০৯:৩১ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৯ নভেম্বর ২০২৫
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ঢাকা (পর্ব-৫৯) শেয়ারবাজারে টানা উত্থান, বিনিয়োগকারীদের মনোভাব আরও ইতিবাচক সিরাজগঞ্জে ব্র্যাক–ফিলিপস ফাউন্ডেশনের নতুন চার হেলথ সেন্টার প্রশান্ত মহাসাগরে যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তা কমলেও আস্থার লড়াইয়ে এগোচ্ছে চীন কাশ্মীরি মানেই সন্ত্রাসী নন- ওমর আব্দুল্লাহ গোপন সস রক্ষায় কঠোর নজরদারি: রেইজিং কেইনসের রহস্যময় নিরাপত্তা ব্যবস্থা খাশোগি হত্যাকাণ্ডে সিআইএ–এর মূল্যায়নকে অস্বীকার করলেন ট্রাম্প ট্রাম্পের কৃষিপণ্য শুল্ক ছাড়ে যুক্তরাষ্ট্রে বাড়তে পারে ভারতের রপ্তানি ডেঙ্গুতে আরও ৬ জনের মৃত্যু, ২৪ ঘণ্টায় হাসপাতালে ৭৮৮ রোগী দিল্লি–ঢাকা অংশীদারত্বে ওষুধ শিল্পের গুরুত্ব

রাষ্ট্র চালাতে কেন মধ্যবিত্ত শ্রেণীর প্রয়োজন পড়ে

একটি রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষেত্রে মধ্যবিত্ত শ্রেণির ভূমিকা প্রায় সর্বজনীনভাবে স্বীকৃত। ইতিহাসের বিভিন্ন সময়ে দেখা গেছে, রাষ্ট্রের স্থিতিশীলতা, অর্থনৈতিক অগ্রগতি ও রাজনৈতিক গণতন্ত্রকে এগিয়ে নিতে মধ্যবিত্ত শ্রেণি প্রধান চালিকাশক্তি হয়ে দাঁড়িয়েছে। কেন মধ্যবিত্ত শ্রেণি রাষ্ট্র চালাতে সবচেয়ে বেশি সক্ষম?

সামাজিক ভূমিকা

মধ্যবিত্ত শ্রেণি সমাজের সবচেয়ে ভারসাম্যপূর্ণ অংশ। একদিকে তারা ধনী শ্রেণির মতো অতিরিক্ত বিলাসিতা বা ক্ষমতার প্রভাবভোগ করে না, অন্যদিকে গরিব শ্রেণির মতো সম্পূর্ণভাবে অনিশ্চিত জীবনও কাটায় না। তারা সমাজে ন্যায়, শৃঙ্খলা, নৈতিকতা ও সংস্কৃতির ধারক-বাহক হিসেবে কাজ করে। পরিবার ও সমাজে শিক্ষাদীক্ষা, ভদ্রতা, পরস্পরকে সাহায্য করা, আইন মানা ইত্যাদি সামাজিক গুণাবলি মধ্যবিত্তদের মধ্যেই সবচেয়ে বেশি দৃশ্যমান। ফলে রাষ্ট্রের সামাজিক কাঠামো সুসংহত করতে এ শ্রেণির অবদান অনস্বীকার্য।

ঐতিহাসিক উদাহরণ: ফরাসি বিপ্লব (১৭৮৯) ছিল মধ্যবিত্তের সামাজিক নেতৃত্বের বড় দৃষ্টান্ত। ফ্রান্সের কৃষক ও শ্রমিকরা একা আন্দোলন টিকিয়ে রাখতে পারছিল না, কিন্তু মধ্যবিত্ত শ্রেণির অংশগ্রহণে গণতন্ত্র ও আধুনিক রাষ্ট্রব্যবস্থার ভিত্তি স্থাপিত হয়।

রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে ব্যক্তিগত আক্রমণ নয়

রাজনৈতিক ভূমিকা

রাজনীতিতে মধ্যবিত্ত শ্রেণি সাধারণত গণতন্ত্র ও ন্যায়নীতির প্রতি বেশি ঝোঁক রাখে। তারা কেবল ব্যক্তিগত স্বার্থ নয়, বরং রাষ্ট্রের সমষ্টিগত স্বার্থ ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য ভালো একটি ব্যবস্থা চায়। এজন্য গণতান্ত্রিক আন্দোলন, স্বাধীনতা সংগ্রাম কিংবা রাজনৈতিক সংস্কার আন্দোলনের মূল চালিকা শক্তি প্রায়ই মধ্যবিত্ত শ্রেণি হয়ে থাকে। তারা অভিজাত শ্রেণির মতো ক্ষমতার জন্য নয়, বরং ন্যায়ের জন্য লড়াই করতে আগ্রহী থাকে।

ঐতিহাসিক উদাহরণ: ভারতীয় স্বাধীনতা আন্দোলনে মধ্যবিত্তরা (যেমন ডাক্তার, আইনজীবী, শিক্ষক, সাংবাদিক) রাজনৈতিক আন্দোলনের নেতৃত্ব দেয়। মহাত্মা গান্ধী, সুভাষচন্দ্র বসু, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মতো নেতৃত্ব আসেন মধ্যবিত্ত পটভূমি থেকে। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধেও ছাত্রনেতা, শিক্ষক, লেখক—মূলত মধ্যবিত্তরাই প্রথম নেতৃত্ব দেয়।

শিক্ষাগত শক্তি

মধ্যবিত্ত শ্রেণি শিক্ষা অর্জনকে জীবনের মূল হাতিয়ার মনে করে। তারা জানে, টিকে থাকার জন্য এবং সম্মানজনক জীবনযাপনের জন্য শিক্ষার বিকল্প নেই। ফলে এ শ্রেণি সমাজে সবচেয়ে বেশি শিক্ষিত, সচেতন ও দক্ষ জনশক্তি তৈরি করে। রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য যে জ্ঞান, দক্ষতা ও প্রাতিষ্ঠানিক মানসিকতা প্রয়োজন, তা মূলত মধ্যবিত্ত শ্রেণির মধ্যেই বেশি বিকশিত হয়। শিক্ষক, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, প্রশাসক, সাংবাদিক—প্রায় সব ক্ষেত্রেই মধ্যবিত্তের প্রাধান্য দেখা যায়।

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পেশাগত নৈতিকতা : শিক্ষকের ভূমিকা

ঐতিহাসিক উদাহরণ: ইউরোপে শিল্পবিপ্লবের পর নতুন প্রযুক্তি, কারখানা ও প্রশাসনিক ব্যবস্থার দায়িত্ব নিয়েছিল মধ্যবিত্তরা। আবার বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধ-পরবর্তী প্রশাসন ও শিক্ষা ব্যবস্থায় নেতৃত্ব আসে মধ্যবিত্ত থেকেই।

পারিবারিক সংস্কৃতি

মধ্যবিত্ত শ্রেণির পরিবারগুলোতে সাধারণত শৃঙ্খলা, দায়িত্ববোধ ও পরিশ্রমকে মূল্য দেওয়া হয়। সন্তানদের ছোটবেলা থেকে সৎ জীবনযাপন, আত্মসংযম, শিক্ষা ও সামাজিক দায়িত্ববোধ শেখানো হয়। পরিবারে সঞ্চয়, পরিকল্পনা ও মিতব্যয়িতা খুব গুরুত্ব পায়। এ ধরনের পারিবারিক সংস্কৃতি থেকেই তৈরি হয় এমন নাগরিক, যারা রাষ্ট্র পরিচালনায় দায়িত্বশীল, বাস্তববাদী ও দূরদর্শী হতে পারে।

ঐতিহাসিক উদাহরণ: জাপানের আধুনিকায়নের পেছনে মধ্যবিত্ত পরিবারগুলোর সন্তানরা (যারা শিক্ষা ও নৈতিকতায় বড় হয়েছে) দেশের প্রযুক্তি ও প্রশাসন গড়ে তুলেছিল।

অর্থনৈতিক অবস্থান ও ভারসাম্য

মধ্যবিত্ত শ্রেণি রাষ্ট্রের অর্থনৈতিক কাঠামোয় স্থিতিশীলতা আনে। তারা উৎপাদন, বাণিজ্য, সেবা ও ভোগের মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করে। ধনী শ্রেণি প্রায়শই ভোগবিলাসে অতিরিক্ত ব্যস্ত থাকে, আর গরিব শ্রেণি নিত্যপ্রয়োজন মেটাতে হিমশিম খায়। কিন্তু মধ্যবিত্ত শ্রেণি সঞ্চয়, বিনিয়োগ, শ্রম ও সৃজনশীলতার মাধ্যমে অর্থনীতিতে ভারসাম্য বজায় রাখে।

ঐতিহাসিক উদাহরণ: দক্ষিণ কোরিয়ার “মিরাকল অন দ্য হান রিভার” নামে খ্যাত অর্থনৈতিক রূপান্তর মূলত মধ্যবিত্ত উদ্যোক্তা ও শ্রমশক্তির কারণে সম্ভব হয়েছিল।

সাংস্কৃতিক নেতৃত্ব

শিল্প, সাহিত্য, সংস্কৃতি, সাংবাদিকতা ও নাগরিক আন্দোলনে মধ্যবিত্ত শ্রেণির প্রভাব সবচেয়ে বেশি। তারা সমাজে নতুন চিন্তা, সংস্কার ও সৃজনশীলতার ধারা তৈরি করে। ফলে রাষ্ট্রে মানবিক মূল্যবোধ ও নৈতিক চেতনা প্রতিষ্ঠায় মধ্যবিত্ত শ্রেণি অপরিহার্য।

ঐতিহাসিক উদাহরণ: বাংলার নবজাগরণ (ঊনবিংশ শতক) মূলত মধ্যবিত্ত শ্রেণির নেতৃত্বেই ঘটেছিল। বিদ্যাসাগর, মাইকেল মধুসূদন দত্ত, বঙ্কিমচন্দ্র—সবাই ছিলেন মধ্যবিত্ত পটভূমির, যারা সমাজ সংস্কারে বিশাল ভূমিকা রাখেন।

উপসংহার

সব মিলিয়ে বলা যায়, মধ্যবিত্ত শ্রেণি রাষ্ট্র পরিচালনায় সবচেয়ে বেশি উপযুক্ত কারণ তারা সামাজিকভাবে শৃঙ্খলাবদ্ধ, রাজনৈতিকভাবে ন্যায়নিষ্ঠ, শিক্ষাগতভাবে অগ্রসর, পারিবারিকভাবে দায়িত্বশীল এবং অর্থনৈতিকভাবে ভারসাম্যপূর্ণ। ইতিহাসের নানা সময়ে প্রমাণিত হয়েছে, যখন মধ্যবিত্ত শ্রেণি শক্তিশালী হয়, তখন রাষ্ট্র স্থিতিশীল ও উন্নত হয়। আর যখন মধ্যবিত্ত দুর্বল হয়, তখন রাষ্ট্রে অস্থিরতা ও বৈষম্য বেড়ে যায়।

ঐতিহাসিক শিক্ষা: প্রাচীন রোমে মধ্যবিত্ত শ্রেণি দুর্বল হয়ে পড়লে সাম্রাজ্য ধ্বংস হয়ে যায়। আবার ইউরোপে মধ্যবিত্ত শক্তিশালী হওয়ায় গণতন্ত্র, শিক্ষা ও আধুনিক রাষ্ট্রব্যবস্থার বিকাশ ঘটে।

জনপ্রিয় সংবাদ

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ঢাকা (পর্ব-৫৯)

রাষ্ট্র চালাতে কেন মধ্যবিত্ত শ্রেণীর প্রয়োজন পড়ে

০১:০০:৫৮ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৭ অগাস্ট ২০২৫

একটি রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষেত্রে মধ্যবিত্ত শ্রেণির ভূমিকা প্রায় সর্বজনীনভাবে স্বীকৃত। ইতিহাসের বিভিন্ন সময়ে দেখা গেছে, রাষ্ট্রের স্থিতিশীলতা, অর্থনৈতিক অগ্রগতি ও রাজনৈতিক গণতন্ত্রকে এগিয়ে নিতে মধ্যবিত্ত শ্রেণি প্রধান চালিকাশক্তি হয়ে দাঁড়িয়েছে। কেন মধ্যবিত্ত শ্রেণি রাষ্ট্র চালাতে সবচেয়ে বেশি সক্ষম?

সামাজিক ভূমিকা

মধ্যবিত্ত শ্রেণি সমাজের সবচেয়ে ভারসাম্যপূর্ণ অংশ। একদিকে তারা ধনী শ্রেণির মতো অতিরিক্ত বিলাসিতা বা ক্ষমতার প্রভাবভোগ করে না, অন্যদিকে গরিব শ্রেণির মতো সম্পূর্ণভাবে অনিশ্চিত জীবনও কাটায় না। তারা সমাজে ন্যায়, শৃঙ্খলা, নৈতিকতা ও সংস্কৃতির ধারক-বাহক হিসেবে কাজ করে। পরিবার ও সমাজে শিক্ষাদীক্ষা, ভদ্রতা, পরস্পরকে সাহায্য করা, আইন মানা ইত্যাদি সামাজিক গুণাবলি মধ্যবিত্তদের মধ্যেই সবচেয়ে বেশি দৃশ্যমান। ফলে রাষ্ট্রের সামাজিক কাঠামো সুসংহত করতে এ শ্রেণির অবদান অনস্বীকার্য।

ঐতিহাসিক উদাহরণ: ফরাসি বিপ্লব (১৭৮৯) ছিল মধ্যবিত্তের সামাজিক নেতৃত্বের বড় দৃষ্টান্ত। ফ্রান্সের কৃষক ও শ্রমিকরা একা আন্দোলন টিকিয়ে রাখতে পারছিল না, কিন্তু মধ্যবিত্ত শ্রেণির অংশগ্রহণে গণতন্ত্র ও আধুনিক রাষ্ট্রব্যবস্থার ভিত্তি স্থাপিত হয়।

রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে ব্যক্তিগত আক্রমণ নয়

রাজনৈতিক ভূমিকা

রাজনীতিতে মধ্যবিত্ত শ্রেণি সাধারণত গণতন্ত্র ও ন্যায়নীতির প্রতি বেশি ঝোঁক রাখে। তারা কেবল ব্যক্তিগত স্বার্থ নয়, বরং রাষ্ট্রের সমষ্টিগত স্বার্থ ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য ভালো একটি ব্যবস্থা চায়। এজন্য গণতান্ত্রিক আন্দোলন, স্বাধীনতা সংগ্রাম কিংবা রাজনৈতিক সংস্কার আন্দোলনের মূল চালিকা শক্তি প্রায়ই মধ্যবিত্ত শ্রেণি হয়ে থাকে। তারা অভিজাত শ্রেণির মতো ক্ষমতার জন্য নয়, বরং ন্যায়ের জন্য লড়াই করতে আগ্রহী থাকে।

ঐতিহাসিক উদাহরণ: ভারতীয় স্বাধীনতা আন্দোলনে মধ্যবিত্তরা (যেমন ডাক্তার, আইনজীবী, শিক্ষক, সাংবাদিক) রাজনৈতিক আন্দোলনের নেতৃত্ব দেয়। মহাত্মা গান্ধী, সুভাষচন্দ্র বসু, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মতো নেতৃত্ব আসেন মধ্যবিত্ত পটভূমি থেকে। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধেও ছাত্রনেতা, শিক্ষক, লেখক—মূলত মধ্যবিত্তরাই প্রথম নেতৃত্ব দেয়।

শিক্ষাগত শক্তি

মধ্যবিত্ত শ্রেণি শিক্ষা অর্জনকে জীবনের মূল হাতিয়ার মনে করে। তারা জানে, টিকে থাকার জন্য এবং সম্মানজনক জীবনযাপনের জন্য শিক্ষার বিকল্প নেই। ফলে এ শ্রেণি সমাজে সবচেয়ে বেশি শিক্ষিত, সচেতন ও দক্ষ জনশক্তি তৈরি করে। রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য যে জ্ঞান, দক্ষতা ও প্রাতিষ্ঠানিক মানসিকতা প্রয়োজন, তা মূলত মধ্যবিত্ত শ্রেণির মধ্যেই বেশি বিকশিত হয়। শিক্ষক, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, প্রশাসক, সাংবাদিক—প্রায় সব ক্ষেত্রেই মধ্যবিত্তের প্রাধান্য দেখা যায়।

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পেশাগত নৈতিকতা : শিক্ষকের ভূমিকা

ঐতিহাসিক উদাহরণ: ইউরোপে শিল্পবিপ্লবের পর নতুন প্রযুক্তি, কারখানা ও প্রশাসনিক ব্যবস্থার দায়িত্ব নিয়েছিল মধ্যবিত্তরা। আবার বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধ-পরবর্তী প্রশাসন ও শিক্ষা ব্যবস্থায় নেতৃত্ব আসে মধ্যবিত্ত থেকেই।

পারিবারিক সংস্কৃতি

মধ্যবিত্ত শ্রেণির পরিবারগুলোতে সাধারণত শৃঙ্খলা, দায়িত্ববোধ ও পরিশ্রমকে মূল্য দেওয়া হয়। সন্তানদের ছোটবেলা থেকে সৎ জীবনযাপন, আত্মসংযম, শিক্ষা ও সামাজিক দায়িত্ববোধ শেখানো হয়। পরিবারে সঞ্চয়, পরিকল্পনা ও মিতব্যয়িতা খুব গুরুত্ব পায়। এ ধরনের পারিবারিক সংস্কৃতি থেকেই তৈরি হয় এমন নাগরিক, যারা রাষ্ট্র পরিচালনায় দায়িত্বশীল, বাস্তববাদী ও দূরদর্শী হতে পারে।

ঐতিহাসিক উদাহরণ: জাপানের আধুনিকায়নের পেছনে মধ্যবিত্ত পরিবারগুলোর সন্তানরা (যারা শিক্ষা ও নৈতিকতায় বড় হয়েছে) দেশের প্রযুক্তি ও প্রশাসন গড়ে তুলেছিল।

অর্থনৈতিক অবস্থান ও ভারসাম্য

মধ্যবিত্ত শ্রেণি রাষ্ট্রের অর্থনৈতিক কাঠামোয় স্থিতিশীলতা আনে। তারা উৎপাদন, বাণিজ্য, সেবা ও ভোগের মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করে। ধনী শ্রেণি প্রায়শই ভোগবিলাসে অতিরিক্ত ব্যস্ত থাকে, আর গরিব শ্রেণি নিত্যপ্রয়োজন মেটাতে হিমশিম খায়। কিন্তু মধ্যবিত্ত শ্রেণি সঞ্চয়, বিনিয়োগ, শ্রম ও সৃজনশীলতার মাধ্যমে অর্থনীতিতে ভারসাম্য বজায় রাখে।

ঐতিহাসিক উদাহরণ: দক্ষিণ কোরিয়ার “মিরাকল অন দ্য হান রিভার” নামে খ্যাত অর্থনৈতিক রূপান্তর মূলত মধ্যবিত্ত উদ্যোক্তা ও শ্রমশক্তির কারণে সম্ভব হয়েছিল।

সাংস্কৃতিক নেতৃত্ব

শিল্প, সাহিত্য, সংস্কৃতি, সাংবাদিকতা ও নাগরিক আন্দোলনে মধ্যবিত্ত শ্রেণির প্রভাব সবচেয়ে বেশি। তারা সমাজে নতুন চিন্তা, সংস্কার ও সৃজনশীলতার ধারা তৈরি করে। ফলে রাষ্ট্রে মানবিক মূল্যবোধ ও নৈতিক চেতনা প্রতিষ্ঠায় মধ্যবিত্ত শ্রেণি অপরিহার্য।

ঐতিহাসিক উদাহরণ: বাংলার নবজাগরণ (ঊনবিংশ শতক) মূলত মধ্যবিত্ত শ্রেণির নেতৃত্বেই ঘটেছিল। বিদ্যাসাগর, মাইকেল মধুসূদন দত্ত, বঙ্কিমচন্দ্র—সবাই ছিলেন মধ্যবিত্ত পটভূমির, যারা সমাজ সংস্কারে বিশাল ভূমিকা রাখেন।

উপসংহার

সব মিলিয়ে বলা যায়, মধ্যবিত্ত শ্রেণি রাষ্ট্র পরিচালনায় সবচেয়ে বেশি উপযুক্ত কারণ তারা সামাজিকভাবে শৃঙ্খলাবদ্ধ, রাজনৈতিকভাবে ন্যায়নিষ্ঠ, শিক্ষাগতভাবে অগ্রসর, পারিবারিকভাবে দায়িত্বশীল এবং অর্থনৈতিকভাবে ভারসাম্যপূর্ণ। ইতিহাসের নানা সময়ে প্রমাণিত হয়েছে, যখন মধ্যবিত্ত শ্রেণি শক্তিশালী হয়, তখন রাষ্ট্র স্থিতিশীল ও উন্নত হয়। আর যখন মধ্যবিত্ত দুর্বল হয়, তখন রাষ্ট্রে অস্থিরতা ও বৈষম্য বেড়ে যায়।

ঐতিহাসিক শিক্ষা: প্রাচীন রোমে মধ্যবিত্ত শ্রেণি দুর্বল হয়ে পড়লে সাম্রাজ্য ধ্বংস হয়ে যায়। আবার ইউরোপে মধ্যবিত্ত শক্তিশালী হওয়ায় গণতন্ত্র, শিক্ষা ও আধুনিক রাষ্ট্রব্যবস্থার বিকাশ ঘটে।