২০ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা যদি বর্তমান হারে বাড়তে থাকে, তবে চরমোনিকার মতো ছোট দ্বীপগুলো ধীরে ধীরে বিলীন হয়ে যাবে।”

তিনি আরও যোগ করেন,

“প্রতিদিনের জোয়ারের চাপে জমি ভাঙছে, নতুন অংশ সমুদ্রের নিচে চলে যাচ্ছে। দীর্ঘমেয়াদে কোনো প্রতিরোধ ব্যবস্থা না নিলে এই দ্বীপ হারিয়ে যাবে।”

বাস্তবতা পরিসংখ্যানে

চরমোনিকার মতো দ্বীপ ও চরাঞ্চলে ভাঙন ও ক্ষতির পরিমাণ বিশাল।

  • • বাংলাদেশে প্রতি বছর গড়ে৩৪ বর্গকিলোমিটার ভূমি নদী ও সমুদ্র গিলে খায়, যদিও প্রায় ৫৪ বর্গকিলোমিটার নতুন ভূমি জেগে ওঠে। তবু ক্ষতিগ্রস্ত মানুষদের জীবনে এই হিসাব কোনো সান্ত্বনা আনে না।
  • • চরাঞ্চল ও দ্বীপের হাজার হাজার মানুষ নদীভাঙনেবাস্তুচ্যুত হচ্ছে। কেবল ভোলা জেলার একটি এলাকাতেই সাম্প্রতিক ভাঙনে ,০০০ পরিবার ঝুঁকিতে পড়েছে, ২৫০ একর কৃষিজমি হারিয়ে গেছে, স্কুল, মসজিদ, সড়ক ধ্বংস হয়েছে।
  • • মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলার একটি পরিসংখ্যানে দেখা গেছে,নদী ভাঙনে ,৩৪৩ পরিবার— প্রায় ,৪৮০ মানুষ—বাসস্থান হারিয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ১২,০০০ একর জমি১৭টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান২২টি ধর্মীয় উপাসনালয় এবং ,২২২ পুকুর
  • • UNICEF-এর তথ্যমতে,দেশব্যাপী প্রায় ৫ লক্ষাধিক মানুষ বর্তমানে অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্র বা শেল্টারে বসবাস করছে।
  • • সরকারের আশ্রয়ণ প্রকল্পে ইতিমধ্যেই৪ লক্ষাধিক পরিবারকে নতুন বাড়ি দেওয়া হয়েছে, কিন্তু বাস্তবতার তুলনায় এ সংখ্যা অপ্রতুল।

স্থানীয় কৃষক নুরুল ইসলাম বলেন,

“একসময় এখানে দশ বিঘা জমি ছিল আমার। এখন মাত্র দুই বিঘা আছে, বাকিটা নদী-সমুদ্র খেয়ে নিয়েছে। আমার ছেলেরা হয়তো এই দ্বীপে আর টিকে থাকতে পারবে না।”

আজকের সংকট ও ভবিষ্যতের শঙ্কা

চরমোনিকার মানুষ আজ এক স্থায়ী অনিশ্চয়তায় বসবাস করছে। ভাঙন, ঝড় আর পানিবন্দী জীবন তাদের নিত্যসঙ্গী। ত্রাণ ও পুনর্বাসন প্রকল্প এলে সাময়িক স্বস্তি মিললেও দীর্ঘমেয়াদে বেঁচে থাকার কোনো নিশ্চয়তা নেই।

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা)-এর নেত্রী সুলতানা কামরুন নাহার মনে করেন,

“উপকূলীয় দ্বীপগুলোকে রক্ষার জন্য এখনই টেকসই বাঁধ, বিকল্প জীবিকা এবং সামাজিক অবকাঠামো তৈরি করা জরুরি। নইলে শুধু চরমোনিকা নয়, বরং পুরো উপকূলীয় অঞ্চল ঝুঁকিতে পড়বে।”

চরমোনিকা দ্বীপ আজ বাংলাদেশের জলবায়ু সংকটের প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়েছে। মানুষের সংগ্রামী জীবন, বারবার দুর্যোগে ভেঙে পড়া ঘরবাড়ি, পরিসংখ্যানে হারিয়ে যাওয়া জমি ও বাস্তুচ্যুত মানুষ—সব মিলিয়ে এটি এক হৃদয়বিদারক বাস্তবতা। দ্বীপটি শুধু ভৌগোলিক একাংশ নয়; এটি এক সম্প্রদায়ের ইতিহাস, শ্রম ও জীবনের গল্প।

যদি এখনই কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া না হয়, তবে হয়তো অচিরেই চরমোনিকা দ্বীপ কেবল ইতিহাসের পাতায় থেকে যাবে—মানুষগুলো হারিয়ে যাবে নতুন ভিটেমাটির সন্ধানে, আর আমরা হারাব বাংলাদেশের এক জীবন্ত ভূখণ্ড।